রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৫

কামারুজ্জামান, তিনি তো আমার কোন আত্মীয় নন । তবে কেন কান্নায় বুক ভাসালাম ? কেন গ্রামের সহজ সরল মানুষ তাকে ভালোবাসে ? কেন তার জন্য এখনও কাদে ?


ভেবেছিলাম জুম্মা পড়েই কবর জিয়ারত করবো কিন্তু শেরপুর শহরে এক শুভাকাঙ্ক্ষী দুপুরের খানা না খাইয়ে ছাড়লেন না । আমাদের পৌঁছাতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল ।  ঢাকা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ২৪ এপ্রিল-শুক্রবার দুপুর ৩টায় পৌছাই শহীদের বড় ভাই কফিল সাহেবের বাড়ীতে । আমি পৌছা মাত্র মুহুর্তেই চতুর্দিক থেকে গ্রামবাসী নারী-পুরুষের অভাবনীয় ভীড় । বাড়িতে কিছুক্ষন বসলাম । ইতোমধ্যে বহু মানুষ আমাদের চারপাশে এসে অবস্থান নিয়েছে । একজন একপাশে একটি টেবিলের উপর একটি শোকবই দেখিয়ে বললো, আসুন এখানে কিছু লিখুন । কি লিখবো  আমি ? আমার তো ভাষা জ্ঞান তেমন নেই । কামারুজ্জামান চাচাকে নিয়ে লিখবো ভাবতেই আমার দুচোখ জলে ঝাপসা হয়ে এলো । কলম চলছে না । তবুও,  শোকবইতে দুকথা লিখে (বিহ্বল আমি, কি লিখলাম মনে নেই) রওনা দিলাম সবুজ ধানক্ষেত লাগোয়া একটি সতেজ কবর দিকে । উপস্থিত হলাম নীল পলিথিনে ঢাকা সেই কবরে । শেরপুর সদরের কুমরি বাজিতখিলা গ্রামের এতিমখানা সংলগ্ন রাস্তা, যার পাশে শুয়ে আছেন আমার পরম শ্রদ্ধেয় দায়িত্বশীল শহীদ কামারুজ্জামান । আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর । 
নানা আশংকার কারণে এ যাত্রার খবর আগাম কাউকে জানানো হয়নি । শুনেছি, প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে মানুষের আনা-গোনা লেগেই থাকে, কিন্তু আজ যেন বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার !  সকলের চোখে কান্নার ঢেউ আছড়ে পড়ে আমিও কান্না চেপে রাখতে পারিনি । কে কাকে সান্তনা দেবে ? নারীদের বিলাপ ধ্বনিতে ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ । চারিদিক থেকে মানুষের স্রোত ক্রমেই বাড়ছে দেখে শংকিত হলাম । হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ এসে সৃষ্টি করবে ত্রাস । এতো সাহস কোথা থেকে এলো কে জানে !  কবরের পাশে থাকলাম অনেকক্ষণ ।   
সুরা ফাতিহা, এখলাস, দুরুদ পড়ে মোনাযাতের জন্য দুহাত তুললাম আর বাধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো দুচোখ বেয়ে পানি আসলো । উপস্থিত সকলে কাদলেন ।  শহীদ কামারুজ্জামান, তিনি তো আমার কোন আত্মীয় নন । তবে কেন যে এতো কান্নায় বুক ভাসালাম ? কেন এতো মানুষের ভিড় ? কেন গ্রামের সহজ সরল মানুষ তাকে ভালোবাসে ? কেন তার জন্য এখনও কাদে ?
মোনাযাত শেষে চলে আসার জন্য উদ্যত হলে স্থানীয় এক মুরুব্বি আমার হাতটি চেপে ধরেন, যার অর্থ, না-এখনই নয়, আমাকে জনতার ভীড় ঠেলতে ঠেলতে সামনে এগুতে থাকে আর আস্তে আস্তে বলতে থাকেন- আপনার আব্বার রায়ের পর এইযে লোকগুলি দেখছেন তাদের প্রত্যেকেরই নামে বিভিন্ন মামলা দেয়া হয়েছে । এরা রাতের পর রাত নিজ বাসায় ঘুমুতে পারে না । এদের মধ্যে অনেকেই পুলিশের নির্যাতনে  দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকেছেন । এদের ভিতর যেমন যুবক আছে তেমনি বৃদ্ধ এবং তরুন কিশোরও আছে । আমাকে শহীদ কামারুজ্জামানের প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা প্রাঙ্গনে গিয়ে দাঁড়া করায় । এতীমখানার সামনে  বেশ খানিকটা জায়গা খোলা মাঠ । সে রাতে কেমন করে তাঁর কফিন আনা হয়েছিল, কিভাবে তার জানাজা এবং দাফন সম্পন্ন হয়েছিল, সবিস্তারে জানালেন সেই মুরুব্বি । তার কাছে পুলিশ ও প্রশাসনের নির্দয় আচরনের বয়ান শুনে অবাক হলাম । একজন মৃত মানুষ ও তার নিরীহ গ্রামবাসীর প্রতি এত অমানবিক আচরণ হতে পারে তা অবিশ্বাস্য !  শত শত পুলিশের কড়া বেরিকেডের বাইরে হাজার হাজার গ্রামবাসী সাধারণ নারী-পুরুষ রাত জেগে বিভিন্ন দিকে অবস্থান নেয় । তাদের কান্না, আহাজারী, কাকুতি-মিনতি কোন কিছুই পুলিশের মন গলাতে পারেনি । পুলিশ কাউকেই জানাজা স্থলের কাছে ঘেষতে দেয়নি । বার বার লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দিয়েছে ।  বৃষ্টিস্নাত রাতের আধারে সে এক হৃদয়-বিদারক দৃশ্য । বলতে বলতে ভদ্রলোকের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে । চোখ ছল ছল করে ওঠে আমাদেরও ।

এরই মাঝে এক যুবক (ভিড়ের মধ্যে নামটা শোনা হয়নি ) আমার সামনে তার দুখানা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো এই হাত দিয়ে শহীদকে কবরে নামানোর সৌভাগ্য হয়েছে । কফিনটা দেখিয়ে বললো এখনো শহীদের রক্তের দাগ মুছে যায়নি ।  ছোপ কালো দাগ পরে আছে । আমার দুহাত রক্তে ভরে গেছিলো তখন তার গর্বিত চোখ দুটি চকচক করছিলো  । এতিমখানার তিনটা পিলারে রক্তাক্ত হাতের ছাপ দেখলাম । জানলাম, শহীদ কামারুজ্জামানের কফিনের বাক্স খোলার পর দেখা গেছে - তার ডান নাক এবং কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে গলা ও বুকের উপর তরতাজা রক্ত ছড়িয়ে ছিল । তখন এক  ছাত্র আবেগ প্রবণ হয়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কাঁদতে কাঁদতে রক্তাক্ত কফিন জড়িয়ে ধরে । তার হাতে শহীদের যে তপ্ত খুন লেগেছিল এগুলো তারই স্মৃতিচিহ্ন ।
সেই মুরুব্বি কানে কানে  বললেন, আপনার আব্বার কথা কিছু বলেন, অনেকে অনুরোধ করছেন তারা হুজুরের কথা শুনতে চাচ্ছেন । এরই মধ্যে লক্ষ করলাম এয়াতীম খানার দোতলা তিনতলায় মহিলারা শিশু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন । উপস্থিত জনতার আবেগের কাছে হার মানতে বাধ্য হলাম  একটি লম্বা বেঞ্চের উপর দাড়িয়ে উপস্থিত গ্রামবাসীকে সালাম দিলাম । তাদের চোখের দিকে চেয়ে কথা বলতে পারছিলাম না । কান্না ভেজা কন্ঠে কথা বলা কঠিন । বললাম, মহান আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় আব্বা সুস্থ আছেন, ভালো আছেন । দয়াময় আল্লাহ করুনা করে তাকে যে হায়াত টুকুন  দান করেছেন সেই জীবনটা যেন জেলের ভিতর পচে গলে নষ্ট না হয় বরং কুরআনের ময়দানে তাফসীর করছেন এমন সময় বুলেটের আঘাতে বুকটা ঝাঁঝরা করে দিলো । শাহাদাতের সিড়ি বেয়ে  জান্নাতে কামারুজ্জামান চাচার কাছে চলে গেলেন । ব্যাক্তি কামারুজ্জামানের বিচার তারা করছে না । তারা ইসলামী নেত্রীবৃন্দের মিথ্যা মামলা সাজানো সাক্ষির বিচার করছে । আমরা ন্যায় বিচার পাইনি । এই বিচার এখানেই শেষ নয় । কাল কেয়ামতের ময়দানে এ বিচার আবার হবে । সেদিন কামারুজ্জামান সহ আমরা হবো বাদী, আসামি হবে এই জুলুমবাজেরা আর সেই দিন সাক্ষি আপনারা দিবেন । বিচার করবেন সকল বিচারকদের বিচারপতি মহাপরাক্রমশীল আল্লাহ । সেদিন আপনারা সাক্ষি দেবেন ? উপস্থিত জনতা গলা ছেড়ে গগন বিদারী চিৎকার করে বলে "দেবো" সাক্ষি দেবো" । কামারুজ্জামান চাচার রক্তের বিনিময়ে আল্লাহ এদেশে কালেমার পতাকা উড্ডীন করবেন । এদেশে ইসলাম বিজয়ী হবেই হবে, ইনশাআল্লাহ ।

ক্রমে যেভাবে মানুষের চাপ বাড়ছে । এবার আমাদের ফেরা উচিত । সাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ীতে উঠালাম । আবারও দুচোখ জলে ভরে গেলো । কবরের সাথে লাগানো সবুজ ধানক্ষেতের পাতাগুলো বাতাসে দুলছে । নীল পলিথিনে ঢাকা বালিমাটির কবরটি ছেড়ে যেতে মন চাইছে না ।  অবনত মস্তকে মহান রাব্বুল আ’লামীনের শাহী দরবারে বিড় বিড় করে বললাম, ইয়া দয়াময় মায়াময় আল্রাহ !আমার আব্বার প্রিয় ভাইটিকে রেখে যাচ্ছি, আবার কখন আসবো জানিনা ।  জান্নাতি পোষাকে তাকে ঘুম পরিয়ে রেখো, যেমনটি নতুন বর ঘুমায় । জান্নাতে তার সাথে আমার দেখা করিয়ে দিও, যেমনটি দেখা করিয়েছিলে জেলখানায় । কবরটিকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দাও ।  জান্নাতে, তোমার কাছে একটা ঘর তাকে দিও । প্রিয় রাসুলের প্রতিবেশী করে দিও । 





মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৫

ঢাকায় জামায়াতের ২৬ কাউন্সিলর প্রার্থীর তিলিকা

আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে ২৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থনে গণসংযোগ চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী । এর মধ্যে ১৯ জন সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিরর এবং সাতজন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর । বিএনপির পাশাপাশি জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরাও ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’র শ্লোগানে স্বতন্ত্রভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন । ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক জামায়াত তিনটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে কোনো প্রার্থী না দিলেও কাউন্সিলর পদে কিছু ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে । জামায়াতের সাথে এই নির্বাচনের ব্যাপারে জোটের প্রধান শরীক বিএনপির এখন পর্যন্ত যোগাযোগ নেই । চট্টগ্রামে ১১ জন জামায়াত সমর্থিত কাউন্সিলরের পক্ষে বিএনপির সমর্থন দেয়ার ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে । যদিও সেগুলোরও প্রায় সবগুলোতে বিএনপিরও প্রার্থী রয়েছে । ঢাকায় এ ধরণের কোনো আলোচনা এখনো হয়নি । নির্বাচনে এখন পর্যন্ত জামায়াত তাদের সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষেই প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছে । জামায়াত সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা হলেনঃ
ঢাকা উত্তর : সাধারন ওয়ার্ডে আশ্রাফুল আলম (পল্লবী-মিরপুর : ওয়ার্ড-৩, প্রতীক-টিফিন ক্যারিয়ার),
লস্কর মো. তাসলিম (কাফরুল, ভাষানটেক : ওয়ার্ড-৪, প্রতীক-ঠেলাগাড়ি), অ্যাডভোকেট এনায়েত হোসেন (মিরপুর পুর্ব : ওয়ার্ড-১৩, প্রতীক-কাঁটাচামচ), তারেক রেজা তুহিন (মিরপুর, কাফরুল : ওয়ার্ড-১৪, প্রতীক-রেডিও), আবুল কালাম মো. মোস্তাফিজুর রহমান (রামপুরা : ওয়ার্ড-২২, প্রতীক-ট্রাক্টর), শরীফ মিজানুর রহমান (তেজগাঁও : ওয়ার্ড-২৬, প্রতীক-ট্রাক্টর), মুক্তিযোদ্ধা মো. ইকবাল (মোহাম্মদপুর : ওয়ার্ড-২৯, প্রতীক-মিষ্টিকুমড়া), মনজুরুল আলম (রমনা : ওয়ার্ড-৩৫, প্রতীক-টিফিন ক্যারিয়ার) ও মাওলানা সালেহ সিদ্দিকী (রমনা : ওয়ার্ড-৩৬, প্রতীক-লাটিম)। ঢাকা দক্ষিণ : কবির আহমেদ (খিলগাঁও: ওয়ার্ড-১, প্রতীক-কাঁটাচামচ), মাওলানা শহীদুল ইসলাম (খিলগাঁও : ওয়ার্ড-৩, প্রতীক-ঘুড়ি), উমর ফারুক মজুমদার (সবুজবাগ : ওয়ার্ড-৫, প্রতীক-এয়ারকন্ডিশনার), গোলাম শাফি মহিউদ্দিন (মুগদা : ওয়ার্ড-৬, প্রতীক-টিফিন ক্যারিয়ার), মোশাররফ হোসেন চঞ্চল (শাহজাহানপুর: ওয়ার্ড-১১, প্রতীক-লাটিম), আঞ্জুমান আরা রব (পল্টন: ওয়ার্ড-১৩, প্রতীক-কাঁটাচামচ), ডা: আতাহার আলী (ওয়ারী : ওয়ার্ড-৩৯, প্রতীক-মিষ্টিকুমড়া), আবদুল মান্নান (গেন্ডারিয়া : ওয়ার্ড-৪৬, প্রতীক-লাটিম), শফিকুল ইসলাম (শ্যামপুর কদমতলি : ওয়ার্ড-৫২, প্রতীক-লাটিম) ও হাফেজ আহমাদ হাসান (কদমতলী, শ্যামপুর : ওয়ার্ড-৫৩, প্রতীক-কাঁটাচামচ)।সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড : উত্তরে উম্মে সালমা (কাফরুল, ভাসানটেক, ক্যান্টনমেন্ট, শেরে বাংলানগর : ৪, ১৫, ১৬ ওয়ার্ড, প্রতীক- মোড়া), মাসুদা আক্তার (দারুস সালাম, মিরপুর, কাফরুল : ১২, ১৩, ১৪ ওয়ার্ড, প্রতীক-কেতলি), আমেনা বেগম (রামপুরা, রমনা : ২২, ২৩, ৩৬ ওয়ার্ড, প্রতীক-গ্লাস), কাওসার জাহান (মোহাম্মদপুর, আদাবর : ২৯, ৩০, ৩২ ওয়ার্ড, প্রতীক-শিলপাটা) ঢাকা দক্ষিণে শামিমা আকতার (খিলগাঁও, সবুজবাগ : ২, ৩, ৪ ওয়ার্ড, প্রতীক-গ্লাস), দিলারা বেগম ( পল্টন, রমনা, শাহবাগ : ১৩, ১৯, ২০ ওয়ার্ড, প্রতীক-স্টিলের আলমারি) ও হাসনা হেনা (শ্যামপুর, কদমতলী : ৫২, ৫৩, ৫৪ ওয়ার্ড, প্রতীক-কেতলি)।
যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন । নির্বাচনে বিজয় আনতে হবে ।











রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫

১৬ মে দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মিরাজ

আগামী ১৬ মে দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মিরাজ পালিত হবে । আজ রোববার সন্ধ্যায় রজব মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় সোমবার জামাদিউস সানি মাস ৩০ দিন পূর্ণ হচ্ছে । সে হিসাবে আগামী মঙ্গলবার থেকে ১৪৩৬ হিজরির রজব মাস গণনা শুরু হবে ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে আজ সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ না দেখা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় । একই সাথে ১৬ মে শবে মিরাজ পালিত হবে বলে জানানো হয় ।
রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মিরাজ পালিত হয় । ৬২০ খ্রীষ্টাব্দের রজব মাসের ওই রাতে ঊর্ধ্বকাকাশে ভ্রমণ করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ স. আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন । ২৬ রজব আগামী ১৬ মে ।

কামারুজ্জামানের জন্য শেরপুরের কান্না দেখেছি--


সবুজ ধানক্ষেত লাগোয়া একটি সতেজ কবর। ঢাকা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ১৭ এপ্রিল-শুক্রবার সকাল বেলা উপস্থিত হয়েছিলাম সেই কবরে। শেরপুর সদরের কুমরি বাজিতখিলা গ্রামের এতিমখানা সংলগ্ন রাস্তা, যার পাশে শুয়ে আছেন আমার প্রিয় দায়িত্বশীল শহীদ কামারুজ্জামান। আস্সালামুয়ালাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর।
শহীদ কামারুজ্জামানের প্রিয়তমা জীবন সঙ্গীনি, তার স্নেহময়ী সন্তান ওয়ামী, ওয়াফী, শাফী ও আতিয়া নূর ঢাকা থেকে জনপ্রিয় লেখক ও সংগঠক আহসান হাবীব ইমরোজ, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার সুযোগ্য উত্তরসূরী হাসান জামিল, দুই শহীদের শ্রদ্ধাভাজন সহযোদ্ধা আলী আহসান মু: মুজাহিদের পুত্র তাহকিক ও মাবরুর, জামান ভাইয়ের অন্যতম স্নেহভাজন সুহৃদ আনোয়ারুল ইসলাম রাজু , আমার একান্ত আপনজন তরুণ ব্যবসায়ী মেজবাহ উদ্দিন সাঈদ এবং আমি ছিলাম সহযাত্রী। আমরা গিয়েছিলাম চারটি আলাদা গাড়ীতে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও কোন ধরনের সমস্যা ছাড়াই পৃথক ভাবে একটু আগে-পরে আমরা ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর সদরের বাজিতখিলায় পৌঁছাই।
নানা আশংকার কারণে এ যাত্রার খবর আগাম কাউকে জানানো হয়নি। কিন্তু শহীদ কামারুজ্জামান এর স্ত্রী ও সন্তানদের আগমণের খবর বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। এমনিতেই প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে মানুষের আনা-গোনা লেগেই ছিল, কিন্তু আজ যেন বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার! মুহুর্তেই চতুর্দিক থেকে গ্রামবাসী নারী-পুরুষের অভাবনীয় ভীড়। সকলের চোখে কান্নার ঢেউ আছড়ে পড়ে তাঁর সন্তানদের দেখে। কে কাকে সান্তনা দেবে? নারীদের বিলাপ ধ্বনিতে ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ। সন্তানরা বাবার জানাজা পড়তে পারেনি, পারেনি শহীদ বাবার কফিন ধরাধরি করে কবরে নামাতে, প্রিয়তম বাবার নিথর কপালে চুমু খেয়ে চোখের জলে শেষ বিদায় দেয়া হয়নি। স্ত্রী পারেনি শেষ সম্ভাষন- বন্ধু বিদায়’ বলতে। আজ তাই নীরব কবরের পাশে দাঁড়িয়ে শত-সহস্র দিনের স্মৃতি বোবা কান্নায় উথলে উঠছে বারবার। শহীদ পরিবারের সাথে হাজারো মানুষের হাত তোলা আহাজারী- হে আল্রাহ তুমি বিচার কর। এই জুলুমের সবচেয়ে বড় স্বাক্ষী তুমি………।
চারিদিক থেকে মানুষের স্রোত ক্রমেই বাড়ছে দেখে শংকিত হলেন কেউ কেউ। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ এসে সৃষ্টি করবে ত্রাস। যেমন করেছিল সেদিন ভোর রাতে। তাই বাবার কবরের পাশে, গ্রামবাসী আপনজনদের সাথে থাকা হয়নি বেশীক্ষণ। আমাদের পৌঁছাতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল বলে শহীদের বড় ভাই কফিল সাহেবের বাড়ীতে আমরা জামান ভাবী, ওয়ামী, ওয়াফী, শাফী এবং আতিয়াকে বিদায় জানাই। কিছুক্ষণ সকল নিকটাত্মীয়দের সাথে কথাবার্তা বলে তারা আবার রওয়ানা হন ঢাকার দিকে।
শহীদ পরিবার চলে যাওয়ার পর আমরা ভাবলাম, এবার মানুষের ভীড় কিছুটা কমবে। কিন্তু স্বল্প সময়েই ভুল ভাঙ্গলো আমাদের। মানুষ আসছে তো আসছেই। ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেন সোহেল এবং আমাদের আরেক সফরসঙ্গী লিটু ভাই সর্বক্ষণ জামান ভাইয়ের নানান স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন।
শহীদ পরিবার কে বিদায় দিয়ে জনতার ভীড় ঠেলে আমরা শহীদ কামারুজ্জামানের প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা প্রাঙ্গনে গিয়ে দাঁড়াই। সে রাতে কেমন করে তাঁর কফিন আনা হয়েছিল, কিভাবে তার জানাজা এবং দাফন সম্পন্ন হয়েছিল, সবিস্তারে জানালেন মাদ্রাসার সুপার মাঝ বয়েসী ভদ্রলোক। তার কাছে পুলিশ ও প্রশাসনের নির্দয় আচরনের বয়ান শুনে অবাক হলাম। একজন মৃত মানুষ ও তার নিরীহ গ্রামবাসীর প্রতি এত অমানবিক আচরণ হতে পারে তা অবিশ্বাস্য! একজন শিক্ষক জানালেন ফাঁসি কার্যকরের একদিন আগে পুলিশ এসে ১ ঘন্টার নোটিশে এতিমখানা খালি করে তালা মেরে দিতে বলে। এই অসহায় এতিমরা হঠাৎ করে কোথায় যাবে! কিছুই পুলিশ বিবেচনায় নেয়নি। তাঁরা কয়েকজন অবস্থান করতে চাইলে পুলিশ সেটারও অনুমতি দেয়নি।
পুলিশের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও তিনি সহ কয়েকজন আশ-পাশে ঘুরাফিরা করে বহু কষ্টে সারারাত অবস্থান করেন। শত শত পুলিশের কড়া বেরিকেডের বাইরে হাজার হাজার গ্রামবাসী সাধারণ নারী-পুরুষ রাত জেগে বিভিন্ন দিকে অবস্থান নেয়। তাদের কান্না, আহাজারী, কাকুতি-মিনতি কোন কিছুই পুলিশের মন গলাতে পারেনি। পুলিশ কাউকেই জানাজা স্থলের কাছে ঘেষতে দেয়নি। বার বার লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দিয়েছে। রাইফেল তাক করে গুলী করার হুমকি দিয়েছে। এক পর্যায়ে গ্রামের শোকার্ত যুবকেরা বুক পেতে দিয়ে পুলিশকে গুলী করার আহবান জানায়। বৃষ্টিস্নাত রাতের আধারে সে এক হৃদয়-বিদারক দৃশ্য। বলতে বলতে ভদ্রলোকের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে। চোখ ছল ছল করে ওঠে আমাদেরও। কল্পনায় নিজেকে আমার সেই যুবকদের একজন ভাবতে ইচ্ছে করে……।
ভীড়ের মাঝে এক কিশোরের দিকে আমার চোখ আটকে যায়। সে আমাদের সামনে এসে বুক চিতিয়ে দাড়িয়ে বলে স্যার, পুলিশ আমাকে বহুবার তাড়িয়েছে। আমি এদিক দিয়ে গিয়ে ওদিক দিয়ে আবার লুকিয়ে লুকিয়ে অন্ধকারে ফিরে এসেছি। শেষ পর্যন্ত আমার সৌভাগ্য হয়েছে জানাজায় হাজির থাকার। ছেলেটার উজ্বল চোখগুলো চিক্ চিক্ করছিল। সে আরও জানালো পুলিশ কফিল চাচাকে (শহীদ কামারুজ্জামানের বড় ভাই) বলেছে মাত্র ২০ জনের তালিকা করার জন্য, উপরের নির্দেশ ২০ জনের বেশী একজনও যেন জানাজায় না থাকে। কফিল চাচা রাগ করে বলেছেন ঠিক আছে আপনারা পুলিশেরাই জানাজা পড়েন, দাফন করেন আমি-আমরা কেউ থাকবোনা। ক্ষোভে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন আমার নিরপরাধ ভাইকে তো আর পাবোনা, আপনারা যা খুশী তা করেন। শহীদের বড় ভাইয়ের এমন দৃঢ় মনোভাবে শেষ পর্যন্ত পুলিশ উপস্থিত ১০০-১৫০ জনকে জানাজা পড়তে লাইন ধরতে বলে। প্রথমে কয়েকজনকে লাশ দেখার জন্য সুযোগ দিলেও পরক্ষণেই কফিনের বাক্স ঢেকে দেয়। সবার পকেট চেক করে মোবাইল বন্ধ করা নিশ্চত করে কোন ছবি তোলা বা ভয়েজ রেকর্ড করা যাবেনা বলে হুশিয়ারী দেয়। সে জানায় পুলিশ বেষ্টনীতে দুরে আটকে থাকা হাজারো জনতা আমাদের পাশাপাশি ৩টি পৃথক জানাজা পড়ে। তাদের গগণবিদারী কান্না ও তাকবীর ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় আকাশ-বাতাস।
এতিমখানার দেয়ালে কয়েকটি রক্তাক্ত হাতের ছাপ আমাদের চোখে পড়লো। জানতে পারলাম শহীদ কামারুজ্জামানের কফিন আনার পর তার বুকের উপর তরতাজা খুন ছড়িয়ে ছিল। কফিনের বাক্স খোলার পর কোন এক তরুণ ছাত্র আবেগ প্রবণ হয়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কাঁদতে কাঁদতে রক্তাক্ত কফিন
জড়িয়ে ধরে। তার হাতে শহীদের যে তপ্ত খুন লেগেছিল এগুলো তারই স্মৃতিচিহ্ন।

ইতোমধ্যে বহু মানুষ আমাদের চারপাশে এসে অবস্থান নিয়েছে। একজন একপাশে একটি টেবিলের উপর একটি শোকবই দেখিয়ে বললো, আসুন এখানে কিছু লিখুন। কি লিখবো! আমি যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, “আমার প্রিয় দায়িত্বশীল, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম ভাই মুহাম্মদ কামারুজ্জামান… এতটুকু লিখে আমার দুচোখ অঝোর ধারায় কান্নার জলে ভরে গেল। কলম আমার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেল। এরপর যা লিখলাম সব এলোমেলো । শুধু এতটুকু মনে আছে শেষে লিখেছি, ‘আমরা অঙ্গীকার করছি শহীদ কামারুজ্জামানের স্বপ্ন এবং নির্দেশিকা ইনশাআল্রাহ আমরা বাস্তবায়ন করবো’। এতিমখানার এককোণে শহীদ কামারুজ্জামানকে বহন করা কাঠের বাক্সটি দেখলাম। দেখে শিউরে উঠলাম, কত সরু বাক্স এটি! জামান ভাইয়ের শরীর এতে সংকুলান হবার কথা নয়, জেল কর্তৃপক্ষ এরকম একটি সংকীর্ণ দূর্বল বাক্সে তার লাশ কিভাবে ঢুকালো! একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানালেন অনেকটা ঠাশাঠাসি করে মৃতদেহ ঢোকানো ছিল আমরা দেখতে পেয়েছি। হায়রে প্রতিহিংসা! এই নির্মমতার ফল একদিন অবশ্যই তারা ভোগ করবে।
কেউ একজন কানে কানে এসে বললো সিভিলে ডি.বি পুলিশের একটি টীম এসেছে, তারা সম্ভবত: এত মানুষ দেখে বিচলিত। এরই মধ্যে আরেক পশলা জনতার ঢল লক্ষ করলাম, জানতে পারলাম টাঙ্গাইল থেকে কয়েকশত মানুষ বাস বোঝাই করে এসেছেন। কবরের পাশে চললো আরেকদফা আর্তনাদ, আরশের পানে চেয়ে সে কি আকুতি। আমি শুধু ভাবছি শহীদেরা কতইনা সৌভাগ্যবান! নাড়ীর সম্পর্কিত না হয়েও নেতার জন্য, ভাইয়ের জন্য কেউ কি এভাবে আবেগে আত্মহারা হতে পারে? টাঙ্গাইল থেকে যারা এসেছে তাদের মাঝে বেশ পরিচিত কয়েকজন কে পেলাম। শহীদ জোবায়েরের বড় সহোদর জাকির ভাই এসে আছড়ে পড়লো আমার বুকে। দু’ভাই জড়াজড়ি করে কাঁদলাম অনেক্ষণ। এক শহীদের কবরগাহে আরেক শহীদের স্মৃতি উপলব্ধি করতে করতেই গাড়ীর হর্ণ কানে এলো।
আমরা সহ সবাই অপেক্ষা করছিলাম হাসান জামিল, তাহকিক, মাবরুর ও রাজু ভাইয়ের জন্য, বুঝলাম ওরাও এসে গেছে। তারা এসে নামতেই অন্যমাত্রার আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হলো। গ্রামবাসীর আরেকদফা আবেগ-উত্তেজনা! তাদের মোনাজাতে কান্নার রোল হৃদয় ছুয়েছে সবার। মোনাজাত শেষে শহীদ কাদের মোল্রা ও মুজাহিদ ভাইয়ের সন্তানদের সাথে হাত ও বুক মেলাবেন সবাই। শুনতে চান তাদের মুখ থেকে কিছু কথা। শেষ পর্যন্ত জনতার দাবীর মুখে তাহকিক ও হাসান জামিল একটি টেবিলের উপর দাড়িয়ে বললেন, "আমরা বিচলিত নই, আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। সত্য একদিন প্রতিষ্ঠিত হবেই ইনশাআল্রাহ"। একজন বয়স্ক মুরুব্বী ইমরোজ ভাই, মেজবাহ ভাই সহ আমাদের কে শহীদ কামারুজ্জামান প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা ঘুরিয়ে দেখালেন। এতিমদের নিয়ে কামারুজ্জামান ভাই যে স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তিনি যেভাবে এ প্রতিষ্ঠানের জন্য নিবেদিত ছিলেন তা বিশদ বর্ণনা করলেন। আমরা তাদের কে আশ্বস্থ করলাম, ইনশাআল্রাহ যে জমিনে শহীদ কামারুজ্জামান শুয়ে আছেন সে জমিন ও প্রতিষ্ঠান একদিন বিশ্ব মুসলমানের জ্ঞান সাম্রাজ্যের বড় কমপ্লেক্স হবে।
ক্রমে যেভাবে মানুষের চাপ বাড়ছে আমরা অনুভব করলাম, এবার আমাদের ফেরা উচিত। তাছাড়া শেরপুরে কামারুজ্জামান ভাইয়ের দুই স্নেহধন্য সহযোগী সিদ্দিক ভাই ও সরওয়ার ভাই জোর করে ধরলেন যাবার সময় কামারুজ্জামান ভাইয়ের স্মৃতি বিজড়িত তাদের (শ্বশুরালয়) বাসায় একটু যেতে হবে। ময়মনসিংহ থেকে সরওয়ার ভাই, ভাবী এবং তার আদুরে দুই রাজপুত্র আমাদের পথ দেখিয়ে শেরপুর নিয়ে যান। আর সিদ্দিক ভাইয়ের যা গল্প শুনেছি তাতে আরও কিছুক্ষণ তাদের সঙ্গ পাওয়ার লোভ সামলাতে পারছিলাম না।
সাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ীতে উঠার জন্য যেই পা বাড়াবো অমনি বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো, জামান ভাইকে রেখে চলে যাবো!
কবরের সাথে লাগানো সবুজ ধানক্ষেতের পাতাগুলো বাতাসে দুলছে। নীল পলিথিনে ঢাকা বালিমাটির কবরখানা যেন আমার ডাকছে। আমি ছুটে গেলাম আবার কবরের পাশে, হু হু করে বুকভেঙ্গে কান্না নেমে এলো। মাথা নীচু করে মহান রাব্বুল আ’লামীনের কাছে কিছু বলতে ইচ্ছে করলো। বিড় বিড় করে বললাম, হে আল্রাহ জামান ভাইকে রেখে যাচ্ছি, আবার কখন আসবো জানিনা। তোমার প্রিয় শহীদ কে তুমি বুঝে নাও, ফেরত দিও আবার বেহেশতের বাগানে ।




লেখকঃ 
মজিবুর রহমান মন্জু । নির্বাহী কর্মকর্তা-দিগন্ত মিডিয়া ।

শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৫

লাঞ্ছনার উপযুক্ত জবাব দিন, সিটি নির্বাচনের ব্যালটে ।

প্রজন্ম ? হাহ । প্রজন্ম তুমি অদ্ভুত ! তুমি ৭১ এর ধর্ষণ দেখো, তুমি হেফাজতের একজন মহিলা সাংবাদিককে ধাওয়া করা দেখো, তুমি শুধু দেখোনা বুকে জয়বাংলার চেতনা ধারণ করা এইসব নরপশুদের, যারা এই একবিংশ শতাব্দীতে তোমার দেশের নারীদের সম্ভ্রমহানী করে প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার মানুষের মাঝে । এইবেলায় তুমি অন্ধ ।
মেয়েটি ঘুরতে বের হয়েছিলো স্বামীর সাথে । সেখান থেকে যখন তাঁকে উদ্ধার করা হয় গায়ে কোন শাড়ি ছিল না মেয়েটির । স্বামীকে মারা হচ্ছিল বেধড়কভাবে । সম্ভ্রম বাঁচাতে উদ্ধারকারীদের মধ্যে একজন মেয়েটিকে তাঁর গায়ের পাঞ্জাবী খুলে পরিয়ে দেন । তাদের মধ্যে একজন তখন বলছিলো এমন দৃশ্য আর পাওয়া যাবে না । ভিডিও করেন তাড়াতাড়ি । ভিডিও করা হয় ।

একজন মা তার ছোট ছেলে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন টিএসসিতে । ভীড়ের মধ্যে লীগের ছেলেদের হাতে যখন পড়লেন তখন তিনি চিৎকার করে বলছিলেন- ভাই,আমার সাথে আমার বাচ্চা আছে, আমাকে ছেড়ে দেন । কিন্তু তাকে ছাড়া হয়নি । অসংখ্য হাত তার শরীরে । বাচ্চাগুলো চিৎকার করছে । ভয়ে একটি বাচ্চা অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে ।

এমন আরও অনেক ঘটনাই বছরের শুরুতে ঘটেছে  টিএসসিতে । হতভাগ্য মেয়েগুলোকে ঘিরে উচ্চস্বরে বাজানো হচ্ছিল ভুভুজেলা । আর্তচিৎকার যাতে বাইরে শোনা না যায় ।

১৯ টি সিসিটিভি ক্যামেরা।  তারপরও পুলিশের হাতে নাকি কোনও প্রমাণ নেই । কেউ ধরা পড়ে নি । ধরা পড়েছিলো যে কজন তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে । কারণ তারা সরকারী দল আওয়ামীলীগের ।
এড়িয়ে গেল মিডিয়া । মেইন্সট্রিম মিডিয়াতে নেই তেমন তোলপাড় । কারণ, মিডিয়া আওয়ামী সরকারের দালাল । এভাবেই এই সরকার আমাদের দেশকে ধরংস করছে বিভিন্নভাবে ।
পৃথিবীর অন্য কোনও দেশে এরকম ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে সরকারের পতন হয়ে যেতো । আমাদের দেশে তা হবেনা । পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য বর্বর এই দেশ । এদেশের চেতনাধারী তরুণ প্রজন্মের কাছে তাদের ঘরের মা-বোন ভয়ে ভয়ে থাকে । আমি নিশ্চিত ।

প্রধানমন্ত্রী একজন নারী । ভাবতে লজ্জা হয় । তিনি তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখবার জন্য এইসব পার্ভার্ট নরপশুদের লালন করেন । তার শেল্টারে ওরা নিরাপদে এই কাজগুলো করতে সাহস পায় । পশুগুলো জানে, তাদের কিছুই হবেনা । আমি ছাত্রলীগ করি, এইকথা বলে সবকিছু জায়েজ করা যায় । মানুষ জবাই থেকে শুরু করে যখন যেকোনো মেয়েকে ইচ্ছে তাকে নিয়ে বিকৃত সুখ পাওয়া যায় । ইচ্ছে করলেই যা ইচ্ছে তাই করা যায় ।

আমার এখন আর কোনও ভাষা নেই । আওয়ামী তালেবর লেখকেরা এখন কিছু বলছেন না । উনারা প্রগতীশীলতা মনে করছেন এটিকে । মুখের মধ্যে ঠুসি পরে বসে আছেন । নারীবাদীরা একটা শব্দও উচ্চারণ করছেন না । ধিক্কার জানাই সেইসব নারীবাদীদের ।

বিবস্ত্র কি শুধু ছাত্রলীগই করে, আর এটা কি শুধু মহিলাদের বেলাতেই প্রযোজ্য ?
পুরুষদের কি শ্লীলতা হানি নাই ?
বর্তমান পুলিশ, আওয়ামী মন্ত্রী, ছাত্রলীগ, সাংবাদিক সহ ষাঁড় গংরা একই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী । পার্থক্য হলো ষাঁড়ের মতো সুক্ষ্ণ বুদ্ধির শাহাবিগীরা কচি মেয়েদের সংস্পর্শে সুক্ষ্ণ অনুভূতির স্বাদ নেয়, পুলিশ আর ছাত্রলীগের মতো মোটা বুদ্ধির শাহাবাগীরা পুরো স্বাদ নিতে চায় ।

 ছোট কয়টা প্রশ্ন জাগে : ১) চল্লিশ মিনিট ধরে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে অপরাধ করে যাবার ক্ষমতা যে সংঘবদ্ধ দলের থাকতে পারে তারা কারা ? তাও ঢাকা ইউনিভার্সিটির মতো জায়গায় ? আপনারা যে কোনো দশজন লোক পরবর্তী কোন জাতীয় দিবসে ভীড়ের সুযোগ নিয়ে চেষ্টা করে দেখবেন তো টিএসসি-সোহরাওয়ার্দী এলাকায় দাঁড়িয়ে বিশ মিনিট এই কর্ম করে টিকে থাকতে পারেন কিনা । এই তিরিশটা ছেলের শক্তির উৎস তাহলে কোথায় ?
২) অভিযোগ উঠেছে দুইজনকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার পরও ছেড়ে দেয়া হয়েছে । কেনো ?
৩) মাননীয় প্রধানমণ্ত্রী কি এই ঘটনায় একটা কঠিন এবং কড়া উদ্যোগ নিয়ে আমাদের বোঝাতে পারেন বাংলাদেশের উপর আশা রাখার কিছু সুযোগ এখনও আমাদের আছে ?
মঙ্গল শোভাযাত্রায় কেন অমঙ্গল ঘটলো ? মা বোনদের বলতে চাই- এই লাঞ্ছনার উপযুক্ত জবাব আপনারা দিন সিটি নির্বাচনের ব্যালটে ।

শারঈ' মানদন্ডে দোয়া-যিকির, হজ্জ ও উমরা


শারঈ' মানদন্ডে দোয়া-যিকির, হজ্জ ও উমরা
" উৎসর্গ "
আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতা বিশ্বের অগনন মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে কারাবন্দী করার কারনে বেদনাহত হয়ে রত্নগর্ভা আমার মমতাময়ী দাদী বেগম গুলনাহার ইউসুফ ইন্তেকাল করেন । আমার বড়ভাই মুফাসসীরে কুরআন মাওলানা রাফীক বিন সাঈদী আব্বার বিরুদ্ধে আনিত শতাব্দীর নিকৃষ্ট মিথ্যা অভিযোগ শুনানিকালে ট্রাইবুনালেই হার্ট এটাক করে ইন্তেকাল করেন । আব্বার বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সারা দেশে ২৪৭ জন কুরআন প্রেমিক জনতা শাহাদাত বরন করেন । অগণিত মানুষ আহত ও পঙ্গুত্ব বরন করেন । ম্ফান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শাহী দরবারে এ সকল মানুষের অসীম ত্যাগের সর্বউত্তম বিনিময় কামনায় এ গ্রন্থটি তাদেরকে উৎসর্গ করলাম ।

সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৫

"শুভ নববর্ষ"

সকলকে "শুভ নববর্ষ"
বাংলার ভাগ্যাকাশ থেকে কাল বৈশাখীর ঘনঘটা বিদুরিত হয়ে কুরআনের আলোয় জগত উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে, এদৃশ্য মুক্ত অবস্থায় প্রানভরে উপভোগ করার তাওফিক আল্লামা সাঈদীসহ সকল নেতৃবৃন্দকে মাহান আল্লাহ তায়ালা এনায়েত করুন । আমীন ইয়া রব ।

মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও যে কারণে ওরা ভি দেখায় !



ওরা অবাক হয়, ক্ষণিকের তরে হলেও ওদের কুৎসিত খুনপিপাসু জিঘাংসা ভরা মন বিস্মিত হয় – কেন কাদের মোল্লা, কামরুজ্জামান, মীর কাশেমরা ভি দেখায়, কেন নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ওরা জীবন ভিক্ষা চায় না, কেন ওদের স্ত্রী-সন্তানেরা বিজয়ের বার্তা শোনায়, কেন ওদের চোখে পানি আসে না, কেন ওরা উন্মাদের মত ছটফট না করে বিকেলের নীল সাগরের মত শান্ত থাকে, ওরা জবাব পায় না।

ওরা চেষ্টা করে, ওরা নানা কৌশল খাটায়, নাটক করে, মহান নেতাকে ওরা মচকানোর তদবির করে। কিসের তৈরি এরা, জানার জন্য ওদের মন আকুলি বিকুলি করে। এই মহাবিশ্বের মহান সৃষ্টিকর্তার সাথে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় উদগ্রীব নেতার, নেতার পরিবারের, আনুসারীদের আচরনে সত্য প্রকাশের ভয়ে ওরা ভড়কে যায়, শংকিত হয়। ওদের বিকৃত মস্তিষ্ক নানা ব্যাখ্যা দাড় করায়, কিন্তু ওদের মন ভরে না। ওরা ভাবে, এই রকম তো হওয়ার কথা ছিল না।

ওরা জানে না আগেও ক্ষমতার লোভে অন্ধ ওদের পূর্বসূরিরা এই প্রশ্ন গুলোর জবাব জানতে পারেনি যাদের অন্তরে মহান প্রতিপালক সিলমোহর মেরে দিয়েছিলেন। ওরা জানেনা যে, মহান দয়াময় রহমানুর রাহিম আজ থেকে চোদ্দশত বছর আগেই এই ভি চিহ্নের জবাব তার পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরাআনে দিয়ে রেখেছেন। ওরা জানেনা যে, মোল্লা- জামান-আলীরা পবিত্র গ্রন্থের এই আয়াতটি মনে মগজে খোদাই করে নিয়েছে- “প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ‌ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন।

তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে। তাদের প্রতি তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে(জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ। আর আল্লাহর চাইতে বেশী নিজের ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে? কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সে জন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।” (সূরা আত তাওবা-১১১ নং আয়াত)

এই বড় সাফল্য সুনিশ্চিত ভাবে পেয়ে যাওয়ার কারনেই কাদের মোল্লা, কামরুজ্জামান, মীর কাশেমরা ভি সাইন দেখায়, তাদের স্ত্রী ও সন্তানেরা দীপ্ত কণ্ঠে উচ্চারন করে তাদের স্বামী আর পিতার কথা, কর্মীরা গর্বিত উচু শিরে চলে নেতার আদর্শের পথে, জন্ম হয় লাখো কাদের মোল্লার।

হাসান জামিলঃ কাদের মোল্লার ছেলে

কামারুজ্জামানের দন্ড মিডিয়ার উল্লাস ও বিপরীত চিত্র


ফাঁসি কার্যকরের আগে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান কতগুলো উক্তি করে গেছেন। উক্তি গুলোতে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনেক বার্তা রয়েছে। প্রাণ ভিক্ষার ব্যাপারে তিনি সুস্পস্ট বলেছেন জীবনের মালিক একমাত্র আল্লাহ। মানুষের জীবনের মালিক অন্য কেউ নয়। তিনি জানতেন ফাঁসি নিশ্চিত। কয়েক ঘন্টা পরই কার্যকর হবে সেই দন্ড। সেটা জানার পরও তিনি স্পস্ট ভাষায় পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দিলেন আল্লাহ ছাড়া জীবনের মালিক আর কেউ নয়। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে পরিবারের সদস্যদের বরং তিনি ধৈর্য্য ধারনের পরামর্শ দিলেন। অন্যায় অবিচারের কাছে মাথানত না করে তিনি হাসিমুখে ফাঁসি আলিঙ্গন করলেন। আপসের চোরাবালিতে নিজেকে সপে না দিয়ে শাহাদাতের রাস্তা খুজলেন। 
বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তাঁর স্ত্রীকেও কিছু পরামর্শ দিলেন। বিশেষ করে স্ত্রীকে শান্তনা দিয়ে তিনি বললেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যেতে পারতেন। কোন অসুস্থতা জনিত কারনে তাঁর মৃত্যু হতে পারত। বা অন্য যে কোন কারনেই জীবন চলে যেতে পারে। কিন্তু আল্লাহর দ্বীন কায়েম করতে গিয়ে ফাঁসি আলিঙ্গন করা অত্যন্ত মর্যাদার। স্ত্রীকে তিনি আরো বলেছেন তিনি জানতেন ইসলামী আন্দোলনের পথ অনেক বন্ধুর। এই পথে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়। এসব জেনে বুঝেই তিনি ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর প্রণাপ্রিয় সংগঠনের কর্মীদের তিনি ধৈর্য্য ধারণ এবং জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার পরামর্শ দিয়েছেন। 
এর আগে একই সংগঠনের নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। তিনিও সর্বশেষ আইনি সুযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা বা প্রাণ ভিক্ষা চাননি। তিনিও অবিচল আস্থার প্রমান রেখে বলেছিলেন জীবনের মালিক হলেন একমাত্র আল্লাহ। আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর তাঁর মামলার মূল সাক্ষী মোমেনা বেগমকে নিয়ে কিছু আলোকপাত করেছিলাম। অর্থাৎ মোমেনা বেগমের সাক্ষীর উপর ভিত্তি করেই আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসির আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। মোমেনার জবানী ৩ জায়গায় ৩ রকমের ছিল। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর বহু আগেই মোমেনার একটি জবানবন্দি রেকর্ড করেছিল। সেটা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত ছিল। মামলার ডিফেন্স পক্ষ এটা সংগ্রহ করে আদালতের কাছে পেশ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের সংরক্ষিত জবানবন্দিতে মোমেনার উক্তি হচ্ছে তাঁর পরিবারের হত্যাকান্ডের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। স্বামীর বাড়িতে ছিলেন। যে কারনে পরিবারের সদস্যদের হত্যাকান্ডের বিষয়ে অন্যদের নিকট থেকে শুনেছেন। ট্রাইব্যুনালের মামলার তদন্তকারী সংস্থার কাছে মোমেনার জবানবন্দি একটু ভিন্ন। তবে সেই জবানবন্দিতেও তিনি আবদুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি। আর সর্বশেষ ট্রাইব্যুনালের ক্যামেরা ট্রাইয়ালে এসে মোমেনা আবদুল কাদের মোল্লার নাম বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে তাঁর বর্ণনা এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে বর্ণনা সম্পুর্ন বিপরীত। কোনটা সঠিক বক্তব্য সেটা নির্ধারনের মাপকাটি আসলে কি সেই সূত্র আমার জানা নেই। আমি যতটুকু জানি কাউকে ফাঁসি দিতে হলে সন্দেহাতীত প্রমাণ থাকতে হয়। একই ঘটনায় সাক্ষী মোমেনার ৩ জায়গায় ৩ রকমের বক্তব্যে ঘটনার সন্দেহাতীত প্রমাণ হয় না- এটাই স্বাভাবিক। তারপরও আপিল বিভাগে এই প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছিল। বর্তমান প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রিভিউ শুনানীতে এ প্রেক্ষিতে বলেছিলেন আমাদের বিশ্বাস হয়েছে বলেই ফাঁসির আদেশ দিয়েছি। 
মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা হয়েছিল একটা দিবালোকের মতই সত্য। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কতৃক মা-বোনদের ইজ্জত হরণ হয়েছে এটাও সত্য। রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু সংগঠন তখন পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে ছিল এটাও সত্য। এজন্য দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামী কখনো ক্ষমা চায়নি, এটাও স্পস্ট। বাংলাদেশের আপামর মানুষের আকাঙ্খা অনুযায়ী স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত হয়েছিল। শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে এই তদন্তের পর চিহ্নিত হয়েছিল ১৯৫ জন। এই ১৯৫ জনকে শিমলা চুক্তির অধীনে মুক্তি দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান নিজে। তারা নিরাপদে পাকিস্তানে চলে গেছেন। দালাল আইন অনুযায়ী কিছু লোকের বিচার হয়েছিল। গ্রেফতার হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার নাগরিক। কিন্তু তখন আবদুল কাদের মোল্লা বা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি কেন? এটাই হচ্ছে প্রশ্ন। তারা যদি এতবড় অপরাধী হয়ে থাকেন তখন তাদের নাম উঠে আসলা না কেন! ৪৫ বছর পর কেন শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা এতবড় অপরাধী হয়ে গেলেন! 
এই বিচারের মানদন্ড নিয়ে আমি কোন প্রশ্ন রাখতে চাই না। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবিষয়ে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছে। আমি শুধু বলতে চাই বিচারের কিছু প্রক্রিয়ায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য নিয়ে। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা চালাকালে সেইফ হাউস নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। এই সংবাদের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন হয়েছিল। সেইফ হাউজের তথ্য নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে সংশ্লিস্ট কয়েজন পুলিশ সদস্যের নাম উঠে এসেছিল। এই পুলিশ সদস্যদের তলব করা হয়েছিল ট্রাইব্যুনালে। ক্যামেরা ট্রাইয়ালে তাদের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। এই সংবাদটির অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হিসাবে ভাবছিলাম আমাকেও তলব করা হবে। ডিফেন্স পক্ষের আইনজীবীরা আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল আমাকে তলব করেননি। সেইফ হাউজের জালিয়াতি প্রমাণ করে বিচারের নামে অভ্যন্তরে আসলে কি ঘটেছে। 
শুধু সেইফ হাইজের জালিয়াতি নয়। এর কিছুদিন পরই ট্রাইব্যুনালের গেইট থেকে আল্লামা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দিতে আসা সূখরঞ্জন বালী নামে একজনকে অপহরণ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। দিনের আলোতে তাঁকে উচ্চ আদালত প্রাঙ্গন থেকে অপহরণ করা হল। অকপটে অস্বীকার করা হল তাঁর অপহরনের ঘটনা। পরবর্তিতে সূখরঞ্জন বালীর অস্থিত্ব পাওয়া গেল ইন্ডিয়ার একটি কারাগারে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তাঁকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সীমান্তের ওপারে ঠেলে দেয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী আটক করে তাঁকে সেই দেশের কারাগারে পাঠায়। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী সুখরঞ্জন বালী ইন্ডিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। 
পরবর্তি ঘটনা আরো ভয়াবহ। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রকাশ হল বিচারপতির স্কাইপ সংলাপ। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় টানা ৫দিন ধারাবাহিক প্রকাশিত হল। ৫ম দিনে ট্রাইব্যুনাল এবং হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ নির্দেশনা দিয়ে পরবর্তি প্রকাশনীতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পর বাকী কথোপকথন আর প্রকাশ হয়নি। বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ সংলাপে উঠে এসেছে বিচারের নামে অভ্যন্তরে আসলে কি ঘটেছে। প্রকাশিত কথোপকথনে দেখা যায় বিচার নিয়ে সরকার, প্রসিকিউশন এবং ট্রাইব্যুনালের মধ্যে এক ধরনের সখ্যতা বিরাজমান। এমনকি সর্বোচ্চ আদালতও এই সখ্যতার বাইরে নয়। ২০১২ সালের কথোপকথনের একটি উক্তিতে দেখা যায় বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন-‘সিনহা বাবু কইছে ডিসেম্বরের মধ্যে তিনডা দিয়া লন, তারপরে আমরা আপনারে এহানে নিয়া আসি।’ বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের উক্তিতে উল্লেখিত সিনহা বাবুই কামরুজ্জামানের রিভিউ পিটিশনের রায় দিয়েছেন। আপিল বিভাগে বিচারের আগে তাঁর প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিলেন আল্লামা সাঈদী এবং আবদুল কাদের মোল্লা। এই অনাস্থা অগ্রাহ্য হয়েছে তাদের বিচারে। যার উপর অনাস্থা ছিল তিনিই বরং মূল রায়টি রচনা করেছেন। 
যে রায় মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় সেই বিচার প্রশ্নাতীত থাকা উচিত ছিল। প্রাণ কেড়ে নেয়ার আগে কামারুজ্জামান তাঁর স্ত্রী সন্তানদের বলে গেছেন যেই ঘটনায় তাঁকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে তার সাথে কোনভাবেই সম্পৃক্ত নন। যারা এই ঘটনা সাজিয়ে তাঁকে ফাঁসির দন্ডে দন্ডিত করেছেন তাদের বিচার চেয়েছেন আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে। 
এদিকে রায় কার্যকরের পর কিছু লোকের উল্লাস প্রচারে মরিয়া মিডিয়াগুলো। উল্লাসের বিপরীতেও একটি চিত্র রয়েছে। সেই চিত্রটিকে বরং ঢেকে রাখতেই তাদের যত প্রচেস্টা। সেই বিপরীত চিত্রকে যারা প্রকাশ করার চেস্টা করছে তাদেরকেই বরং দলীয় মিডিয়া হিসাবে চিহ্নিত করার প্রয়াস চালানো হয়। জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের পর তাঁর গ্রামের বাড়িতে হাজারো মানুষের ভিড় হয়েছে। তাঁর কবরের পাশে হাজারো মানুষের আকুতি দেখা গেছে সোস্যাল মিডিয়ায়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা সদরে কামারুজ্জামানের জন্য গায়েবানা জানাযা হয়েছে। গায়েবানা জানাযা হয়েছে দুনিয়ার বিভিন্ন জনপদে যেখানে মুসলমানের বসতি রয়েছে। বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো এই খবর প্রকাশ করে না। তারা শুধু এক চোখ দিয়ে দেখে। মিডিয়ার দায়িত্ব ফাঁসি দিতে উস্কে দেয়া নয়। মিডিয়ার দায়িত্ব হচ্ছে যেসব ঘটনায় ফাঁসি দেয়া হচ্ছে সেই ঘটনা গুলোর সত্যতা উদঘাটন করা। মিডিয়ার দায়িত্ব হচ্ছে আসল ঘটনা আঙ্গুল দিয়ে মানুষকে দেখিয়ে দেয়া। কিন্তু সত্য চেপে যাওয়াই হচ্ছে যেন বাংলাদেশের এক চোখা মিডিয়াগুলোর মূল কাজ। 
লেখক: অলিউল্লাহ নোমানঃ দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত । 

রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫

নব বর্ষের শুভেচ্ছা ।

তিনি যে আমাদের মাঝে নাই একথা ভুলেও কেন যেন ভুলতে পারিনা ।


মাওলানা রাফীক বিন সাঈদী (রাহঃ) আজ ৪৯ তম জন্ম বার্ষিকী ।
না । আমরা জন্ম দিন পালন করছি না । কিন্তু তার অকাল বিদায় হৃদয়ে যে অবর্ণনীয় রক্তক্ষরণ তা আমার ভাষার তুলিতে প্রকাশ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় ।
আপনাদের রাফিক বিন সাঈদী, আব্বা আম্মার আদরের বুলবুল আর আমাদের সবচেয়ে বড়ভাই শ্রদ্ধাভরে ডাকতাম দাদা । সাঈদী পরিবারের বড় সন্তান । 
তিনি জন্মে ছিলেন ১৯৬৬ সালের ১৩ এপ্রিল বুধবার । 
২৯ জুন ২০১০ আব্বাকে কল্পিত অভিযোগে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বাসা থেকে গ্রেফতার করার পর একের পর এক মামলা দিয়ে কারাবন্ধি করলো । ১৪ টি মামলায় টানা ৪১ দিন বিভিন্ন স্থানে রিমান্ড নিলো । এক পর্যায়ে শতাব্দীর নিকৃষ্ট মিথ্যা, তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের সাজানো মামলা দিলো । সেই থেকে দাদার ভেতরের জগতটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও তিনি কখনো পরিবারের কারো সামনে দুর্বল হতেন না । সুস্থ একটা মানুষ ভেতরে ভেতরে যে একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তা ঘুনাক্ষরে তিনি বুঝতে দেন নি, আমি মোটেই বুঝতে পারি নি । মামলার বিভিন্ন দিক নিয়ে আইনজীবী ও স্বাক্ষীদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন । নিজেকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে পরিবারের সবাইকে সাহস যুগিয়েছেন । 
কোর্ট চলাকালীন প্রতিদিন আমরা চার ভাই বিতর্কিত ঐ ট্রাইবুনালে যেতাম । মুলত; সেখানে গেলে আব্বাকে দেখা যেত, অল্প হলেও কিছু কথা বলা যেত । কিন্তু কোর্ট শেষে দাদাকে প্রায়ই চেহার, চোখ লাল দেখতাম । এখন ধারনা করি, আব্বার বিরুদ্ধে শতাব্দীর নিকৃষ্ট জঘন্য সব মিথ্যাচার গুলো দাদা সইতে পারতেন না । সেদিনও যথারীতি ১৩ জুন ২০১২ কোর্টে নিজেই নিজের গাড়ি চালিয়ে গেলেন কিন্তু ফিরলেন এম্ব্যুলেন্সে । চাপা বেদনা আর ক্ষোভ অভিমান নিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে ।
সবই আছে । তার সেই প্রিয় কালো গাড়িটি, পড়ার টেবিল, কম্পিউটার, বই,র‍্যাক, তার আলমিরা, সবি আছে । যেমন ছিলো তেমনই । শুধু যার জন্য এতো কিছু, তিনি কেবল নেই ।


তিনি যে আমাদের মাঝে নাই একথা ভুলেও কেন যেন ভুলতে পারিনা ।
সারাক্ষন সর্বক্ষণ তিনি আছেন । মনে হয় ছায়ার মতো তিনি আছেন ।
এখন আব্বার সাথে সাক্ষাত হয় মাসে দুবার । প্রতি সাক্ষাতেই আব্বা তাকে স্বরন করেন । এমন একবারও হলো না, যে আব্বা, দাদার কথা বলেন না । 
তার অনুপুস্থিতি আমাদের মাঝে বিরাট শুন্যতা তৈরি করেছে । আল্লাহ যেন তার অসম্পূর্ণ কাজ গুলি আমাদের দ্বারা পূর্ণতা দান করেন ।
ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে মানুষের মনে তার জন্য যে ভালোবাসা পয়দা করে দিয়েছো, সেই তাকে মাটির কবরে তোমার কুদরতি ভালোবাসায় সিক্ত করো । যে সম্মান দুনিয়ায় তুমি তাকে দান করেছো, শেষ বিচারের দিনে মেহেরবানী করে তার সম্মান আরো বাড়িয়ে দিও । নশ্বর এ পৃথিবীতে তুমি তাকে দয়াকরে যে সুখ, শান্তি, আরাম দিয়েছো, চীরস্থায়ী জান্নাতে মায়াকরে তাকে তা দান করো । জান্নাতে তোমার পাশে একটি ঘর দিও । ইয়া আল্লাহ ! তোমাকে বলছি, তুমি ছাড়া কাকেইবা বলবো, তার এই জীবন দানের উত্তম প্রতিদান আমাদেরকে ভিক্ষা দাও ।

সকাল হতেই জনতার ঢল, বুকে কবরের মাটি মাখল ভক্তরা !

সকাল হতেই জনতার ঢল, বুকে কবরের মাটি মাখল ভক্তরা !
অনলাইন ডেস্ক


তুমুল ঝড়-বৃষ্টি। বিদ্যুৎহীনতা। তার উপর বিজিবি-র‍্যাব-পুলিশের কড়াকড়ি। পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেই ঘেঁষতে পারছিল না কেউ।

ফলে রবিবার ভোর রাতে অনেকটাই চুপেচুপেই জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দাফন-কাফন সম্পন্ন হয়ে যায়। যাতে সীমিত সংখ্যক স্বজন ও গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু সূর্য উঠতেই অন্যরকম দৃশ্য !
হাজার হাজার মানুষ আসছে কামারুজ্জামানের কবরে। তাদের কারো চোখে শোকের অশ্রু, কারো চোখে ভয়ার্ত চাহনি। কী করবে, না করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। কেউ কবরে একমুঠো মাটি দিচ্ছে। কেউ কবরের মাটিতে চুমু খাচ্ছে। কেউ আবার কবর জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলছে।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, প্রশাসনিক বাধা যত কাটবে কামারুজ্জামানের কবর ঘিরে জনতার ঢল বাড়বে।
ইতোমধ্যে শেরপুরের চরাঞ্চল থেকে অনেক সাধারণ নারী-পুরুষ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের অনেক জায়গা থেকে কামারুজ্জামানের ভক্তদের রওনা হওয়ার কথা জানা গেছে।
- See more at: http://www.eurobdnews.com/bangladeshi-national-news/2015/04/12/110316#sthash.skflDHeV.dpuf
সকাল হতেই জনতার ঢল, বুকে কবরের মাটি মাখল ভক্তরা !
অনলাইন ডেস্ক


তুমুল ঝড়-বৃষ্টি। বিদ্যুৎহীনতা। তার উপর বিজিবি-র‍্যাব-পুলিশের কড়াকড়ি। পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেই ঘেঁষতে পারছিল না কেউ।

ফলে রবিবার ভোর রাতে অনেকটাই চুপেচুপেই জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দাফন-কাফন সম্পন্ন হয়ে যায়। যাতে সীমিত সংখ্যক স্বজন ও গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু সূর্য উঠতেই অন্যরকম দৃশ্য !
হাজার হাজার মানুষ আসছে কামারুজ্জামানের কবরে। তাদের কারো চোখে শোকের অশ্রু, কারো চোখে ভয়ার্ত চাহনি। কী করবে, না করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। কেউ কবরে একমুঠো মাটি দিচ্ছে। কেউ কবরের মাটিতে চুমু খাচ্ছে। কেউ আবার কবর জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলছে।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, প্রশাসনিক বাধা যত কাটবে কামারুজ্জামানের কবর ঘিরে জনতার ঢল বাড়বে।
ইতোমধ্যে শেরপুরের চরাঞ্চল থেকে অনেক সাধারণ নারী-পুরুষ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের অনেক জায়গা থেকে কামারুজ্জামানের ভক্তদের রওনা হওয়ার কথা জানা গেছে।
- See more at: http://www.eurobdnews.com/bangladeshi-national-news/2015/04/12/110316#sthash.skflDHeV.dpuf
 তুমুল ঝড়-বৃষ্টি । বিদ্যুৎহীনতা । তার উপর বিজিবি-র‍্যাব-পুলিশের কড়াকড়ি । পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেই ঘেঁষতে পারছিল না কেউ ।  ফলে রবিবার ভোর রাতে অনেকটাই চুপেচুপেই জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দাফন-কাফন সম্পন্ন হয়ে যায় । যাতে সীমিত সংখ্যক স্বজন ও গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন । কিন্তু সূর্য উঠতেই অন্যরকম দৃশ্য ! হাজার হাজার মানুষ আসছে কামারুজ্জামানের কবরে । তাদের কারো চোখে শোকের অশ্রু, কারো চোখে ভয়ার্ত চাহনি । কী করবে, না করবে কিছুই বুঝতে পারছে না । কেউ কবরে একমুঠো মাটি দিচ্ছে । কেউ কবরের মাটিতে চুমু খাচ্ছে






বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দাফনের পর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কড়াকড়ি শিথিল করলে তার কবরের পাশে মানুষের ঢল নামে । তারা কামারুজ্জামানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন । এ সময় শোকাতুর এলাকাবাসীর আহাজারিতে সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয় । এলাকাবাসীর মাতম দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যের চোখও অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে ।
এর আগে আজ রোববার সকাল ৫টা ২০ মিনিটে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে । তার প্রতিষ্ঠিত শেরপুর সদর উপজেলার কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার পাশের জমিতে তাকে দাফন করা হয় । এর আগে রোববার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে এতিমখানা মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় । এতে কামারুজ্জামানের ৪/৫জন আত্মীয়সহ শতাধিক মানুষ অংশ নেন । এ সময় আশেপাশে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হলেও আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা বেষ্টনির কারণে তারা জানাজায় অংশ নিতে পারেননি । দাফনস্থলে গণমাধ্যম কর্মীসহ স্থানীয়দেরকে যেতে দেয়া হয়নি ।
শনিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে জেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কুমরী বাজিতখিলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে । তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় । রোববার ভোর ৪টা ১৬ মিনিটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কামারুজ্জামানের লাশ কুমরী বাজিতখিলা গ্রামে এসে পৌঁছে । এ সময় তাঁর বড় ভাই মো. কফিল উদ্দিন প্রশাসনের নিকট থেকে লাশ গ্রহণ করেন । পরে কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানা মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন বাজিতখিলা দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ও কামারুজ্জামানের ভাগ্নি জামাই মাওলানা আব্দুল হামিদ । রোববার ভোর ছয়টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়াকড়ি শিথিল করলে কামারুজ্জামানের কবরস্থানে হাজার হাজার নারী-পুরুষের ঢল নামে । তারা কামারুজ্জামানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন । এ সময় শোকাতুর এলাকাবাসীর আহাজারিতে সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয় । এলাকাবাসীর মাতম দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যের চোখও অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে । বাজিতখিলা ইউনিয়নের মধ্যকুমরী গ্রামের মজিবর রহমান (৪০) ও আব্দুল কুদ্দুস বলেন, তারা নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন । কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনুমতি না দেয়ায় জানাযায় অংশ নিতে পারেননি ।
বাজিতখিলা গ্রামের কামরুল ইসলাম বলেন, কামারুজ্জামানের জানাজায় অংশ নিতে কয়েক হাজার মানুষ এতিমখানার আশপাশে সমবেত হয়েছিলেন কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের জানাজাস্থলে আসতে দেয়নি ।
কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার পরিচালক নূরুল আমিন জানিয়েছেন, জানাজায় শতাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন । কামারুজ্জামানের বড় ভাই আলমাছ আলী (৬৮) কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার ভাই কামারুজ্জামান ছিলেন নিরপরাধ ও নির্দোষ । বিচারের নামে তাকে হত্যা করা হয়েছে । এজন্য যারা দায়ী আল্লাহর কাছে তাঁদের বিচার চাই ।’
কামারুজ্জামানের আরেক বড় ভাই মো. কফিল উদ্দিন বলেন, তার (কামারুজ্জামানের) শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মরদেহ কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার পাশে দাফন করা হয় ।

শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৫

শেষ দুটি ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন কামারুজ্জামান । তার কোন ইচ্ছায় পূরণ করল না কর্তৃপক্ষ ।

মৃত্যুর আগে সরকারের কাছে


শেষ দুটি ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন কামারুজ্জামান । তার কোন ইচ্ছায় পূরণ করল না কর্তৃপক্ষ ।
বিধি অনুযায়ী ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিদের রায় কার্যকরের আগ মুহূর্তে শেষ ইচ্ছা পূরণ করে কারা কর্তৃপক্ষ । একই নিয়মানুযায়ী কামারুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হয় মৃত্যুর আগে তার শেষ ইচ্ছা কী ? এ সময় তিনি ইচ্ছা পোষণ করেন, 
১ । শুক্রবার যেন তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় এবং 
২ । মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর তার সুরতহাল রিপোর্ট শেষে গোসল না করিয়ে যেন পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর বা দাফন করা হয় । 

ফাঁসির মঞ্চেও হাসলেন কামারুজ্জামান

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে।
ফাঁসি কার্যকরের সময় তিনি ফাঁসির মঞ্চে হেঁটে যান এবং ফাঁসি দেয়ার কয়েক মিনিট আগে জল্লাদ এর সাথে হেসে হেসে কথা বলেন বলে কারাগার সূত্রে জানা গেছে। 
কারাসূত্রে আরো জানা যায়, এর আগে শেষ খাবার হিসেবে মুরগির মাংস ও ইলিশ মাছ দিয়ে সাদাভাত খেয়েছেন কামারুজ্জামান।
তার আগে গোসল করেন। এরপর কেন্দ্রীয় কারাগারের পেশ ইমাম মো. মনিরুল ইসলাম কনডেম সেলে গিয়ে তাকে তওবা পড়ান।
এর আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় তার।
রাত ১০ টার পরে কার্যকর করা হয় ফাঁসি।

মা লি ক, তুমি জান্নাতে তোমার কাছে আমার একটি ঘর বানিয়ে দিও ।

[মুহাম্মাদ কামারুজজামান এখন আল্লাহর মেহমান]
মালিক,
মালিক, একটি ঘর বানিয়ে দিও ।
মা লি ক, তুমি জান্নাতে তোমার কাছে আমার একটি ঘর বানিয়ে দিও ।
সে বিভীষিকাময় মহাদিনে, তোমার প্রতিবেশী করে নিও ।

যেদিন কেহ আসবে না কারো কোন কাজে
যেদিন পাপী, পাপের বোঝায় মরবে লাজে ।
পুলসীরাত পার হতে গিয়ে, পিছলে যাবে কতো পথিক
আবার কেহ পুন্য নিয়ে, পার হয়ে যাবে ঠিক ঠিক ।
সে মহাদিনে, মহাক্ষনে পার করে তুমি দিও ।

তুমি দিও, হাউজে কাউসারের পাশে স্থান ।
দিও তুমি, শীতল আরশের নিচে সম্মান ।
প্রিয় রাসুলের, প্রিয় উম্মত উৎরে যাবে মহা বিচার ।
পরম আনন্দে, জান্নাতে সাজাবে নব সংসার ।
সে মহা আনন্দে জান্নাতে, নবীর পাশে জায়গা দিও ।

বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৫

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কামারুজ্জামানের সাথে আইনজীবীদের সাক্ষাত

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ রায়ে বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ৫টা ৫১ মিনিটে কারাগারে রায়ের কপি পৌঁছায়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী রায়ের কপি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি নিয়ম অনুযায়ী রিভিউ আবেদন খারিজের রায় কামারুজ্জামানকে পড়ে শোনান।
অন্যদিকে ডিফেন্স আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কামারুজ্জামানের সাথে আইনজীবীদের সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময় আমরা কামারুজ্জামানের সাথে সাক্ষাৎ করব। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি সাক্ষাতের পর বলতে পারব। 
এর আগে আজ বেলা পৌনে ৩টায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা কামারুজ্জামানের রিভিউ রায়ের কপিতে স্বাক্ষর করেন। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী রায় লিখেন এবং অন্য বিচারপতিরা এতে সম্মতি দেন। বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর রায়ের কপি আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। এরপর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রর অফিস থেকে রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
বিকেল ৪টা ৪৬ মিনিটে আপিল বিভাগের সাহকারী রেজিস্ট্রার মোঃ মেহেদী হাসান রায় ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে দেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোঃ আফতাবুজ্জামান রায়ের কপি গ্রহণ করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারপতিরা কামারুজ্জামানের রিভিউ রায় গ্রহণ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বেলা ৫টা ২৮ মিনিটে ট্রাইব্যুরনাল থেকে রায়ের কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া ফ্যাক্সযোগেও রায়ের কপি কারাগারে পাঠানো হয়। রায়ে কপি ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে পাঠানো হয়। আজ বিকেলে কামারুজ্জামানের রিভিউ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়।
গত রোববার মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদনের শুনানি গ্রহণ শেষে সোমবার খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। 
২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুাল-২। ওই রায়ে বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করেন কামারুজ্জামান। গত বছরের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন আদালত। এরপর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত করা হয়। গত ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দায়ের করেন। - See more at: http://dev.dailynayadiganta.com/detail/news/14024#sthash.pjc98xTj.dpuf