সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী (রাঃ) (২য় পর্ব)
উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু অত্যন্ত ধৈর্যের তাঁর পরামর্শ গ্রহন করেন এবং এ পরামর্শে অত্যন্ত খুশি হয়ে বললেনঃ "হে সাঈদ ! এ গুরু দ্বায়িত্ব আমার মতো ব্যক্তির পক্ষে কি পালন করা সম্ভব ? সাঈদ রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু অত্যান্ত দৃঢ়তার সাথে বললেনঃ
"অবশ্যই সম্ভব । আপনার মতো মহান ব্যক্তিত্ব যাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উম্মতে মুহাম্মাদীর নেতৃত্বের গুরুদ্বায়িত্ব দান করেছেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর সাহায্য থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন না । আপনার খোদাভীতির জন্য আল্লাহ আপনাকে একাজ আঞ্জাম দিতে সরাসরি সাহায্য করবেন" ।
উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর খোদাভীতি, মেধা, প্রতিভা এবং যোগ্যতা সম্পর্কে পূর্ব থেকেই অত্যন্ত উচ্চ ধারনা পোষণ করতেন এবং তার প্রতি মুগ্ধ ছিলেন । তাই রাস্ট্র পরিচালনায় তার মতো যোগ্য ও প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বের সহযোগিতার প্রত্যাশায় তাকে হিমসের গভর্নর নিযুক্ত করতে মনস্থ করলেন । কয়েকদিন পরে তিনি সাঈদ রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুকে তার দরবারে ডেকে এনে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন । হিমসের গভর্নর পদের প্রস্তাব পেয়ে সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু খুবই বিব্রত বোধ করলেন এবং বললেনঃ
"হে আমীরুল মু'মিনীন ! আল্লাহর শপথ ! এ কঠিন কাজের মাধ্যমে আপনি আমাকে পরীক্ষায় ফেলবেন না" ।
একথা শুনে উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু একটু রাগান্বিত হয়ে বললেনঃ কী আশ্চর্য ! তোমরা আমাকে খেলাফতের এই কঠিন দায়িত্ব অর্পণ করে নিজেরা ঝামেলামুক্ত থাকতে চাচ্ছো ? আল্লাহর শপথ ! আমি এক মুহূর্তের জন্যেও তোমাকে এ দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারি না" । অতপর তিনি সাঈদ রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুকে আনুষ্ঠানিকভাবে হিমসের গভর্নর নিযুক্ত করেন ।
সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করলেন । হিমসের গভর্নরের দ্বায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার প্রাক্বালে উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু তার জন্য কিছু মাসিক সম্মানি ভাতা নির্ধারনের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন । সাঈদ রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু এ কথা শুনে বললেনঃ
"হে আমীরুল মু'মিনীন, সাধারন নাগরিক হিসেবে আমি যে ভাতা পাচ্ছি, তা-ই আমার জন্য যথেস্ট । এর বেশি কিছু দিয়ে আমি কি করবো" ?
সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু অত্যন্ত সুচারুরূপে এবং দক্ষতার সাথে হিমসের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন । কিছুদিন পর সেখানকার একটি বিশ্বস্ত প্রতিনিধি দল আমীরুল মুমিনীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর সাথে মদীনায় দেখা করতে আসেন । আমীরুল মু'মিনীনের সাথে তাদের গুরুত্বপূর্ণ আলাপ আলোচনা হয় । আলোচনার এক পর্যায়ে উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু প্রতিনিধিদলের কাছে হিমসের অভাবগ্রস্থ লোকদের একটি তালিকা চান, যাতে তাদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দান এবং সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় । প্রতিনিধিদল খলীফার নির্দেশমতো একটি তালিকা প্রস্তুত করে তার নিকট পেশ করেন । অই তালিকায় সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর নামও অন্তর্ভুক্ত ছিলো । উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহীর নাম দেখে প্রশ্ন করলেনঃ
কে এই সাঈদ ইবনে আমের ?
উত্তরে তারা বললেনঃ
তিনি আমাদের গভর্নর ।
একথা শুনে আমীরুল মু'মিনীন অত্যন্ত আশ্চর্যন্বিত হলেন এবং প্রশ্ন করলেনঃ
আপনাদের গভর্নর কি অভাবী ?
তারা বললেনঃ নিশ্চয়ই । আল্লাহর শপথ ! আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের গভর্নরের পরিবারে দিনের পর দিন এমনও অতিবাহিত হয়, যখন তাদের রান্না করার কিছুই থাকে না এবং চুলায় আগুনও জ্বলে না ।
গভর্নর সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর এ অবস্থার কথা শুনে আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন । চোখের পানিতে তার দাড়ি মোবারক ভিজে গেলো । অতঃপর উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর জন্য একহাজার স্বর্ণমুদ্রার থলি এই প্রতিনিধি দলের নিকট হস্তান্তর করে বললেনঃ
"সাঈদকে আমার সালাম পৌঁছবেন এবং বলবেন যে, আমীরুল মু'মিনীনের পক্ষ থেকে আপনার পরিবারের প্রয়োজন পুরনের জন্য বিশেষভাবে এগুলো পাঠানো হয়েছে" ।
প্রতিনিধিদল হিমসে প্রত্যাবর্তন করে গভর্নর সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং আমীরুল মু'মিনীনের দেয়া উপঢৌকন তার সামনে পেশ করলেন । সাঈদ রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু স্বর্ণমুদ্রা গুলো দেখে আতঙ্কিত হলেন এবং অত্যন্ত বিব্রত বোধ করে বললেনঃ ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন ।
আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর উপঢৌকন যেন সাঈদ ইবনে আমের রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর ওপর বজ্রপাতের মতো মনে হলো । সাঈদ ইবনে আমের রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর অবস্থা দেখে তার স্ত্রী খুবই চিন্তিত হলেন এবং জানতে চাইলেনঃ আপনার কি হয়েছে ? মদীনা থেকে আগত প্রতিনিধি দলটি কি আমীরুল মু'মিনীনের মৃত্যু সংবাদ নিয়ে এসেছে ?
সাঈদ ইবনে আমের রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু বললেনঃ তার চেয়েও ভয়াবহ ।
তার স্ত্রী জানতে চাইলেনঃ তাহলে কি মুসলমানদের কোনো যুদ্ধ পরাজয়ের সংবাদ এসেছে ?
তিনি উত্তর দিলেনঃ তার চেয়েও ভয়ানক ।
তার স্ত্রী বললেনঃ তাহলে সেই বিপজ্জনক ও ভয়াবহ সংবাদটি কি ?
সাঈদ ইবনে আমের রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু বললেনঃ "আখিরাতকে বরবাদ করার জন্য দুনিয়া আমার ঘরে ঢুকে পড়েছে এবং আমার পরিবারকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেছে" ।
তার স্ত্রী প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানার আগ্রহ প্রকাশ না করেই বললেনঃ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ মুসীবত থেকে নিজেকে মুক্ত করুন ।
সাঈদ ইবনে আমের রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু স্ত্রীকে বললেনঃ এ ব্যপারে তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে ?
উত্তরে তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই, আমি আপনাকে সহযোগিতা করবো ।
অতঃপর সাঈদ ইবনে আমের রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু প্রতিনিধি দলের নিকট হতে স্বর্ণমুদ্রা গুলো গ্রহন করে তার সবগুলো হিমসের অভাবগ্রস্থ ও দুস্থ মানুষের মাঝে বিতরন করে দিলেন । এঘটনার কিছুদিন পর খালীফাতুর রাশেদীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু হিমসের মুসলমানদের অবস্থা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করার জন্য সিরিয়া যাবার পথে হিমসে যাত্রা বিরতি করেন । হিমসের জনগন পূর্ব থেকেই স্বভাবগতভাবে শাসকবর্গের বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় অভিযোগ উত্থাপনে অভ্যস্ত ছিলো । যে কারনে হিমসকে 'ছোট কুফা' বলে অভিহিত করা হতো । হিমসে আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর শুভাগমনে সেখানের অধিবাসীগন তাকে বিপুল সম্বর্ধনা জানায় । উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু সেখানকার জনগনের কাছে তাদের নতুন গভর্নর সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা স্বভাবসুলভ গভর্নরের বিরুদ্ধে এমন চারটি অভিযোগ পেশ করে, যার প্রত্যেকটি অপরটির চেয়ে গুরুতর ।
সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু সম্পর্কে উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু খুবই উচ্চ ধারনা পোষণ করতেন এবং তার খোদাভীরুতা ও দ্বীনদারি সম্পর্কেও তিনি পরিস্কার ধারনা রাখতেন; কিন্তু এরপরেও তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত এ চারটি গুরতর অভিযোগ শুনে হতভম্ব হয়ে পড়লেন ।
একদিকে জনগনের অর্পিত দায়িত্বের প্রতি নিরপেক্ষতা, অপরদিকে সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর প্রতি ব্যক্তিগত আস্থা ও মহাব্বত আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুকে বিচলিত করে তুললো । পরস্পরবিরোধী এ উভয়বিধ সংকটের মোকাবেলায় আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু কি ভুমিকা গ্রহন করলেন, নিন্মে তা তার যবানীতেই প্রদত্ত হলোঃ
যেহেতু আমি সাঈদ সম্পর্কে খুবই আস্থাশীল, তাই আল্লাহর দরবারে এই বলে প্রার্থনা করিঃ হে আল্লাহ ! তুমি সাঈদের ব্যাপারে আমার উচ্চ ধারনাকে বিলীন করে দিও না ।
অতঃপর আমি গভর্নর এবং হিমসবাসীদের একত্র করে তাদের অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলামঃ
গভর্নর সম্পর্কে তোমাদের প্রথম অভিযোগটি কি ?
তারা বললোঃ তিনি প্রত্যহ তার দফতরে বিলম্বে আসেন ।
আমি এ অভিযোগের জবাব দানের জন্য গভর্নর সাঈদকে আহবান জানালামঃ সাঈদ কিছুক্ষন নীরব থেকে বললেনঃ
"আমি এর উত্তর দেওয়া পছন্দ করছি না, এই জন্য যে, এটি একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যপার । কিন্তু আপনার নির্দেশের কারনে বলতে বাধ্য হয়ে বলছি - আমার ঘরে কাজের কোন খাদেম বা চাকরানী নাই । তাই আমি প্রত্যহ সকালে পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রথমে রুটির জন্য আটা দিয়ে খামির তৈরি করি, তারপর রুটি বানিয়ে অযু গোসল করে দফতরে আসি । এ কারনে অফিসে আসতে আমার সামান্য দেরি হয় ।
অতঃপর আমি জনগনের উদ্দেশ্য করে বললাম- তোমাদের দ্বিতীয় অভিযোগ কি ?
তারা বললোঃ রাতের বেলা কোনো বিশেষ প্রয়োজনে গভর্নরকে ডাকা হলেও তিনি আমাদের ডাকের সাড়া দেন না ।
এ অভিযোগ শুনে গভর্নর সাঈদের উদ্দেশ্যে বললামঃ হে সাঈদ ! এ ব্যাপারে তোমার বক্তব্য কি ?
সাঈদ বললোঃ এটিও আমার একান্ত ব্যক্তিগত । যা আমি জনসমক্ষে প্রকাশ করা মোটেই পছন্দ করছি না । এতদস্বত্ত্বেও আপনার নির্দেশ পালনে আমাকে বলতে হচ্ছে- "আমি দিনকে রাষ্ট্রীয় দ্বায়িত্ব ও জনসাধারনের খেদমতের জন্য এবং রাতকে আল্লাহর এবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছি । তাই রাতে তাদের ডাকের সাড়া দিতে পারিনা বলে দুঃখিত" ।
এরপর আমি তৃতীয় অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলামঃ
তারা বললোঃ সাঈদ ইবনে আমের রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু মাসে একদিন তার কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন ।
গভর্নর সাঈদ উত্তরে বললোঃ "আমীরুল মু'মিনীন ! আমার ঘরে কোন কাজের লোক না থাকায় মাসে একবার আমাকে বাজার করতে হয় । এছাড়া পরনের এই পোশাক ছাড়া আমার আর কোন পোশাক না থাকায় মাসে যেদিন বাজার করি সেদিনই বাজার শেষে এপোশাক পরিস্কার করি এবং তা শুকানো পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হয় । তাই মাসে একদিন কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা ছাড়া আমার উপায় থাকে না" ।
এবার আমি সাঈদ সম্পর্কে জনগনের কাছে শেষ অভিযোগটি জানতে চাইলামঃ
তারা বললোঃ মাঝে মাঝে আমাদের গভর্নর এমন ভাবে অজ্ঞান ও বেহুশ হয়ে পরেন যেন তার পার্শে উপবিষ্ট লোকদেরও চিনতে পারেন না ।
গভর্নর সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু বললোঃ "হে আমীরুল মু'মিনীন ! মুশরিক থাকা অবস্থায় আমি মক্কার এক জনসমুদ্রের মাঝে খুবাইব ইবনে আদি রাদীআল্লাহু তাআল আনহুর শাহাদাতের নির্মম দৃশ্য স্বচক্ষে দেখেছি । কুরাইশরা জীবিত অবস্থায় তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তরবারির আঘাতে টুকরো টুকরো করছিলো আর বলছিলোঃ তুমি কি রাজি আছো / যদি তোমাকে ছেড়ে দিয়ে তোমারই উপস্থিতিতে তোমার পরিবর্তে মুহাম্মদকে হত্যা করি ? উত্তরে খুবাইব রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলছিলেনঃ "আল্লাহর শপথ ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার বিনিময়ে আমি মুক্তি পেয়ে আমার পরিবার-পরিজনের নিকট নিরাপদে ফিরে যাওয়া তো দুরের কথা, পথে হেটে যেতে তার পায়ে একটি কাঁটার আচড় লাগুক তাও আমি সহ্য করতে পারবো না । মুনাফিক জীবন থেকে শহীদি মৃত্যু আমার কাছে অনেক উত্তম" ।
সাঈদ পুনরায় বললোঃ এ করুন দৃশ্যের কথা স্বরন হলেই আমার মনে প্রশ্ন জাগে, কেন আমি সেদিন খুবাইব রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহুকে সাহায্য করিনি ? আল্লাহ ও রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার এই অপরাধকে ক্ষমা করবেন না । এই ভয়ে আমি মাঝে মাঝে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ি এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলি ।
গভর্নর সাঈদের এই উত্তর শুনে আমরা অত্যন্ত মুগ্ধ হলাম । সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর জন্য যিনি সাঈদের প্রতি আমার সুধারনাকে আরো একবার সত্য পরিনত করেছেন ।
আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু মদীনা প্রত্যাবর্তনের কিছুদিন পর সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর কাছে আর্থিক সাহায্য স্বরূপ পুনরায় একহাজার স্বর্ণমুদ্রা পাঠালেন । হিমসে পৌঁছুনর পর সাঈদের স্ত্রী অত্যন্ত আনন্দিত হলেন । তিনি উৎফুল্ল হয়ে স্বামীকে বললেনঃ আপনার এই খেদমতের জন্য আল্লাহ আমাদের যে অর্থনৈতিক প্রাচুর্য দান করেছেন সে জন্য তার প্রতি অশেস শুকরিয়া জানাই । অনেক বিলম্ব হলেও এখন অন্তত আমাদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যাদি ও পানাহারের সামগ্রি মজুদ করুন এবং পরিবারের কাজের জন্য একজন কর্মচারী নিয়োগ করুন ।
সাঈদ রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু তার স্ত্রীকে বললেনঃ এর চেয়েও উত্তম কোনো জিনিস তুমি কি পেতে চাও ?
স্ত্রী জানতে চাইলেনঃ তা কি ?
গভর্নর সাঈদ বললেনঃ এগুলো অভাবগ্রস্থদের মাঝে বিলিয়ে দাও । খাদ্য দ্রব্যাদি ও কর্মচারীর চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ
একটি জিনিস আমাদের দরকার ।
স্ত্রী বললেনঃ তা কী ?
তিনি বললেনঃ আমরা আল্লাহকে কর্যে হাসান দান করতে চাই ।
স্ত্রী বললেনঃ হা তাই করুন । এতে নিঃসন্দেহে আমরা উত্তম পুরস্কারে ভূষিত হবো ।
সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু তার কার্যালয় ত্যাগ করার পূর্বেই এই স্বর্ণমুদ্রাগুলো ভিন্ন ভিন্ন থলিতে ভাগ করে পরিবারের একজনকে দায়িত্ব দিয়ে বললেনঃ এগুলো অমুক গোত্রের বিধবাদের, অমুক গোত্রের ইয়াতীম সন্তানদের, অমুক বংশের দুস্থ ব্যক্তিদের এবং অমুক বংশের ফকীর মিসকিনের মাঝে বিতরন করে দাও ।