বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০১৫

দুনিয়ার বিনিময়ে আখেরাত ক্রয়


সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী (রাঃ) (২য় পর্ব)
উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু অত্যন্ত ধৈর্যের তাঁর পরামর্শ গ্রহন করেন এবং এ পরামর্শে অত্যন্ত খুশি হয়ে বললেনঃ "হে সাঈদ ! এ গুরু দ্বায়িত্ব আমার মতো ব্যক্তির পক্ষে কি পালন করা সম্ভব ? সাঈদ রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু অত্যান্ত দৃঢ়তার সাথে বললেনঃ
"অবশ্যই সম্ভব । আপনার মতো মহান ব্যক্তিত্ব যাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উম্মতে মুহাম্মাদীর নেতৃত্বের গুরুদ্বায়িত্ব দান করেছেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর সাহায্য থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন না । আপনার খোদাভীতির জন্য আল্লাহ আপনাকে একাজ আঞ্জাম দিতে সরাসরি সাহায্য করবেন"
উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর খোদাভীতি, মেধা, প্রতিভা এবং যোগ্যতা সম্পর্কে পূর্ব থেকেই অত্যন্ত উচ্চ ধারনা পোষণ করতেন এবং তার প্রতি মুগ্ধ ছিলেন । তাই রাস্ট্র পরিচালনায় তার মতো যোগ্য ও প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বের সহযোগিতার প্রত্যাশায় তাকে হিমসের গভর্নর নিযুক্ত করতে মনস্থ করলেন । কয়েকদিন পরে তিনি সাঈদ রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুকে তার দরবারে ডেকে এনে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন । হিমসের গভর্নর পদের প্রস্তাব পেয়ে সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু খুবই বিব্রত বোধ করলেন এবং বললেনঃ
"হে আমীরুল মু'মিনীন ! আল্লাহর শপথ ! এ কঠিন কাজের মাধ্যমে আপনি আমাকে পরীক্ষায় ফেলবেন না"
একথা শুনে উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু একটু রাগান্বিত হয়ে বললেনঃ কী আশ্চর্য ! তোমরা আমাকে খেলাফতের এই কঠিন দায়িত্ব অর্পণ করে নিজেরা ঝামেলামুক্ত থাকতে চাচ্ছো ? আল্লাহর শপথ ! আমি এক মুহূর্তের জন্যেও তোমাকে এ দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারি না" । অতপর তিনি সাঈদ রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুকে আনুষ্ঠানিকভাবে হিমসের গভর্নর নিযুক্ত করেন ।
সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করলেন । হিমসের গভর্নরের দ্বায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার প্রাক্বালে উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু তার জন্য কিছু মাসিক সম্মানি ভাতা নির্ধারনের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন । সাঈদ রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু এ কথা শুনে বললেনঃ
"হে আমীরুল মু'মিনীন, সাধারন নাগরিক হিসেবে আমি যে ভাতা পাচ্ছি, তা-ই আমার জন্য যথেস্ট । এর বেশি কিছু দিয়ে আমি কি করবো" ?  
সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু অত্যন্ত সুচারুরূপে এবং দক্ষতার সাথে হিমসের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন । কিছুদিন পর সেখানকার একটি বিশ্বস্ত প্রতিনিধি দল আমীরুল মুমিনীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর সাথে মদীনায় দেখা করতে আসেন । আমীরুল মু'মিনীনের সাথে তাদের গুরুত্বপূর্ণ আলাপ আলোচনা হয় । আলোচনার এক পর্যায়ে উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু প্রতিনিধিদলের কাছে হিমসের অভাবগ্রস্থ লোকদের একটি তালিকা চান, যাতে তাদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দান এবং সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় । প্রতিনিধিদল খলীফার নির্দেশমতো একটি তালিকা প্রস্তুত করে তার নিকট পেশ করেন । অই তালিকায় সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর নামও অন্তর্ভুক্ত ছিলো । উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহীর নাম দেখে প্রশ্ন করলেনঃ
কে এই সাঈদ ইবনে আমের ?
উত্তরে তারা বললেনঃ
তিনি আমাদের গভর্নর
একথা শুনে আমীরুল মু'মিনীন অত্যন্ত আশ্চর্যন্বিত হলেন এবং প্রশ্ন করলেনঃ
আপনাদের গভর্নর কি অভাবী  ?
তারা বললেনঃ নিশ্চয়ই । আল্লাহর শপথ ! আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের গভর্নরের পরিবারে দিনের পর দিন এমনও অতিবাহিত হয়, যখন তাদের রান্না করার কিছুই থাকে না এবং চুলায় আগুনও জ্বলে না  ।
গভর্নর সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর এ অবস্থার কথা শুনে আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন । চোখের পানিতে তার দাড়ি মোবারক ভিজে গেলো । অতঃপর উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর জন্য একহাজার স্বর্ণমুদ্রার থলি এই প্রতিনিধি দলের নিকট হস্তান্তর করে বললেনঃ
"সাঈদকে আমার সালাম পৌঁছবেন এবং বলবেন যে, আমীরুল মু'মিনীনের পক্ষ থেকে আপনার পরিবারের প্রয়োজন পুরনের জন্য বিশেষভাবে এগুলো পাঠানো হয়েছে"
প্রতিনিধিদল হিমসে প্রত্যাবর্তন করে গভর্নর সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং আমীরুল মু'মিনীনের দেয়া উপঢৌকন তার সামনে পেশ করলেন । সাঈদ রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু স্বর্ণমুদ্রা গুলো দেখে আতঙ্কিত হলেন এবং অত্যন্ত বিব্রত বোধ করে বললেনঃ ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন

আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর উপঢৌকন যেন সাঈদ ইবনে আমের রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর ওপর বজ্রপাতের মতো মনে হলো । সাঈদ ইবনে আমের রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর অবস্থা  দেখে তার স্ত্রী খুবই চিন্তিত হলেন এবং জানতে চাইলেনঃ আপনার কি হয়েছে ? মদীনা থেকে আগত প্রতিনিধি দলটি কি আমীরুল মু'মিনীনের মৃত্যু সংবাদ নিয়ে এসেছে ?
সাঈদ ইবনে আমের রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু বললেনঃ তার চেয়েও ভয়াবহ
তার স্ত্রী জানতে চাইলেনঃ তাহলে কি মুসলমানদের কোনো যুদ্ধ পরাজয়ের সংবাদ এসেছে ?
তিনি উত্তর দিলেনঃ তার চেয়েও ভয়ানক
তার স্ত্রী বললেনঃ তাহলে সেই বিপজ্জনক ও ভয়াবহ সংবাদটি কি ?
সাঈদ ইবনে আমের রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু বললেনঃ "আখিরাতকে বরবাদ করার জন্য দুনিয়া আমার ঘরে ঢুকে পড়েছে এবং আমার পরিবারকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেছে"
তার স্ত্রী প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানার আগ্রহ প্রকাশ না করেই বললেনঃ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ মুসীবত থেকে নিজেকে মুক্ত করুন
সাঈদ ইবনে আমের রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু স্ত্রীকে বললেনঃ এ ব্যপারে তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে ?
উত্তরে তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই, আমি আপনাকে সহযোগিতা করবো
অতঃপর সাঈদ ইবনে আমের রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু প্রতিনিধি দলের নিকট হতে স্বর্ণমুদ্রা গুলো গ্রহন করে তার সবগুলো হিমসের অভাবগ্রস্থ ও দুস্থ মানুষের মাঝে বিতরন করে দিলেন । এঘটনার কিছুদিন পর খালীফাতুর রাশেদীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু হিমসের মুসলমানদের অবস্থা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করার জন্য সিরিয়া যাবার পথে হিমসে যাত্রা বিরতি করেন । হিমসের জনগন পূর্ব থেকেই স্বভাবগতভাবে শাসকবর্গের বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় অভিযোগ উত্থাপনে অভ্যস্ত ছিলো । যে কারনে হিমসকে 'ছোট কুফা' বলে অভিহিত করা হতো । হিমসে আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর শুভাগমনে সেখানের অধিবাসীগন তাকে বিপুল সম্বর্ধনা জানায় । উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু সেখানকার জনগনের কাছে তাদের নতুন গভর্নর সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা স্বভাবসুলভ গভর্নরের বিরুদ্ধে এমন চারটি অভিযোগ পেশ করে, যার প্রত্যেকটি অপরটির চেয়ে গুরুতর ।

সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু সম্পর্কে উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু খুবই উচ্চ ধারনা পোষণ করতেন এবং তার খোদাভীরুতা ও দ্বীনদারি সম্পর্কেও তিনি পরিস্কার ধারনা রাখতেন; কিন্তু এরপরেও তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত এ চারটি গুরতর অভিযোগ শুনে হতভম্ব হয়ে পড়লেন । 
একদিকে জনগনের অর্পিত দায়িত্বের প্রতি নিরপেক্ষতা, অপরদিকে সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর প্রতি ব্যক্তিগত আস্থা ও মহাব্বত আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুকে বিচলিত করে তুললো । পরস্পরবিরোধী এ উভয়বিধ সংকটের মোকাবেলায় আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীআল্লাহু তাআলা আনহু কি ভুমিকা গ্রহন করলেন, নিন্মে তা তার যবানীতেই প্রদত্ত হলোঃ 
যেহেতু আমি সাঈদ সম্পর্কে খুবই আস্থাশীল, তাই আল্লাহর দরবারে এই বলে প্রার্থনা করিঃ হে আল্লাহ ! তুমি সাঈদের ব্যাপারে আমার উচ্চ ধারনাকে বিলীন করে দিও না । 
অতঃপর আমি গভর্নর এবং হিমসবাসীদের একত্র করে তাদের অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলামঃ
গভর্নর সম্পর্কে তোমাদের প্রথম অভিযোগটি কি ?
তারা বললোঃ তিনি প্রত্যহ তার দফতরে বিলম্বে আসেন


আমি এ অভিযোগের জবাব দানের জন্য গভর্নর সাঈদকে আহবান জানালামঃ সাঈদ কিছুক্ষন নীরব থেকে বললেনঃ
"আমি এর উত্তর দেওয়া পছন্দ করছি না, এই জন্য যে, এটি একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যপার । কিন্তু আপনার নির্দেশের কারনে বলতে বাধ্য হয়ে বলছি - আমার ঘরে কাজের কোন খাদেম বা চাকরানী নাই । তাই আমি প্রত্যহ সকালে পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রথমে রুটির জন্য আটা দিয়ে খামির তৈরি করি, তারপর রুটি বানিয়ে অযু গোসল করে দফতরে আসি । এ কারনে অফিসে আসতে আমার সামান্য দেরি হয়
অতঃপর আমি জনগনের উদ্দেশ্য করে বললাম- তোমাদের দ্বিতীয় অভিযোগ কি ?
তারা বললোঃ রাতের বেলা কোনো বিশেষ প্রয়োজনে গভর্নরকে ডাকা হলেও তিনি আমাদের ডাকের সাড়া দেন না
এ অভিযোগ শুনে গভর্নর সাঈদের উদ্দেশ্যে বললামঃ হে সাঈদ ! এ ব্যাপারে তোমার বক্তব্য কি ?
সাঈদ বললোঃ এটিও আমার একান্ত ব্যক্তিগত । যা আমি জনসমক্ষে প্রকাশ করা মোটেই পছন্দ করছি না । এতদস্বত্ত্বেও আপনার নির্দেশ পালনে আমাকে বলতে হচ্ছে- "আমি দিনকে রাষ্ট্রীয় দ্বায়িত্ব ও জনসাধারনের খেদমতের জন্য এবং রাতকে আল্লাহর এবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছি । তাই রাতে তাদের ডাকের সাড়া দিতে পারিনা বলে দুঃখিত"
এরপর আমি তৃতীয় অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলামঃ
তারা বললোঃ সাঈদ ইবনে আমের রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু মাসে একদিন তার কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন
গভর্নর সাঈদ উত্তরে বললোঃ "আমীরুল মু'মিনীন ! আমার ঘরে কোন কাজের লোক না থাকায় মাসে একবার আমাকে বাজার করতে হয় । এছাড়া পরনের এই পোশাক ছাড়া আমার আর কোন পোশাক না থাকায় মাসে যেদিন বাজার করি সেদিনই বাজার শেষে এপোশাক পরিস্কার করি এবং তা শুকানো পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হয় । তাই মাসে একদিন কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা ছাড়া আমার উপায় থাকে না"
এবার আমি সাঈদ সম্পর্কে জনগনের কাছে শেষ অভিযোগটি জানতে চাইলামঃ 
তারা বললোঃ মাঝে মাঝে আমাদের গভর্নর এমন ভাবে অজ্ঞান ও বেহুশ হয়ে পরেন যেন তার পার্শে উপবিষ্ট লোকদেরও চিনতে পারেন না । 
গভর্নর সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু বললোঃ "হে আমীরুল মু'মিনীন ! মুশরিক থাকা অবস্থায় আমি মক্কার এক জনসমুদ্রের মাঝে খুবাইব ইবনে আদি রাদীআল্লাহু তাআল আনহুর শাহাদাতের নির্মম দৃশ্য স্বচক্ষে দেখেছি । কুরাইশরা জীবিত অবস্থায় তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তরবারির আঘাতে টুকরো টুকরো করছিলো আর বলছিলোঃ তুমি কি রাজি আছো / যদি তোমাকে ছেড়ে দিয়ে তোমারই উপস্থিতিতে তোমার পরিবর্তে মুহাম্মদকে হত্যা করি ? উত্তরে খুবাইব রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলছিলেনঃ "আল্লাহর শপথ ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার বিনিময়ে আমি মুক্তি পেয়ে আমার পরিবার-পরিজনের নিকট নিরাপদে ফিরে যাওয়া তো দুরের কথা, পথে হেটে যেতে তার পায়ে একটি কাঁটার আচড় লাগুক তাও আমি সহ্য করতে পারবো না । মুনাফিক জীবন থেকে শহীদি মৃত্যু আমার কাছে অনেক উত্তম"
সাঈদ পুনরায় বললোঃ এ করুন দৃশ্যের কথা স্বরন হলেই আমার মনে প্রশ্ন জাগে, কেন আমি সেদিন খুবাইব রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহুকে সাহায্য করিনি ? আল্লাহ ও রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার এই অপরাধকে ক্ষমা করবেন না । এই ভয়ে আমি মাঝে মাঝে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ি এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলি । 
গভর্নর সাঈদের এই উত্তর শুনে আমরা অত্যন্ত মুগ্ধ হলাম । সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর জন্য যিনি সাঈদের প্রতি আমার সুধারনাকে আরো একবার সত্য পরিনত করেছেন ।
আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু মদীনা প্রত্যাবর্তনের কিছুদিন পর সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর কাছে আর্থিক সাহায্য স্বরূপ পুনরায় একহাজার স্বর্ণমুদ্রা পাঠালেন । হিমসে পৌঁছুনর পর সাঈদের স্ত্রী অত্যন্ত আনন্দিত হলেন । তিনি উৎফুল্ল হয়ে স্বামীকে বললেনঃ আপনার এই খেদমতের জন্য আল্লাহ আমাদের যে অর্থনৈতিক প্রাচুর্য দান করেছেন সে জন্য তার প্রতি অশেস শুকরিয়া জানাই । অনেক বিলম্ব হলেও এখন অন্তত আমাদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যাদি ও পানাহারের সামগ্রি মজুদ করুন এবং পরিবারের কাজের জন্য একজন কর্মচারী নিয়োগ করুন ।
সাঈদ রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু তার স্ত্রীকে বললেনঃ এর চেয়েও উত্তম কোনো জিনিস তুমি কি পেতে চাও ?
স্ত্রী জানতে চাইলেনঃ তা কি ?
গভর্নর সাঈদ বললেনঃ এগুলো অভাবগ্রস্থদের মাঝে বিলিয়ে দাও । খাদ্য দ্রব্যাদি ও কর্মচারীর চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ
একটি জিনিস আমাদের দরকার
স্ত্রী বললেনঃ তা কী ?
তিনি বললেনঃ আমরা আল্লাহকে কর্যে হাসান দান করতে চাই ।
স্ত্রী বললেনঃ হা তাই করুন । এতে নিঃসন্দেহে আমরা উত্তম পুরস্কারে ভূষিত হবো ।
সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু তার কার্যালয় ত্যাগ করার পূর্বেই এই স্বর্ণমুদ্রাগুলো ভিন্ন ভিন্ন থলিতে ভাগ করে পরিবারের একজনকে দায়িত্ব দিয়ে বললেনঃ এগুলো অমুক গোত্রের বিধবাদের, অমুক গোত্রের ইয়াতীম সন্তানদের, অমুক বংশের দুস্থ ব্যক্তিদের এবং অমুক বংশের ফকীর মিসকিনের মাঝে বিতরন করে দাও








দুনিয়ার বিনিময়ে আখেরাত ক্রয়

সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী (রাঃ)
এমন মহান ব্যক্তি, যিনি দুনিয়ার বিনিময়ে আখেরাত ক্রয় করে নিয়েছেন । সমস্ত লোভ-লালসা এবং অন্য সবকিছুর চাইতে  তিনি আল্লাহ ও তার রাসুলকে অগ্রধিকার দিয়েছেন ।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম সাহাবী খুবাইব ইবনে আদী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুকে মক্কার কুরাইশ নেতারা বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে বন্ধী করে তানঈম নামক স্থানে নিয়ে গিয়ে অত্যান্ত নির্মম ও অমানুষিক অত্যাচারের মাধ্যমে হত্যা করে । সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী ছিলো মক্কার সেইসব যুবকদের অন্যতম, যারা কুরাইশ নেতাদের আহবানে এই নির্মম ফাঁসির দৃশ্য দেখতে গেয়েছিলো । খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর উপর কুরাইশ নেতৃবৃন্দ অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েও তাকে ইসলাম থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি । পরিশেষে তারা তাকে ফাসিতে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে বদর যুদ্ধের প্রতিশোধ গ্রহন করে ।
তারুন্য উচ্ছল সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী নারী পুরুষের প্রচন্ড ভিড় ঠেলে আবু সুফিয়ান ও সাফওয়ান ইবনে  উমাইরের মতো কুরাইশ নেতৃবৃন্দের পাশে গিয়ে উপস্থিত হয় । খুবাইব ইবনে আদী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর শাহাদাতের দৃশ্য ছিলো অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী । খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর হাত পা শিকলে বেধে ফাঁসির মঞ্চের দিকে অগ্রসর হওয়ারকালে মক্কার নারী পুরুষ শিশু ও যুবকদের দল তাকে ধাক্কা দিতে দিতে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যেতে থাকে । উপস্থিত জনতা করতালি দিয়ে এহত্যা কান্ডে উৎসাহ দিচ্ছিলো । সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী একটি উচু টিলায় দাঁড়িয়ে এ নির্মম দৃশ্য দেখছিলো । জাহেল কুরাইশরা আজ এ হত্যার মাধ্যমে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তাদের সীমাহীন হিংসা-জিঘাংসা চরিতার্থ করছে এবং বদরের যুদ্ধে তাদের নিহতদের হত্যার প্রতিশোধ নিচ্ছে ।
ইতোমধ্যেই তারা খুবাইব ইবনে আদী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুকে ফাঁসির মঞ্চে উপস্থিত করেছে । কাফিরদের জিঘাংসার মন খুবাইবের খুনের নেশায় উম্মাদ হয়ে উঠলো । চারদিকে কাফিররা তুমুল হর্ষধ্বনী দিয়ে হিংস্র ও বর্বর উল্লাসে ফেটে পড়লো । আল্লাহর রাহে নিবেদিত, মজবুত ঈমানী চেতনায় বলীয়ান খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যাওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে উঠলেন । কাফিরদের এ নির্মম নির্যাতনে তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি । প্রচন্ড শোরগোলের মঝে হঠাৎ সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী শুনলো যে, খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর কন্ঠ থেকে একটি শান্ত ও ধীরস্থির, খোদায়ী শক্তিতে বলিয়ান এক তেজোদীপ্ত আওয়াজ বের হলোঃ
"তোমরা অনুমতি দিলে ফাসি দেওয়ার আগে দু'রাকায়াত নফল নামায আদায় করতে চাই"
সাঈদ এ আওয়াজ শোনা মাত্রই প্রবল আগ্রহে ফাঁসির মঞ্চের দিকে তাকালো এবং দেখতে পেলো খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু কিবলামুখী হয়ে দু'রাকায়াত নামাজ আদায় করছেন । কী সুন্দর ও চিত্তাকর্ষক তার সেই নামায ! ধীর স্থীরভাবে স্বল্প পরিসরে তিনি দু'রাকায়াত নামায আদায় করে উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্যকরে বলেনঃ 
"আল্লাহর শপথ ! আমি মৃত্যুর ভয়ে নামায দীর্ঘায়িত করছি, তোমরা এ ধারনা করবে বলে মনে না হলে আমি আমার নামায আরো দীর্ঘ করে পড়তাম" ।
খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর এই দীপ্ত ঘোষণার পরই কালবিলম্ব না করে মক্কার কাফিরেরা তার ওপর সেই পৈশাচিক ও অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে দিলো । মানুষতো দুরের কথা, একটি নির্বোধ পশুকেও কোনো নির্মম পাষণ্ড জীবিত অবস্থায় তার দেহ থেকে প্রতিটি অঙ্গ -প্রত্যঙ্গ একের পর এক কেটে কেটে বিচ্ছিন্ন করার মতো নির্মমতা প্রদর্শন করতে সাহস পাবে না । অথচ তৎকালীন মানুষরুপী সেই ইসলামের দুষমনেরা জীবিত অবস্থায়ই খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর শরীর থেকে তার অঙ্গ -প্রত্যঙ্গ একের পর এক কেটে কেটে বিচ্ছিন্ন  করতে থাকে আর প্রিয়নবী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য বলতে থাকেঃ
তুমি কি রাজি আছো ? যদি তোমাকে ছেড়ে দিয়ে তোমারই উপস্থিতিতে তোমার পরিবর্তে মুহাম্মাদকে হত্যা করি ?
রাসুল প্রমিক খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর শরীর থেকে তখন ভীষণভাবে রক্তপাত হচ্ছিলো; কিন্তু শত পৈশাচিক নির্যাতন ও নিপীড়ন সত্ত্বেও আল্লাহর নির্ভীক সৈনিক, রাসুল প্রেমিক মর্দে মুজাহিদ খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু  ঈমানী দীপ্ত চেতনায় অনড় এবং অটল । তিনি বলিষ্ঠ কন্ঠে উত্তর দিলেনঃ
"আল্লাহর শপথ ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার বিনিময়ে আমি মুক্তি পেয়ে আমার পরিবার পরিজনের নিকট নিরাপদে ফিরে যাওয়াতো দুরের কথা, পথে হেটে যেতে তাঁর পায়ে একটি কাঁটার আঁচড় লাগুক তাও আমি সহ্য করতে পারবো না । মুনাফিকী জীবন থেকে শহীদি মৃত্যু আমার কাছে অনেক উত্তম" ।
তাঁর এই ঈমানী চেতনাদীপ্ত দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা শুনে আগুনে ঘৃতাহুতি দিলে যেমন হয় তেমনি উচ্ছৃঙ্খল কাফিরেরা ক্রোধে উম্মাত্ত হয়ে উঠলো এবং চিৎকার করে বলতে শুরু করলো; তাকে হত্যা করো । তাকে হত্যা করো ।
সাথে সাথে ফাসিকাষ্ঠে দন্ডায়মান জান্নাতের পথযাত্রী খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর ওপরে হিংস্র হায়েনার মতো সদলবলে ঝাপিয়ে পড়লো কাফিরেরা । তীর বর্ষা আর খঞ্জরের আঘাতে তাঁর গোটা দেহকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেললো । এদিকে আল্লাহর পথযাত্রী খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু আকাশের দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কন্ঠে কালেমায়ে শাহাদাত উচ্চারন করছেন এবং ফাকে ফাকে বলছেনঃ
"হে আল্লাহ ! তুমি এদের দেখে রেখো, এদের শক্তি ও প্রতিপত্তিকে ধ্বংশ করে দাও । কাউকে ক্ষমা করো না । এক এক করে এদের সবাইকে শেষ করো"
একথা গুলো বলতে বলতে তিনি শাহাদাতের পাক পেয়ালা পান করে মহান প্রভুর দরবারে চলে গেলেন ।
খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর ঈমানী চেতনা, আল্লাহর প্রতি তাঁর দৃঢ় মনোবল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি প্রানাধিক ভালোবাসা এবং শাহাদাতের এই নির্মম দৃশ্য কাফিরদের পাষাণ হৃদয়ে কোনো রেখাপাত করেনি; বরং তারা আত্ম-অহংকার ও খোদাদ্রোহিতার পথেই ইসলামের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করার জন্য অন্ধভাবে অপচেষ্টা চালাচ্ছিলো । কিন্তু খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর শাহাদাতের নির্মম দৃশ্য যুবক সাঈদের অন্তরে অত্যন্ত গভীরভাবে রেখাপাত করে । মুহূর্তের জন্যেও সে তা ভুলতে পারেনি । সে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নে এবং জাগ্রত অবস্থায় কল্পনার চোখে তাকে দেখতে থাকে । সে যেন দেখতে পায় তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ধীর ও প্রশান্তচিত্তে ফাঁসি কাষ্ঠের সামনে খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু দু'রাকায়াত নামায আদায় করছেন । কুরাইশদের বিরুদ্ধে যে বদদোয়া তিনি করেছিলেন তা যেন তাঁর কর্ণকুহরে ভেসে আসছে । তাঁর মনে হতো যেন আসমান থেকে কোনো বিকট বজ্রধ্বনি কিংবা প্রকান্ড পাথর তাঁর ওপর নিক্ষিপ্ত হচ্ছে । তাই সে মাঝে মাঝে ভঁয়ে আঁতকে উঠতো ।
খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর শাহাদাতের ঘটনা সাঈদের হৃদয়ে এমন একটি বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলো, যা ইতঃপূর্বে সে কখনো অনুভব করেনি । সে বুঝতে পেরেছিলো, যেন শাহাদাত বরনের মাধ্যমে তিনি সাঈদকে এ শিক্ষাই দিয়ে গেলেন যে, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি অগাধ প্রেম ও ভালোবাসাই হলো মুমিন জীবনের প্রকৃত সার্থকতা । সে খুবাইব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর কুরবানী থেকে এটাই বুঝতে পারলো যে, মজবুত ঈমানী চেতনাই মু'মীন জীবনে অলৌকিক ও আশ্চর্যজনক ঘটনা সংঘঠিত করতে সক্ষম করে তোলে । তাঁর অন্তর বার বার এও সাক্ষ্য দিচ্ছিলো যে, যার অনুসারীগন নিজেদের জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও তাদের নবীকে ভালোবাসে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সত্যিকার রাসুল না হয়ে পারেন না ।
সাঈদের হৃদয়ে যখন এসব চিন্তা বিপ্লবী ঝড় সৃষ্টি করছিলো তখন আল্লাহ তাকে ইসলামের জন্য কবুল করলেন । সাঈদ মুশরিকী জিন্দেগীতে আর এক মুহূর্তও অতিবাহিত করা পছন্দ করলো না । সাথে সাথে ছুটে গেলো কুরাইশদের অনুষ্ঠানে । তাদের সামনে দাঁড়িয়ে সে মানুষের হাতে গড়া মূর্তি, দেবতা আর কুরাইশদের পৌত্তলিকতার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা করে ইসলাম কবুলের কথা দৃপ্তকণ্ঠে জানিয়ে দিলো ।
ইসলাম গ্রহন করার কারনে সাঈদ  রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর ওপর নেমে এলো জুলুম নির্যাতন । কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি অন্যান্য সাহাবীদের ন্যায় মদীনায় হিজরত করতে বাধ্য হন । মদীনায় এসে সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে নিজেকে কুরবান করেন । তিনি সর্বদাই প্রিয়নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে নিয়োজিত থাকতেন । খায়বার থেকে শুরু করে সকল জিহাদে তিনি আখেরীনবীর সাথে সাথে ছিলেন । আহমাদ মুস্তফা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাঈদ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন । সাইয়েদুল মুরসালীন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পরও সাঈদ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু আমীরুল মু'মিনীন আবু বকর সিদ্দীক রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু ও উমর ফারুক রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর খিলাফত আমলে সার্বক্ষণিক জিহাদে রত ছিলেন । খালীফাতুল মুসলিমীনদয় তাঁর তাকওয়া ও খোদাভীতি সম্পর্কে খুব ভালো করে জ্ঞাত ছিলেন এবং তাঁর পরামর্শদি গুরত্ব সহকারে গ্রহন করতেন । 
উমর ফারুক রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু যখন খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তিনি তাকে পরামর্শ দেনঃ
"হে আমীরুল মু'মিনীন ! আমি আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি যে, মানুষের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করাকে ভয় করুন । আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে কাউকে ভয় করবেন না । সাবধান ! কথা ও কাজে বৈপরীত্য রাখবেন না । কথা অনুযায়ী যে কাজ করা হয়, তা-ই উত্তম কাজ । আমীরুল মু'মিনীন ! মানুষের কল্যানের জন্য খলীফা নিযুক্ত করা হয়েছে তাই তাদের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য নিজেকে কুরবান করুন । আপনি ও আপনার পরিবারের জন্য যা পছন্দ করেন তাদের জন্যও তা পছন্দ করুন । আর নিজের জন্য যা অপছন্দ করেন, তাদের জন্যও তা অপছন্দ করুন । বাধার পাহাড় অতিক্রম করতে হলেও সত্যের পথে প্রতিষ্ঠিত থাকুন । আল্লাহর জন্য কারও সমালোচনাকে ভয় করবেন না" । -----চলবে--------























মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫

রাজনীতিবীদদের কারাজীবনঃ স্ট্যালিন সরকার

আজ ২৯ জুলাই 
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রথম কারাজীবনের কিছু মজার ঘটনাঃ
১৯৭৩ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে যোগদান করেন আল্লামা সাঈদী । সেই অপরাধে ১৯৭৫ সালে খুলনায় তিনি গ্রেফতার হন । সেদিনটি ছিলো ২৯জুলাই । খুলনার একটি মাহফিল শেষে বাড়ি ফিরতে ছিলেন
আল্লামা সাঈদী । এমন সময় কয়েকজন সাদা পোশাকধারী লোক তাঁকে বললেন, থানায় ডিআইএ-১ বসে আছেন ।
আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায় !
আল্লামা সাঈদী প্রথমে বুঝতে পারেন নি তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে । তাই তিনি বললেন,ডিআইএ কে আমার বাসায় আসতে বলুন । তাদের একজন বললেন অনুগ্রহ করে থানায় চলুন । হুজুর থানায় গিয়ে জানলেন, তাঁকে উপরের
নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়েছে । থানা নির্বাহী কর্মকর্তা তার নিজ বাসা থেকে বিছানা পত্র এনে হুজুরের শোবার ব্যবস্থা করে দিলেন । দুদিন সেই হাজতেই হুজুরকে থাকতে হয় ! সবচেয়ে মজার বিষয়, এই দুইদিন আল্লামা সাঈদী কোন ধরনের পুলিশ পাহারা ছাড়াই থানার পাশের মসজিদে গিয়ে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তেন । নামায শেষে তিনি
নিজেই হাজতে প্রবেশ করতেন । দুইদিন পর,এক হাবিলদারের নেতৃত্বে ৫জন পুলিশ প্রহরায় হুজুরকে ঢাকায় পাঠানো
হয় ! কোন হাজতীকে কোর্টে চালান দেবার সময় নিয়ম হলো,হাতে হাত কড়া পরানো । কিন্তু হুজুরের হাতে কেউ
হাত কড়া পরানোর সাহস করছিলেন না ।
হাবিলদার বলল,আমার চাকরি গেলে যাবে আপত্তি নাই কিন্তু হুজুরের হাতে হাত কড়া পরাতে পারবো না ।
তারপর খুলনা থেকে ট্রেনে করে ঢাকার পথে যাত্রা শুরু করলেন, ৫জন পুলিশ প্রহরায় আল্লামা সাঈদী । 
এখানেও একটি মজার ঘটনা, সারারাত ৫পুলিশ ঘুমে অচেতন ছিল । আর তাদের রাইফেল গুলো পাহারা দেন,স্বয়ং
আল্লামা সাঈদী । তারপর হুজুরকে রাজারবাগ সিআইডি অফিসে নেয়া হয়  ! সেখানে রেখে আসার সময়,ঐ হাবিলদার হুজুরের হাতে ২০টাকা দেন । বলেন, আপনার কাজে লাগতে পারে । তার আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে টাকাটি হুজুর গ্রহন
করেছিলেন । 
৩দিন পর,হুজুরকে কোর্টে তোলা হয় এবং কারাগারে চালান দেয়া হয় । কারাগারে যাবার পর তাঁকে ডিভিশন দেয়া হয় । কিন্তু তার আগে জেলার এসে, হুজুরকে অনুরোধ করলেন কয়েদীদের উদ্দেশ্যে একটি বক্তব্য দিতে । কথায়  আছে,"ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে"। তারপর প্রায় ৪০০ কয়েদির সামনে আল্লাহপাকের কালাম থেকে বক্তব্য প্রদান
করেন আল্লামা সাঈদী । বিকেলে আল্লামাকে নেয়া হলো ৯ নম্বর সেলে । তাঁকে বলা হলো,এই রুমেই জামায়াতের
নায়েবে আমীর মাওঃ আবুল কালাম মোঃ ইউসুফ ২২মাস বন্ধী ছিলেন । তিনি মনে মনে খুশি হলেন, এই রুমে আমার
ওস্তাদ ছিলেন । 

কারাগারে সঙ্গী হিসেবে ৩৫জনকে পেয়েছিলেন আল্লামা সাঈদী । তাদের মধ্যে কেউ ছিলেন জাসদের, কেউ মুসলিম লীগের, আবার কেউ ছিলেন সিরাজ সিকদারের দলের লোক । তাদের মধ্যে মাত্র ৩জন নামায পড়তেন । তাদের কে নিয়মিত কোরআন তেলওয়াত করে শুনাতেন, হাদীস বর্ননা করতেন কখনো ইসলামী জলসা করতেন আল্লামা । 
আর এই কারনে তাদের মধ্য বেশির ভাগ-ই নামাযী হয়ে যায় । ১৯৭৫ সালের ১৫আগষ্ট-এর পট পরিবর্তনের  কিছুদিন
পরে মুক্তিপান আল্লামা দে্লাওয়ার হোসাইন সাঈদী । 

 [স্ট্যালিন সরকারের লেখা, রাজনীতিবীদদের কারাজীবন বই থেকে, সংগৃহিত]

হে আল্লাহ !
তোমার কোরআনের এই খাদেমকে তুমি তোমার গায়েবী মদদ দিয়ে হেফাজত করো । কোরআন তাফসীরের ময়দানে ফিরিয়ে দাও । আল্লাহুম্মা আমীন।

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৫

আয়াতুল কুরসি সম্পর্কে জানুনঃ


‘আল্লাহর কুরসী’ বলতে কি বোঝায় ? আয়াতুল কুরসীর ফযীলত কি ?
উত্তরঃ সুরা বাক্বারাহর ২৫৫ নাম্বার আয়াতকে ‘আয়াতুল কুরসী’ বলা হয় । কুরসী অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্ তাআ’লার পা রাখার জায়গা । আয়াতুল কুরসীতে তাওহীদ, ইখলাস, আল্লাহর ইসমে আযম, আল্লাহর ক্ষমতা ও সিফাত, ‘আল্লাহর কুরসির’ মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় বর্ণিত হয়েছে । এইজন্যে এই আয়াতটি হচ্ছে ক্বুরানুল কারীমের শ্রেষ্ঠ আয়াত এবং সহীহ হাদিসে এই আয়াতটি বিভিন্ন সময়ে পাঠ করার অনেক ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে । অনেকে মনে করেন, আয়াতুল কুরসী হচ্ছে সুরা বাক্বারাহর ২৫৫ ও ২৫৬ নাম্বার, এই দুইটা আয়াত । এটা ভুল ! সুরা বাক্বারাহর শুধুমাত্র ২৫৫ নাম্বার আয়াতটিকেই আয়াতুল কুরসি বলা হয়, ২৫৬ নাম্বার আয়াত আয়াতুল কুরসির অন্তর্ভুক্ত নয় ।
আয়াতুল কুরসী নিয়মিত পড়লে তাবীজ-কবজ, যাদু, চোখের নজর, জিনের আসর বা ক্ষতি ও অন্যান্য বিপদ আপদ থেকে সুরক্ষা করে । প্রত্যেক ফরয নামাযের পরে একবার করে আয়াতুল কুরসি পড়লে মৃত্যুর পরে রয়েছে জান্নাত । শয়তানের প্রভাব এবং ভূত-প্রেত থেকে বাঁচার জন্য আয়াতুল কুরসি পাঠ করা পরীক্ষিত একটি আমল ।
আয়াতুল কুরসী হচ্ছে ক্বুরানুল কারীমের শ্রেষ্ঠ বা সবচাইতে মর্যাদাবান আয়াতঃ
আবু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রাঃ) নবী করিমকে (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ! আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে ? রাসূল (সাঃ) বললেন, “আয়াতুল কুরসি”।
নাসায়ি, আহমাদ ।
প্রত্যেক ফরয সালাত শেষে আয়াতুল কুরসী পাঠ করার ফযীলতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী পাঠ করে মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারবেনা”।
নাসায়ী, ইবনু হিব্বান, হাদীস সহীহ, ইমাম ইবনে হিব্বান ও শায়খ আলবানী ।
ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসী পাঠ করার ফযীলতঃ
(ক) সকাল পর্যন্ত তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হেফাজতকারী (ফেরেশতা) তাকে নিরাপত্তা দেবে ।
(খ) শয়তান তার কাছে আসতে পারবেনা ।
“যখন তুমি বিছানায় ঘুমুতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার উপর সব সময় একজন হেফাযতকারী (ফেরেশতা) নিযুক্ত থাকবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার ধারে কাছেও আসতে পারবে না ।”
সহীহ বুখারী, খন্ড ৬, অধ্যায় ৬১, হাদিস নং- ৫৩০।
মুখস্থ করার টিপসঃ আয়াতুল কুরসির সুন্দর দেখে একটি তেলাওয়াত নিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ বার করে শুনুন। শোনার সাথে সাথে কয়েকবার করে দেখে দেখে পড়বেন। এইভাবে ৩-৪ দিন বা আরো বেশিদিন চেষ্টা করলে ইন শা’ আল্লাহ্ অনেক কম সময়ের মাঝেই আয়াতুল কুরসী বা যেকোন দুয়া বা সুরা সহজেই শিখে ফেলতে পারবেন । তার জন্য দরকার আপনার চেষ্টা ও আন্তরিক ইচ্ছা ।
নিচে আয়াতুল কুরসী, এর উচ্চারণ, অর্থ ও শায়খ সা’দ আল-গামদির তেলাওয়াতের লিংক দেওয়া হলো https://www.youtube.com/watch?v=hAHdNneMdVg
بسم الله الرحمن الرحيم
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
আয়াতুল কুরসীঃ আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়ুল ক্বাইয়ূম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহু মা ফিস্-সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মাং যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইন্দাহু ইল্লা বি-ইয্নিহি। ইয়া‘লামু মা বায়না আয়দীহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহীতূনা বিশাইয়িম্-মিন ‘ইলমিহী ইল্লা বিমা-শা’-আ; ওয়াসি‘আ কুরসি-ইয়ুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ; ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফযুহুম, ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়ুল ‘আযীম ।
বাক্বারাহ ২/২৫৫।
অর্থঃ আল্লাহ ! যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই । যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক । কোন তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না । আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন । তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে যে তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে ? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন । তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন । তাঁর কুরসী সমগ্র আসমান ও যমীন পরিবেষ্টন করে আছে । আর সেগুলির তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না । তিনি সর্বোচ্চ ও মহান ।

_________________________
‘আল্লাহর কুরসী’
‘আল্লাহর কুরসী’ অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্ তাআ’লার পা রাখার জায়গা ।
আল্লাহর কুরসী কত বড় সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন,
﴿وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ﴾
উচ্চারণঃ ওয়াসি‘আ কুরসি-ইয়ুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ ।
অর্থঃ তাঁর (আল্লাহর) কুরসী (অর্থাৎ পা রাখার জায়গা) সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে ।
কুরসী আল্লাহ তাআ’লার বৃহৎ সৃষ্টির একটি । আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা কুরসির বর্ণনায় বলেন যে, আল্লাহর কুরসী আকাশ এবং যমীন পরিব্যপ্ত হয়ে আছে । তার প্রশস্ততা, আকৃতির বড়ত্বতা এবং ক্ষেত্রের বিশালতার কারণে । ভূমণ্ডল এবং নভোমন্ডলের তুলনা কুরসীর সাথে খুবই ক্ষীণ তুলনা । যেমন কুরসীর তুলনা আরশের সাথে দুর্বল তুলনা ।
আবূ যর (রাঃ) বলেন, আমি মসজিদে হারামে প্রবেশ করি । রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একাকি দেখে তার পাশে বসে পড়ি এবং জিজ্ঞাসা করি, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি নাযিল হওয়া কোন আয়াতটি শ্রেষ্ঠ ? তিনি বলেন, “আয়াতুল কুরসী; আল্লাহর কুরসী এতো বড় যে, কুরসীর তুলনায় আসমান এবং যমীন যেন মরূভূমিতে পড়ে থাকা একটি আংটির মতো । আর আরশের শ্রেষ্ঠত্ব কুরসীর প্রতি যেমন মরূভূমির শ্রেষ্ঠত্ব সেই বালার প্রতি”।
[হিল্ইয়াহ, ১/১৬৬, আযামাহ, ২/৬৪৮-৬৪৯, আসমা ওয়াস সিফাত, বায়হাকী, ২/৩০০-৩০১, শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলা সহীহাহঃ ১০৯)]

কর্ণেল তাহেরকে নিয়ে আব্দুন নূর তুষারের যে প্রশ্ন গুলোর উত্তর স্বয়ং জাসদের কাছেও নেই !

কর্ণেল তাহেরকে নিয়ে রোমান্টিক আলাপ দেখলে আমার খুবই অদ্ভুত অনুভূতি হয়।

১. উনি বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় একটি বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা বানিয়েছিলেন। এটা কি আইন সংগত কোন সংস্থা বা সমিতি ছিল?

২. জাসদের সামরিক শাখার তিনি প্রধান ছিলেন। একটি রাজনৈতিক দলের সামরিক শাখা আবার কি জিনিষ?

৩. ৭ ই নভেম্বরে এই বিপ্লবী সৈনিকেরা জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে। জিয়া গৃহবন্দী হবার পর তাকে প্রথম ফোন করেছিলেন, অনুরোধ করেছিলেন তাকে সাহায্যের জন্য। বিপদে পড়লে মানুষ কিন্তু সবচেয়ে বিশ্বস্ত কাউকেই ফোন করে। তার মানে তিনি জিয়ার নিকট এবং তার নিকট জিয়া বড়ই আস্থাভাজন ছিলেন, তাই নয় কি?

৪. জেনারেল খালেদ মোশাররফ , কর্ণেল হুদা ও হায়দারের খুনী কারা? তাদের সাথে কর্ণেল সাহেবের কি সম্পর্ক ছিল?

৫. কোন্‌ রাজনৈতিক দলের নেতা ও সদস্যরা ৭ নভেম্বরে ট্যাংকের উপরে উঠে নাচানাচি করেছিল?

৬. একথা সত্য যে জিয়াউর রহমান তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন একটি প্রহসনমূলক বিচারে। কিন্তু এটাও ঠিক যে সেই বিচার প্রহসনমূলক হলেও , বেআইনী , রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ এর অপরাধে তাহের অবশ্যই অভিযুক্ত হতে পারতেন ।

৮. এখন কেউ যদি একটা এরকম সংস্থা বানাতো, তার কি শাস্তি হতো? তাহলে সেটা কি বিপ্লব না অপরাধ?

৭. মনে করেন দৃশ্যপটে জিয়া নাই, ৭৫ এর খুনীরা নাই। কর্ণেল তাহের যে সশস্ত্র বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন কার সরকারকে হঠিয়ে ক্ষমতা দখলের? কার বিরুদ্ধে তিনি বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা তৈরী করেছিলেন? কোন সরকারকে সামরিক পন্থায় হঠিয়ে তিনি জাসদের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখতেন?

৮. বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার যে পরিমান ‍সদস্য ছিল তাতে একথা সন্দেহ করার যথেষ্ট কারন আছে যে কর্ণেল সাহেব ৭৫ এর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানলে জানতেও পারেন। তিনি কেন ফারুক রশীদের বিরুদ্ধে সৈনিক সংস্থার সদস্যদের ব্যবহার না করে, ব্যবহার করলেন খালেদ মোশাররফের বিরুদ্ধে?

৯. কিন্তু তাকে মহান বিপ্লবী ভাবার কোন কারন আছে কি? জনতার সাথে সম্পর্কহীন, সেপাই দিয়ে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি কোনদিন বিপ্লব হয় না। চে গেভারা বা ক্যাস্ট্রো কিউবান সেনাবাহিনীর সেপাই দিয়ে বিপ্লব করেন নাই, এমন কোন পরিকল্পনাও করেন নাই।

এসব কেবলি প্রশ্ন...

যার কোন যুক্তিসংগত উত্তর জাসদ নেতারা দেন না। তারা কেবল তাহেরের চিঠির লাইন বলেন

”নি:শঙ্ক চিত্তের চেয়ে বড় কোন সম্পদ নাই।”

ණ☛ চিঠির লাইন , কবিতার লাইন হিসেবে ভাল। কিন্তু জাসদ নেতারা সেটা বিশ্বাস করেন বলে তো মনে হয় না। করলে দলভাগ করেছেন কয়বার? করলে তাহেরর পথ থেকে সরে এসে বুর্জয়া হালুয়া পরাটার ভাগ নিতে তো তারা পিছিয়ে নেই। উপস্থাপক আব্দুন নূর তুষারের ফেসবুক থেকে।
http://newsorgan24.com/detail/10914

বুধবার, ২২ জুলাই, ২০১৫

আপনার শিশুকে শিক্ষা দিতে পারেনঃ



১. আপনার শিশুকে কারো কোলে বসতে দিবেন না। এমনকি তার চাচার কোলেও না।

২. সন্তানের বয়স দু’বছরের বেশী হলেই তার সামনে আর আপনি কাপড়চোপড় পাল্টাবেন না।

৩. প্রাপ্ত বয়স্ক কেউ আপনার শিশুকে উদ্দেশ্য করে বলছে: ‘আমার বৌ’, ‘আমার স্বামী’- এটা অ্যালাউ করবেন না।

৪. আপনার শিশু যখন বলছে সে খেলতে যাচ্ছে, কোন্ ধরণের খেলা সে খেলছে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন, উঠতি বয়সি বাচ্চাদের মধ্যে অ্যাবিউজিং প্রবণতা পাওয়া যাচ্ছে।

৫. স্বাচ্ছন্দবোধ করছে না এমন কারো সাথে কোথাও যেতে আপনার শিশুকে জোরাজুরি করবেন না। পাশাপাশি লক্ষ্য রাখুন, আপনার শিশু বিশেষ কোন প্রাপ্ত বয়স্কের ভক্ত হয়ে উঠেছে কিনা।

৬. দারুণ প্রাণচ্ছল কোন শিশু হঠাৎ নির্জিব হয়ে গেলে, তাকে প্রশ্ন করুণ। তার মনের অবস্থাটা পড়তে চেষ্টা করুণ।

৭. বয়:সন্ধি পেরোচ্ছে এমন বাচ্চাকে যৌনমূল্যবোধ সম্পর্কে শিক্ষা দিন। আপনি যদি এ কাজ না করেন, তবে সমাজ তাকে ভুল টা শিখিয়ে দেবে।

৮. কোন ছবি, কার্টুন ইত্যাদি বাচ্চাদের জন্য আনলে আগে তা নিজে দেখুন। কোন বই সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই তা কোমলমতি সন্তানের হাতে দিন।

৯. আপনি নিশ্চিত হন যে আপনি প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অপশন অ্যাক্টিভেট করে রেখেছেন কেবল নেটওয়ার্কে, বিশেষ করে সেই সমস্ত নেটওয়ার্কে যেখানে আপনার শিশু প্রায়শই ভিজিট করে।

১০. তিন বছর বয়স হয়েছে এমন সন্তানকে তাদের ব্যক্তিগত গোপন স্থানসমূহ কিভাবে পরিস্কারপরিচ্ছন্ন রাখতে হয় তা শেখান। সতর্ক করে দিন যেন সেসব এলাকা কেউ স্পর্শ করতে না পারে- নিষিদ্ধদের মধ্যে আপনিও আছেন (মনে রাখবেন চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম এ্যান্ড উইথ ইউ)।

১১. কালো তালিকাভুক্ত করুণ সেই সব বই, গান, মুভি, পরিবার বা ব্যক্তিকে- আপনি মনে করেন যে বা যা আপনার শিশুর মনের সৌন্দর্য নষ্ট করতে পারে।

১২. আপনার শিশুকে ভিড়ের বাইরে গিয়ে দাড়ানোর মূল্যবোধ শেখান।

১৩. আপনার শিশু যদি কারো সম্পর্কে অভিযোগ করে তবে দয়া করে বিষয়টি নিয়ে মুখ বুজে থাকবেন না।

মনে রাখবেন আপনি হয় বাবা মা না হয় বাবা মা হবেন দু’দিন বাদে, যে কোন ব্যথা কিন্তু সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়।

শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা: সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়ার একটি সূবর্ণ সূযোগ



আবু আইয়ুব আনসারি রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখবে অতপর শাওয়ালে ছয়টি রোজা পালন করবে সে যেন যুগভর রোজা রাখল। মুসলিম : ১১৬৪

সাওবান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের রোজা দশ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দু’মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা ।

অপর রেওয়ায়েতে আছে, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য। (যে সৎকাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য হবে তার দশ গুণ। সূরা আন‘আম) আহমদ : ৫/২৮০, দারেমি : ১৭৫৫

হাদিস থেকে যা শিখলাম:
এক. শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত জানা গেল যে, যে ব্যক্তি পুরো রমজান সিয়াম পালনের পর এ রোজা ছয়টি করবে সে যেন সারা জীবন রোজা করল। এ এক বিরাট আমল এবং বিশাল অর্জন।

দুই. বান্দার ওপর আল্লাহর কত দয়া যে তিনি অল্প আমলের বিনিময়ে অধিক বদলা দিবেন।

তিন. কল্যণকাজে প্রতিযোগিতা স্বরূপ এ ছয় রোজার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুস্তাহাব। যাতে রোজাগুলো ছুটে না যায়। কোনো ব্যস্ততাই যেন পুণ্য আহরণের এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে না পারে।

চার. এ রোজা করা যাবে মাসের শুরু-শেষ-মাঝামাঝি সব সময়। ধারাবাহিক ও অধারাবাহিক যেভাবেই করা হোক না কেন রোজাদার অবশ্যই এর সওয়াবের অধিকারী হবে যদি আল্লাহর কাছে কবুল হয়।

পাঁচ. যার ওপর রমজানের রোজা কাজা আছে সে আগে তার কাজা করবে তারপর শাওয়ালের রোজায় ব্রতী হবে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে রমজানের রোজা রাখবে অর্থাৎ পুরোপুরি। আর যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে তো রোজা পুরা করেছে বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় না করে। মুগনি : ৪/৪৪০ তাছাড়া ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরুত্ব রাখে।

ছয়. মহান শরিয়ত প্রণেতা ফরজের আগে-পরে নফল প্রবর্তন করেছেন যেমনঃ ফরজ সালাতের আগে-পরের সুন্নতগুলো এবং রমজানের আগে শাবানের রোজা আর পরে শাওয়ালের রোজা।


সাত. এই নফলসমূহ ফরজের ত্রুটিগুলোর ক্ষতি পূরণ করে। কারণ রোজাদার অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে পারে না যা তার রোজার পুণ্যকে কমিয়ে দেয়।

সোমবার, ২০ জুলাই, ২০১৫

আব্বাকে ছাড়া ১১টি ঈদ ... !



২০১০ সালের ২৯ জুন শহীদবাগের বাসা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আমার আব্বা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের হাস্যকর এক মামলায় গ্রেফতার করে নিয়ে যায় । সেই থেকে কেটে গেছে আজ পাঁচটি বছর । একে একে হারিয়ে গেছে আমাদের জীবন থেকে ১১টি ঈদ । যে মানুষটি বিগত পঞ্চাশটি বছর ধরে বিশ্বব্যাপি বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে, প্রতিটি জনপদের মানুষকে কোরআনের দাওয়াত দিয়েছেন, মানুষকে কোরআনের পথে আহবান করেছেন সেই তিনিই নাকি মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করেছেন !!

হাস্যকর মামলায় গ্রেফতারের পরপরই তথাকথিত যুদ্ধাপরাধসহ আওয়ামী সরকার তাদরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়নের জন্য আমার আব্বার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকা মহানগরীর রমনা থানায় গাড়ি ভাংচুর, গাড়ি পোড়ানো ও পুলিশের কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগে (!) ২টি মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে (!) উত্তরা মডেল থানায় ১টি মামলা, পল্টন মডেল থানায় গাড়ি ভাংচুর, গাড়ি পোড়ানো, পুলিশের কাজে বাঁধা ও রাষ্ট্রপতির গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগে (!) ৩টি মামলা, শেরেবাংলা নগর থানায় যাকাতের ৫ লক্ষ টাকা আত্নসাতের অভিযোগে (!) ১টি মামলা, কদমতলী থানায় বোমা/ককটেল বানানোর অভিযোগে (!) ১টি মামলা, রাজশাহীর মতিহার থানায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যার অভিযোগে (!) ১টি হত্যা মামলা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আয়কর ফাঁকির অভিযোগে (!) মামলা ১টি মামলা দায়ের করে । অন্যদিকে আল্লামা সাঈদীর জন্মভূমি পিরোজপুরে অর্থের প্রলোভন ও ভীতি প্রদর্শন করে ২টি কল্পিত যুদ্ধাপরাধের মামলাসহ মোট ১৩টি মামলা দায়ের করানো হয় । এইসব কল্পিত অভিযোগ আর মিথ্যা মামলায় আমার আব্বাকে টানা ৪১ দিন রিমান্ডে নেয়া হয় । এছাড়া সেফ হোমেও তাকে একদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল । এভাবে টানা রিমান্ডে নিয়ে আমার আব্বার উপর মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে । আল্লামা সাঈদীর মতো একজন কোরআনের দা'ঈ ও সিনিয়র রীজনীতিবিদকে এতোদিন রিমান্ডে নেয়ার বিষয়টিও বিরল এক ঘটনা ।


গ্রেফতার হওয়ার সময় আমার আব্বার বয়স ছিল ৭২ । এই ৭২ বছরের মধ্যে আমার আব্বার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন থানায় কোন মামলা তো বহুদূরের কথা সামান্য একটি জিডিও কোন বিষয়ে ছিলনা । কিন্তু কি আশ্চর্যের বিষয়, ৭২ বছরের মধ্যে যার বিরুদ্ধে একটি মামলাও ছিলোনা সেই তার বিরুদ্ধেই আওয়ামী লীগ গায়ের জোড়ে ক্ষমতায় আসার পরপরই এক এক করে মোট ১৩টি মামলা দায়ের করে !!

আওয়ামী সরকারের রোষানলে কারান্তরীণ অবস্থায়ই আমার আব্বা হারিয়েছেন তার মমতাময়ী প্রিয় মা গুলনাহার ইউসুফ সাঈদী এবং কলিজার টুকরা বড় সন্তান রাফীক বিন সাঈদীকে । মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে একই মাঠে সন্তান হয়ে মায়ের এবং পিতা হয়ে পুত্রের নামাজের জানাজা কারান্তরীন অবস্থায় পড়ানোর মতো দুঃসহ যন্ত্রনা সইতে হয়েছে তাকে । শুধু তাই নয়, মা কিংবা সন্তানের লাশের পাশে এমনকি স্বজনদের সাথেও ব্যাথা ভোলার জন্য সামান্য কিছ সময়ও তাকে কাটাতে দেয়া হয়নি । জানাজা শেষেই মাঠ থেকে আবার তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কারাগারে। আহ্! কী অব্যক্ত বেদনাময় সময়-ই না কাটিয়েছেন আমার আব্বা তখন !!

আসলে বিশ্বব্যাপি আল্লামা সাঈদীর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় দিশেহারা তার আদর্শিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ । শুধুমাত্র এ কারনেই তাঁকে জনগণ থেকে বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী নানাবিধ অপবাদ ছড়ানো হয়েছে । আল্লাহর রহমতে ষড়যন্ত্রকারীদের সকল প্রচেষ্টাই এ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে । তার প্রমান হলো, মিডিয়ার হাজারো প্রপাগান্ডা শেষে সরকারের ইচ্ছামাফিক সাজানো মিথ্যা মামলায় মিথ্যা স্বাক্ষের ভিত্তিতে দেয়া অন্যায় রায়ের পর দেশের আপামর জনতা মিথ্যা রায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে । রায়ের প্রতিবাদে সারাদেশে জীবন দিয়েছে তরতাজা ২৪৭জন নারী-পুরুষ । আল্লাহর মেহেরবানীতে, সরকারের হাজারো ষড়যন্ত্র আর মিডিয়ার পরিকল্পিত শত অপপ্রচারও জনগন থেকে আল্লামা সাঈদীকে বিচ্ছন্ন করতে পারেনি আর পারবেওনা কোনোদিন । 'আল্লামা সাঈদী’ নামটি শুনলেই মানুষের হৃদয় হাহাকার করে ওঠে এখনো । আল্লামা সাঈদীর প্রতি মানুষের এ ভালবাসা তুলনাহীন, এ ভালবাসা উপমাহীন ।

ইসলামের শত্রুদের কাছে এ বিষয়টিই অসহনীয় এবং এ কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন করে ‘আজীবন কারাদন্ডে’ দন্ডিত করে কারাগারের চারদেয়ালের মাঝে বন্দি করে রেখেছে ।

গত পড়শু ছিল ঈদের দিন । আব্বাকে কারাগারে রেখে এটি আমাদের ১১তম ঈদ । আমাদের ঈদ যেন জালিমের কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী । পরম শ্রদ্ধেয় আব্বা কারাগারে থাকা অবস্থাতেই হারালাম কলিজার টুকরা বড় ভাইকে, তেমনি হারিয়েছি প্রিয় দাদীকেও । আমাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ বলতে এখন আর কিছু নেই । আমাদের ঈদের আনন্দ এখন আমরা খুঁজে বেড়াই অতীত স্মৃতির মাঝে । চারপাশের মানুষের ঈদের আনন্দ দেখে আজকাল মাঝে মধ্যে বড় ঈর্ষা হয় । আহারে ! এই ঈদ আনন্দ এক সময় আমাদেরোতো ছিল  !
সরকার আমাদের এই আনন্দটুকুনও কেড়ে নিয়েছে ।

আমার প্রান প্রিয় আব্বার বয়স এখন ৭৭ চলছে ।নানারকম শারিরীক অসুস্থতা নিয়ে কারাগারে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন তিনি । চিকিৎসার অভাবে হাটু ও কোমড়ের ব্যথার তীব্রতা প্রতিদিন বাড়ছেই । আছে ৩৭ বছরের সঙ্গী ডায়াবেটিক আর হার্টের সমস্যাতো রয়েছই । ৭৭ বছর বয়স্ক আমার আব্বা শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও তার মানসিক মনোবল আল্লাহর মেহেরবাণীতে পর্বতসম । আমার বিশ্বাস, লাখো-কোটি কুরআন প্রেমিকের দোয়া ও চোখের পানির বিনিময়ে তিনি অবশ্যই আবারও কুরআনের ময়দানে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ ।

ইনশাআল্লাহ ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের সকল কালো পর্দা ভেদ করে কুরআনের সূর্য আল্লামা সাঈদী অচিরেই সমগ্র জগৎময় পুনরায় পবিত্র কুরআনের কিরণচ্ছটা বিকিরণ করবেন, কুরআনের স্নিগ্ধ আলোয় মুসলমানদের হৃদয় আলোকিত করবেন, অমুসলিমরা তাঁর কণ্ঠ নিঃসৃত পবিত্র কুরআনের অমীয় বাণী শুনে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে ধন্য হবেন, তাঁর বজ্র কন্ঠের প্রতিরোধে ইসলাম বিরোধী শক্তি আবারো থরথর করে কেঁপে উঠবে, সংসদে কিংবা সংসদের বাইরে কোরআন বিরোধী কোন বক্তব্য বা আইন করতে গেলে গর্জে উঠবে এই সিংহ মানব, ঘুমন্ত এই জাতিকে আবারো ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলবেন ঘুম ভাঙানোর পাখি আল্লামা সাঈদী এটাই আমার অন্তরের বিশ্বাস ।

মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০১৫

ইতেকাফের অশেষ ফজিলত

রমজান মোবারকের আজ ১৯টা রোজা শেষ । আর মাত্র একদিন পর রমজানের শেষ দশক শুরু । ২০ রমজানের পর থেকে চাঁদ দেখা অর্থাৎ এমাসের শেষ দিন  পর্যন্ত একটি বিশেষ এবাদত রয়েছে । এবাদতটির নাম এতেকাফ । রোজা সহকারে ২৪ ঘন্টাই মসজিদে অবস্থান ও এবাদত বন্দেগীতে কাটানোকে এতেকাফ বলা হয় । হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিআল্লাহু আনহা বলেছেনঃ রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবছর রমজানের শেষ দশদিন এতেকাফ করতেন । 
এতেকাফের ফজিলত সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এতেকাফকারী সব ধরনের গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকে এবং তার নামে লেখা হয়-সব নেক কাজ সম্পাদনকারীর মতোন সাওয়াব অর্থাৎ এতেকাফ না করলে তার পক্ষে যেসব নেক কাজ করার সুযোগ ছিলো, এখন সেগুলো করতে না পারলেও তাকে সেই পরিমান সাওয়াব দেয়া হয় ।  রমজানের ২০ তারিখের সূর্যাস্তের আগ থেকে তা শুরু করতে হয় আর এতেকাফ শেষ হ্য় ঈদের চাঁদ দেখা গেলে । অর্থাৎ আজ ০৮/০৬/২০১৫ আসরের পর ইফতারীর আগেই মসজিদে অবস্থান নিতে হবে ।
এতেকাফ করা সুন্নাত, তবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু প্রতি বছর রমজান মোবারকের শেষ দশদিন এতেকাফে অতিবাহিত করতেন এবং এক বছর তা ভঙ্গ করায় পরের বছর ২০ দিন এতেকাফ করেছিলেন এজন্য এতেকাফ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা 'আলাল কিফায়াহ" । অর্থাৎ কমপক্ষে একজন মুসল্লীর এতেকাফ  দ্বারাই মহল্লার সবাই দায় মুক্ত হবে । পক্ষান্তরে কেউ এতেকাফ না করলে ওই মসজিদের আওতাধীন মহল্লার সকলকেই জবাবদিহি করতে হবে । 


ইসলামে বৈরাগ্য নেই । মানবতার বন্ধু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা স্পস্ট জানিয়ে দিয়েছেন । পারিবারিক ও সামস্টিক জীবনের কাঠামো বজায় রেখেই মানুসকে আখিরাতের কাজ করতে হবে । কিন্তু স্থায়ী বৈরাগ্য অনুমোদিত না হলেও সাময়িকভাবে নিজের পরিবার ও বৈষয়িক কাজকর্ম থেকে বিমুখ হয়ে পুরোটা সময় নামায, কুরআন তেলাওয়াত, যিকির, তাসবিহ তাহলিল করে কাটানোর ব্যবস্থা এই শরিয়াতে আছে । এতেকাফ সেই সাময়িক বৈরাগ্য । রমজানের শেষ দশদিন পার্থিব সকল কাজকর্ম হতে মুক্ত থেকে মসজিদে এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে অতিবাহিত করা  মুহাম্মাদ (সাঃ)এর উম্মাতের জন্য বিশেষ ব্যাবস্থা । 


এতেকাফ দুনিয়ার প্রতি আসক্তি কমাতে ও আখেরাতের দিকে মনোযোগ বাড়াতে সহায়ক । এজন্য প্রিয়নবী আহমাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ দিয়েছেন । রোজা রেখে শুধু মসজিদে অবস্থান এবং ফরজ নামায গুলো আদায় করলেই এতেকাফের হুকুম পালন হয়ে যায় কিন্তু, উত্তম এইযে, নুনতম সময় বিশ্রাম ও নিদ্রায় কাটিয়ে বাকি পুরো সময় নফল নামা্‌ কুরআন তেলাওয়াত, যিকির, তাসবিহ পাঠে কাটানোর চেস্টা করতে হবে । সাময়িক বৈরাগ্য অনুশীলন এতেকাফের প্রথম তাৎপর্য । দ্বিতীয়তঃ পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখার ধারাবাহিকতা বান্দার মধ্যে আল্লাহপ্রেমের বিশেষ প্রেরনা সৃষ্টি করে । আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ মোতাবেক নিজের দৈহিক চাহিদা ও আচরন সংযত রাখার ফলে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনে বান্দা অনেক উন্নতি লাভ করে । নশ্বর পৃথিবীর আকর্ষণ দুর্বল হতে থাকে - পরজগতের চিন্তা প্রবল হতে থাকে, মহান আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের জন্য তার মধ্যে ব্যাকুলতা বাড়তে থাকে । তারই অভিব্যাক্তি ঘটানো হয় সংসার ও বৈষয়িক জীবন থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহর ঘরে নিরবিচ্ছিন্ন অবস্থানের মধ্য দিয়ে । 

সমগ্র পৃথিবীর একচ্ছত্র মালিক মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার প্রতি বান্দার অনুরাগ ও প্রেমের পরাকাষ্ঠা ঘটে বায়তুল্লাহর হজ্জের মাধ্যমে । আর রমজান মাসের পরই শুরু হয় হজ্জের মৌসুম । এতেকাফের মাধ্যমে বায়তুল্লাহর হজ্জের প্রস্তুতি নিতে থাকে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা । সুতরাং এতেকাফ আল্লাহ প্রেম ও আখেরাত মুখিতার উজ্জল নমুনা । 
আল্লাহ আমাদেরকে সুন্দর ও সুস্থভাবে এতেকাফ পালনের তাওফিক দান করুন । আমিন ।