বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ঈদুল আযহা ও কঙ্কর নিক্ষেপঃ

হজ্জের ধারাবাহিক কাজ
১০ই জিলহজ্জ অর্থাৎ ৯ই জিলহজ্জ রাতে ও ফজর বাদ যা করনীয়ঃ
মুযদালিফায় এসে এশার ওয়াক্তে মাগরিব ও এশা একত্রে (এশার নামাজ কসর) আদায় করে এখানেই খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে হয় । মুযদালিফায় রাত্রী যাপন করা ওয়াজিব । সমগ্র রাত তাসবীহ, তাহলীল, তেলাওয়াত ও দোয়ার মাধ্যমে অতিবাহিত করা উচিত । এখান থেকেই ৩দিনের জন্য সত্তুরটি পাথর সংগ্রহ করতে হয় । মুলত; পাথর ৪৯টি কঙ্কর প্রয়োজন । যদি ১২ তারিখ মিনা ত্যাগ করা না হয়, তবেই অতিরিক্ত ২১টি কংকর রাখতে হয় ১৩ই জিলহজ্জের জন্য । ফযরের নামাজ মুযদালিফায় আদায় করে মিনায় শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হউন । এইদিনে জামারাতুল আকাবা অর্থাৎ বড় শয়তানকে ৭টি পাথর নিক্ষেপ শেষ করে ক্বেরান বা তামাত্তু হজ্জ পালনকারীদের জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব । ভীড়ের কারনে এইদিন করতে না পারলে ১২ জিলহজ্জ সূর্যাস্ত যাবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কুরবানী করা যাবে । কুরবানী হলে চুল কাটাতে হবে এবং এহরাম খুলে সাধারন পোশাক পরিধান করতে পারবেন । এরপর তাওয়াফে ইফাদার জন্য মক্কায় গিয়ে তাওয়াফে যিয়ারত শেষ করে পুনরায় মিনায় প্রত্যাবর্তন করতে হবে ।
 কুরবানী বা দম
কুরবানী করা ওয়াজিব । এটি শুধু হজ্জ আদায়কারীর জন্যই নয়, প্রত্যেক সাম্রথবান মুসলমানদের প্রতিই কুরবানী করা ওয়াজিব । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই তা মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে কবুল হয়ে যায় । হযরত আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেনঃ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বলেনঃ হে ফাতিমা ! তোমার কুরবানীর পশুর কাছে দাঁড়িয়ে থাকো কারন, কুরবানীর পশুর যে রক্ত মাটিতে পড়বে তার পরিবর্তে আল্লাহ তায়ালা পূর্বের গুনাহ গুলো ক্ষমা করে দেবেন । একথা শুনে হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা জানতে চাইলেন,  এ সুসংবাদ কি শুধু নবী পরিবার সদস্যেদের জন্য না সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য ? আখেরী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নবী পরিবারের সদস্য এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য । (জামিউল ফাওয়ায়েদ)
সাহাবায়ে কেরাম নবী মুহাম্মাদূর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জানতে চাইলেন, কুরবানী কোন প্রথা ? মানবতার দূত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এটা তোমাদের জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত । সাহাবায়ে কেরাম বললেনঃ এতে আমাদের জন্য কি সাওয়াব ?্রাহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ পশুর প্রত্যেক পশমের জন্য একটি করে সাওয়াব পাওয়া যাবে । (তিরমিযী) ।

হাজীদের জন্য কুরবানীর অত্যান্ত সুব্যবস্থা করা হয়েছে । হজ্জে গিয়ে কুরবানীর পশু ক্রয় করে কুরবানী দেয়ায় নানা জটিলতা রয়েছে । সৌদি সরকার কুরবানীর অর্থ জমা নিয়ে তাদের নিজেদের উদ্দোগেই কুরবানী করে থাকেন । এব্যবস্থার মাধ্যমে কুরবানী দাতাকে কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় না । অবশ্য কোন হাজী সাহেব যদি চান নিজেই পশু ক্রয় করে কুরবানী দিবেন তাহলে তিনি তাও দিতে পারেন অথবা আপনার এজেন্সীর প্রতিনিধির মাধ্যমে দিতে পারেন ।
১১ই জিলহজ্জ তারিখে করনীয়ঃ
এইদিন সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পর সূর্যাস্তের পূর্বে ৩টি জামারায় ৭টি করে মোট ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয় । ১০ তারিখে তাওয়াফে যিয়ারত করা সম্ভব না হলে এইদিন তাওয়াফে যিয়ারত করতে পারেন । আর তাওয়াফে যিয়ারত করা থাকলে কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে পুনরায় মিনায় যেতে হবে এবং সেখানে রাত যাপন করতে হবে ।
১২ই জিলহজ্জ তারিখে করনীয়ঃ
১১ই জিলহজ্জ তারিখের মতোই তিনটি স্তম্ভে সাতটি করে মোট একুশটি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে । প্রথমে ছোট জামরায়, তারপর মাঝারি জামরায় এরপর জামরাতুল আকাবা অর্থাৎ বড় জামরায় পাথর নিক্ষেপ করে দোয়া করুন । এক্ষেত্রে কোন হাজী যদি বার্ধক্য কিংবা শারিরীক অসুস্থতার জন্য নিজ হাতে কঙ্কর নিক্ষেপে অক্ষম হন তাহলে সে নিজের পক্ষ থেকে কাউকে পাথর নিক্ষেপের দ্বায়িত্ব অর্পণ করতে পারেন । 
আজ মিনা থেকে আপনার আবাসস্থল মক্কায় চলে যেতে পারেন । মনে রাখবেন,  তাওয়াফে ইফাদা ও কুরবানী করা না হয়ে থাকলে এইদিনে অবশ্যই মাগরিবের পূর্বে তাওয়াফ ও কুরবানী সম্পন্ন করতে হবে ।

১৩ই জিলহজ্জ মিনা ত্যাগ না করে থাকলে পুনরায় এখান থেকে পাথর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে যেতে হবে । পূর্বের অনুরূপ ৩টি স্তম্ভে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে । এইদিন যদি কেউ মক্কা ছেড়ে নিজ দেশে অথবা মদীনায় যেতে চাইলে তাকে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে । নারীদের হায়েজ নেফাসের সমস্যা থাকলে তারা বিদায়ী তাওয়াফ না করেই নিজ দেশ বা মদীনায় যেতে পারবেন । 
উল্লেখ্যঃ  তিন স্থানে প্রতীকী শয়তানের প্রতি পাথর বা কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব । কেউ যদি কঙ্কর নিক্ষেপে অক্ষম হয় তাহলে তাকে পৃথকভাবে কুরবানী (দম) দিতে হবে । অর্থাৎ এমনিতেই তো ঈদুল আযহার দিন কুরবানী দিতেই হয়, পাথর নিক্ষেপ করতে না পারলে তাকে আরেকটি কুরবানী বা দম দিতে হবে । পাথর/ কঙ্কর নিক্ষেপের মর্ম হলো, মুসলিমগন একথা প্রমান করে যে, তাদের জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, মুসলিমগনও অনুরূপভাবে বাতিলী বা শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে একতা বদ্ধ হয়ে ইসলামের বিপরিত শক্তির বিরুদ্ধে নিজ নিজ দেশে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন ।  
 ------(চলবে) 
"শারঈ' মানদন্ডে
দোয়া-যিকির,হজ্জ ও উমরা"

হজ্জের খুতবায় গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শাইখঃ

'আল্লাহকে ভয় করে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করুন'
সর্বক্ষণিক আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত করে ইনসাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করুন । পবিত্র হজ্জ উপলক্ষে আরাফাত ময়দানে আজ বুধবার সমবেত লাখ লাখ হাজীর উদ্দেশে দেয়া খুতবায় সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ আল শায়খ মুসলিম উম্মাহর নেতাদের প্রতি এ আহবান জানান ।
তিনি আরো বলেন,আল্লাহর দেওয়া আমানতগুলো রক্ষা এবং আল্লাহকে ভয় করে যার যার অবস্থানে থেকে অর্পিত দায়িত্বসমূহ যথাযথভাবে পালন করা তাদের দায়িত্ব । নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম প্রতিদানকারী ।
তিনি বলেন, হে মুসলিম ভাইয়েরা, তোমরা আল্লাহর দরবারে দৃঢ় চিত্তে শুকরিয়া আদায় কর যে তোমরা আজ আরাফাতের ময়দানে শামিল হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছ ।
খুতবায় তিনি বলেন, কুরআন হাদিসের মূলনীতির ভিত্তিতে বিশ্ব মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রুজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরতে এবং মুসলমানদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনোনিবেশ করতে হবে । মুসলমানদের ঈমান আক্বীদা রক্ষার্থে সর্বদা আল্লাহর ওপর ভরসা এবং ইবাদত বান্দেগীর মাধ্যমে দিনাতিপাত করতে হবে । 
তিনি মুসলিম বিশ্বকে মুসলমান নামধারী সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান । তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা আজ টার্গেট করেছে আমাদের মুসলিম যুব সমাজকে ।ওদের হাত থেকে রেহাই পায় না মসজিদ ও অবুঝ শিশু । যুব সমাজের মন মগজ ধোলাই করে তাদের বিপথগামী করছে । হে যুব সমাজ তোমরা তোমাদের জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে দেশ ও মুসলিম জাতি গঠনে এগিয়ে আস । তিনি মুসলমান সম্প্রদায়কে অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন । গণমাধ্যমকে মানুষের উপকারে কাজে লাগাবার কথা বলেন । গ্র্যান্ড মুফতি মিডিয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান । মিডিয়ার মাধ্যমে সত্যকে তুলে ধরার কথা বলেন তিনি ।
খুতবায় শরণার্থীদের তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ কর, তওবা কর নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের জমিন তোমাদের হাতে ফিরিয়ে দেবেন । 
খুতবায় সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শাইখ বলেন, ইসলাম এসেছে সুশৃংখল লক্ষ্য নিয়ে; যার মধ্যে ‘মানুষ পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে জুলুম করবে না । ইসলাম মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা বিধান করে । মহানবী (সা.) হচ্ছেন মানুষের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ । নামাজ আদায় করো। আল্লাহকে ভয় করো । আল্লাহ প্রদত্ত আমানত সমুহ হেফাজত করো । বিপদগ্রস্ত মুসলমানদের সাহায্য করো । 
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত ছিল আরাফাতের ময়দান । ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের অন্যতম ফরজ ।

সূর্যোদয়ের পর থেকে মিনায় অবস্থানরত প্রায় ৩০ লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান আরাফাতের ময়দানে অবস্থান নিতে শুরু করেন । সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর খুতবা পেশ করেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ আল শায়খ ।
তিনি কঠোর নিরাপত্তা ও সুন্দর পরিবেশে হজ আয়োজনে দুই পবিত্র মসজিদের খতিব, কিং সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, সোমালিয়া, ইয়েমেনসহ মুসলিম বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহান প্রভুর দরবারে মোনাজাত করেন ।

মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

মুযদালিফায় রাত যাপন ও কঙ্কর সংগ্রহঃ

ঘুমের কাছে যারা দুর্বল তারা ইচ্ছে করলে মুযদালিফায় ঘুমাতেও পারেন । কিছু সময় ঘুমিয়ে সমগ্র রাত মহান আল্লাহর তাসবীহ তাহলীল কুরআন তেলাওয়াত এবং দোয়ার মাধ্যমে রাত অতিবাহিত করাই উত্তম । ইসলামী চিন্তাবীদগন বলেছেন মুযদালিফা থেকেই পাথর সংগ্রহ করা মুস্তাহাব । 
মুজদালিফায় এসে প্রথমে মাগরিব ও এশা নামাজ আদায় করে তারপর ৪৯টি কঙ্কর বা পাথর সংগ্রহ করা উচিত । অনেকেই আগে পাথর সংগ্রহ করে তারপর নামাজ আদায় করেন, এটা ঠিক নয় । তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ুন । কান্না কাটি করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করুন । হয়তো জীবনে আর কখনো আপনি এখানে আসতে না পারেন । হয়তো পবিত্র এই ময়দানে আপনার শেষ আসা । দোয়া করুন দেশ মাটি মা মানুষের জন্য । শান্তির জন্য । স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য । মহান আল্লাহ আপনার হজ্জ, উমরাহ, রোজা এবং সকল এবাদত,  নেক চাওয়া  কবুল করুন । আমিন ।। -------(চলবে) 
"শারঈ' মানদন্ডে
দোয়া-যিকির,হজ্জ ও উমরা"





মুযদালিফায় মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করাঃ

মুযদালিফায় এসে এশার নামাজের ওয়াক্তে প্রথমে মাগ্রিবের নামাজ ও পরে এশার নামাজ আদায় করতে হয় । রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় এসে এশার নামাজের ওয়াক্তে আযান দিতে বলেছেন, তারপর ইক্বামত দিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করেছেন । এ নামাজ শেষ করেই তিনি পুনরায় ইক্বামত দিতে বলেছেন । ইক্বামত শেষে এশার নামাজ কসর আদায় করেছেন । (মুসলিম)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুা বলেনঃ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় মাগরিব ও এশা একত্রে পড়েছেন, প্রত্যেক নামাজ ভিন্ন ভিন্ন ইক্বামত দিয়ে পড়েছেন এবং উভয় নামাজের মাঝে তিনি কোন তাসবীহ পড়েননি  (বোখারী) ।  -------(চলবে) 
"শারঈ' মানদন্ডে
দোয়া-যিকির,হজ্জ ও উমরা"





আরাফাতে যুহর ও আসর একত্রে আদায় করাঃ

সহীহ হাদীসের মাধ্যমে এ বিষয়টি প্রমানিত হয়েছে যে, আখেরী নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফাতের ময়দানে যুহর ও আসর নামাজ একত্রে আদায় করেছেন । তিনি যুহরের আযান ও ইক্বামত দেয়ার পর যুহরের নামাজ কসর আদায় করেন, তারপর আবার ইক্বামত দেয়া হয় এবং তিনি আসরের নামাজ কসর আদায় করেন । অর্থাৎ
দুই আযানের প্রয়োজন নেই । আযান একবারই দিতে হয় । শুধু ইক্বামত দুইবার দিতে হবে । যুহর নামাজের জন্য একবার এবং আসরের নামাজ যুহরের ওয়াক্তেই আদায় করতে হয় । মসজিদে নামিরায় খুতবার পর যুহর এবং আসর কসর একত্র করে জামায়াতে কসর আদায় করা হয় । -------(চলবে) 
"শারঈ' মানদন্ডে
দোয়া-যিকির,হজ্জ ও উমরা" 




উ'কুফে আরাফাহ এবং ঐ দিন রোজা পালনঃ

উ'কুফে আরাফাহ বা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজ্জের মুল বিষয় । ৯ই জিলহজ্জ তারিখে যুহর থেকে মাগরিব পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা ফরজ । এ ময়দানে অবস্থান না করলে হজ্জ হবে না । আখেরী নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হজ্জ হচ্ছে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা । যে ব্যক্তি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেছে সে হজ্জ পেয়েছে । (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবিনে মাজাহ) ।





আরাফার দিন দোয়া কবুলের দিন এবং মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এদিনে তার হজ্জ আদায়কারী বান্দাদের ক্ষমা করেন এবং তাদের দোয়া কবুল করেন । এদিনে রহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রেখেছিলেন বলে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয় । সুতরাং আরাফার দিন রোজা না রাখাই মুস্তাহাব । যাতে করে হজ্জ পালনকারী ব্যাক্তি দোয়া, তেলাওয়াত ও যিকিরের জন্য প্রয়োজনীয় শারিরীক শক্তি পায় । আরাফার দিনে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কিত যে হাদীসগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো যারা হজ্জ করতে যাননি তাদের জন্য প্রযোজ্য । --------(চলবে) 
"শারঈ' মানদন্ডে
দোয়া-যিকির,হজ্জ ও উমরা" 

হাজারে আসওয়াদ : বেহেশতি পাথরঃ


হজ্জ বা উমরাহ করার সময়  হাজী সাহেবদের কালো পাথরের দিকে বিশেষ আগ্রহ থাকে । সবাই একে চুমু খাওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন । এর নাম হাজারে আসওয়াদ । বেহেশতি এই কালো পাথরটি (এখন অবশ্য কয়েকটি খণ্ডে বিভক্ত) কাবা শরিফের পূর্ব কোনে লাগানো । এত চুমু খাওয়ার ফজিলত অত্যন্ত বেশি। হযরত উমর  রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছিলেনঃ ‘আমি জানি তুমি একটা পাথর, তোমার উপকার বা ক্ষতি করার কোনো ক্ষমতা নেই । যদি আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তোমার গায়ে চুমু দিতে না দেখতাম, তবে আমি কখনো তোমাকে চুমু দিতাম না ।’
এই পাথরকে চুমু দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর রাসুলের আনুগত্য করা । এই চুমু খাওয়া সুন্নত। 
হাজারে আসাওয়াদের আভিধানিক অর্থ হলো কালো পাথর । তবে অনেক হাদীসে একে সাদা রঙের পাথর বলে উল্লেখ রয়েছে ।
আল্লামা আবু আবদুল্লাহ আল-ফাকেহি তাঁর ‘আখবারে মক্কা’ গ্রন্থে হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেনঃ (হাদীসটির সনদ দুর্বল) এতে বলা হয়েছেঃ 
রাসুলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি জাহেলিয়াতের অপবিত্রতা ও নাপাকি এবং জালেম ও পাপিষ্টদের হাতের কালিমায় হাজারে আসওয়াদ কলুষিত না হতো, তাহলে এর মাধ্যমে সব পঙ্গুত্বের চিকিৎসা হতো এবং আল্লাহ প্রথম দিন একে যে আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন হুবহু সেই আকৃতিতেই পাওয়া যেত । আল্লাহ এর রং পরিবর্তন করে এই জন্যই কালো করে দিয়েছেন যে, দুনিয়াবাসী মানুষ যেন বেহেশতের সৌন্দর্য (দুনিয়াতে বসেই) দেখতে না পায় এবং এটা যেন বেহেশতের মধ্যেই ফিরে আসে । এটি বেহেশতের সাদা ইয়াকুত পাথরের একটি । আদিপিতা হযরত আদম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পৃথিবীতে পাঠানোর সময় আল্লাহ তা কাবা শরিফের স্থানে রেখে দিয়েছিলেন ।
কাবাঘর নির্মাণের সময় ফেরেশতারা হযরত ইব্রাহিমকে আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাথরটি এনে দিলে তিনি কাবাঘরের দক্ষিনকোনে স্থাপন করেন । মাতাফ বা জমিন থেকে ১.১০ মিটার উচ্চতায় হাজরে আসওয়াদ স্থাপিত । রাসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়্যতের আগে কুরাইশরা কাবাঘর সংস্কারের সময় তিনি নিজ হাতে পাথরটিকে যথাযথ স্থানে রেখে সম্ভাব্য সঙ্ঘাত এড়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন ।
পাথরটি অবশ্য অটুট থাকেনি । হযরত আবদুল্লাহ বিন যোবায়েরের শাসনামলে কাবা শরিফে আগুন লাগে । এ সময় হাজারে আসওয়াদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তিন টুকরা হয়ে যায় । তিনি এটিকে রূপা দিয়ে মুড়িয়ে দেন ।


হাজরে আসওয়াদ চুমু দেয়ায় অনেক ফজিলত রয়েছে । তিরমিজী শরীফের এক হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামিনী স্পর্শ করা গুনাহের কাফফারা স্বরুপ । আখিরাতের ময়দানে হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামিনী তাদের পক্ষে কথা বলবে যারা তা স্পর্শ করেছে বা চুমু দিয়েছে । 
রাসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এ পাথরে চুমু দেয়ার উদ্দেশ্যে যারা এগিয়ে যায় তাদের প্রত্যেক কদমে কদমে গুনাহ ক্ষমা করা হয় । 
তবে ধাক্কা ধাক্কি করে, অন্যকে কষ্ট দিয়ে, শক্তি প্রয়োগ করে হাজরে আসওয়াদ কিংবা রুকনে ইয়ামিনীর কাছে গিয়ে স্পর্শ বা চুমু দেয়া যাবে না । বেশী ভীড় থাকলে দূর থেকে ইশারার মাধ্যমে চুমু দিলেই সাওয়াব পাওয়া যাবে । 


বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আল্লামা সাঈদী বনাম যুদ্ধাপরাধ, সরকারী রায় বনাম জনতার রায় !


১৯৭১; বাংলার ইতিহাসে একটি গৌরবময় অধ্যায় কিন্তু সেই ৭১ কে রাজনৈতিক তরবারী হিসেবে ব্যবহার করে যেভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থের জন্য বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে জাতির অন্তত একটি বিশাল অংশের হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করা হচ্ছে তাতে গৌরবময় ৭১ আজ অনেকাংশেই ভীতিকর এবং আতংকজনক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে !

তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গত বছর হত্যা করা হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লাকে, আজ প্রায় দুই বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও যার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল সেই মোমেনা বেগম যে আসল মোমেনা বেগম ছিলেন না এবং মোমেনা বেগমকে মিডিয়ার সামনে উপস্থিত করার যে চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছিল তা কেউ গ্রহন করেনি !

আজ (১৭/০৯/১৫)  এক বছর পার হলো, বিশ্বের অগনন মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন, বাংলার মানুষের হৃদয়ের মনি, জনপ্রিয়তো বটেই অনেকের মতে বাংলার ইতিহাসের সবচাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে (১৭/০৯/১৪) আমৃত্যু রায়ের মাধ্যমে মুছে ফেলার চক্রান্ত হয়েছে, তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় নামক নাটক মঞ্ছস্থের জন্য !

অভিযোগসমূহঃ

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যাল যে দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছে তার মাঝে একটি হলো বিশাবালী হত্যা !রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হিসেবে এনেছিল ৭১সালে নিহত বিশাবালীর আপন ভাই সুখরঞ্জন বালীকে যেই সুখরঞ্জন বালী একাধিকবার বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশ্যে বলেছে যে তার ভাই হত্যার সাথে আল্লামা সাঈদী কোনভাবেই জড়িত নয় এবং সে ব্যাপারে তিনি সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আদালতেও গিয়েছিলেন গত ৫’ই নভেম্বর,২০১২ সালে ! কিন্তু সত্য প্রকাশিত হয়ে যাবার ভয়ে সরকার আদালত চত্তর থেকে সুখরঞ্জন বালীকে গুম করে ভারতের কারাগারে বন্দী করে রাখার ইতিহাস দেশবাসীর সকলেরই জানা !

২য় আরেকটি অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল ক্যাঙ্গারু ট্রাইবুন্যাল ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার অভিযোগে ! অথচ আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্য এই ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার জন্য তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৭-৭-১৯৭২ সালে একটি মামলা করেছিলেন ১৪ জনকে আসামী করে যার মাঝে আল্লামা সাঈদীর নাম নিশানাও নেই  !সেই মামলার নথি আজো সরকারের Magistrate’s General Register নামক বইতে রয়েছে যার ক্রমিক নাম্বার ৩৭৮ !

এমনকি সেই হত্যা মামলার চার্জশীট দেয়া হয়েছিল সেখানেও আল্লামা সাঈদীর নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল না অথচ আজকে রায় হয়ে যাওয়া একটি মামলায় ৪২ বছর পরে আবার রায় দেয়া হচ্ছে আগের সকল অভিযুক্তের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে নাম যুক্ত করে !

তার সাথে ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার কাল,সময় ও স্থান সম্পর্কে নাটুকে সাক্ষীদের একেকজনের একেক রকম সাক্ষ্যতো রয়েছেই ! ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমের ৭২ সালে দায়ের করা মামলায় হত্যার স্থান নলবুনিয়া এবং হত্যার সময়কাল ১লা অক্টোবর,১৯৭১ উল্লেখ থাকলে আজ ৪২ বছর পরে ট্রাইবুনালের বানোয়াট সাক্ষীদের একজন বলছেন হত্যার স্থান ছিল পাড়েরহাট আর আরেকজন বলছেন নলবুনিয়া আর সময়কাল বলছে ৮’ই মে ! অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে দুজন সাক্ষী দুরবর্তী দুটো স্থানের কথা বললেও তারা আবার ঐ একই ব্যক্তিকে হত্যা করতে নিজ চোখে দেখেছে !

আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে আরেকটি নাটুকে অভিযোগ করা হয়েছে মানুষের আবেগকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাতে তা হল প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের পিতা ফয়জুর রহমানকে হত্যার অভিযোগ ! ফয়জুর রহমানের স্ত্রী, হুমায়ুন আহমদ এবং জাফর ইকবালের মাতা আয়েশা ফয়েজ একটি বই লিখেছেন “জীবণ যে রকম” যেখানে তিনি ফয়জুর রহমানকে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন অথচ পুরো বইয়ে একটিবারের জন্যেও আল্লামা সাঈদীর নাম নেই ! আয়েশা ফয়েজ পুত্র জাফর ইকবালকে সাথে নিয়ে একটি মামলাও করেছিলেন ৭২ সালেই যেখানেও আল্লামা সাইদীর নাম ছিলো না  !

সাক্ষীদের অবস্থাঃ

এছাড়া অন্যান্য মামলারও একই অবস্থা ! আদালতে তেমন কোন সাক্ষী উপস্থিত করতে না পেরে অনুপস্থিত সাক্ষীদের নামেই জবানবন্দী সাজিয়ে নিয়েছে ট্রাইবুন্যাল যেই সাক্ষীদের অধিকাংশই মিডিয়াতে বলেছে তাদের বলা হয়েছিল সাক্ষ্য দিতে কিন্তু তারা মিথ্যা বলতে রাজি না হওয়ায় তাদের আর সাক্ষ্য দিতে নেয়া হয়নি যদিও ট্রাইবুনাল তাদের অনেকের অনুপস্থিতির জন্য কারণ দর্শিয়েছে তারা অসুস্থ কিংবা মৃত!অথচ সরকার পক্ষেরই বহু সাক্ষী মিডিয়াতে বলেছে আল্লামা সাঈদী কোনরুপ অপরাধের সাথে জড়িত নয় আবার অনেকে বলেছে আল্লামা সাঈদীকে তারা চিনতোই না ৯০এর ইলেকশনের আগে ! অথচ তাদের নামেই মিথ্যা সাক্ষ্য নিজেরাই বানিয়ে ফেলেছে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল !

কে সেই দেলু শিকদার ?

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে শুরু থেকেই যে চেষ্টাটি করে আসছে আওয়ামীরা তা হলো শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে যেভাবে কসাই কাদের বানানো হয়েছিল ঠিক তেমনি আল্লামা সাঈদীকে দেলু শিকদার বানিয়ে হত্যা করতে ! অথচ রাষ্ট্রপক্ষ একটি দলিলও হাজির করতে পারেনি যেখানে তারা প্রমাণ করতে পেরেছে যে অতীতে একদিনের জন্য হলেও আল্লামা সাঈদীর নাম দেলু শিকদার ছিল ! কিন্তু অন্যদিকে আল্লামা সাঈদীর আলিমের সার্টিফিকেট,১৯৫৭ সালের দাখিলের সার্টিফিকেট,পাসপোর্ট, ১৯৬২ সাল থেকে শেখ মুজিবর রহমান জীবিত থাকা অবস্থাতেই ওয়াজ-মাহফিলের পোষ্টার ইত্যাদি সকল জায়গায় নাম রয়েছে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, পিতাঃমাওলানা ইউসুফ সাঈদী, মাতাঃমৃত গুল নাহার বেগম, দাদাঃ মৃত গোলাম রহমান সাঈদী, চাচাঃ সুফী মাওঃ সাইদুর রহমান সাঈদী, ভাইঃ মোস্তফা আহসান সাঈদী, স্থায়ী ঠিকানাঃ সাঈদখালী,জিয়ানগর উপজেলা,পিরোজপু্‌র, বর্তমান ঠিকানাঃ আরাফাত মঞ্জিল,শহীদবাগ,ঢাকা ।

আর ট্রাইবুনাল যেই দেলু শিকদারের নাম বলছে এবং তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীন নিজেই তার সাক্ষ্বর করা যেই ডকুমেন্ট আদালতে দিয়েছেন “প্রসিকিউশন ডকুমেন্ট ভলিউম-৩,পৃষ্ঠা-২১৩” সেখানে অভিযুক্তের নাম রয়েছে দেলু শিকদার, পিতাঃরসুল শিকদার, মাতাঃমৃত সোণাবরুণ, দাদাঃ ওহাব আলী শিকদার,দাদীঃ ধরু বিবি, ভাইঃ এনায়েত শিকদার, লালু শিকদার, চাঁন শিকদার (পিরোজপুর সরকারী কলেজ শাখা ১৯৮৬-১৯৮৭ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রলীগ মনোনীত ভিপি),স্থায়ী ঠিকানাঃশিকদার বাড়ি,ঝাটোকাঠি,পিরোজপুর ।

সর্বোপরি সেই দেলু শিকদারের ভাই লালু শিকদার নিজেই বলেছে যে তার ভাই দেলু শিকদার আর আল্লামা সাঈদী এক ব্যক্তি নয় এবং তার ভাই দেলু শিকদারকে ৭১ এর অপকর্মের জন্য যুদ্ধ শেষেই মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করে ফেলেছে !

বীর মুক্তিযোদ্ধারা এবং পিরোজপুরের লোকজন কি বলে ?

মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার আওয়ামী নেতা মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দীন আহমদ
তার রচিত “মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবনের সেই উন্মাতাল দিনগুলো” বইতে ১৭১ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ১২-১৬ তারিখের দিনগুলোতে পিরোজপুর থেকে লঞ্চ বোঝাই করে করে আমরা পিরোজপুরের প্রায় সকল স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার,যুদ্ধাপরাধীদের সরাসরি সুন্দরবনের ফায়ারিং স্কোয়াডে পাঠিয়েছি । তখন কেউ আমাদেরকে সাঈদীর নাম অপরাধী হিসেবে বলেনি,আমরা তাঁর নাম স্বাধীনতা বিরোধী কিংবা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কোনদিন শুনিনি ।

পিরোজপুরের আরেক বীর সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যরিষ্টার শাহাজান ওমর বীর বিক্রম প্রকাশ্যে মিডিয়াতে বারংবার বলেছেন আল্লামা সাঈদী কোন অপরাধের সাথে জড়িত নয় ।

বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রকাশিত কবি হাসান হাফিজুর রহমান কর্তৃক সম্পাদিত ১৫ খন্ডের প্রামাণ্য দলিল “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল পত্র” নামক বইয়ের পিরোজপুর অধ্যায়ে স্বাধীনতা বিরোধী,যুদ্ধাপরাধী,রাজাকার হিসেবে অসংখ্য মানুষের নাম থাকলেও একটি বারের জন্যেও আল্লামা সাঈদীর নাম উচ্চারিত হয়নি বরঞ্চ পিরোজপুরের বীর সন্তানদের তালিকায় আল্লামা সাঈদীর নাম রয়েছে !

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধারা আল্লামা সাঈদীকে সম্পুর্ণ নির্দোষ আখ্যা দিয়ে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে । এবং সম্প্রতি সেই পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলাবাসী আমার ছোট ভাই মাসুদ সাঈদীকে বিপুল ভোট দিয়ে নিরংকুশভাবে বিজয়ী করেছে ! আল্লামা সাঈদী যদি সত্যিকারার্থেই পিরোজপুরের জনতার উপর ৭১ সালে নির্যাতন করে থাকতেন তবে এই আওয়ামী নৈরাজ্যের সময়ও নিশ্চয়ই "সাঈদী পরিবারের" সদস্য বিজয়ী হতে পারতেন না !
বিচারের নামে অবিচারই সবচাইতে বড় মানবতাবিরোধী অপরাধ !

বিচারের নামে যখন অবিচার চলে তখন সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতেই হয় ! ৭১ এ কেউ অন্যায় করে থাকলে তার বিচার হবে সেটা এক জিনিষ আর মিথ্যা-বানোয়াট গল্প সাজিয়ে কাউকে বিচার করতে চাইলে তা অবিচারই হবে !যাকে হত্যার অভিযোগে ফাঁসি দিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের স্বজনেরা বলছে সে হত্যার সাথে আল্লামা সাঈদী জড়িত নয়,
৭২ সালেই করা মামলায় আল্লামা সাঈদীর নাম নেই, এমনকি বিগত ৪২ বছরে যেই আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতে একটি জিডিও পর্যন্ত করা হয়নি, ৭২ সালে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে যুদ্ধাপরাধতো দূরের কথা দালালদের তালিকাতেও যেই সাঈদীর নাম নেই তাকে আজ ৪২ বছর পরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ঘায়েল করতে চাইলে এদেশবাসী, ইসলামপ্রিয় জনতা মেনে নিবে না ! এ জনতা সকল অন্যায় রুখে দিবেই, আজ কিংবা কাল !




মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

জেলখানার চিঠিঃ ইতিহাসের দায় মিটিয়ে গেলেন মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান



জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ কামারুজ্জামান জেলবন্দী অবস্থায় ২০১০ সালের শেষ নাগাদ একটি চিঠি লিখেন । আজ কামারুজ্জামানকে হত্যা করে শহীদ করা হয়েছে । কিন্তু তাঁর সেই চিঠিটি হয়ে আছে ঐতিহাসিক দলিল । বলা যায়, কামারুজ্জামান তাঁর শেষ দায়িত্বটুকুও পালন করে গেছেন সেই চিঠির মাধ্যমে ।
চিঠিতে তিনি সম্পূর্ণ নির্মোহভাবে বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতের ভবিষ্যৎ নিয়ে লিখেছেন । পেশ করেছেন সম্ভাব্য কর্মপন্থাও । দিয়ে গেছেন তাঁর সুপারিশ । আশ্চর্যজনকভাবে তাঁর সবগুলো ভাবনাই একে একে সত্য প্রমাণিত হচ্ছে ।
সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে তিনি তাঁর চিঠির শিরোনাম দেন- পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন কর্মকৌশল গ্রহণ সময়ের দাবি । যুদ্ধাপরাধ বিচার নাটকের প্রেক্ষাপট, উদ্দেশ্য এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অবস্থার দীর্ঘ বিশ্লেষণের এক পর্যায়ে তিনি বলেন–

জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধের মত স্পর্শকাতর ইস্যুতে বিচার করার পর জামায়াতকে সরকার নিষিদ্ধ না করলেও জামায়াতের ভাবমর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুণ হবে । দেশের ভিতরে ও বাইরে জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী, বাংলাদেশ বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধীদের দল হিসাবে চিত্রিত করবে । ফলে জামায়াতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে । জামায়াতের ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব হয়ে পড়বে ।
জামায়াত বর্তমান সময়ে যে ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে গিয়েছে তাতে গা ছেড়ে বসে না থেকে বিকল্প পথের সন্ধান করা হিকমত ও দূরদৃষ্টির দাবী । এটা কোন ধরনের বিচ্যুতি নয়  । বরং আন্দোলনের ক্রম বিকাশের ধারাতেই নতুন কৌশল অবলম্বন করা ।


এই প্রেক্ষাপটে তিনি সম্ভাব্য তিনটি পন্থার কথা বলেন-
এক. যা হবার হবে । আমরা যেমন আছি তেমনি থাকবো ।
দুই : পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছনে থেকে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তুলবে । এই সংগঠন প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তার সাথে ধর্মহীন শক্তির মোকাবিলা করবে ।
তিন : আমাদের যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে তারা জামায়াতের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবো এবং সম্পূর্ণ নতুন লোকদের হাতে জামায়াতকে ছেড়ে দেবো । অর্থাৎ একটা নিউ জেনারেশন জামায়াত হবে এটি ।

এই তিনটি পন্থার বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন-
আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় উপরোক্ত তিন অবস্থায় প্রথমটা হচ্ছে নেতৃত্ব আঁকড়ে থাকা, হতবুদ্ধিতা এবং হতাশাবাদিতা। একটি গতিশীল আন্দোলন এ ধরনের পশ্চাৎমুখী অবস্থান গ্রহণ করতে পারে না।
এক নম্বর যে বিকল্প উল্লেখ করা হয়ছে সেভাবে হাল ছেড়ে দিলে আমরা অথর্ব প্রমাণিত হবো। তখন সময় চলে যাবে। সুতরাং সময় থাকতেই আমাদের সতর্ক হতে হবে।
তিন নম্বর যে বিকল্পের উল্লেখ করেছি সেটাও সমাধান নয়। শুধু স্থানীয় অধার্মিক শক্তি নয় বরং আন্তর্জাতিক ধর্মহীন শক্তিও আমাদের জন্য বড় অন্তরায়। তারাও ওৎ পেতে আছে কিভাবে আমাদের অগ্রযাত্রা রুখে দেয়া যায়। আর এ কারণেই এই বিকল্প পন্থা এখন আমাদের জন্য খুব সহায়ক হবে না। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জনের দিকটা সামনে রেখেই কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
তৃতীয় যে পন্থা নতুন নেতৃত্বের হাতে জামায়াতকে ছেড়ে দেয়া এটা বিবেচনা করা যেতে পারতো যদি ১৯৭১ সালের বিষয়টার একটা রাজনৈতিক মীমাংসা বা মিটমাট আমরা করতে পারতাম। জামায়াতের ভাবমর্যাদা যেভাবে ভুলুণ্ঠিত করা হয়েছে, জামায়াত সম্পর্কে যে এলার্জি তৈরি করা হয়েছে, পাঠ্যপুস্তক, মিডিয়ায় এবং রাজনৈতিক প্রচারণায় যেভাবে জামায়াতকে স্বাধীনতা বিরোধী বাংলাদেশ বিরোধী দল হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে তাতে নতুন নেতৃত্ব হলেও দেশের সাধারণ মানুষ, নতুন প্রজন্ম এবং রাজনৈতিক মহল জামায়াতকে সহজে গ্রহণ করে নিতে পারবে না।

দ্বিতীয় যে পন্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আমার মনে হয় সামগ্রিক বিবেচনায় এই বিকল্প পন্থাটির কথা চিন্তা করা যেতে পারে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ইসলামী আন্দোলন এই কৌশল অবলম্বন করে ভাল ফল লাভ করেছে। আমাদের সামনে তুরস্ক, মিসর, আলজেরিয়া, সুদান, ইয়ামেন, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, জর্দানসহ পৃথিবীর প্রায় সকল ইসলামী আন্দোলন পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন কৌশল অবলম্বন করেই এগিয়ে চলেছে।

তিনি বলেন-
জামায়াতের সামনে যে তিনটি বিকল্পের কথা আমি উল্লেখ করেছি আমার মতে প্রজ্ঞার পরিচয় হবে যদি দ্বিতীয় বিকল্পটি গ্রহণ করা হয়। জামায়াত যেহেতু ৬০ বছরের অধিককাল থেকে এদেশে কাজ করছে এবং দেশের কমপক্ষে ১০% ভাগ জনগণের একটি সমর্থন জামায়াতের প্রতি আছে তাই এমন কিছু করা ঠিক হবে না যাতে জামায়াতের অবমূল্যায়ন করা হয়। কারণ বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির যে একটা অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে তা জামায়াতের আন্দোলনেরই ফসল। জামায়াতের সাথে অনেক মানুষের একটা আবেগের সম্পর্ক রয়েছে এবং জামায়াতের প্রবীণ নেতা-কর্মীরাই জামায়াতকে এই পর্যায়ে আনার ব্যাপারে একটা অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের আন্তরিকতা এবং সততার ফলেই জামায়াত বাংলাদেশের সবচাইতে বড় ইসলামী দলের মর্যাদা লাভ করেছে। জামায়াত যদি একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তার পিছনে সর্বাত্মক শক্তি নিয়োজিত করে এবং সেই সাথে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে যত্নবান হয় তাহলে সেই প্লাটফর্মকে রাজনৈতিকভাবে সরাসরি আক্রমণ করতে পারবে না কেউ।

পরিস্থতি খুব নাজুক। নির্মোহ ও নিরপেক্ষভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে। নিজেকে সম্পৃক্ত করে চিন্তা করলে সমস্যার সমাধান হবে না। আপাতঃ দৃষ্টিতে জামায়াতে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে এমনটি মনে হলেও ক্ষতির কিছু নেই। বরং হেকমতের খাতিরে তেমন একটা কিছু করে হলেও নতুন আন্দোলন দাঁড় করানোর ঝুকি গ্রহণ করা উচিত।

তাছাড়া আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে বিবেচ্য।
পৃথিবীর অন্য কোন দেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনে বিরোধিতা করার মত অতি স্পর্শকাতর কোন অভিযোগ নেই। এটা স্বীকার করতেই হবে যে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন খুবই সম্ভাবনাময় আন্দোলন হওয়া সত্ত্বেও এই দুর্ভাগ্যজনক ও স্পর্শকাতর অভিযোগ আন্দোলনের রাজনৈতিক সাফল্য ও গ্রহণযোগ্যতার পথে বড় বাধার সৃষ্টি করে আছে। ইসলামী আন্দোলনের দুশমনরা আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় ও কৌশলে আপাতত সফল হয়ে গিয়েছে ।

তিনি লিখেছেন-
রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি মিটমাট করতে না পারার কারণে আজ বাস্তবেই মিথ্যা অভিযোগ মাথায় নিয়ে আমরা বিচারের কাঠগড়ায়। আমরা ১৯৭১ সালে জামায়াতের নেতৃত্ব দেইনি, জামায়াত রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করলেও তখনকার দলীয় নেতারাও যুদ্ধে শরীক ছিলেন না, নেতৃত্ব দেয়া তো দূরের কথা, আমাদের যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে তারা কেউই যুদ্ধ করিনি বা কোন বাহিনীরও সদস্য ছিলাম না। আমাদের দ্বারা যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ বা লুটতরাজের প্রশ্নই উঠে না। আজ রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হবার কারণেই রাজনৈতিক প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার শিকার আমরা বা জামায়াত। আমাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ সাজানো এবং সবৈব মিথ্যা। আমাদেরকে নিয়ে সরকার ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

শুধু রাজনৈতিক বিকল্পই নয়, ছাত্র অঙ্গনেও পরিবর্তনের চিন্তা করার কথা বলেন কামারুজ্জামান । নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের একটি আধুনিক রুপরেখাও দিয়ে গেছেন মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ।

শহীদ কামারুজ্জামান লিখেছেন-
আমরা যদি নতুন কর্মকৌশল গ্রহণে ব্যর্থ হই ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না এবং আমরা ইতিহাসের কাছে দায়ী হয়ে যাবো। কারণ এক বিপুল সংখ্যক মানুষের মাঝে আমরা আশাবাদ জাগিয়েছিলাম। আমাদের আন্দোলনের সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষ একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। আমাদের ছাত্র তরুণদের বিরাট এক কাফেলা জীবন দিয়েছে, শহীদ হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, অনেকে তাদের জীবন ও যৌবন এই পথে নিঃশেষ করে দিয়েছে।

আজ এই সময়ে এসে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, শহীদ কামারুজ্জামান তাঁর সবটুকু দায়িত্ব পালন করে শহীদ হয়ে গেলেন । চিঠির মাধ্যমে এই সংকট সন্ধিক্ষণের করণীয় সম্পর্কে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনকে মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান যে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, তার মাধ্যমে তিনি ইতিহাসের দায় মিটিয়ে গেলেন । ইতিহাস মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানকে নিয়ে আর কখনোই কোন প্রশ্ন তুলতে পারবে না । বরং নিরপরাধ কামারুজ্জামানকে হত্যা করার কারণে ইতিহাস নিজেই কামারুজ্জামানের নিকট দায়বদ্ধ থেকে গেল ।
সৌজন্যেঃ http://imbdblog.com/?p=4206