শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০১৬

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদঃ আল্লামা সাঈদী


বর্তমান পৃথিবীতে এমন একটি দেশ নেই, যে দেশ এবং দেশের জনগন সন্ত্রাস নামক ভয়ানক দানবের আতংকে আতংকিত নয় । প্রত্যেকটি দেশেই সন্ত্রাস ক্রমাগতভাবে বিস্তৃত হচ্ছে । সন্ত্রাস নামক দানবের ভীতিকর পদচারনায় কম-বেশী পৃথিবীর প্রত্যেক জনপদেই অনুভুত হচ্ছে । পরস্পরের মধ্যে মতবিরোধ প্রতিহিংসা চরিতার্থের পর্যায়ে উপনীত হয়ে যেমন সামাজিক ক্ষেত্রে সন্ত্রাস বিস্তৃত হচ্ছে তেমনি নানা মতবাদ মতাদর্শে বিশ্বাসী এক শ্রেনীর লোকজন সাংগঠনিকভাবে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড  সংঘটিত করছে । সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারনে ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষ যেমন নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়েছে, তেমনি সামস্টিকভাবেও মানুষ নিরাপত্তাহীনতার শিকার । নির্বিঘ্নে শংকামুক্ত পরিবেশে কোন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মানুষ একত্রিত হতে আতংকবোধ করছে ।
কর্মস্থল, ভ্রমণস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সভা-সমাবেশ, দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাহিরে যাতায়াতের বাহন, বিপণী কেন্দ্র ও চিত্ত বিনোদনের কেন্দ্রসমুহ এবং অন্যান্য জনসমাগমের স্থানসহ এমন একটি স্থানও নেই, যেখানে মানুষ সন্ত্রাস কিংবা জঙ্গিবাদ আতংকে তাড়িত হচ্ছে না । ভ্রান্ত বিশ্বাস ও উগ্র মতবাদ-মতাদর্শের অনুসারীরা সরকারী স্থাপনা, ধর্মীয় স্থান, বিদেশী দুতাবাস, সচিবালয়, রাজনৈতিক কার্যালয়, বিচারালয়, রেলওয়ে স্টেশন, বিমান বন্দর, শপিং সেন্টার, গ্যাস ও তেল ক্ষেত্র ইত্যাদী গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমুহ এবং জনসমাগম স্থলকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালিত করে ব্যাপক প্রানহানী এবং মুল্যবান সম্পদের ক্ষতি করছে ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নাইজেরিয়ায় আমেরিকান দুতাবাসে, ভারতের পার্লামেন্ট ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে, আমেরিকার টুইন টাওয়ারে, ব্রিটেনের পাতাল রেলে, তুরস্কের বিভিন্ন বিপণীকেন্দ্র, ফ্রান্সের রেলওয়ে ষ্টেশন, জর্ডানের পাচ তারকা হোটেলে, পাকিস্তানের ধর্মীয় উপসানালয়সহ বিভিন্ন স্থানে, সৌদিআরবের নানান স্থানে, মিশরে শপিং সেন্টারে, নেপাল, শ্রিলংকা, ইরাক, ইরান ও আফগানিস্থানের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশে আদালতে, ধর্মীয় উপসানালয়, রাজনৈতিক কার্যালয় এবং সমাবেশে ব্যাপক সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে অগণিত মানুষ হত্যা করা হয়েছে, মুল্যবান সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে ও অসংখ্য মানুষকে চিরতরে পঙ্গু বানিয়ে দেয়া হয়েছে । 
সন্ত্রাসী কিংবা সেনা অভ্যুথান(!) ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্থপতি রাস্টপতি শেখ মুজিবর রহমান, স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক, ইরানের পার্লামেন্টে বোমা বিস্ফোরন ঘটিয়ে হত্যা করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ আলী রেজাই সহ কয়েকজন মন্ত্রী এবং পার্লামেন্টের সদস্যসহ ৮০ জনকে । এছাড়া গুপ্তঘাতক লেলিয়ে দিয়ে বেশ কয়েকজন ধর্মীয় নেতাকে ইরানে হত্যা করা হয়েছে । ফিলিপাইনের জননন্দিত প্রেসিডেন্ট বেনিনগো একুইনোকেও সন্ত্রাসীদের হাতে প্রান দিতে হয়েছে । শ্রীলংকার জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট রানা সিংহে প্রেমাদাসকে প্রান দিতে হয়েছে বোমাবাজদের হাতে । লেবাননের সাবেক প্রেসিডেন্ট রফিক হারিরীকেও সন্ত্রাসীদের হাতেই প্রান দিতে হয়েছে । মুসলিম বিশ্বের বিষফোড়া ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রবিনও সন্ত্রাসী ইয়াহুদী তরুণের হাতে নিহত হয়েছেন । আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনও সন্ত্রাসী কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন ।
ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য স্বাধীনতা বা স্বধিকার আন্দোলন করছে । পাঞ্জাবের শিখ সম্প্রদায় স্বধীন খালিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবীতে আন্দোলন গড়ে তোলে এর নেতৃত্ব দিতে থাকে আকালী দলের মাধ্যমে শিখ নেতা হরচান্দ সিং লাঙ্গোয়াল ও সুরঞ্জিত সিং বার্নলা । শিখদের স্বাধীনতা আন্দোলন দমিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সান্ত সিং ভিন্দারনওয়ালের নেতৃত্বে পাল্টা উপদল সৃষ্টি হয় । ভারত সরকার সেই উপদলকে অর্থ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিয়ে সাহায্য করে । এমনকি স্বধীনতা আন্দোলনের নেতাদের হত্যা করার জন্য অস্ত্র দিয়েও সহযোগিতা করে ভারতের পরিচিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো । 
কিন্তু শিখদের উপদলের নেতা সান্ত সিং ভিন্দারনওয়ালে এতোটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে, শিখদের পবিত্রস্থান অমৃতস্বরের 'স্বর্ণ' মন্দিরকে কেন্দ্র করে তারা এক বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে এবং সারা ভারতব্যাপী সন্রাসী তৎপরতা চালাতে থাকে । এদেরকে যে ভারত সরকার সৃষ্টি করেছিলো, তারাই অবশেষে কমান্ডো বাহিনী পাঠিয়ে স্বর্ণ মন্দিরের অভ্যন্তরেই দলবলসহ  সান্ত সিং ভিন্দারনওয়ালকে হত্যা করে । এরই পরিণতিতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকেও শিখদের হাতে প্রান হারাতে হয় ।  
শ্রীলঙ্কাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রাখার লক্ষে প্রায়ত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর শাসনামলে শ্রীলংকার তামিল গেরিলাদের প্রতি সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হয় এবং ভারতের অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তামিল গেরিলারা গোটা শ্রীলংকা জুড়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে । প্রায়ত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র রাজিব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে তিনি যখন শ্রীলঙ্কায় রাস্ট্রীয় সফরে যান, তখন গার্ড অব অনার গ্রহণকালে এক সৈনিক তার মাথা লক্ষ করে রাইফেলের ব্যাটন দিয়ে আঘত করে । সে যাত্রা তিনি রক্ষা পেলেও সেই তামিল গেরিলাদের হাতেই শেষ পর্যন্ত তিনিও মায়ের অনুরূপ পরিণতি ভোগ করেন । সন্ত্রাস নামক যে দানবকে ইন্দিরা-রাজিব গান্ধী দুধ-কলা হৃষ্টপুষ্ট  করেছিলেন, সেই দানবের ছোবলেই মাতা পুত্রকে প্রান হারাতে হয়েছে । ভারতের জনক বলে খ্যাত মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে প্রথমে ১৯৩৪ সালে ২৫ জুন পুনে শহরে রেল ষ্টেশনে বোমা বিস্ফোরন ঘটিয়ে হত্যার চেস্টা করা হয় । দ্বিতীয়বার ১৯৪৬ সালে ঐ একই পদ্ধতিতে জুন মাসে হত্যার চেষ্টা করা হয় । ১৯৪৮ সালের ২০শে জানুয়ারী তৃতীয়বার হত্যার চেষ্টা করে মদনলাল নামের এক সন্ত্রাসী । এরমাত্র ১০দিন পর ৩০শে জানুয়ারী নাথুরাম গডসে নামক এক সন্ত্রাসীর হাতে তাকে প্রান হারাতে হয় । পাকিস্তানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানও সন্ত্রাসীদের হাতেই প্রান হারিয়েছেন ।
সাম্রাজ্যবাদী দেশসমুহের অন্যতম ঘৃণ্য নীতি হলো, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরে নানাধরনের উপদল সৃষ্টি করে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকে অস্থির করে রাখা । ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনী পরাজয়ের দ্বার প্রান্তে উপনীত হলো, আওয়ামীলীগ কর্তৃক স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের সম্ভাবনা যখন উজ্জল হয়ে উঠলো ঠিক সেই মুহূর্তে ভারত সরকার অত্যন্ত গোপনে দেরাডুনে আরেকটি উপদল গঠন করে । এদেরকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মন্ত্রে দীক্ষিত করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রেরন করে । এরা নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে । তারপরের ইতিহাস আপনারা অনেকেই জানেন । অবশেষে প্রান দিতে হয়েছে স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবর রহমানকে ।
অনুরূপভাবে পরাশক্তি আমেরিকা সৌদিআরবের সরকারকে অস্থির রাখার লক্ষে সৌদি ধনকুবের উসামা বিন লাদেনকে প্রশিক্ষন দিতে থাকে । লাদেন পরিবারের সাথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশ পরিবারের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো । লাদেনকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে আমেরিকা সৃষ্টি করলো আল-কায়েদা সংগঠন । এরপর তাদেরকে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়ে সৌদি সরকারকে অস্থির করে তোলে । এক পর্যায়ে তাদের মাধ্যমে পবিত্র কাবাঘরও দখল করিয়ে পবিত্রস্থানে রক্তপাত ঘটানো হলো ।
তৎকালীন পরাশক্তি অখন্ড রাশিয়া আফগানিস্থান দখল করার পরে বিনলাদেনকে আমেরিকা প্রচুর সামরিক সরঞ্জামে সজ্জিত করে আফগানিস্থানে টেনে এনে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে দাড় করালো । রুশ বাহিনী আফগানিস্থান ত্যাগ করার পরে আমেরিকা ও বিন লাদেনের "মধুচন্দিমায়" ফাটল ধরলো এবং লাদেনকে উপলক্ষ করেই আফগানিস্থান ও ইরাকে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে দেশ দুটো দখল করে অগণিত মুসলমানকে (নারী-শিশু) নির্বিচারে হত্যা করলো । সেই হত্যার ধারাবাহিকতায় এখনও প্রতিদিন সে দেশে দুটোয় প্রানহানী ঘটছে । আমেরিকা বিন লাদেন  অধ্যায় যবনিকা এখানেই ঘটায়নি, নিজেদের স্বার্থে সৃষ্ট আল কায়েদাকে উপলক্ষ করে ইরান, সিরিয়া, লিবিয়া, মিশর সহ অন্যান্য মুসলিম দেশসমুহে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে মুসলমানদের ব্যাপক প্রানহানী ঘটানো পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই চুড়ান্ত করে ফেলেছে ।  
পরাশক্তি ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নিজেদের স্বার্থে সৃষ্ট নানা ধরনের জঙ্গি সংগঠনকে অর্থ ও সামরিক সাহায্য দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে । বর্তমানে এই সন্ত্রাসে এতোটাই ব্যাপক এবং ভয়ানক আকার ধারন করেছে যে, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মনেই চরম এক আতংক সৃষ্টি করেছে । শান্তিপ্রিয় মানুষের মন থেকে মুছে গিয়েছ স্বস্তি, নিরাপত্তাবোধ, সে স্থানে দখল করেছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা । কিন্তু দুঃখজনক হলেও একথা সত্য যে, পৃথিবীর  যেখানেই সন্ত্রাসী তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, সেখানেই মুসলমানদের সাথে এই ঘৃণ্য কর্মের যোগসুত্র আবিস্কার করা  হচ্ছে । আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে সিন্ডিকেট সংবাদ একমাত্র মুসলমানদের দিকেই আঙ্গুল তুলে চিহ্নিত করা হচ্ছে, মুসলমানরাই এই সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে । শুধু তাই নয়, মুসলমানদের নামের সাথে সাথে সন্ত্রাসের প্রতি অসহিস্নু সর্বোত্তম জীবন বিধান পবিত্র ইসলামের নাম যুক্ত করে বলা হচ্ছে, ইসলামী উগ্রবাদী ও ইসলামী মৌলবাদীরাই সর্বত্র সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে । كنتم خير أمة أخرجت للناس .تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر .وتؤمنون بالل 
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেনঃ- তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতী। তোমাদেরকে বের করে আনা হয়েছে এ পৃথিবীতে মানবতার কল্যানের জন্য । আর সেটা হল সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের দ্বারা । আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে । যাদের সৃষ্টিই হল মানবতার কল্যান সাধনের জন্য তারা কখনো সন্ত্রাস আর জংগি বাদী হতে পারেনা । 
কিন্তু কেন এই সন্ত্রাস ? কি এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ? প্রকৃত সন্ত্রাসী কারা ? জঙ্গিবাদী দল কারা সৃষ্টি করেছে ? ক্ষেত্র বিশেষে সন্ত্রাসী তৎপরতায় মুসলিম নামধারী লোকদের কেন ব্যবহার করা হচ্ছ্বে ? সন্ত্রাসের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব কেনোইবা ইসলাম এবং মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ? এসব বিষয়ে সচেতন মানুষেরই স্পস্ট ধারনা থাকা একান্ত প্রয়োজন । আশা করি পরবর্তী ইতিহাস ভিত্তিক তাত্তিক আলোচনা পাঠ করলে সকলের কাছেই পরিস্কার হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ ।


বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ইসলামঃ মাওলানা সাঈদী

অভিভাবক, খতীব ও ঈমামগনের দায়িত্ব


বর্তমানে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে শত্রুপক্ষ যে কৌশলে অপতৎপরতা চালাচ্ছে, তা প্রতিহত করা সরকারেরই দায়িত্ব নয় । দেশের জনগনকে নিজেদেরই স্বার্থে এ ব্যপারে পূর্ণ সচেতন হতে হবে এবং শত্রুদের দমন করার জন্য ঐকান্তিক প্রচেস্টা চালাতে হবে । এ ব্যাপারে দল, মত,  জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল শ্রেনীর নাগরিককেই এগিয়ে সাওতে হবে । 'আমার পছন্দের দল সরকারে নেই, সুতরাং সরকারের দুর্নাম হলে আমার কিছুই যায় আসে না' এই মনোভাব ত্যাগ করতে হবে । যান-বাহনে বা স্কুল অথবা মসজিদে বোমা বিস্ফোরন ঘটলে এতে শুধু সরকারি দলের লোক বা সরকারি দলের সমর্থক লোকদের সন্তানরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না । সকল শ্রেনীর মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সতরাং দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে দলপ্রেম নয় দেশ প্রেমিক হিসেবে সাধ্যানুযায়ী ভুমিকা পালন করতে হবে ।
অভিভাবকগণকে লক্ষ রাখতে হবে, সন্তান কি করছে, কোথায় যাচ্ছে ? এবং কোন শ্রেনীর লোকদের সাথে মেলামেশা করছে । দল হিসেবে সন্তান, ভাই অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন এবং অধীনস্ত কর্মচারী কোন দলকে পছন্দ করছে । ইসলামের নামে কোনো ব্যাক্তি কাউকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করছে কিনা সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে । কে কোন ধরনের বই পড়ছে, ফোনে আভাষে- ইঙ্গিতে জাতিসত্তা ও দেশের প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোন আলোচনা করছে কিনা এ ব্যাপারে অভিভাবকগনকে সচেতন ভুমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে ।


অভিভাবকগন যদি অনুভব করেন যে, তার সন্তান, ভাই অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের কেউ অথবা অধীনস্থ কেউ ইসলামের লেবাসধারী হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোনো সংগঠনের প্রতি সহানুভূতিশীল, তাহলে তাকে প্রকৃত ইসলাম ও ইসলামী দল সম্পর্কে বুঝিয়ে ঐসব সন্রাসবাদী-জঙ্গিবাদী সংগঠনের ছোবল মুক্ত করতে হবে । আর যদি বুঝা যায় যে, আদর ভালোবাসা দিয়ে, চেস্টা সাধনা করেও এদেরকে ভ্রান্ত পথ থেকে ফেরানো যাবে না, তাহলে মায়া মমতা বিসর্জন দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতে নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে এদেরকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিন । মনে রাখবেন, আপনার অধীনস্থদের ব্যাপারে কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর আদালতে কঠিনভাবে জবাব্দিহি করতে হবে । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যে বান্দাকেই বেশী অথবা কম লোকের তত্ত্বাবধায়ক বানিয়েছেন, কিয়ামতের দিন অবশ্যই তাকে প্রশ্ন করা হবে যে, সে অধীনস্থ লোকদের দ্বীনের উপর চালিয়েছিল না ধ্বংস করে দিয়েছিলো । বিশেষ করে তার বাড়ির পরিবারের লোকদের ব্যাপারেও হিসেব গ্রহন করবেন ।
মায়া মমতা ও ভালোবাসার বশবর্তী হয়ে আপনজনদেরকে যদি ধ্বংসের পথ থেকে ফিরানো না হয়, তাহলে কিয়ামতের দিন এরা যখন আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলবে, যারা আমাদের সঠিকপথের সন্ধান দেননি, ভুল পথে চলতে দেখেও নিষেধ করেননি, তারা আজ কোথায় ? তাদেরকে পায়ের নিচে ফেলে পিষে তারপর জাহান্নামে যাবো । তারা যা বলবে, পবিত্র কুরআনে সে কথাগলো এভাবে তুলে ধরা হয়েছেঃ আমরা তাদের পদদলিত করবো, যাতে তারা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয় । আস-সাজদাহ#২৯ 
শিক্ষকগন অভিভাবকদের বড় অভিভাবক । তারা শ্রেনীকক্ষে পাঠদানের সময়  ছাত্রদেরকে বুঝাবেন 'আল্লাহর আইন চালুর নামে যারা সন্ত্রাস করছে তারা আসলে আল্লাহর আইনের দুষমন । ইসলামের শত্রুদের হাতের পুতুল হিসেবেই তারা কাজ করছে । ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান নেই এবং ইসলাম সবসময় নিয়মতান্ত্রিক পন্থাই অনুসরন করে । আদালতে বোমা মেরে বিচারক হত্যা, রেস্টুরেন্টে বিদেশি বন্ধিকরে গলা কেটে হত্যা করে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমান করে বিদেশী আগ্রাসনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে ।
সম্মানিত খতীব, ঈমাম ও ওয়ায়েজীনগনকে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে । এভাবে যদি ইসলামের নামে শ্ত্রুপক্ষ সন্ত্রাস চালাতে থাকে তাহলে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ইসলাম সম্পর্কে অনভিজ্ঞ লোকগুলো ইসলামের ব্যাপারে ভুল ধারনা পোষণ করবে । আর এ জন্য আল্লাহর দরবারে আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখদেরই দায়ী হতে হবে । আলেম সমাজই ইসলাম সম্পর্কে সবথেকে বেশী জ্ঞান রাখেন এবং আল্লাহর আদালতে কোন কোন বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে, এব্যাপারেও তারা পূর্ণ সচেতন রয়েছেন । 'আল্লাহর আইন চালুর নামে যারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে, এ ব্যাপারে সাধারন মানুষকে প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে না করে আল্লাহর আদালতে সর্বগ্রে আলেমদেরই জবাবদিহি করতে হবে, এব্যাপারেও আলেম সমাজ সচেতন রয়েছেন ।
যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী মাহফিলে বক্তৃতা করেন, তারা কুরআন-হাদীস দিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখবেন এবং ইসলামী জীবন বিধান শ্রোতাদের সম্মুখে তুলে ধরবেন । খতীব ও ঈমামগন সপ্তাহে একদিন অর্থাৎ জুমাবারে অনেকলোক সম্মুখে পেয়ে থাকেন । বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে খুতবায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আলোচনা করে সাধারন নাগরিকদেরকে সচেতন করুন । তাদেরকে একথা বুঝান,  যারা আল্লাহর আইন চালুর নামে বোমা বিস্ফোরন ঘটিয়ে বা বিচার বহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে পিতামাতাকে সন্তানহারা করছে, স্ত্রীকে স্বামীহারা করছে, সন্তানকে এতিম করছে, বোনকে ভাইহারা করছে, পরিবারের উপার্জনশীল একমাত্র ব্যক্তিকে হত্যা করে গোটা পরিবারকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করছে, তারা অবশ্যই ইসলাম, মুসলমান, দেশ-জাতি ও সমগ্র মানবতার দুষমন । এদের সন্ধান পাওয়ামাত্র আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফোন করে ধরিয়ে দিন । তাদেরকে বিচারের সম্মুখিন করুন ।
সরযন্ত্রকারীরা বোমাবাজদের দিয়ে যে লক্ষ ও উদ্দেশ্য নিয়ে সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে সৃষ্টিতে নামিয়েছে, তারা যদি আল্লাহ না করুন সফল হয়, তাহলে এর প্রথম শিকার আলেম-উলাম মাশায়েখ তথা ইসলাম পন্থীদেরকেই হতে হবে । দেশের মাদরাসা গুলো বন্ধ করে দেয়া হবে । কারাগার গুলো আলেম উলামা দিয়ে পরিপূর্ণ করা হবে । সংবিধান থেকে আল্লাহর প্রতি আস্থা, বিসমিল্লাহ উঠিয়ে দেয়া হবে । নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলিহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কুটুক্তি বা কটুবাক্য প্রয়োগ করে কবিতা- সাহিত্য রচনা করা হবে । ইসলামী প্রতিষ্ঠান সমুহ বন্ধ করে দেয়া হবে । মুসলমানদের কলিজা পবিত্র কুরআনের অবমাননা করা হবে । সর্বোপরি ইসলাম ও মুসলমানদের হেয়-প্রতিপন্ন করা হবে এবং আলেম-উলামদেরকে ব্যং-বিদ্রুপের পাত্রে পরিনত করা হবে । সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা হবে, যার ফলশ্রুতিতে কুরআন-হাদীসের বিধান প্রচার, প্রসার- স্বাধীনভাবে খুতবা পাঠ ও ইসলামী আন্দোলন নিসিদ্ধ ঘোষণা করা হবে ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে ভয়াবহ এই পরিস্থিতি সাফল্যের সাথে উত্তরণের তাওফিক এনায়েত করুন । আমীন- ইয়া রব্বাল আলামীন