রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫

কেন ডিভিশন চাইলাম ...!


আজ কিছু পত্রিকার রিপোর্ট দেখলাম, 'হঠাৎ কেন ডিভিশন চাইলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী' । রহস্য আর রহস্য ! আছে শিরোনামে রহস্য, আছে রিপোর্টের মধ্যেও রহস্য ! কোনো কোনো পত্রিকা রিপোর্ট এমন করেছে যে রিপোর্ট পড়ে মনে হয়, ডিভিশন চাওয়াটাও যেন একটি অপরাধ (!)
পত্রিকার রিপোর্টের আলোকে কেন আমরা ডিভিশন চাইলাম সে বিষয়ে বিবেকবানদের কাছে আমি এর ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি । কারন, এক শ্রেণীর মানুষ এই আবেদনের মধ্যে 'সরকারের সাথে জামায়াতের আঁতাত' এর গন্ধ খুঁজে পাবেন । কেউবা আবার এর প্রতিবাদে রাস্তা বন্ধ করে 'মঞ্চ' খুলে 'পদ্মা মেঘনা যমুনা, এই আবেদন মানিনা' শ্লোগান তুলে রাজপথ প্রকম্পিত (!) করে তুলতে পারেন ।

"আমার প্রানপ্রিয় পিতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ট্রাইব্যুনালের রায় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ডিভিশন-১ প্রাপ্ত বন্দী হিসেবে কারাগারে অন্তরীন ছিলেন। রায় হওয়ার পরপরই আমার পিতার ডিভিশন বাতিল হয়ে যায় । এরপর আপীল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের রায় কমিয়ে যাবজ্জীবন করার পর জেল কোডের ১৫ নং অধ্যায়ের ক্লাসিফিকেশন শিরোনামের অধীন ৬১৭ নম্বর বিধি মোতাবেক আমার পিতা ডিভিশন-২ পাওয়ার অধিকারী হন । কারাগারে বহু সংখ্যক ডিভিশন-২ প্রাপ্ত কয়েদী রয়েছেন । কিন্তু গত এক বছরেও কারা কর্তৃপক্ষ আমার পিতাকে তার প্রাপ্য ডিভিশন-২ প্রদান করেননি ।

আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দীর্ঘ ৩৯ বছর যাবত ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত । তিনি একই সাথে হৃদরোগেও আক্রান্ত । ২০০৩ সালে সর্ব প্রথম তার হার্টের করোনারী আর্টারীতে দুটি ব্লক ধরা পড়ে । একটিতে ৭০% অন্যটিতে ৯০% । তখন তার আর্টারীতে ২টি রিং স্থাপন করা হয় । এরপর আওয়ামী সরকার কর্তৃক অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার পর ২০১২ সালে তিনি বুকে তীব্র ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন । তখন আবারো আমার পিতার আর্টারীতে ৩টি ব্লক ধরা পড়ে । একটিতে ৯৯%, একটিতে ৯৫% এবং অন্যটিতে ৮০%। এরই প্রেক্ষিতে তাৎক্ষনিকভাবে ডাক্তারের সিদ্ধান্তে তার আর্টারীতে ৩টি রিং স্থাপন করা হয় । পূর্বের ২টি এবং এখনকার ৩টি নিয়ে বর্তমানে সর্বমোট ৫টি রিং আমার পিতার করোনারী আর্টারীতে স্থাপন করা আছে ।
এছাড়া আমার বাবা আর্থাইটিস রোগেও আক্রান্ত । এ কারনে হাঁটু ও কোমড়ে রয়েছে তার তীব্র ব্যাথা । সরকার কর্তৃক অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেফতারের পূর্বে তিনি নিয়মিত ফিজিওথেরাপী নিতেন । গ্রেফতার হওয়ার পর সেই রকম থেরাপী নেয়ার সুযোগ আর আমার পিতার হয়নি । যে কারনে তার হাঁটু ও কোমড়ের ব্যাথা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে । 

আমার আব্বার বয়স এখন ৭৬ চলছে । 
এই বয়সেও উপরোক্ত নানাবিধ শারীরিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও গত ৫ বছরে বিনা চিকিৎসার পরও শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবাণীতে এবং আপনাদের নেক দোয়ায় তিনি ভালোই আছেন । তবে বয়স ও অসুখজনিত সমস্যার কারনে তিনি শারীরিক কষ্টে আছেন । এখন তিনি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারেন না । কারো সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে একা উঠে দাঁড়াতে পারেন না। ডায়াবেটিক কন্ট্রোল রাখার জন্য তার নিয়মিত হাঁটার প্রয়োজন হয় কিন্তু এখন তিনি কারো সাহায্য ছাড়া হাঁটতেও পারেন না ।
এমতাবস্থায়, সংসদ সদস্য ছিলেন শুধু এই কারনে নয় বরং পিতার প্রতি দ্বায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকে পিতাকে অসুস্থতাজনিত শারীরিক কষ্ট থেকে সামান্য প্রশান্তি দেয়ার প্রত্যাশায় ব্যাকুল সন্তান হিসেবে পরিবারের পক্ষ থেকে মাসুদ সাঈদী গত ৯ আগষ্ট ২০১৫ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবরে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমার পিতার প্রাপ্য ডিভিশন চেয়ে আবেদন করে । কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, দুই মাস পার হয়ে গেলেও অদ্যাবধি সেই আবেদনের কোন উত্তর এখনো আমরা পাইনি ।
এই আবেদনের মধ্যে কোন দল নেই-মত নেই, রাজনীতি নেই-কুটনীতিও নেই । আছে শুধু পিতার প্রতি সন্তানের ব্যাকুলতা, আছে শুধু পিতার প্রতি সন্তানের নিখাঁদ শ্রদ্ধা আর ভালবাসা ।