বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫

শহীদ আলী আহসান মো: মুজাহিদকে যেভাবে বিদায় দিয়ে আসলাম....


(আমার ব্যক্তিগত  কৃতজ্ঞতাঃ যদিও লেখাটি আমার নামে প্রকাশিত হচ্ছে তবে মুল লেখনি আমার নয় ।  আমার ভুমিকা এখানে অনেকটা সংকলনের ।
আমরা যারা শহীদ আলী আহসান মো: মুজাহিদকে শেষ বারের মত দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম, তারা সকলেই একমত হয়েছি যে এই সাক্ষাতটি লিপিবদ্ধ হওয়া দরকার । তবে সেদিনের সেই ঘটনাটি যেহেতু মানসিকভাবে প্রত্যেকের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেছে, তাই কারও মনেই এককভাবে পুরো ঘটনাটির স্মৃতিচারন করা দু:সাধ্য ছিল । সেই পরিপ্রেক্ষিতে শহীদ আলী আহসান মো: মুজাহিদের গোটা পরিবার বিশেষ করে আমার মা, বোন, বোন-জামাই, দুই ভাই, ভাবীরা সকলেই এবং ছোট চাচা কয়েকদফা বসে এই লেখাটি চুড়ান্ত করেছি । আমরা চেষ্টা করেছি সেদিন যা ঘটেছে বা শহীদ আলী আহসান মো: মুজাহিদ পরিবারের সদস্যদের সাথে শেষ সাক্ষাতে যা বলেছেন, যেই ভাষায় বলেছেন তাই লিপিবদ্ধ করতে । এই চেষ্টার সফল বাস্তবায়নে উপরোক্ত সকলের ভুমিকা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরন করছি) । ★ Ali Ahmad Mubrur
২১ নভেম্বর রাত ৮টা । আমি তখন পুরানা পল্টনস্থ আইনজীবীদের চেম্বারে । পরিবারের বাকি সবাই উত্তরাস্থ বাসভবনে । হঠাৎ বাসা থেকে ফোন- আমাদেরকে মানে পরিবারকে নাকি শেষ সাক্ষাতের জন্য যেতে বলেছে । ডেপুটি জেলার শিরিন আমার বড় ভাই আলী আহমেদ তাজদীদকে ফোন দিয়ে রাত ৯টার মধ্যে কারাগারে পৌছতে বলেছে । আমি সাথে সাথে তাদেরকে বললাম, আমি তো কাছেই আছি । আপনারা জলদি বের হন । আমি সাথে সাথে সংগঠনের সবাইকে অবহিত করলাম এবং তাদের কাছ থেকে কিছু জানার চেষ্টা করলাম; শেষ সাক্ষাত কোন পরামর্শ আছে কিনা । আইনজীবীদেরকেও জানালাম । তারপর অযু করে কারাগারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম ।
আমাদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের মোট ২৫জন সদস্য সেদিন কারাগারে গিয়েছিলাম ।  রাত ১১টার দিকে আমরা সেখানে পৌছাই । ঢোকার পরে প্রয়োজনীয় তল্লাশী শেষে রাত ১১-২০ মিনিটে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের সেল রজনীগন্ধায় পৌছাই । রজনীগন্ধায় সেলের একেবারে ডানকোনায় ৮ নং সেলে আব্বা থাকছেন । এর আগেও শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ও শহীদ মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানও সেই ঘরটিতেই ছিলেন । আমরা গত কয়েকমাসেও সেখানেই আব্বার সাথে সাক্ষাত করেছি । আমার আগে আব্বার এক নাতি, আমার আম্মা আর বোন আব্বার ঘরে পৌছান । আমি ৪ নম্বর ব্যক্তি হিসেবে পৌছাই, সাথে অন্যরাও । আমি ধারনা করেছিলাম, যেহেতু এত লোক যাচ্ছি শেষ সাক্ষাত । আব্বা হয়তো আমাদের জন্য তৈরী হয়ে বসে থাকবেন । কিন্তু আমরা রুমের বাইরের করিডোরে বা রুমের ভেতরে দাঁড়ানো কোন অবস্থাতেই আব্বাকে পেলাম না । ভেতরে তাকিয়ে দেখি, আব্বা শুয়ে আছেন । পরে বুঝলাম গভীর ঘুমে আছেন । ডান দিকে কাত হয়ে গালের নীচে হাত দিয়ে সবসময় যেভাবে ঘুমাতে দেখেছি সেভাবেই তিনি ঘুমাচ্ছেন । গায়ের উপর কাঁথা নেই, ছোট রুমের মাটিতে জায়নামাজের উপর শুয়ে আছেন । মাথার নীচে কোন বালিশও নেই । আমার বোন, আমরা সবাই আব্বা আব্বা বলে ডাকছি । আর আমার ভাইয়ের ছেলেরা ডাকছে দাদা দাদা বলে । কিন্তু আব্বার কোন সাড়া নেই । যেন ঘুমের সাগরে তলিয়ে আছেন তিনি । এভাবে প্রায় মিনিট খানেক ডাকাডাকির পর আব্বা একটু গুঙ্গিয়ে বললেন, কে কে আব্বা বলে ? তারপর আমাদের দেখে বললেন, ও তোমরা আসছো । এত রাতে কি ব্যাপার ? তোমাদের কি কারা কর্তৃপক্ষ ডেকেছে ? এটা কি শেষ সাক্ষাত ? ততক্ষনে তিনি উঠে বসেছেন । আমাকে তো জেল কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি । তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ । কিছুটা সময় তিনি বসেই থাকলেন । মনে হলো গভীর ঘুম থেকে উঠার জন্য, পাশাপাশি আমাদের উদ্দেশ্যে তার দিক নির্দেশনাগুলো গুছানোর জন্য আল্লাহর সাহায্য চাইছেন ।
আমরা তাকে উত্তর দিলাম, জ্বী আব্বা, আমরা আমাদের শহীদ হতে যাওয়া বাবার কাছে আসছি । আমরা আমাদের গর্বের ধনের কাছে আসছি । আমার বোন বললো, আমরা আমাদের মর্যাদাবান পিতার সাথে দেখা করতে এসেছি । আমাদেরকে ওরা আজ শেষ বারের জন্য আপনাকে দেখার জন্য ডেকেছে । তিনি এভাবে বসে থাকলেন কিছুক্ষন । বসে বসেই আমাদের কথা শুনলেন । আম্মা বললেন, উঠে আসো । সব শুনে তিনি বললেন ও আচ্ছা, আলহামদুলিল্লাহ । কিছুক্ষন পর তিনি উঠলেন, দাঁড়ালেন । ফিরোজা রং এর গেঞ্জী, সাদা নীলের স্ট্রাইপ পড়া পায়জামা পড়ে ছিলেন তিনি । কিছুক্ষন স্যান্ডেল খুজলেন । পরে খুজে পেয়ে স্যান্ডেল পড়ে আমাদের সামনে দাঁড়ালেন । বললেন কে কে আসছো, কয়জন, আমিই একটু দেখি (সেই সময় লাইটের আলো কম থাকায় ভেতর দিকে ভাল দেখা যাচ্ছিলো না । সেলের লোহার দরজার বাইরে নেটের দরজা দিয়ে লাগানো ছিল । পরে আমার বড় ভাই সেই দরজাটি খুলে দিলেন । আমরা পরিবারের সদস্যরা আগে একে একে সালাম দিলাম, তারপর আত্মীয়রা । আমার বড় ভাইরা প্রত্যেকের নাম বলে দিচ্ছিলেন যে, যে কারা সেদিন সাক্ষাতে গিয়েছিল । কিন্তু আব্বা বললেন দাড়াও আমিই দেখে নেই । তারপর সবাই একটু জোরে নীজেদের নাম বলে উপস্থিতি জানান দিলেন । কিন্তু আব্বা আলাদা আলাদা করে প্রত্যেককে কাছে ডেকে তাদের সাথে হাত মিলাতে শুরু করলেন । একে একে সবাই শিকের ভেতর দিয়ে হাত মেলালেন । প্রত্যেকটা মানুষের সাথে তিনি তাদের খোজঁ খবর নিলেন । যার যা সমস্যা সেটা নিয়েই তিনি আলাপ করলেন । প্রত্যেকে সেল দিয়ে বের হয়ে থাকা তার দুটি হাত ছুয়ে সালাম দিলেন । কেউ বা চুমু দিলেন । শেষ করে বললেন, কারও সাথে মুসাবাহ করা বাদ যায়নি তো ? 
আব্বা দাঁড়ানোর পর আমি নিজ থেকেই একটা সূচনা বক্তব্য দিলাম । বললাম আব্বা আপনি শহীদ হতে যাচ্ছেন । আপনি এর মাধ্যমে নিজেকে ও আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানীত করে যাচ্ছেন । আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতেও সম্মানীত করেছেন, আখিরাতেও সম্মানীত করতে যাচ্ছেন ।অতএব মোটেও দুশ্চিন্তা করবেননা । আপনাকে আপনার আব্বা, আমার দাদা মরহুম মাওলানা আব্দুল আলী ইসলামী আন্দোলনের জন্য ওয়াকফ করে গেছেন । আমি মনে করি এরকম একজন ওয়াকফ হওয়া মানুষের সর্বোত্তম ইতি আজ হতে যাচ্ছে । কেননা আপনি আপনার ছাত্র জীবন, যৌবন, মাঝবয়স সব আন্দোলনের জন্য ব্যায় করে এখন দ্বীন কায়েমের জন্য গলায় ফাঁসির দড়ি নিচ্ছেন । আপনার শাহাদাতে সবচেয়ে খুশী হবেন আপনার পিতা মরহুম মাওলানা আব্দুল আলী । কেননা আপনি তার রেখে যাওয়া ওয়াদা অনুযায়ী জীবন যাপন করে আজ দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছেন ।
আব্বা, সেলের দরজায় স্বভাবসুলভ ভংগিতে লোহার শিক ধরে দাঁড়িয়েছেন । এরপর তিনি প্রথম শব্দ করলেন আলহামদুল্লিাহ । প্রথম কথা বললেন, তোমরা জেনে রাখ, কারা কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত আমাকে জানায়নি যে তারা আজ আমার ফাঁসি কার্যকর করতে যাচ্ছে । এটা কত বড় জুলম ?  তখন একটা আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হতে যাচ্ছিল । কিন্তু আব্বা বললেন, কান্নাকাটির দরকার নেই । আমি কিছু কথা বলবো ।
এরপর তিনি অত্যন্ত স্বভাবসুলভ তেজদীপ্ত বলিষ্ঠ কন্ঠে, মাথা উচু করে অনেকটা ভাষনের ভংগিমায় শুরু করলেন, নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারীম । উপস্থিত অন্যরা তখনও একটু আবেগ প্রকাশ করছিল, আব্বা আবারও বললেন নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারীম । আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, আসসালাতু আসসালামু আলা সাইয়্যেদুল মুরসালীন । ওয়ালা আলিহী ওয়া সাহবিহী আজমাইন । আম্মা বা’আদ । আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া । জেল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ যে তারা এই সাক্ষাতের সুযোগ করে দিয়েছেন । জেল কর্তৃপক্ষ আসলে অসহায় । তারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এই পর্যন্ত আমাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছেন এবং আমার সাথে ভাল ব্যবহার করেছেন । তারা আমাকে একটি লিখিত আবেদনের জন্য যথেষ্ট পীড়াপীড়ি করেন এবং বলেন এটা না হলে তাদের অসুবিধা হয়ে যাবে । এক পর্যায়ে তারা বলেন, আপনার যা বক্তব্য আছে তাই লিখে দেন । আর সেই কারনেই এটা বলার পর আমি কনসিকুয়েন্স বুঝেও আমি তাদের সুবিধার জন্য একটি লিখিত আবেদন দিয়েছি ।
আমি প্রশ্ন করলাম, আব্বু আপনি ঐ চিঠিতে আসলে কি লিখেছেন ?
উত্তরে তিনি বললেন, আমি রাষ্ট্রপতিকে লিখেছি, আইসিটি এ্যাক্ট, যদিও এটা অবৈধ ও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক তারপরও এই বিচারের সময় আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সীমিত সুযোগ দেয়া হয়েছে । আমার ক্ষেত্রে ফৌজদারি আইন, সাক্ষ্য আইন প্রযোজ্য ছিলনা । সংবিধান স্বীকৃত নাগরিক অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে ।
আমাকে ট্রাইবুনাল ৬ নং চার্জে মৃত্যুদন্ড দেয়নি । তারা চার্জ ১ কে চার্জ ৬ এর সাথে মিলিয়ে চার্জ ৬ এ মৃত্যুদন্ড দিয়েছে । আপীল বিভাগ আমাকে চার্জ  ১ থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছে ।  চার্জ ৬ এ তারা আমার মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছে । অথচ ট্রাইবুনাল শুধু চার্জ ৬ এর জন্য আমাকে মৃত্যুদন্ড দেয়নি । এই চার্জে স্বাক্ষী মাত্র একজন । সে বলেনি, যে কোন বুদ্ধিজীবিকে আমি হত্যা করেছি । কোন বুদ্ধিজীবি পরিবারের সন্তানও এসে বলেনি যে আমি কোন বুদ্ধিজীবিকে মেরেছি । এবং কোন বুদ্ধিজীবি পরিবারও আমার রায়ের পরও দাবী করেনি যে তারা তার পিতা হত্যার বিচার পেয়েছেন । আমার অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে যে আমি নাকি আর্মী অফিসারদের সাথে বসে পরামর্শ দিয়েছি । কিন্তু যে স্বাক্ষী এসেছে সেও বলেনি যে আমি কবে কোন আর্মি অফিসারের সাথে কোথায় বসে এই পরামর্শ করলাম ?
স্বাক্ষী বলেছে আমাকে, নিজামী সাহেব ও অধ্যাপক গোলাম আযমকে দেখেছে । সে আমাদের চিনতো না । পরে আমাদের নাম শুনেছে । অথচ এই অভিযোগটি গোলাম আযমের সাহেবের বিরুদ্ধে আনাই হয়নি । নিজামী ভাইকে যাবজ্জীবন দিয়ে শুধু আমাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে । আমি নিশ্চিত যে আমার মৃত্যুদন্ডের রায় কনফার্ম করে তারপর আমার বিরুদ্ধে বিচারের নামে প্রহসন শুরু করা হয়েছে । (আমরা সকলে তখন চিৎকার করে বললাম শেম)
আমাকে আমার পরিবার, সংগঠন ও দেশবাসীর কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য, কাপুরুষ প্রমান করার জন্য দিনভর রাষ্ট্রীয়ভাবে এই মিথ্যাচারের নাটক করা হয়েছে । এই জালিম সরকারের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসেনা । (এই সময় তার কন্ঠে প্রচন্ড রাগ ও ক্ষোভের সুর প্রকাশ পায়) । আমি নির্দোষ, নির্দোষ এবং নির্দোষ । আমাদের আজ তারা অন্যায় ভাবে হত্যা করতে যাচ্ছে । কত বড় স্পর্ধা তাদের যে তারা মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার করার দাবী করে । অথচ তাদের নিজেদের ভেতর মানবতা নেই । তারা ঘুমন্ত অবস্থায় একজন মানুষকে মধ্যরাতে তুলে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসে বলে এই তাদের শেষ সাক্ষাত এবং এরপরও তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে ।
তারা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মত লোককেও একইভাবে মাঝরাতে তুলে তার পরিবারের সাথে সাক্ষাতের জন্য ডেকেছে । এটা কেমন মানবতা ? আমার মত তিনিও বিচারিক প্রক্রিয়ার যাবতীয় ত্রুটি ও অসংগতি নিয়ে ইংরেজীতে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখেছেন ।
তোমরা শুনে রাখো, তোমরা চলে যাওয়ার পর আজ যদি আমার ফাঁসি কার্যকর করা হয় তাহলে তা হবে ঠান্ডা মাথায় একজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা । তোমরা প্রতিহিংসাপরায়ন হবানা । তোমাদের কিছুই করতে হবেনা । আজ আমার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পর এই অন্যায় বিচারিক প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত তাদের প্রত্যেকের বিচার আল্লাহর দরবারে শুরু হয়ে যাবে, বিচার শুরু হয়ে গেছে । তোমাদের কারও কিছু করতে হবেনা ।
তোমাদেরকে আজ আমি আমার সত্যিকারের জন্ম তারিখ বলি । আমাদের সময় জন্মতারিখ সঠিকভাবে লিখা হতোনা । আমাদের শিক্ষকেরাই ছাত্রদের জন্ম তারিখ বসিয়ে দিতেন । আমার সত্যিকারের জন্ম তারিখ বলি । আমার জন্ম ১৪ আগষ্ট, ১৯৪৭, ২৭ রমজান । আমার চেয়ে শেখ হাসিনা মাত্র ১ মাসের ছোট । সে আমাকে ভালভাবেই চিনে । সে ভাল করেই জানে আমি কোন অন্যায় করিনি কেননা তার সাথে সাথে আমার দীর্ঘ আন্দোলনের ইতিহাস ।
আমি পবিত্র মক্কা নগরীতে ওমরাহ করেছি অসংখ্যবার । আর আল্লাহর রহমতে হজ্ব করেছি ৭ থেকে ৮ বার । আমার বাবার কবর পবিত্র নগরী মক্কায় জান্নাতুল মাওয়াতে । সেখানে তার কবর উম্মুল মুমেনীন খাদিজার (রা:) পাশে, বেশ কয়েকজন সাহাবীর কবর আছে আলাদা ঘেরাও করা, তার ঠিক পাশে । এখানে অনেক নবী রাসুলদের কবরও আছে । আমি এই পর্যন্ত যতবার ওমরাহ করেছি, যাদেরকেই সাথে নিয়েছি তাদের প্রত্যেককেই সেই কবর দেখানোর চেষ্টা করেছি । ছোট ভাই আলী আকরাম মো: ওজায়ের তখন স্বাক্ষ্য বললেন, নয়া ভাই, আমাকেও আপনি নিয়ে গেছেন । (উল্লেখ্য আব্বার সব ভাই-বোনেরা তাকে নয়া ভাই বলেন । ফরিদপুরের আঞ্চলিক ভাষায় চতুর্থ ভাইকে নয়া ভাই বলা হয়) । আব্বা আবার বললেন, আমার তো ইচ্ছা হয়, আব্বার পাশে গিয়ে আমি থাকি, (একটু হেসে বলেন) তবে এখন সেটা বললে তো জেল প্রশাসন একটু বিপদে পড়েই যাবে । যাক এই ব্যাপারে আমি তো আমার বড় ছেলেকে দায়িত্ব দিয়েছি, সেই সবার সাথে আলাপ করে ঠিক করে নেবে । সেটাই ঠিক বলে মনে করি ।
এর মাঝেই মেঝ ছেলে তাহকীককে ডিউটিরত ডেপুটি জেলার বারবার সময় নিয়ে ইংগিত করছিল । আমার মেঝ ভাই তাই আব্বাকে জানায় যে, আর ৫ মিনিট সময় আছে । জেল প্রশাসন তাই বলছে । আব্বা তখন তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনারা আমাকে চিনেন । জানেন । দেখেছেনও । আজকে আমি আপনাদের কাছ থেকে আরেকটু মানবিক আচরন আশা করি । আমি আমার জরুরী কথা হয়ে গেলে ১ মিনিটও বেশী নিবোনা ।
তখন উপস্থিত সুবেদার জানান, স্যার আমরা স্বাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আমাদের সহযোগিতা করেছেন সব সময়, আমরাও আপনার সম্মান রাখার চেষ্টা করেছি ।
এর পর আব্বা আবার শুরু করলেন, এখানে আমার সন্তানেরা আছো । এখন আমি আমার পরিবারের জন্য কিছু কথা বলবো ।
তোমরা নামাজের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস থাকবা ।
তোমরা সব সময় হালাল রুজির উপর থাকবা । কষ্ট হলেও হালাল রুজির উপর থাকবা । আমি ৫ বছর মন্ত্রী ছিলাম, ফুল কেবিনেট মন্ত্রী ছিলাম । আল্লাহর রহমতে, আল্লাহর রহমতে, আল্লাহর রহমতে আমি সেখানে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে, পরিশ্রম করে আমার দায়িত¦ পালন করেছি । কেউ আমার ব্যপারে বলতে পারবেনা যে আমি অন্যায় করেছি । অনেক দুর্নীতির মধ্যে থেকেও আমার এই পেটে (নিজের শরীরের দিকে ইংগিত করে) এক টাকার হারামও যায়নি । তোমরাও হালাল পথে থাকবা । তাতে একটু কষ্ট হলেও আল্লাহ বরকত দিবেন ।
 আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে মিলে মিশে চলবে । আত্মীয়দের মধ্যে অনেকেই নামাজ পড়বে, অনেকেই কম । কেউ কেউ হালাল উপার্জনের ব্যপারে অত্যধিক কড়া হবে আবার কেউ কেউ একটু দুর্বল থাকবে । শরীয়তে দুই রকম । আজিমাত এবং রুকসাত । আজিমাত হলো খুবই কড়া, কোন অবস্থাতেই সে হারামের কাছে যাবেনা । আর রুকসাত হলো পরিবেশ ও পরিস্থিতির জন্য একটু ঢিল দেবে । তাই আত্মীয়দের মধ্যে কারও আয়ে সমস্যা থাকবে, কারও নামাজে দুবর্লতা থাকবে । তাই আমাদের দায়িত্ব হলো তাদেরকে সঠিক পথে আনার জন্য সবার সাথে সম্পর্ক ঠিক রেখে মিলে মিশে চলা । আমি সব সময় এভাবে চলেছি এবং তাতে ভাল ফল পেয়েছি । হাদীসে আছে, আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা ।
প্রতিবেশীর হক আদায় করবে । আমার ঢাকার বাসা, ফরিদপুরের বাড়ীর প্রতিবেশীদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে ।  আমার উত্তরার বাসার ব্যাপারে তো আমি আগেই লিখে দিয়েছি । মৌলিক কোন চেঞ্জ দরকার নেই । শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী মূল ভিত্তি ঠিক রেখে তোমরা সুবিধা মতো এদিক ওদিক চেঞ্জ করে নিও । ফরিদপুরের বাড়ী নিয়েও যেভাবে বলে দিয়েছি, সেভাবেই তোমরা কাজ করবে । আমরা ভাই ভাইদের মধ্যে কোন সম্পত্তি নিয়ে কখনো ঝামেলা হয়নাই । তোমরাও মিলেমিশে থাকবে । এসব নিয়ে কোন সমস্যা করবানা । শান্তির জন্য কাউকে যদি এক হাত ছাড়তেও হয়, তাও কোন ঝামেলা করবেনা, মেনে নিবে ।
বেশী বেশী করে রাসুল (সা) এর জীবনী ও সাহাবীদের জীবনী পড়বে । আমি জানি তোমরা পড়েছো, কিন্তু তাও বার বার পড়বে । বিশেষ করে পয়গম্বর-এ-মোহাম্মাদী, মানবতার বন্ধু হযরত মোহাম্মাদ (সা:), সীরাতে সারওয়ারে আলম, সীরাতুন্নবী, সীরাতে ইবনে হিশাম, রাসুলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন । আর সাহাবীদের জীবনীর উপরও ভাল বই আছে । আগে পড়েছো জানি, তাও তোমরা পড়ে নিও ।

আমি আমার সন্তানদের উপর সন্তুষ্ট । তোমাদের ভুমিকার ব্যপারে সন্তুষ্ট । 
দেখো আমি এখানে পেপার পত্রিকা নিয়মিত পাইনা । তারপরও আমি যা চাই, যা ভাবি তোমরা তা করে ফেলো । যেমন আজকের সকালের প্রেস কনফারেন্স । এটা অনেক ভাল হয়েছে । আমাকে ছাড়াই তোমরা যে পরামর্শ করে এত সুন্দর একটা কাজ করে ফেলেছো, তাতে আমি অনেক খুশী হয়েছি । আসলে হৃদয়ের একটা টান আছে । আমি এখান থেকে যা ভাবি তোমরা কিভাবে যেন তাই করে ফেলো । তোমরা এভাবেই বুদ্ধি করে মিলে মিশে পরামর্শ করে কাজ করবে ।

আইনজীবীদেরকে আমার ধন্যবাদ ও দোয়া দেবে । তারা অনেক পরিশ্রম করেছেন । তাদের ভুমিকার ব্যপারে আমি সন্তুষ্ট । আইনজীবীরা যেভাবে পরিশ্রম করেছে, অবিশ্বাস্য । ওনারা যদি টাকা নিতো তাহলে ৫-১০ কোটি টাকার কম হতোনা । কিন্তু তারা অলমোস্ট বিনা পয়সায় তারা সাহসিকতার সাথে এই আইনী লড়াই চালিয়ে গেছেন ।
আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মত এত বড় নেয়ামত দুনিয়াতে আর একটিও নেই । আমার জানা মতে এই সংগঠন দুটি পৃথিবীর মধ্যে সেরা সংগঠন । এই সংগঠনের ব্যপারে আমি সন্তুষ্ট । গত কয়েক বছরে অনেক নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে, হাজার হাজার নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, আমার মত জেলখানায় আছে কয়েক হাজার মানুষ । বিশেষ করে ইসলামী ছাত্রশিবির বিগত ৫ বছরে যে ভুমিকা রেখেছে, যে স্যাক্রিফাইস করেছে তা অতুলনীয় । আমার শাহাদাত এই দেশে ইসলামী আন্দোলনকে সহস্ত্রগুন বেগবান করবে এবং এর মাধ্যমে জাতীয় জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ ।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যারা স্বাক্ষী দিয়েছেন, তাদের মধ্যে দুইজন ছাড়া বাকি সবাই দরিদ্র । তারা মূলত অভাবের তাড়নায় এবং বিপদে পড়ে মিথ্যা স্বাক্ষ্য দিতে বাধ্য হয়েছেন । আমি তাদের সবাইকে মাফ করে দিলাম, তোমরাও কোন ক্ষোভ রাখবানা ।
তোমাদের আম্মাকে দেখে শুনে রাখবে । সে আমার চেয়ে ভাল মুসলমান, ভাল মনের মানুষ । এই ব্যাপারে আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি । তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে তার সম্মানীত শ্বশুড়-শাশুড়ীকে স্মরন করেন । শাশুড়ী সেখানে উপস্থিত ছিলেন । তিনি বলেণ শ্বাশুড়ী তো মায়ের মতই । আপনি আমাকে যেভাবে স্নেহ করেছেন, তার কোন তুলনা হয়না । তারপর তিনি বললেন, আমার জানা মতে শহীদের মৃত্যুতে কষ্টের হয়না । তোমরা দোয়া করবে যাতে আমার মৃত্যু আসানের সাথে হয় । আমাকে যেন আল্লাহর রহমতের ফেরেশতারা পাহাড়া দিয়ে নিয়ে যান ।
এরপর তিনি উপস্থিত সবাইকে নিয়ে দোয়া করেন । মুনাজাতের মধ্যে তিনি জালিমের ধ্বংস চেয়েছেন । পরিবারের জন্য আল্লাহকে অভিভাবক বানিয়েছেন । তিনি বলেছেন, আল্লাহ যেন তার রহমতের চাদর দিয়ে যেন তার পরিবারকে ঢেকে রাখেন । ছোট মেয়ে আদরের তামরীনাকে তিনি মা বলে সম্বোধন করেন ।  তাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ওখানে আমার মা, বাবা, ছোট ভাই শোয়ায়েব এবং বড় মেয়ে মুমতাহিনা আছে । শোয়ায়েব অত্যন্ত ভাল মনের মানুষ ছিল এবং আব্বার খুব কাছাকাছি ছিল ।
আমার বোন তখন বলে, আব্বা একটু পরেই মুমতাহিনা (বড় মেয়ে, যে আড়াই বছর বয়সে অসুস্থতায় মারা যায়) আপনাকে রিসিভ করতে আসবে । মেঝ ভাই বললেন ফুল হাতে আসবে ইনশাল্লাহ । আর তখন আম্মা বললেন, তুমি আমার পক্ষ থেকে ওকে আদর করে দিও । আমার বড় ভাই তাজদীদ তখন বললেন, আপনি তো শহীদ হতে যাচ্ছেন । জান্নাতে শহীদের প্রবেশের সময় অনেকের জন্য আপনার সুপারিশ করার সুযোগ থাকবে । আপনি সেই তালিকায় আমাদের রাখবেন ।
তারপর পুত্রবধুদের উদ্দেশ্য করে আব্বা বললেন, আমার বউমাদের আমি সেভাবে আদর করতে পারিনি । বউমা’রাতো মাই । আমাদের বাংলা ভাষায় তো সেভাবেই বলে, বউ-মা । এই সময়, তিনি সকল পুত্রবধুর বাবা-মা’র খোজ খবর নেন এবং তাদের প্রত্যেককে তার পক্ষ থেকে সালাম জানান । পুত্রবধুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি তোমাদের প্রতি সেভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারিনি । বিশেষ করে ছোট বউমা জেরিনকে আমি খুব একটা সময় দিতে পারিনি । কেননা ওর বিয়ের কয়েকদিন পরেই তো আমি এখানে চলে আসি । এই সময় তিনি সকল পুত্রবধুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি তোমাদের প্রতি ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারিনি । তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও ।
ঠিক একইভাবে আমার মেয়ে জামাই ফুয়াদ আর মেয়েকেও আমি সেভাবে সময় দিতে পারিনি । ওদেরকে নিয়ে একবেলাও একত্রে খাবার খাওয়ারও সুযোগ হয়নি । এই সময় তিনি মেয়ে জামাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বাবা তোমার ভুমিকায় ও দায়িত্বপালনে আমি সন্তুষ্ট । তোমার মা বাবাকে আমার সালাম পৌছে দেবে । প্রতিউত্তরে মেয়ে জামাই বলেন, আব্বু আপনি আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা আমি যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করবো ।
জেল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন । তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের সাথে আমার কোন ভুল আচরন হলে আপনারা আমায় মাফ করে দেবেন । নারায়নগঞ্জ ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার সেবকদের তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরন করেন এবং তার নিজের পিসির টাকাগুলো সেবকদের প্রয়োজন মাফিক বন্টন করে দেন এবং সেই ব্যাপারে জেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন ।
নিজামী ভাই ও সাইদী ভাইসহ আরও যারা আছেন সবাইকে তিনি সালাম পৌছে দিতে বলেন ।
দেশবাসীকে তিনি সালাম দেন এবং সকলের কাছে দোয়া চান । সর্বশেষে তিনি তার শাহাদাত কবুলিয়াতের জন্য দোয়া করেন । এরপর তিনি সকলের সাথে একে একে হাত মিলিয়ে বিদায় জানান ।
তারপর আমরা তার রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম । সেই যে আসার পথে ঘুরে তাকে দেখে আসলাম, সেটাই আমার বাবার শেষ জীবন্তকালীন ছবি । যা কোনদিন ভুলতে পারবোনা । ভুলে যাবোনা ইনশাআল্লাহ । ভুলে যাওয়া সম্ভবও নয় । এই অসম্ভব স্বচ্ছ মনের মানুষটির জন্য আপনারা দোয়া করবেন । প্রানভরে দোয়া করবেন ।


(লেখাটি দৈনিক সংগ্রামে অাজ ২৬ নভেম্বর, ২০১৫ তারিখে উপ-সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত হয়েছে ।

শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫

আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে

إِنَّا للهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ
“নিঃসন্দেহ আমরা আল্লাহ্‌র জন্যে, আর অবশ্যই আমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তনকারী ।

আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে । 

প্রিয় ভাইয়েরা, আমার স্যারের শাহাদাতে চোখের পানি কেউ ফেলো না;
ওরা আমাদের গর্বের ধন, ওরা মাবুদের প্রিয়জন । শাহাদাত ঈমানের চরম চাওয়া, 
শাহাদাত মুমিনের পরম পাওয়া ।
আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা তাঁর রক্তকে ইসলামের জন্য কবুল করুন । মহান আল্লাহ তাকে শাহদাতের মর্যাদায় জান্নাতুল ফেরদাউসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন । আমিন ইয়া রব ।


রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫

কেন ডিভিশন চাইলাম ...!


আজ কিছু পত্রিকার রিপোর্ট দেখলাম, 'হঠাৎ কেন ডিভিশন চাইলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী' । রহস্য আর রহস্য ! আছে শিরোনামে রহস্য, আছে রিপোর্টের মধ্যেও রহস্য ! কোনো কোনো পত্রিকা রিপোর্ট এমন করেছে যে রিপোর্ট পড়ে মনে হয়, ডিভিশন চাওয়াটাও যেন একটি অপরাধ (!)
পত্রিকার রিপোর্টের আলোকে কেন আমরা ডিভিশন চাইলাম সে বিষয়ে বিবেকবানদের কাছে আমি এর ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি । কারন, এক শ্রেণীর মানুষ এই আবেদনের মধ্যে 'সরকারের সাথে জামায়াতের আঁতাত' এর গন্ধ খুঁজে পাবেন । কেউবা আবার এর প্রতিবাদে রাস্তা বন্ধ করে 'মঞ্চ' খুলে 'পদ্মা মেঘনা যমুনা, এই আবেদন মানিনা' শ্লোগান তুলে রাজপথ প্রকম্পিত (!) করে তুলতে পারেন ।

"আমার প্রানপ্রিয় পিতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ট্রাইব্যুনালের রায় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ডিভিশন-১ প্রাপ্ত বন্দী হিসেবে কারাগারে অন্তরীন ছিলেন। রায় হওয়ার পরপরই আমার পিতার ডিভিশন বাতিল হয়ে যায় । এরপর আপীল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের রায় কমিয়ে যাবজ্জীবন করার পর জেল কোডের ১৫ নং অধ্যায়ের ক্লাসিফিকেশন শিরোনামের অধীন ৬১৭ নম্বর বিধি মোতাবেক আমার পিতা ডিভিশন-২ পাওয়ার অধিকারী হন । কারাগারে বহু সংখ্যক ডিভিশন-২ প্রাপ্ত কয়েদী রয়েছেন । কিন্তু গত এক বছরেও কারা কর্তৃপক্ষ আমার পিতাকে তার প্রাপ্য ডিভিশন-২ প্রদান করেননি ।

আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দীর্ঘ ৩৯ বছর যাবত ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত । তিনি একই সাথে হৃদরোগেও আক্রান্ত । ২০০৩ সালে সর্ব প্রথম তার হার্টের করোনারী আর্টারীতে দুটি ব্লক ধরা পড়ে । একটিতে ৭০% অন্যটিতে ৯০% । তখন তার আর্টারীতে ২টি রিং স্থাপন করা হয় । এরপর আওয়ামী সরকার কর্তৃক অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার পর ২০১২ সালে তিনি বুকে তীব্র ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন । তখন আবারো আমার পিতার আর্টারীতে ৩টি ব্লক ধরা পড়ে । একটিতে ৯৯%, একটিতে ৯৫% এবং অন্যটিতে ৮০%। এরই প্রেক্ষিতে তাৎক্ষনিকভাবে ডাক্তারের সিদ্ধান্তে তার আর্টারীতে ৩টি রিং স্থাপন করা হয় । পূর্বের ২টি এবং এখনকার ৩টি নিয়ে বর্তমানে সর্বমোট ৫টি রিং আমার পিতার করোনারী আর্টারীতে স্থাপন করা আছে ।
এছাড়া আমার বাবা আর্থাইটিস রোগেও আক্রান্ত । এ কারনে হাঁটু ও কোমড়ে রয়েছে তার তীব্র ব্যাথা । সরকার কর্তৃক অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেফতারের পূর্বে তিনি নিয়মিত ফিজিওথেরাপী নিতেন । গ্রেফতার হওয়ার পর সেই রকম থেরাপী নেয়ার সুযোগ আর আমার পিতার হয়নি । যে কারনে তার হাঁটু ও কোমড়ের ব্যাথা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে । 

আমার আব্বার বয়স এখন ৭৬ চলছে । 
এই বয়সেও উপরোক্ত নানাবিধ শারীরিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও গত ৫ বছরে বিনা চিকিৎসার পরও শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবাণীতে এবং আপনাদের নেক দোয়ায় তিনি ভালোই আছেন । তবে বয়স ও অসুখজনিত সমস্যার কারনে তিনি শারীরিক কষ্টে আছেন । এখন তিনি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারেন না । কারো সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে একা উঠে দাঁড়াতে পারেন না। ডায়াবেটিক কন্ট্রোল রাখার জন্য তার নিয়মিত হাঁটার প্রয়োজন হয় কিন্তু এখন তিনি কারো সাহায্য ছাড়া হাঁটতেও পারেন না ।
এমতাবস্থায়, সংসদ সদস্য ছিলেন শুধু এই কারনে নয় বরং পিতার প্রতি দ্বায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকে পিতাকে অসুস্থতাজনিত শারীরিক কষ্ট থেকে সামান্য প্রশান্তি দেয়ার প্রত্যাশায় ব্যাকুল সন্তান হিসেবে পরিবারের পক্ষ থেকে মাসুদ সাঈদী গত ৯ আগষ্ট ২০১৫ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবরে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমার পিতার প্রাপ্য ডিভিশন চেয়ে আবেদন করে । কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, দুই মাস পার হয়ে গেলেও অদ্যাবধি সেই আবেদনের কোন উত্তর এখনো আমরা পাইনি ।
এই আবেদনের মধ্যে কোন দল নেই-মত নেই, রাজনীতি নেই-কুটনীতিও নেই । আছে শুধু পিতার প্রতি সন্তানের ব্যাকুলতা, আছে শুধু পিতার প্রতি সন্তানের নিখাঁদ শ্রদ্ধা আর ভালবাসা ।

বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ঈদুল আযহা ও কঙ্কর নিক্ষেপঃ

হজ্জের ধারাবাহিক কাজ
১০ই জিলহজ্জ অর্থাৎ ৯ই জিলহজ্জ রাতে ও ফজর বাদ যা করনীয়ঃ
মুযদালিফায় এসে এশার ওয়াক্তে মাগরিব ও এশা একত্রে (এশার নামাজ কসর) আদায় করে এখানেই খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে হয় । মুযদালিফায় রাত্রী যাপন করা ওয়াজিব । সমগ্র রাত তাসবীহ, তাহলীল, তেলাওয়াত ও দোয়ার মাধ্যমে অতিবাহিত করা উচিত । এখান থেকেই ৩দিনের জন্য সত্তুরটি পাথর সংগ্রহ করতে হয় । মুলত; পাথর ৪৯টি কঙ্কর প্রয়োজন । যদি ১২ তারিখ মিনা ত্যাগ করা না হয়, তবেই অতিরিক্ত ২১টি কংকর রাখতে হয় ১৩ই জিলহজ্জের জন্য । ফযরের নামাজ মুযদালিফায় আদায় করে মিনায় শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হউন । এইদিনে জামারাতুল আকাবা অর্থাৎ বড় শয়তানকে ৭টি পাথর নিক্ষেপ শেষ করে ক্বেরান বা তামাত্তু হজ্জ পালনকারীদের জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব । ভীড়ের কারনে এইদিন করতে না পারলে ১২ জিলহজ্জ সূর্যাস্ত যাবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কুরবানী করা যাবে । কুরবানী হলে চুল কাটাতে হবে এবং এহরাম খুলে সাধারন পোশাক পরিধান করতে পারবেন । এরপর তাওয়াফে ইফাদার জন্য মক্কায় গিয়ে তাওয়াফে যিয়ারত শেষ করে পুনরায় মিনায় প্রত্যাবর্তন করতে হবে ।
 কুরবানী বা দম
কুরবানী করা ওয়াজিব । এটি শুধু হজ্জ আদায়কারীর জন্যই নয়, প্রত্যেক সাম্রথবান মুসলমানদের প্রতিই কুরবানী করা ওয়াজিব । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই তা মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে কবুল হয়ে যায় । হযরত আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেনঃ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বলেনঃ হে ফাতিমা ! তোমার কুরবানীর পশুর কাছে দাঁড়িয়ে থাকো কারন, কুরবানীর পশুর যে রক্ত মাটিতে পড়বে তার পরিবর্তে আল্লাহ তায়ালা পূর্বের গুনাহ গুলো ক্ষমা করে দেবেন । একথা শুনে হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা জানতে চাইলেন,  এ সুসংবাদ কি শুধু নবী পরিবার সদস্যেদের জন্য না সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য ? আখেরী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নবী পরিবারের সদস্য এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য । (জামিউল ফাওয়ায়েদ)
সাহাবায়ে কেরাম নবী মুহাম্মাদূর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জানতে চাইলেন, কুরবানী কোন প্রথা ? মানবতার দূত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এটা তোমাদের জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত । সাহাবায়ে কেরাম বললেনঃ এতে আমাদের জন্য কি সাওয়াব ?্রাহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ পশুর প্রত্যেক পশমের জন্য একটি করে সাওয়াব পাওয়া যাবে । (তিরমিযী) ।

হাজীদের জন্য কুরবানীর অত্যান্ত সুব্যবস্থা করা হয়েছে । হজ্জে গিয়ে কুরবানীর পশু ক্রয় করে কুরবানী দেয়ায় নানা জটিলতা রয়েছে । সৌদি সরকার কুরবানীর অর্থ জমা নিয়ে তাদের নিজেদের উদ্দোগেই কুরবানী করে থাকেন । এব্যবস্থার মাধ্যমে কুরবানী দাতাকে কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় না । অবশ্য কোন হাজী সাহেব যদি চান নিজেই পশু ক্রয় করে কুরবানী দিবেন তাহলে তিনি তাও দিতে পারেন অথবা আপনার এজেন্সীর প্রতিনিধির মাধ্যমে দিতে পারেন ।
১১ই জিলহজ্জ তারিখে করনীয়ঃ
এইদিন সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পর সূর্যাস্তের পূর্বে ৩টি জামারায় ৭টি করে মোট ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয় । ১০ তারিখে তাওয়াফে যিয়ারত করা সম্ভব না হলে এইদিন তাওয়াফে যিয়ারত করতে পারেন । আর তাওয়াফে যিয়ারত করা থাকলে কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে পুনরায় মিনায় যেতে হবে এবং সেখানে রাত যাপন করতে হবে ।
১২ই জিলহজ্জ তারিখে করনীয়ঃ
১১ই জিলহজ্জ তারিখের মতোই তিনটি স্তম্ভে সাতটি করে মোট একুশটি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে । প্রথমে ছোট জামরায়, তারপর মাঝারি জামরায় এরপর জামরাতুল আকাবা অর্থাৎ বড় জামরায় পাথর নিক্ষেপ করে দোয়া করুন । এক্ষেত্রে কোন হাজী যদি বার্ধক্য কিংবা শারিরীক অসুস্থতার জন্য নিজ হাতে কঙ্কর নিক্ষেপে অক্ষম হন তাহলে সে নিজের পক্ষ থেকে কাউকে পাথর নিক্ষেপের দ্বায়িত্ব অর্পণ করতে পারেন । 
আজ মিনা থেকে আপনার আবাসস্থল মক্কায় চলে যেতে পারেন । মনে রাখবেন,  তাওয়াফে ইফাদা ও কুরবানী করা না হয়ে থাকলে এইদিনে অবশ্যই মাগরিবের পূর্বে তাওয়াফ ও কুরবানী সম্পন্ন করতে হবে ।

১৩ই জিলহজ্জ মিনা ত্যাগ না করে থাকলে পুনরায় এখান থেকে পাথর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে যেতে হবে । পূর্বের অনুরূপ ৩টি স্তম্ভে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে । এইদিন যদি কেউ মক্কা ছেড়ে নিজ দেশে অথবা মদীনায় যেতে চাইলে তাকে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে । নারীদের হায়েজ নেফাসের সমস্যা থাকলে তারা বিদায়ী তাওয়াফ না করেই নিজ দেশ বা মদীনায় যেতে পারবেন । 
উল্লেখ্যঃ  তিন স্থানে প্রতীকী শয়তানের প্রতি পাথর বা কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব । কেউ যদি কঙ্কর নিক্ষেপে অক্ষম হয় তাহলে তাকে পৃথকভাবে কুরবানী (দম) দিতে হবে । অর্থাৎ এমনিতেই তো ঈদুল আযহার দিন কুরবানী দিতেই হয়, পাথর নিক্ষেপ করতে না পারলে তাকে আরেকটি কুরবানী বা দম দিতে হবে । পাথর/ কঙ্কর নিক্ষেপের মর্ম হলো, মুসলিমগন একথা প্রমান করে যে, তাদের জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, মুসলিমগনও অনুরূপভাবে বাতিলী বা শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে একতা বদ্ধ হয়ে ইসলামের বিপরিত শক্তির বিরুদ্ধে নিজ নিজ দেশে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন ।  
 ------(চলবে) 
"শারঈ' মানদন্ডে
দোয়া-যিকির,হজ্জ ও উমরা"

হজ্জের খুতবায় গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শাইখঃ

'আল্লাহকে ভয় করে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করুন'
সর্বক্ষণিক আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত করে ইনসাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করুন । পবিত্র হজ্জ উপলক্ষে আরাফাত ময়দানে আজ বুধবার সমবেত লাখ লাখ হাজীর উদ্দেশে দেয়া খুতবায় সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ আল শায়খ মুসলিম উম্মাহর নেতাদের প্রতি এ আহবান জানান ।
তিনি আরো বলেন,আল্লাহর দেওয়া আমানতগুলো রক্ষা এবং আল্লাহকে ভয় করে যার যার অবস্থানে থেকে অর্পিত দায়িত্বসমূহ যথাযথভাবে পালন করা তাদের দায়িত্ব । নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম প্রতিদানকারী ।
তিনি বলেন, হে মুসলিম ভাইয়েরা, তোমরা আল্লাহর দরবারে দৃঢ় চিত্তে শুকরিয়া আদায় কর যে তোমরা আজ আরাফাতের ময়দানে শামিল হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছ ।
খুতবায় তিনি বলেন, কুরআন হাদিসের মূলনীতির ভিত্তিতে বিশ্ব মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রুজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরতে এবং মুসলমানদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনোনিবেশ করতে হবে । মুসলমানদের ঈমান আক্বীদা রক্ষার্থে সর্বদা আল্লাহর ওপর ভরসা এবং ইবাদত বান্দেগীর মাধ্যমে দিনাতিপাত করতে হবে । 
তিনি মুসলিম বিশ্বকে মুসলমান নামধারী সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান । তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা আজ টার্গেট করেছে আমাদের মুসলিম যুব সমাজকে ।ওদের হাত থেকে রেহাই পায় না মসজিদ ও অবুঝ শিশু । যুব সমাজের মন মগজ ধোলাই করে তাদের বিপথগামী করছে । হে যুব সমাজ তোমরা তোমাদের জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে দেশ ও মুসলিম জাতি গঠনে এগিয়ে আস । তিনি মুসলমান সম্প্রদায়কে অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন । গণমাধ্যমকে মানুষের উপকারে কাজে লাগাবার কথা বলেন । গ্র্যান্ড মুফতি মিডিয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান । মিডিয়ার মাধ্যমে সত্যকে তুলে ধরার কথা বলেন তিনি ।
খুতবায় শরণার্থীদের তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ কর, তওবা কর নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের জমিন তোমাদের হাতে ফিরিয়ে দেবেন । 
খুতবায় সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শাইখ বলেন, ইসলাম এসেছে সুশৃংখল লক্ষ্য নিয়ে; যার মধ্যে ‘মানুষ পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে জুলুম করবে না । ইসলাম মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা বিধান করে । মহানবী (সা.) হচ্ছেন মানুষের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ । নামাজ আদায় করো। আল্লাহকে ভয় করো । আল্লাহ প্রদত্ত আমানত সমুহ হেফাজত করো । বিপদগ্রস্ত মুসলমানদের সাহায্য করো । 
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত ছিল আরাফাতের ময়দান । ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের অন্যতম ফরজ ।

সূর্যোদয়ের পর থেকে মিনায় অবস্থানরত প্রায় ৩০ লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান আরাফাতের ময়দানে অবস্থান নিতে শুরু করেন । সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর খুতবা পেশ করেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ আল শায়খ ।
তিনি কঠোর নিরাপত্তা ও সুন্দর পরিবেশে হজ আয়োজনে দুই পবিত্র মসজিদের খতিব, কিং সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, সোমালিয়া, ইয়েমেনসহ মুসলিম বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহান প্রভুর দরবারে মোনাজাত করেন ।

মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

মুযদালিফায় রাত যাপন ও কঙ্কর সংগ্রহঃ

ঘুমের কাছে যারা দুর্বল তারা ইচ্ছে করলে মুযদালিফায় ঘুমাতেও পারেন । কিছু সময় ঘুমিয়ে সমগ্র রাত মহান আল্লাহর তাসবীহ তাহলীল কুরআন তেলাওয়াত এবং দোয়ার মাধ্যমে রাত অতিবাহিত করাই উত্তম । ইসলামী চিন্তাবীদগন বলেছেন মুযদালিফা থেকেই পাথর সংগ্রহ করা মুস্তাহাব । 
মুজদালিফায় এসে প্রথমে মাগরিব ও এশা নামাজ আদায় করে তারপর ৪৯টি কঙ্কর বা পাথর সংগ্রহ করা উচিত । অনেকেই আগে পাথর সংগ্রহ করে তারপর নামাজ আদায় করেন, এটা ঠিক নয় । তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ুন । কান্না কাটি করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করুন । হয়তো জীবনে আর কখনো আপনি এখানে আসতে না পারেন । হয়তো পবিত্র এই ময়দানে আপনার শেষ আসা । দোয়া করুন দেশ মাটি মা মানুষের জন্য । শান্তির জন্য । স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য । মহান আল্লাহ আপনার হজ্জ, উমরাহ, রোজা এবং সকল এবাদত,  নেক চাওয়া  কবুল করুন । আমিন ।। -------(চলবে) 
"শারঈ' মানদন্ডে
দোয়া-যিকির,হজ্জ ও উমরা"





মুযদালিফায় মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করাঃ

মুযদালিফায় এসে এশার নামাজের ওয়াক্তে প্রথমে মাগ্রিবের নামাজ ও পরে এশার নামাজ আদায় করতে হয় । রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় এসে এশার নামাজের ওয়াক্তে আযান দিতে বলেছেন, তারপর ইক্বামত দিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করেছেন । এ নামাজ শেষ করেই তিনি পুনরায় ইক্বামত দিতে বলেছেন । ইক্বামত শেষে এশার নামাজ কসর আদায় করেছেন । (মুসলিম)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুা বলেনঃ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় মাগরিব ও এশা একত্রে পড়েছেন, প্রত্যেক নামাজ ভিন্ন ভিন্ন ইক্বামত দিয়ে পড়েছেন এবং উভয় নামাজের মাঝে তিনি কোন তাসবীহ পড়েননি  (বোখারী) ।  -------(চলবে) 
"শারঈ' মানদন্ডে
দোয়া-যিকির,হজ্জ ও উমরা"





আরাফাতে যুহর ও আসর একত্রে আদায় করাঃ

সহীহ হাদীসের মাধ্যমে এ বিষয়টি প্রমানিত হয়েছে যে, আখেরী নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফাতের ময়দানে যুহর ও আসর নামাজ একত্রে আদায় করেছেন । তিনি যুহরের আযান ও ইক্বামত দেয়ার পর যুহরের নামাজ কসর আদায় করেন, তারপর আবার ইক্বামত দেয়া হয় এবং তিনি আসরের নামাজ কসর আদায় করেন । অর্থাৎ
দুই আযানের প্রয়োজন নেই । আযান একবারই দিতে হয় । শুধু ইক্বামত দুইবার দিতে হবে । যুহর নামাজের জন্য একবার এবং আসরের নামাজ যুহরের ওয়াক্তেই আদায় করতে হয় । মসজিদে নামিরায় খুতবার পর যুহর এবং আসর কসর একত্র করে জামায়াতে কসর আদায় করা হয় । -------(চলবে) 
"শারঈ' মানদন্ডে
দোয়া-যিকির,হজ্জ ও উমরা" 




উ'কুফে আরাফাহ এবং ঐ দিন রোজা পালনঃ

উ'কুফে আরাফাহ বা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজ্জের মুল বিষয় । ৯ই জিলহজ্জ তারিখে যুহর থেকে মাগরিব পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা ফরজ । এ ময়দানে অবস্থান না করলে হজ্জ হবে না । আখেরী নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হজ্জ হচ্ছে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা । যে ব্যক্তি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেছে সে হজ্জ পেয়েছে । (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবিনে মাজাহ) ।





আরাফার দিন দোয়া কবুলের দিন এবং মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এদিনে তার হজ্জ আদায়কারী বান্দাদের ক্ষমা করেন এবং তাদের দোয়া কবুল করেন । এদিনে রহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রেখেছিলেন বলে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয় । সুতরাং আরাফার দিন রোজা না রাখাই মুস্তাহাব । যাতে করে হজ্জ পালনকারী ব্যাক্তি দোয়া, তেলাওয়াত ও যিকিরের জন্য প্রয়োজনীয় শারিরীক শক্তি পায় । আরাফার দিনে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কিত যে হাদীসগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো যারা হজ্জ করতে যাননি তাদের জন্য প্রযোজ্য । --------(চলবে) 
"শারঈ' মানদন্ডে
দোয়া-যিকির,হজ্জ ও উমরা" 

হাজারে আসওয়াদ : বেহেশতি পাথরঃ


হজ্জ বা উমরাহ করার সময়  হাজী সাহেবদের কালো পাথরের দিকে বিশেষ আগ্রহ থাকে । সবাই একে চুমু খাওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন । এর নাম হাজারে আসওয়াদ । বেহেশতি এই কালো পাথরটি (এখন অবশ্য কয়েকটি খণ্ডে বিভক্ত) কাবা শরিফের পূর্ব কোনে লাগানো । এত চুমু খাওয়ার ফজিলত অত্যন্ত বেশি। হযরত উমর  রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছিলেনঃ ‘আমি জানি তুমি একটা পাথর, তোমার উপকার বা ক্ষতি করার কোনো ক্ষমতা নেই । যদি আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তোমার গায়ে চুমু দিতে না দেখতাম, তবে আমি কখনো তোমাকে চুমু দিতাম না ।’
এই পাথরকে চুমু দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর রাসুলের আনুগত্য করা । এই চুমু খাওয়া সুন্নত। 
হাজারে আসাওয়াদের আভিধানিক অর্থ হলো কালো পাথর । তবে অনেক হাদীসে একে সাদা রঙের পাথর বলে উল্লেখ রয়েছে ।
আল্লামা আবু আবদুল্লাহ আল-ফাকেহি তাঁর ‘আখবারে মক্কা’ গ্রন্থে হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেনঃ (হাদীসটির সনদ দুর্বল) এতে বলা হয়েছেঃ 
রাসুলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি জাহেলিয়াতের অপবিত্রতা ও নাপাকি এবং জালেম ও পাপিষ্টদের হাতের কালিমায় হাজারে আসওয়াদ কলুষিত না হতো, তাহলে এর মাধ্যমে সব পঙ্গুত্বের চিকিৎসা হতো এবং আল্লাহ প্রথম দিন একে যে আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন হুবহু সেই আকৃতিতেই পাওয়া যেত । আল্লাহ এর রং পরিবর্তন করে এই জন্যই কালো করে দিয়েছেন যে, দুনিয়াবাসী মানুষ যেন বেহেশতের সৌন্দর্য (দুনিয়াতে বসেই) দেখতে না পায় এবং এটা যেন বেহেশতের মধ্যেই ফিরে আসে । এটি বেহেশতের সাদা ইয়াকুত পাথরের একটি । আদিপিতা হযরত আদম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পৃথিবীতে পাঠানোর সময় আল্লাহ তা কাবা শরিফের স্থানে রেখে দিয়েছিলেন ।
কাবাঘর নির্মাণের সময় ফেরেশতারা হযরত ইব্রাহিমকে আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাথরটি এনে দিলে তিনি কাবাঘরের দক্ষিনকোনে স্থাপন করেন । মাতাফ বা জমিন থেকে ১.১০ মিটার উচ্চতায় হাজরে আসওয়াদ স্থাপিত । রাসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়্যতের আগে কুরাইশরা কাবাঘর সংস্কারের সময় তিনি নিজ হাতে পাথরটিকে যথাযথ স্থানে রেখে সম্ভাব্য সঙ্ঘাত এড়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন ।
পাথরটি অবশ্য অটুট থাকেনি । হযরত আবদুল্লাহ বিন যোবায়েরের শাসনামলে কাবা শরিফে আগুন লাগে । এ সময় হাজারে আসওয়াদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তিন টুকরা হয়ে যায় । তিনি এটিকে রূপা দিয়ে মুড়িয়ে দেন ।


হাজরে আসওয়াদ চুমু দেয়ায় অনেক ফজিলত রয়েছে । তিরমিজী শরীফের এক হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামিনী স্পর্শ করা গুনাহের কাফফারা স্বরুপ । আখিরাতের ময়দানে হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামিনী তাদের পক্ষে কথা বলবে যারা তা স্পর্শ করেছে বা চুমু দিয়েছে । 
রাসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এ পাথরে চুমু দেয়ার উদ্দেশ্যে যারা এগিয়ে যায় তাদের প্রত্যেক কদমে কদমে গুনাহ ক্ষমা করা হয় । 
তবে ধাক্কা ধাক্কি করে, অন্যকে কষ্ট দিয়ে, শক্তি প্রয়োগ করে হাজরে আসওয়াদ কিংবা রুকনে ইয়ামিনীর কাছে গিয়ে স্পর্শ বা চুমু দেয়া যাবে না । বেশী ভীড় থাকলে দূর থেকে ইশারার মাধ্যমে চুমু দিলেই সাওয়াব পাওয়া যাবে । 


বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আল্লামা সাঈদী বনাম যুদ্ধাপরাধ, সরকারী রায় বনাম জনতার রায় !


১৯৭১; বাংলার ইতিহাসে একটি গৌরবময় অধ্যায় কিন্তু সেই ৭১ কে রাজনৈতিক তরবারী হিসেবে ব্যবহার করে যেভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থের জন্য বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে জাতির অন্তত একটি বিশাল অংশের হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করা হচ্ছে তাতে গৌরবময় ৭১ আজ অনেকাংশেই ভীতিকর এবং আতংকজনক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে !

তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গত বছর হত্যা করা হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লাকে, আজ প্রায় দুই বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও যার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল সেই মোমেনা বেগম যে আসল মোমেনা বেগম ছিলেন না এবং মোমেনা বেগমকে মিডিয়ার সামনে উপস্থিত করার যে চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছিল তা কেউ গ্রহন করেনি !

আজ (১৭/০৯/১৫)  এক বছর পার হলো, বিশ্বের অগনন মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন, বাংলার মানুষের হৃদয়ের মনি, জনপ্রিয়তো বটেই অনেকের মতে বাংলার ইতিহাসের সবচাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে (১৭/০৯/১৪) আমৃত্যু রায়ের মাধ্যমে মুছে ফেলার চক্রান্ত হয়েছে, তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় নামক নাটক মঞ্ছস্থের জন্য !

অভিযোগসমূহঃ

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যাল যে দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছে তার মাঝে একটি হলো বিশাবালী হত্যা !রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হিসেবে এনেছিল ৭১সালে নিহত বিশাবালীর আপন ভাই সুখরঞ্জন বালীকে যেই সুখরঞ্জন বালী একাধিকবার বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশ্যে বলেছে যে তার ভাই হত্যার সাথে আল্লামা সাঈদী কোনভাবেই জড়িত নয় এবং সে ব্যাপারে তিনি সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আদালতেও গিয়েছিলেন গত ৫’ই নভেম্বর,২০১২ সালে ! কিন্তু সত্য প্রকাশিত হয়ে যাবার ভয়ে সরকার আদালত চত্তর থেকে সুখরঞ্জন বালীকে গুম করে ভারতের কারাগারে বন্দী করে রাখার ইতিহাস দেশবাসীর সকলেরই জানা !

২য় আরেকটি অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল ক্যাঙ্গারু ট্রাইবুন্যাল ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার অভিযোগে ! অথচ আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্য এই ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার জন্য তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৭-৭-১৯৭২ সালে একটি মামলা করেছিলেন ১৪ জনকে আসামী করে যার মাঝে আল্লামা সাঈদীর নাম নিশানাও নেই  !সেই মামলার নথি আজো সরকারের Magistrate’s General Register নামক বইতে রয়েছে যার ক্রমিক নাম্বার ৩৭৮ !

এমনকি সেই হত্যা মামলার চার্জশীট দেয়া হয়েছিল সেখানেও আল্লামা সাঈদীর নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল না অথচ আজকে রায় হয়ে যাওয়া একটি মামলায় ৪২ বছর পরে আবার রায় দেয়া হচ্ছে আগের সকল অভিযুক্তের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে নাম যুক্ত করে !

তার সাথে ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার কাল,সময় ও স্থান সম্পর্কে নাটুকে সাক্ষীদের একেকজনের একেক রকম সাক্ষ্যতো রয়েছেই ! ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমের ৭২ সালে দায়ের করা মামলায় হত্যার স্থান নলবুনিয়া এবং হত্যার সময়কাল ১লা অক্টোবর,১৯৭১ উল্লেখ থাকলে আজ ৪২ বছর পরে ট্রাইবুনালের বানোয়াট সাক্ষীদের একজন বলছেন হত্যার স্থান ছিল পাড়েরহাট আর আরেকজন বলছেন নলবুনিয়া আর সময়কাল বলছে ৮’ই মে ! অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে দুজন সাক্ষী দুরবর্তী দুটো স্থানের কথা বললেও তারা আবার ঐ একই ব্যক্তিকে হত্যা করতে নিজ চোখে দেখেছে !

আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে আরেকটি নাটুকে অভিযোগ করা হয়েছে মানুষের আবেগকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাতে তা হল প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের পিতা ফয়জুর রহমানকে হত্যার অভিযোগ ! ফয়জুর রহমানের স্ত্রী, হুমায়ুন আহমদ এবং জাফর ইকবালের মাতা আয়েশা ফয়েজ একটি বই লিখেছেন “জীবণ যে রকম” যেখানে তিনি ফয়জুর রহমানকে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন অথচ পুরো বইয়ে একটিবারের জন্যেও আল্লামা সাঈদীর নাম নেই ! আয়েশা ফয়েজ পুত্র জাফর ইকবালকে সাথে নিয়ে একটি মামলাও করেছিলেন ৭২ সালেই যেখানেও আল্লামা সাইদীর নাম ছিলো না  !

সাক্ষীদের অবস্থাঃ

এছাড়া অন্যান্য মামলারও একই অবস্থা ! আদালতে তেমন কোন সাক্ষী উপস্থিত করতে না পেরে অনুপস্থিত সাক্ষীদের নামেই জবানবন্দী সাজিয়ে নিয়েছে ট্রাইবুন্যাল যেই সাক্ষীদের অধিকাংশই মিডিয়াতে বলেছে তাদের বলা হয়েছিল সাক্ষ্য দিতে কিন্তু তারা মিথ্যা বলতে রাজি না হওয়ায় তাদের আর সাক্ষ্য দিতে নেয়া হয়নি যদিও ট্রাইবুনাল তাদের অনেকের অনুপস্থিতির জন্য কারণ দর্শিয়েছে তারা অসুস্থ কিংবা মৃত!অথচ সরকার পক্ষেরই বহু সাক্ষী মিডিয়াতে বলেছে আল্লামা সাঈদী কোনরুপ অপরাধের সাথে জড়িত নয় আবার অনেকে বলেছে আল্লামা সাঈদীকে তারা চিনতোই না ৯০এর ইলেকশনের আগে ! অথচ তাদের নামেই মিথ্যা সাক্ষ্য নিজেরাই বানিয়ে ফেলেছে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল !

কে সেই দেলু শিকদার ?

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে শুরু থেকেই যে চেষ্টাটি করে আসছে আওয়ামীরা তা হলো শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে যেভাবে কসাই কাদের বানানো হয়েছিল ঠিক তেমনি আল্লামা সাঈদীকে দেলু শিকদার বানিয়ে হত্যা করতে ! অথচ রাষ্ট্রপক্ষ একটি দলিলও হাজির করতে পারেনি যেখানে তারা প্রমাণ করতে পেরেছে যে অতীতে একদিনের জন্য হলেও আল্লামা সাঈদীর নাম দেলু শিকদার ছিল ! কিন্তু অন্যদিকে আল্লামা সাঈদীর আলিমের সার্টিফিকেট,১৯৫৭ সালের দাখিলের সার্টিফিকেট,পাসপোর্ট, ১৯৬২ সাল থেকে শেখ মুজিবর রহমান জীবিত থাকা অবস্থাতেই ওয়াজ-মাহফিলের পোষ্টার ইত্যাদি সকল জায়গায় নাম রয়েছে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, পিতাঃমাওলানা ইউসুফ সাঈদী, মাতাঃমৃত গুল নাহার বেগম, দাদাঃ মৃত গোলাম রহমান সাঈদী, চাচাঃ সুফী মাওঃ সাইদুর রহমান সাঈদী, ভাইঃ মোস্তফা আহসান সাঈদী, স্থায়ী ঠিকানাঃ সাঈদখালী,জিয়ানগর উপজেলা,পিরোজপু্‌র, বর্তমান ঠিকানাঃ আরাফাত মঞ্জিল,শহীদবাগ,ঢাকা ।

আর ট্রাইবুনাল যেই দেলু শিকদারের নাম বলছে এবং তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীন নিজেই তার সাক্ষ্বর করা যেই ডকুমেন্ট আদালতে দিয়েছেন “প্রসিকিউশন ডকুমেন্ট ভলিউম-৩,পৃষ্ঠা-২১৩” সেখানে অভিযুক্তের নাম রয়েছে দেলু শিকদার, পিতাঃরসুল শিকদার, মাতাঃমৃত সোণাবরুণ, দাদাঃ ওহাব আলী শিকদার,দাদীঃ ধরু বিবি, ভাইঃ এনায়েত শিকদার, লালু শিকদার, চাঁন শিকদার (পিরোজপুর সরকারী কলেজ শাখা ১৯৮৬-১৯৮৭ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রলীগ মনোনীত ভিপি),স্থায়ী ঠিকানাঃশিকদার বাড়ি,ঝাটোকাঠি,পিরোজপুর ।

সর্বোপরি সেই দেলু শিকদারের ভাই লালু শিকদার নিজেই বলেছে যে তার ভাই দেলু শিকদার আর আল্লামা সাঈদী এক ব্যক্তি নয় এবং তার ভাই দেলু শিকদারকে ৭১ এর অপকর্মের জন্য যুদ্ধ শেষেই মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করে ফেলেছে !

বীর মুক্তিযোদ্ধারা এবং পিরোজপুরের লোকজন কি বলে ?

মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার আওয়ামী নেতা মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দীন আহমদ
তার রচিত “মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবনের সেই উন্মাতাল দিনগুলো” বইতে ১৭১ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ১২-১৬ তারিখের দিনগুলোতে পিরোজপুর থেকে লঞ্চ বোঝাই করে করে আমরা পিরোজপুরের প্রায় সকল স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার,যুদ্ধাপরাধীদের সরাসরি সুন্দরবনের ফায়ারিং স্কোয়াডে পাঠিয়েছি । তখন কেউ আমাদেরকে সাঈদীর নাম অপরাধী হিসেবে বলেনি,আমরা তাঁর নাম স্বাধীনতা বিরোধী কিংবা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কোনদিন শুনিনি ।

পিরোজপুরের আরেক বীর সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যরিষ্টার শাহাজান ওমর বীর বিক্রম প্রকাশ্যে মিডিয়াতে বারংবার বলেছেন আল্লামা সাঈদী কোন অপরাধের সাথে জড়িত নয় ।

বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রকাশিত কবি হাসান হাফিজুর রহমান কর্তৃক সম্পাদিত ১৫ খন্ডের প্রামাণ্য দলিল “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল পত্র” নামক বইয়ের পিরোজপুর অধ্যায়ে স্বাধীনতা বিরোধী,যুদ্ধাপরাধী,রাজাকার হিসেবে অসংখ্য মানুষের নাম থাকলেও একটি বারের জন্যেও আল্লামা সাঈদীর নাম উচ্চারিত হয়নি বরঞ্চ পিরোজপুরের বীর সন্তানদের তালিকায় আল্লামা সাঈদীর নাম রয়েছে !

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধারা আল্লামা সাঈদীকে সম্পুর্ণ নির্দোষ আখ্যা দিয়ে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে । এবং সম্প্রতি সেই পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলাবাসী আমার ছোট ভাই মাসুদ সাঈদীকে বিপুল ভোট দিয়ে নিরংকুশভাবে বিজয়ী করেছে ! আল্লামা সাঈদী যদি সত্যিকারার্থেই পিরোজপুরের জনতার উপর ৭১ সালে নির্যাতন করে থাকতেন তবে এই আওয়ামী নৈরাজ্যের সময়ও নিশ্চয়ই "সাঈদী পরিবারের" সদস্য বিজয়ী হতে পারতেন না !
বিচারের নামে অবিচারই সবচাইতে বড় মানবতাবিরোধী অপরাধ !

বিচারের নামে যখন অবিচার চলে তখন সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতেই হয় ! ৭১ এ কেউ অন্যায় করে থাকলে তার বিচার হবে সেটা এক জিনিষ আর মিথ্যা-বানোয়াট গল্প সাজিয়ে কাউকে বিচার করতে চাইলে তা অবিচারই হবে !যাকে হত্যার অভিযোগে ফাঁসি দিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের স্বজনেরা বলছে সে হত্যার সাথে আল্লামা সাঈদী জড়িত নয়,
৭২ সালেই করা মামলায় আল্লামা সাঈদীর নাম নেই, এমনকি বিগত ৪২ বছরে যেই আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতে একটি জিডিও পর্যন্ত করা হয়নি, ৭২ সালে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে যুদ্ধাপরাধতো দূরের কথা দালালদের তালিকাতেও যেই সাঈদীর নাম নেই তাকে আজ ৪২ বছর পরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ঘায়েল করতে চাইলে এদেশবাসী, ইসলামপ্রিয় জনতা মেনে নিবে না ! এ জনতা সকল অন্যায় রুখে দিবেই, আজ কিংবা কাল !




মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

জেলখানার চিঠিঃ ইতিহাসের দায় মিটিয়ে গেলেন মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান



জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ কামারুজ্জামান জেলবন্দী অবস্থায় ২০১০ সালের শেষ নাগাদ একটি চিঠি লিখেন । আজ কামারুজ্জামানকে হত্যা করে শহীদ করা হয়েছে । কিন্তু তাঁর সেই চিঠিটি হয়ে আছে ঐতিহাসিক দলিল । বলা যায়, কামারুজ্জামান তাঁর শেষ দায়িত্বটুকুও পালন করে গেছেন সেই চিঠির মাধ্যমে ।
চিঠিতে তিনি সম্পূর্ণ নির্মোহভাবে বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতের ভবিষ্যৎ নিয়ে লিখেছেন । পেশ করেছেন সম্ভাব্য কর্মপন্থাও । দিয়ে গেছেন তাঁর সুপারিশ । আশ্চর্যজনকভাবে তাঁর সবগুলো ভাবনাই একে একে সত্য প্রমাণিত হচ্ছে ।
সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে তিনি তাঁর চিঠির শিরোনাম দেন- পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন কর্মকৌশল গ্রহণ সময়ের দাবি । যুদ্ধাপরাধ বিচার নাটকের প্রেক্ষাপট, উদ্দেশ্য এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অবস্থার দীর্ঘ বিশ্লেষণের এক পর্যায়ে তিনি বলেন–

জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধের মত স্পর্শকাতর ইস্যুতে বিচার করার পর জামায়াতকে সরকার নিষিদ্ধ না করলেও জামায়াতের ভাবমর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুণ হবে । দেশের ভিতরে ও বাইরে জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী, বাংলাদেশ বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধীদের দল হিসাবে চিত্রিত করবে । ফলে জামায়াতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে । জামায়াতের ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব হয়ে পড়বে ।
জামায়াত বর্তমান সময়ে যে ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে গিয়েছে তাতে গা ছেড়ে বসে না থেকে বিকল্প পথের সন্ধান করা হিকমত ও দূরদৃষ্টির দাবী । এটা কোন ধরনের বিচ্যুতি নয়  । বরং আন্দোলনের ক্রম বিকাশের ধারাতেই নতুন কৌশল অবলম্বন করা ।


এই প্রেক্ষাপটে তিনি সম্ভাব্য তিনটি পন্থার কথা বলেন-
এক. যা হবার হবে । আমরা যেমন আছি তেমনি থাকবো ।
দুই : পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছনে থেকে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তুলবে । এই সংগঠন প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তার সাথে ধর্মহীন শক্তির মোকাবিলা করবে ।
তিন : আমাদের যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে তারা জামায়াতের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবো এবং সম্পূর্ণ নতুন লোকদের হাতে জামায়াতকে ছেড়ে দেবো । অর্থাৎ একটা নিউ জেনারেশন জামায়াত হবে এটি ।

এই তিনটি পন্থার বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন-
আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় উপরোক্ত তিন অবস্থায় প্রথমটা হচ্ছে নেতৃত্ব আঁকড়ে থাকা, হতবুদ্ধিতা এবং হতাশাবাদিতা। একটি গতিশীল আন্দোলন এ ধরনের পশ্চাৎমুখী অবস্থান গ্রহণ করতে পারে না।
এক নম্বর যে বিকল্প উল্লেখ করা হয়ছে সেভাবে হাল ছেড়ে দিলে আমরা অথর্ব প্রমাণিত হবো। তখন সময় চলে যাবে। সুতরাং সময় থাকতেই আমাদের সতর্ক হতে হবে।
তিন নম্বর যে বিকল্পের উল্লেখ করেছি সেটাও সমাধান নয়। শুধু স্থানীয় অধার্মিক শক্তি নয় বরং আন্তর্জাতিক ধর্মহীন শক্তিও আমাদের জন্য বড় অন্তরায়। তারাও ওৎ পেতে আছে কিভাবে আমাদের অগ্রযাত্রা রুখে দেয়া যায়। আর এ কারণেই এই বিকল্প পন্থা এখন আমাদের জন্য খুব সহায়ক হবে না। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জনের দিকটা সামনে রেখেই কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
তৃতীয় যে পন্থা নতুন নেতৃত্বের হাতে জামায়াতকে ছেড়ে দেয়া এটা বিবেচনা করা যেতে পারতো যদি ১৯৭১ সালের বিষয়টার একটা রাজনৈতিক মীমাংসা বা মিটমাট আমরা করতে পারতাম। জামায়াতের ভাবমর্যাদা যেভাবে ভুলুণ্ঠিত করা হয়েছে, জামায়াত সম্পর্কে যে এলার্জি তৈরি করা হয়েছে, পাঠ্যপুস্তক, মিডিয়ায় এবং রাজনৈতিক প্রচারণায় যেভাবে জামায়াতকে স্বাধীনতা বিরোধী বাংলাদেশ বিরোধী দল হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে তাতে নতুন নেতৃত্ব হলেও দেশের সাধারণ মানুষ, নতুন প্রজন্ম এবং রাজনৈতিক মহল জামায়াতকে সহজে গ্রহণ করে নিতে পারবে না।

দ্বিতীয় যে পন্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আমার মনে হয় সামগ্রিক বিবেচনায় এই বিকল্প পন্থাটির কথা চিন্তা করা যেতে পারে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ইসলামী আন্দোলন এই কৌশল অবলম্বন করে ভাল ফল লাভ করেছে। আমাদের সামনে তুরস্ক, মিসর, আলজেরিয়া, সুদান, ইয়ামেন, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, জর্দানসহ পৃথিবীর প্রায় সকল ইসলামী আন্দোলন পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন কৌশল অবলম্বন করেই এগিয়ে চলেছে।

তিনি বলেন-
জামায়াতের সামনে যে তিনটি বিকল্পের কথা আমি উল্লেখ করেছি আমার মতে প্রজ্ঞার পরিচয় হবে যদি দ্বিতীয় বিকল্পটি গ্রহণ করা হয়। জামায়াত যেহেতু ৬০ বছরের অধিককাল থেকে এদেশে কাজ করছে এবং দেশের কমপক্ষে ১০% ভাগ জনগণের একটি সমর্থন জামায়াতের প্রতি আছে তাই এমন কিছু করা ঠিক হবে না যাতে জামায়াতের অবমূল্যায়ন করা হয়। কারণ বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির যে একটা অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে তা জামায়াতের আন্দোলনেরই ফসল। জামায়াতের সাথে অনেক মানুষের একটা আবেগের সম্পর্ক রয়েছে এবং জামায়াতের প্রবীণ নেতা-কর্মীরাই জামায়াতকে এই পর্যায়ে আনার ব্যাপারে একটা অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের আন্তরিকতা এবং সততার ফলেই জামায়াত বাংলাদেশের সবচাইতে বড় ইসলামী দলের মর্যাদা লাভ করেছে। জামায়াত যদি একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তার পিছনে সর্বাত্মক শক্তি নিয়োজিত করে এবং সেই সাথে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে যত্নবান হয় তাহলে সেই প্লাটফর্মকে রাজনৈতিকভাবে সরাসরি আক্রমণ করতে পারবে না কেউ।

পরিস্থতি খুব নাজুক। নির্মোহ ও নিরপেক্ষভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে। নিজেকে সম্পৃক্ত করে চিন্তা করলে সমস্যার সমাধান হবে না। আপাতঃ দৃষ্টিতে জামায়াতে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে এমনটি মনে হলেও ক্ষতির কিছু নেই। বরং হেকমতের খাতিরে তেমন একটা কিছু করে হলেও নতুন আন্দোলন দাঁড় করানোর ঝুকি গ্রহণ করা উচিত।

তাছাড়া আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে বিবেচ্য।
পৃথিবীর অন্য কোন দেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনে বিরোধিতা করার মত অতি স্পর্শকাতর কোন অভিযোগ নেই। এটা স্বীকার করতেই হবে যে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন খুবই সম্ভাবনাময় আন্দোলন হওয়া সত্ত্বেও এই দুর্ভাগ্যজনক ও স্পর্শকাতর অভিযোগ আন্দোলনের রাজনৈতিক সাফল্য ও গ্রহণযোগ্যতার পথে বড় বাধার সৃষ্টি করে আছে। ইসলামী আন্দোলনের দুশমনরা আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় ও কৌশলে আপাতত সফল হয়ে গিয়েছে ।

তিনি লিখেছেন-
রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি মিটমাট করতে না পারার কারণে আজ বাস্তবেই মিথ্যা অভিযোগ মাথায় নিয়ে আমরা বিচারের কাঠগড়ায়। আমরা ১৯৭১ সালে জামায়াতের নেতৃত্ব দেইনি, জামায়াত রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করলেও তখনকার দলীয় নেতারাও যুদ্ধে শরীক ছিলেন না, নেতৃত্ব দেয়া তো দূরের কথা, আমাদের যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে তারা কেউই যুদ্ধ করিনি বা কোন বাহিনীরও সদস্য ছিলাম না। আমাদের দ্বারা যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ বা লুটতরাজের প্রশ্নই উঠে না। আজ রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হবার কারণেই রাজনৈতিক প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার শিকার আমরা বা জামায়াত। আমাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ সাজানো এবং সবৈব মিথ্যা। আমাদেরকে নিয়ে সরকার ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

শুধু রাজনৈতিক বিকল্পই নয়, ছাত্র অঙ্গনেও পরিবর্তনের চিন্তা করার কথা বলেন কামারুজ্জামান । নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের একটি আধুনিক রুপরেখাও দিয়ে গেছেন মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ।

শহীদ কামারুজ্জামান লিখেছেন-
আমরা যদি নতুন কর্মকৌশল গ্রহণে ব্যর্থ হই ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না এবং আমরা ইতিহাসের কাছে দায়ী হয়ে যাবো। কারণ এক বিপুল সংখ্যক মানুষের মাঝে আমরা আশাবাদ জাগিয়েছিলাম। আমাদের আন্দোলনের সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষ একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। আমাদের ছাত্র তরুণদের বিরাট এক কাফেলা জীবন দিয়েছে, শহীদ হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, অনেকে তাদের জীবন ও যৌবন এই পথে নিঃশেষ করে দিয়েছে।

আজ এই সময়ে এসে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, শহীদ কামারুজ্জামান তাঁর সবটুকু দায়িত্ব পালন করে শহীদ হয়ে গেলেন । চিঠির মাধ্যমে এই সংকট সন্ধিক্ষণের করণীয় সম্পর্কে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনকে মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান যে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, তার মাধ্যমে তিনি ইতিহাসের দায় মিটিয়ে গেলেন । ইতিহাস মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানকে নিয়ে আর কখনোই কোন প্রশ্ন তুলতে পারবে না । বরং নিরপরাধ কামারুজ্জামানকে হত্যা করার কারণে ইতিহাস নিজেই কামারুজ্জামানের নিকট দায়বদ্ধ থেকে গেল ।
সৌজন্যেঃ http://imbdblog.com/?p=4206

সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫

জেদ্দা এয়ারপোর্ট

জেদ্দা বিমান বন্দরে নেমে বিশ্রাম কক্ষে অপেক্ষা করতে হবে । পাসপোর্টে প্রবেশ সিল লাগানো হলে আপনার লাগেজ/ব্যাগ সংগ্রহ করুন । ব্যাগ মেশিনে স্ক্যান করিয়ে মুল বিল্ডিং থেকে বের হলে ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ আপনার ব্যাগ নিয়ে বড় ট্রলিতে উঠিয়ে নিবে । পাসপোর্টে সিল মোহর লাগানো এবং স্ক্যানিং পর্যন্ত আপনাকে অনেক সময় বসে কিংবা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে । 

বাংলাদেশের পতাকা টানানো জায়গায় আপনার ব্যাগসহ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন । পাসপোর্টে লাগানো স্টিকারই আপনার সৌদি মোয়াল্লেম নাম্বার । জেদ্দা থেকে মক্কা কিংবা মদীনা যেতে আপনার পাসপোর্টে লাগানো স্টিকারে যে নাম্বার আছে সেই নাম্বারের বাসে আপনাকে নিয়ে যাবে । সর্ব অবস্থায় বাসের জন্য ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করুন । আপনার এজেন্সীর কন্ট্রাককৃত সৌদি মোয়াল্লেমের বাস মক্কা ও মদীনায় হোটেলে/বাসায় পৌঁছে দেবে । আপনার পাসপোর্টটি জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে মোয়াল্লেম কর্তৃপক্ষ নিয়ে নেবে । --(চলবে)-------
"শারঈ' মানদন্ডে
দোয়া-যিকির,হজ্জ ও উমরা" 

বিবাহ এবং তার গুরুত্ব

প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ও মনের পরম প্রশান্তি লাভই হচ্ছে বিয়ের প্রধানতম উদ্দেশ্য । 
ইসলামে নারী পুরুষের মধ্যে  সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিয়েই হচ্ছে একমাত্র বৈধ উপায়, একমাত্র বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা । বিয়ে ছাড়া অন্য কোনো ভাবে- অন্য পথে - নারী পুরুষের মিলন ও সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ । বিয়ে হচ্ছে পুরুষ ও নারীর মাঝে সামাজিক পরিবেশ ও সমর্থনে শরীয়াত মোতাবেক অনুষ্ঠিত এমন এক সম্পর্ক স্থাপন, যার ফলে দুজনের একত্রে বসবাস্ব পরস্পরে যৌন সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণরুপে বৈধ হয়ে যায় । যার দরুন পরস্পরের উপর অধিকার আরোপিত হয় এবং পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য অবশ্য পালনীয় হয়ে দাড়ায় ।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে্র সুরা আন-নুরের ৩২নং আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ বিয়ে দাও তোমাদের এমন সব ছেলে -মেয়েদের, যাদের স্বামী বা স্ত্রী নেই, বিয়ে দাও তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা বিবাহের যোগ্য হয়েছে । Marry the unmarried among you and the righteous among your male salves and female salevs. Sura an-noor- 32 অন্যত্র আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেনঃ তোমরা মেয়েদের অভিভাবক মুরুব্বীদের অনুমতিক্রমে তাদের বিয়ে করো । অবশ্য অবশ্যই তাদের দেন মোহর দাও । সুরা নিসা- ২৫ 
Whoever among you cannot the means to marry free believing women........   ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়াল আনহু থেকে বর্ণিত সাইয়েদুল মুরসালীন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুমারিত্ব ও অবিবাহিত বা নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের কোন নিয়ম ইসলামে নেই । বুখারী-১৪১৬

ইসলামের দৃষ্টিতে পারিবারিক জীবনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে নরনারীর নৈতিক পবিত্রতা ও সতীত্ব সংরক্ষন । আর এজন্য বিয়ে করা কে ফরজ করা হয়েছে । তেমনি পুরুষদের জন্য এ অনুমতিও দেয়া হয়েছে যে, বিশেস কোন কারনে যদি একসাথে একের অধিক স্ত্রী গ্রহন করা তার পক্ষে অপরিহার্য হয়ে পড়ে তাহলে সে করতে পারে । তবে তার শেষ সীমা হচ্ছে চারজন পর্যন্ত । একসঙ্গে চারজন পর্যন্ত  স্ত্রী গ্রহন করা একজন পুরুষের পক্ষে জায়েয-বিধি সম্মত ।  এ সম্পর্কে পবিত্র  কুরআন মজিদে যে আয়াতটি রয়েছে তা হচ্ছেঃ তবে যে সব নারীদের তোমরা পছন্দ করো, তাদের মধ্য থেকে বিয়ে করে নাও - দুই -তিন -চারজনকে । সুরা আন-নিসা- ৩ । Then marry those that please you of women, two or three or four.  চারটি কাজ নবীগনের সুন্নাতের মধ্যে গন্য; তা হচ্ছেঃ 
(১) সুগন্ধি ব্যবহার করা । (২) বিয়ে করা । (৩) মিসওয়াক করা । এবং (৪)  খাতনা করানো ।
সুরা আন-নিসার ৩ নং আয়াতের শেষে বলা হয়েছে - আর তাদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না বলে যদি ভয় করো তোমরা, তাহলে একজনমাত্র স্ত্রী গ্রহন করবে । 


মাওলানা আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের আনা অভিযোগ ডাহা মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

# ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন
# ১৯৭৬ সালে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার গোয়ালগ্রাম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান
# ১৯৮১ সালে তিনি জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত হন
# তিনি একাধারে ইউনিয়ন পরিষদ,  উপজেলা পরিষদ সর্বশেষ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন

সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর,  সাবেক সংসদ সদস্য,  বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেককে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। জেলার শীর্ষ পর্যায়ের একজন আলেমকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনায় জেলাব্যাপি গত দ’ুদিন ধরে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ছাত্রজীবনে তিনি একজন মেধাবি ছাত্র ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়সহ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি জ্ঞান অর্জন করেন। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। ১৯৭৬ সালে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার গোয়ালগ্রাম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ পান। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন না।
 ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে কয়েকটি হত্যাসহ হিন্দু পরিবারের জমি ও বাড়ি দখল করার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত এ নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকরা করা হয়েছে। তার স্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার যে প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেছে তারই ধারাবাহিকতায় তার স্বামীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার স্বামী এ ধরনের অপরাধে জড়িত থাকলে সাতক্ষীরার জনগণ তাকে বিপুল ভোটে এমপি হিসেবে নির্বাচিত করতো না। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে সরকার মাওলানা আব্দুল খালেককে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে। ইতঃপূর্বে সরকারি দলের ইঙ্গিতে তার বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়।
তিনি বলেন,  সরকার আইনের শাসন ও গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী জনগণের ভালবাসা ছাড়া জোর করে ক্ষমতায় থাকা যায় না। মিথ্যা,  বানোয়াট মামলা দিয়ে তার স্বামীকে যতই হয়রানি করার অপচেষ্টা করা হোক না কেন জনগণের নিকট তা গ্রহণযোগ্য হবে না। জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করে অবিলম্বে তার স্বামী মাওলানা আব্দুল খালেককে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান তিনি।
সূত্রে জানা যায়,  ছাত্রজীনে তিনি মেধাতালিকায় দুই-পাকিস্তানের স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। বেশির ভাগ সময়ে তিনি জ্ঞান সাধনায় ব্রত থাকতেন। কুরআন হাদিসের জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়াই ছিল তার কাজ। হাজার হাজার আলেম তাকে উস্তাদ হিসেবে সম্মান করে। তিনি একাধারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সাংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময়ে তিনি সাতক্ষীরা সদর আসন থেকে বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ক্ষমতায় থাকাকালে তার বিরুদ্ধে কেউ অনিয়য়ম দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পাপলন করার পরও সারাজীন তিনি সাধারণ জীপনযাপন করতেন। বিলাশবহুল বাড়ি গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ তিনি পেলেও তা করেননি। সকল লোভ লালশার উর্ধ্বে উঠে তিনি মানুষের সেবা করতেন। সংসদ সদস্য থাকাকালে তিনি এক কাঠা জমিও ক্রয় করতে পারেননি। এমনকি যেদিন তার সংসদ সদস্য পদ শেষ হয়ে যায় সেদিন ও তার ঘরে ভাল খাদ্য খাবার ছিল না। এমন মানুষের সন্ধান খঁজে পাওয়া বিরল বলে অনেকে তাকে মহৎ মানুষের জীবনের সাথে তুলনা করেন। তাকে পীরের মর্যাদা দিতেও সাতক্ষীরার মানুষ পিছে থাকেনি । এমন একজন বড় মাপের মানুষ অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক।
গ্রামের মক্তবে তার লেখা পড়া জীবন শুরু। ১৯৫৭ সালে আগরদাড়ী মাদ্রাসা হতে প্রথম বিভাগে দাখিল পাশ করেন। ১৯৬১ সালে আলিম পরীক্ষায় তিনি বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) First Class Second । ১৯৬৩ সালে ফাযিল পরীক্ষায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে) First Class 3rd হন তিনি। ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষায় দুই পাকিস্তানে First Class 1st হন। কৃতিত্বে পুরস্কার স্বরূপ পান Gold Meda। এরপর তিনি HSC ভর্তি হন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে। ১৯৬৭ সালে তিনি সমগ্র পাকিস্তানে First Class 3rd হন। ১৯৬৯ সালে Degree পরীক্ষায় First Class 6th  হন। তারপর তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি হতে Masters প্রথম পর্ব পরীক্ষায় ১৯৭০ সালে প্রথম বিভাগে 11th এবং ১৯৭৫ সালে MA দ্বিতীয় পর্ব চূড়ান্ত পরীক্ষায় First Class Second হন তিনি। এ মানুষটি ২০১৩ সালে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্ত করেন। তাই তিনি একজন কুরআনের হাফেজ। তার এ দীর্ঘ শিক্ষা জীবনে কোথাও কখনো নিয়ম ভঙ্গ করার অভিযোগ কেউ করতে পারেনি। আর আজ শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য তাকে জঘন্য মিথ্যা মামলায় ফাসানো হলো।
 মাওলানা আব্দুল খালেক ১৯৭৩ সালে সাতক্ষীরা আলিয়া মাদ্রাসায় হেড মাওলানা পদে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিন বছর পর ১৯৭৬ সালে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার গোয়ালগ্রাম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৭ সালে নড়াইল শাহাবাগ কামিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হন। একই বছর তিনি আগরদাড়ী আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসায় প্রধান মাওলানা পদে যোগদান করেন। ১৯৮১ সালে আগরদাড়ি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হন। ১৯৮১ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর অত্যান্ত যোগ্যতার সাথে তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৮৭ সালে স্থানীয় ইউনিয় পরিষদ নির্বাচনে বৈকারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য হলে বিপুল ভোটে তিনি চেয়ারম্যান হতে পারতেন না। ১৯৮৯ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সারা বাংলাদেশব্যাপী। সেই নির্বচনে তিনি প্রায় ৪০, ০০০ (চল্লিশ হাজার) ভোটের ব্যবধানে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তারপর ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর আসনের সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এক লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যাবধানে। যেই শিমুল বাড়ীয়ায় তাকে ৭১ এর নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে তা যদি সত্য হতো তাহলে ১৯৮৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সেই এলাকা থেকে তিনি কি ভোট পেতেন? শুধু ভোট পাওয়া নয় সেই কেন্দ্রেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন।
 ১৯৮০ সালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি রাজনৈতিক কর্মকান্ড নয় শিক্ষামূলক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৮১ সালে আগরদাড়ী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রুকন হন এবং ইউনিয়ন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। এরপর থানা সভাপতি, জেলা নায়েবে আমীর এবং ২০১২ সালে সাতক্ষীরা জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হন। ২০১২ থেকে ২০১৫ চলতি সাল পর্যন্ত তিনি সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর আছেন। সুত্রঃ দৈনিক সংগ্রাম