রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬

শেখ হাচিনা -ওবায়দুলকাদেরকে অভিনন্দন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুই দিনব্যাপী ২০ তম জাতীয় সম্মেলন থেকে ঘোষণাঃ
বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে নাঃ প্রধানমন্ত্রী ।
🌷🌹
অষ্টমবারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভানেত্রী হলেন শেখ হাচিনা এবং সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ওবায়দুল কাদের আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হলেন ।
🌻🌺 🌷
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি ঘোষণা করা হয়েছে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের নাম । দলের গুরুত্বপূর্ণ এ কমিটিতে ঘোষণা করা হয়েছে ১৪ জনের নাম।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফরুল্লাহ, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাহারা খাতুন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, আব্দুল মান্নান খান, রমেশ চন্দ্র সেন ও পীযূষ কান্তি চক্রবর্তী।
এ ছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেন, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান ।
কোষাধ্যক্ষ পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন এইচ এন আশিকুর রহমান ।
কাউন্সিল অধিবেশনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য দলীয় সভাপতি শেখ হাচিনার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন কাউন্সিলররা ।
🌻🌺 🌷🌹
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাচিনা অষ্টমবারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় এবং নতুন ও পুরনো সকল সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ।
আশা করি নবগঠিত কমিটি গুম, খুনহীন, সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গঠন, বাক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং সত্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করবেন ।
সকলের জন্য শুভ কামনা ।

মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬

ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হর কারবালা কি বাদ

কারবালার ইতিহাস আর আমাদের শিক্ষা

বলাবাহুল্য যে, উম্মতের জন্য এই শোক সহজ নয় এবং মহররম মাস ও আশুরার (১০ই মুহররম) দিনটা মুসলিম জাহানের উপর চেপে বসা রাজা-বাদশাহ শেখ ও আমির শাসিত রাজতান্ত্রিক দেশগুলোর জন্যে একটা চরম বিব্রতকর দিন । রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারনে স্বৈরাচারী শাসক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে ৬১ হিজরীতে এদিন মহানবীর দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু শাহাদাত বরন করেছিলেন । ইসলামের ইতিহাসে অনেক নবী রসুলসহ খলিফা হযরত উসমান, হযরত আলীসহ হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর চাইতেও বেশী মর্যাদাপূর্ণ আরো অনেক বড় বড় মহান ব্যক্তির হত্যাকান্ডের ঘটনা থাকলেও ৬১ হিজরীর কারবালার ঘটনা এতোটাই পৈচাশিক ও নির্মমতম ছিল যে এটা যুগে যুগে কঠিন হৃদয়কেও নাড়া দিয়েছে, এখনো দেয় এবং নিঃসন্দেহ তা কেয়ামত পর্যন্ত জালিমদের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাতে ও ইসলামী শক্তির পক্ষে মুমীনদের উদ্ভূদ্ধ করায় নিয়ামক ভূমিকা পালন করবে ।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকাল পূর্বে কাউকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যাননি । তিনি জনগনের উপর তার উত্তরাধিকারী নির্বাচনের ভার ছেড়ে দিয়ে যান । সেইমতে প্রথম চারজন উত্তরাধিকারী তথা খোলাফায়ে রাশেদীন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগন কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছিলেন । কিন্তু উমাইয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুয়াবিয়া খিলাফত লাভের সাথে সাথে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন । ৬৭৬ খ্রীষ্টাব্দে বসরার শাসনকর্তা হযরত মুগিরার প্ররোচনায় তিনি তার জ্যৈষ্ট পুত্র ইয়াজিদকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার মর্মমুলে চরম কুঠারাঘাত করেন । হযরত মুয়াবিয়া এবং হযরত মুগীরা উভয়েই সম্মানিত সাহাবী ছিলেন । যেহেতু তারা কোন নবী বা রসুল ছিলেন না, স্বাভাবিক কারনেই তারা ভুলের উর্ধ্বে ছিলেন না । কিন্তু তাদের এই ভুল ইসলামের ইতিহাসকে ক্ষত বিক্ষত, রক্তাক্ত ও কলঙ্কিত করে । ইসলামের শাসন পদ্ধতির মুলে চরম কুঠারাঘাত করে । ঐতিহাসিক আল-ফাখরী, ফন ক্রেমার এবং ইবনুত তিকতাকার মতে ইয়াজিদের রাজত্বকাল তিনটি দুষ্কর্মের জন্য বিখ্যাত-প্রথম বছরে সে মহানবীর আদরের দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে হত্যা করে, দ্বিতীয় বছরে মদীনাকে লুন্ঠন করে এবং তৃতীয় বছরে সে কাবার উপর হামলা করে । এই ইয়াজিদ-এর খলিফা হিসাবে মনোনয়ন অন্যরা মেনে নিলেও, ইসলামের ব্যত্যয় মহানবীর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু মেনে নিলেন না । হুসাইনের এই ন্যায্য দাবীকে আবদুল্লাহ-ইবনে যুবাইর, আবদুল্লাহ-ইবনে ওমর, আবদুর রহমান-ইবনে আবু বকর সমর্থন করেন । 

ইয়াজিদ ইসলামী শাসন ব্যবস্থার ব্যত্যয় ঘটানোয় ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর মত মুমীন ব্যক্তির পক্ষে সেটা মেনে নেয়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না । খিলাফত ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনই ছিল ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর সংগ্রামের মূল লক্ষ্য । মুসলিম জাহানের বিপুল মানুষের সমর্থনও ছিল তার পক্ষে ।

ইরাকের লোকেরা তার কাছে চিঠি/দূত পাঠিয়ে জানাল তারা তাকে খলিফা হিসেবে চায়, ইয়াজিদকে নয় । সমর্থকদের চিঠি পেয়ে হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর চাচাতো ভাই মুসলিম বিন আকীলকে কুফায় পাঠালেন অবস্থা দেখার জন্য । মুসলিম দেখলেন যে আসলেই অনেক মানুষ হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে খলিফা হিসেবে চাচ্ছে । তিনি হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে সেটা জানিয়েও দিলেন । ইতমধ্যে কিছু অত্যুৎসাহী লোকেরা হানী বিন উরওয়ার ঘরে মুসলিমের হাতে হুসাইনের পক্ষে বায়াত নেওয়া শুরু করল । সিরিয়াতে ইয়াজিদের কাছে এ খবর পৌছালে সে বসরার গভর্নর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে পাঠাল কুফাবাসীর বিদ্রোহ দমন করতে ।

উবাইদুল্লাহ কুফায় গিয়ে দেখে ঘটনা সত্যি । মুসলিম বিন আকীল চার হাজার সমর্থক নিয়ে উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের প্রাসাদ ঘেরাও করলেন । এ সময় উবাইদুল্লাহ দাঁড়িয়ে এক ভাষণ দিয়ে মানুষকে ইয়াজিদের সেনা বাহিনীর ভয় দেখাল । কুফাবাসীরা ইয়াজিদের শাস্তির ভয়ে আস্তে আস্তে সরে পড়তে লাগল । সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মুসলিম বিন আকীল দেখলেন, তথাকথিত হুসাইন  রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু সমর্থকদের কেউই অবশিষ্ট নেই । তাকে গ্রেপ্তার করে হত্যার আদেশ দিল উবাইদুল্লাহ । মুসলিম মৃত্যুর আগে হুসাইনের কাছে একটি চিঠি পাঠান –
 “হুসাইন ! পরিবার-পরিজন নিয়ে ফেরত যাও । কুফা বাসীদের ধোঁকায় পড়ো না । কেননা তারা তোমার সাথে মিথ্যা বলেছে । আমার সাথেও তারা সত্য বলেনি ।”



এদিকে মুসলিম বিন আকীলের মৃত্যু হলেও তার প্রথম চিঠির উপর ভিত্তি করে যিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখে হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা দেন । অনেক সাহাবী তাকে বের হতে নিষেধ করেছিলেন । তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং তাঁর ভাই মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফীয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।

সুফীয়ান আস সাওরী ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইবনে আব্বাস (রা:) হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলেছিলেনঃ মানুষের দোষারোপের ভয় না থাকলে আমি তোমার ঘাড়ে ধরে বিরত রাখতাম । আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:) হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলেনঃ  হুসাইন ! কোথায় যাও ? এমন লোকদের কাছে, যারা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে এবং তোমার ভাইকে আঘাত করেছে ?

যাত্রা পথে হুসাইনের কাছে মুসলিমের সেই চিঠি এসে পৌঁছুলো । চিঠি পড়ে তিনি কুফার পথ পরিহার করে ইয়াজিদের কাছে যাওয়ার জন্য সিরিয়ার পথে অগ্রসর হতে থাকলেন । পথিমধ্যে ইয়াজিদের সৈন্যরা আমর বিন সাদ, সীমার বিন যুল জাওশান এবং হুসাইন বিন তামীমের নেতৃত্বে কারবালার প্রান্তরে হুসাইনের রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর গতিরোধ করল । তিনি আগত সৈন্যদলকে আল্লাহর দোহাই এবং নিজের মর্যাদার কথা উল্লেখ করে তিনটি প্রস্তাব দেন –

১. তাকে ইয়াজিদের দরবারে যেতে দেয়া হোক । 

২. অথবা তাঁকে মদিনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক ।

৩. অথবা তাঁকে কোন ইসলামী অঞ্চলের সীমান্তের দিকে চলে যেতে দেয়া হোক । সেখানে তিনি জিহাদ করবেন এবং ইসলামী রাজ্যের সীমানা পাহারা দেবেন ।

ইয়াজিদের সৈন্যরা উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের ফয়সালা ছাড়া কোন প্রস্তাবই মানতে রাজী হল না । এ কথা শুনে উবাইদুল্লাহর এক সেনাপতি হুর বিন ইয়াজিদ বললেনঃ  এরা তোমাদের কাছে যেই প্রস্তাব পেশ করছে তা কি তোমরা মানবে না ? আল্লাহর কসম ! তুর্কী এবং দায়লামের লোকেরাও যদি তোমাদের কাছে এই প্রার্থনাটি করত, তাহলে তা ফেরত দেয়া তোমাদের জন্য বৈধ হত না । এরপরও তারা খুব যৌক্তিক এই প্রস্তাবগুলো মেনে নেয়নি। 

অবশেষে ওবায়দুল্লাহ ইবেন যিয়াদের ৪ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে  অবরুদ্ধ করে ফেলে এবং ফোরাত নদীতে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয় । মাত্র ২০০ মানুষের বিপক্ষে ৪০০০ সৈন্য । পানি সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেয়ায় ইমামের কচি সন্তানেরা প্রচণ্ড তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়লে হযরত আব্বাস ফোরাতে যান পানি আনতে । নিজেও তিনি ভীষণ তৃষ্ণার্ত ছিলেন । আঁজলা ভরে পানি তুলে খেতে যাবেন এমন সময় তাঁর মনে পড়ে যায় ইমাম হোসেন এর তৃষ্ণার্ত শিশু সন্তানের কথা । পানি ফেলে দিয়ে মশক ভর্তি করে তাঁবুর উদ্দেশ্যে রওনা দিতেই শত্রুপক্ষের তীরে তাঁর এক হাত কেটে যায় । মশকটাকে তিনি অপর হাতে নিয়ে ইমামের তাঁবুর দিকে ছুটলেন । এবার অপর হাতটিও কাটা পড়ে । মশকটাকে এবার তিনি মুখে নিয়ে তাঁবুর দিকে যেতে চাইলেন । শত্রুর তীর এবার সরাসরি তার দেহে আঘাত হানে । এভাবে শহীদ হয়ে যান তিনি ।  এরপর অসম এই যুদ্ধে আলী আকবর শহীদ হয়ে যান । কারবালায় ৭২ জন সঙ্গী শাহাদৎ বরণ করেন, তাদেঁর মধ্যে রাসূলের প্রিয় সাহাবা হাবিব ইবনে মাজাহের, তাঁর প্রাচীন বন্ধু মুসলিম ইবনে আওসাজা, নওমুসলিম ওহাবসহ আরো অনেকেই ।

নিরুপায় হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু শেষবারের মত অনুরোধ করলেও, পাষান্ডদের মন গলেনি । ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর কারবালার প্রান্তরে এক অসম যুদ্ধ শুরু হলো । হুসাইনের ভ্রাতুষ্পুত্র কাশিম সর্বপ্রথম শত্রুর আঘাতে শাহাদাত বরন করলেন । তৃষ্ণার্ত হুসাইন শিশুপুত্র আসগরকে কোলে নিয়ে ফোরাত নদীর দিকে অগ্রসর হলেন কিন্তু ইয়াজিদ বাহিনীর নিক্ষিপ্ত তীর শিশুপুত্রের শরীরে বিদ্ধ হয়ে শিশুপুত্রটি শাহাদাত বরন করলে একাকী অবসন্ন হুসাইন  রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু তাবুর সামনে বসে পড়লেন । এমন সময় এক মহিলা তাকে এক পেয়ালা পানি এনে দিলো । কিন্তু শত্রুর তীর তার মুখ বিদীর্ণ করে দিলো ।



শিমার বিন যুল জাওশান নামের এক নরপশু বর্শা দিয়ে হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর শরীরে আঘাত করে ধরাশায়ী করে ফেললো ।  শেষে ইয়াজিদ বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে নির্ভীক এই বীর আল্লাহর লিখে রাখা ভাগ্যানুযায়ী শহীদ হলেন । শিমার বিন যুল জাওশান মুরাদি নিজে কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে অত্যান্ত নির্মমভাবে হত্যা করে । ওইদিন ছিল হিজরী ৬১ সনের ১০ মুহররম । হযরর ঈমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু অন্যায় কিছু বলেন নি, অন্যায় কিছু করেন নি । তার হত্যাকারী ও হত্যায় সাহায্যকারীদের আল্লাহর ক্রোধ ঘেরাও করুক, এরা ধ্বংস হোক ! আল্লাহ্‌ তায়ালা শহীদ হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তাঁর সাথীদেরকে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টি দ্বারা আচ্ছাদিত করুন ।

ইতিহাসের পরবর্তী বিশ্লেষণঃ

ইয়াজিদ বেঁচে নেই । কিন্তু ইয়াজিদের প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্র এখনো শীর্ষ মুসলিম দেশগুলো কব্জা করে রেখেছে । স্বৈরাচাররা মুসলমানদের বুকে চেপে বসে আছে । মুসলমানদের বোকা বানাবার জন্যে তাদেরও কিছু গৃহপালিত আলেম ইমাম পীর জাতীয় লোক আছেন । এরা চেষ্টা করছে কারবালার ইতিহাসকে ম্লান করে এর গুরুত্বকে খাটো করার । তারা ইনিয়ে বিনিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কায়দা করে বলতে চায়, ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু ক্ষমতার লোভেই নাকি কুফায় গমন করেছিলেন । তার এই যাওয়াতে নাকি ইসলামের কোন কল্যাণ ছিল না । এটা নাকি হক আর বাতিলের যুদ্ধ ছিল না । (নাউজুবিল্লাহ)। আল্লাহর লানত এইসব দরবারীর উপর । তারা ইয়াজিদের নৃশংসতাকে এবং ফোরাত নদীর পানি সরবরাহ বন্ধকে সহি নয় মর্মে প্রতিপন্ন করতে তৎপর । কেউ কেউ কারবালার এ ঘটনাকে কেচ্ছা কাহিনী বলতেও দ্বিধা করেনি । ইনিয়ে বিনিয়ে তারা দলীল পেশ করে কেবল দরবারী আলেমদের । তারা বুঝাতে চান, কারবালার ঘটনা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় । এ নিয়ে মাতামাতি করে লাভ নেই । ইয়াজিদ হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর হত্যাকারী নয় । ইমাম হুসাইন  রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু মুসলিম জাতির নির্বাচিত আমীর বা খলীফা ছিলেন না । তাকে হত্যা করা জায়েজ ছিল বলেও তারা কৌশলে মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করেন । কোন কোন আলেম তো ইয়াজিদের প্রতি অতিরিক্ত লিখতে গিয়ে তাকে ‘রাহমতুল্লাহ’বলতেও কুন্ঠিত হননি । তবে এইসব দরবারী আলেমরা বড়ই ধূর্ত । তারা প্রথমেই হযরত ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পক্ষে এমনভাবে বন্দনা করেন যে পড়ে মনে হবে তারা হযরত ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খুবই ভক্ত এবং পক্ষের লোক । প্রথমেই বোঝাতে চেষ্টা করেন ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর মহব্বতে তাদের কলিজা ভরপুর । কিন্তু ধূর্তামীর আশ্রয়ে 'প্রকৃত ইতিহাস' শেখাবার নামে এবং বড়ই চাতুর্য্যপূর্ণভাবে তারা ইয়াজিদের সাফাই গায় । তারা হযরত ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে হত্যার জন্য হযরত ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকেই দায়ী করেন । কেউ কেউ শীয়াদের দায়ী করেন । অথচ ঐসময় শীয়া মতবাদের সৃষ্টিই হয়নি । মোট কথা, যে কোনভাবেই যেন ইয়াজিদকে দায়ী করা না হয় । ইমাম হুসাইনের হত্যার দায় কুফাবাসীর উপরও চাপাতে চান । তারা বোঝাতে চান, ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু  কুফাবাসীর ফাঁদে পড়ে ইয়াজিদের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন । অথচ কুফাবাসীদের প্ররোচনায় হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু ইয়াজিদের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন-এমনটা কোন মুসলমান মনে করতে পারে না । বরং ইমাম হুসাইন  রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলামী খেলাফতের পক্ষে এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন । এটা ঠিক কুফাবাসীরা কথা দিয়ে কথা রাখেনি । তারা ইমাম পরিবারের সাথে চরম গাদ্দারী করেছে । দরবারী আলেমরা চরম ধূর্ততার আশ্রয়ে ইয়াজিদকে ভাল শাসক, ইসলামের খেদমতগার বলেও প্রতিপন্ন করতে চান । তাদের মতে ইয়াজিদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নাকি সহি নয় । তারা মানুষকে বোঝাতে চান, ইয়াজিদ হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের নির্দেশ দিলেও হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে হত্যার নির্দেশ দেয়নি । পাঠক খেয়াল করুন ফাঁকিবাজিটা কোথায় । ইয়াজিদ যখন হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে হত্যার ঘটনা শুনলো তখন ইয়াজিদ ব্যথিত হয়েছিল বা হত্যাকারীকে শাস্তি দিয়েছিল এমন কোন দলীল তো পাওয়া যায় না । দরবারীরা বলে বেড়ান যে, হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর ছিন্ন মস্তক ইয়াজিদের দরবারে এলে সেখানে নাকি কান্নার রোল পড়ে যায় । কিন্তু হত্যাকারীকে তো ক্ষমতা থেকে সরিয়েও দেয়নি এবং কোন শাস্তিও দেয়নি । গর্ভনর ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ তো তার স্বপদে বহাল তবিয়তেই ছিল । তাহলে কি বোঝা গেলো ? দরবারীরা আরো বুঝাতে চান রাজতন্ত্র তেমন খারাপ কিছু নয় । যুগে যুগে এইসব দরবারীরা নানাভাবে মুসলমানদের সত্য ইতিহাস শেখাবার নামে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছে । 


সম্মানীত সাহাবীরা কেন ইমামকে কুফা যা্ওয়া রুখতে চেয়েছিলেন ?

ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু যখন কুফাবাসীর পত্র পেয়ে কুফায় যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন অনেক সম্মানীত সাহাবী তাকে যেতে নিষেধ করেছিলেন । তারা কুফাবাসীর বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন বলেই হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে যেতে নিষেধ করেছিলেন । কোনভাবেই ইয়াজিদকে সমর্থণ করে নয় । 

হুসাইন (রাঃ)-কে কেন ইমাম বলা হয় ?

পুরো মুসলিম বিশ্ব এক কথায় তাকে ইমাম বা নেতা মেনে নিয়েছেন । ইয়াজিদ জনতার উপর চেপে বসেছিল । ইয়াজিদ মুসলিম বিশ্বের নির্বাচিত নেতা ছিল না । সেই সময় থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা ইয়াজিদকে ইমাম বা নেতা হিসাবে মেনে নেয়নি নেবেও না । হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে ইমাম বলার অর্থ ইয়াজিদকে স্বীকার না করা । ইমাম বা নেতা হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুই । সেকারনে তখন থেকেই যুগে যুগে হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নাম নেয়ার আগে 'ইমাম' বলা হয় । ইমাম হাসান রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকেও বিষ প্রয়োগে অত্যন্ত কৌশলে হত্যা করা হয়েছিল । তিনিও মুসলিম জাতির ইমাম । ইয়াজিদের বংশধরদের যতই গা জ্বলুক, কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা হাসান রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে ‘ইমাম’ হিসাবেই ঘোষনা দেবেন । 

আশুরার দিন যা বর্জনীয়

সুন্নি নামধারী কিছু লোক এদিন নানা জাতের খানাপিনা করেন, মহরম-এর বাদ্য বাজান, এদিনটাকে খুশীর আমেজে পালন করেন । আবার শীয়া নামধারী কিছু কুলাঙ্গার এদিন নানা জাতের মাতম করেন, বুকে পিঠে ছুরি মারেন, তাজিয়া মিছিল করেন । এসব কাজ অবশ্যই বর্জনীয় । এসব কখনোই ইসলাম অনুমোদন করেনি । কাজেই এগুলো বিদআত । এদের কিছু কিছু কর্মকান্ড শির্কের পর্যায়ভূক্ত । মুসলমানদেরকে অবশ্যই এসব বর্জণ করতে হবে । 

যা করনীয়

১। রোজা রাখুন । কেননা কারবালার এই মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়াও এদিনটি ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ । হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘রমযানের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা হল সর্বশ্রেষ্ঠ ।’
أفضل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم
-সহীহ মুসলিম ২/৩৬৮; জামে তিরমিযী ১/১৫৭ 
ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই আশুরার দিনের উপর অগ্রাধিকার দিয়ে এত গুরুত্বসহকারে অন্য কোন দিন রোযা পালন করতে দেখিনি । (অর্থাৎ রামাযান মাস ছাড়া) (বুখারী)।

২। কারবালার এ বিয়োগান্ত ঘটনা স্মরন করে ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু ও তার পরিবার বর্গের জন্যে দোয়া করুন । আল্লাহপাক বলেছেন, ‘যাঁরা আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় শহীদ হন তাঁদেরকে কখনও মৃত মনে করো না । বরং তাঁরা নিজেদের রব তায়ালার নিকট জীবিত ও রিযিকপ্রাপ্ত।’ (সূরা আলে ইমরান-১৬৯)

৩। কারবালার ঘটনার চেতনায় উদ্ভূদ্ধ হয়ে রাজতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, পীরবাদ, জালিম শাসক ও শোষকদের বিরুদ্ধে মনেপ্রাণে ঘৃণা প্রকাশ করুন, 'ইসলাম' প্রতিষ্ঠায় নিজ করনীয় ঠিক করুন এবং তা পালনের দৃঢ় শপথ নিন । 

বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৬

জুম‘আর ছালাত

 (صلاة الجمعة)
প্রথম হিজরীতে জুম‘আ ফরয হয় এবং হিজরতকালে ক্বোবা ও মদীনার মধ্যবর্তী বনু সালেম বিন ‘আওফ গোত্রের ‘রানূনা’ (رانوناء) উপত্যকায় সর্বপ্রথম প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম‘আর ছালাত আদায় করেন । যাতে একশত মুসল্লী শরীক ছিলেন । তবে হিজরতের পূর্বে মদীনার আনছারগণ পরামর্শক্রমে ইহুদী ও নাছারাদের সাপ্তাহিক ইবাদতের দিনের বিপরীতে নিজেদের জন্য একটি ইবাদতের দিন ধার্য করেন ও সে মতে আস‘আদ বিন যুরারাহ রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর নেতৃত্বে মদীনার বনু বায়াযাহ গোত্রের নাক্বী‘উল খাযেমাত (نَقِيعُ الْخَضِمَاتِ) নামক স্থানের ‘নাবীত’ (هَزْمُ النَّبِيْتِ) সমতল ভূমিতে সর্বপ্রথম জুম‘আর ছালাত চালু হয় । 
সেখানে চল্লিশ জন মুসল্লী যোগদান করেন । অতঃপর হিজরতের পর জুম‘আ ফরয করা হয় । 
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুম‘আর এই দিনটি প্রথমে ইয়াহূদ-নাছারাদের উপরে ফরয করা হয়েছিল । কিন্তু তারা এ বিষয়ে মতভেদ করে । তখন আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এই দিনের প্রতি হেদায়াত দান করেন । এক্ষণে সকল মানুষ আমাদের পশ্চাদানুসারী । ইহুদীরা পরের দিন (শনিবার) এবং নাছারারা তার পরের দিন (রবিবার) । 
যেহেতু আল্লাহ শনিবারে কিছু সৃষ্টি করেননি এবং আরশে স্বীয় আসনে সমাসীন হন, সেহেতু ইহুদীরা এদিনকে তাদের সাপ্তাহিক ইবাদতের দিন হিসাবে বেছে নেয় । 
যেহেতু আল্লাহ রবিবারে সৃষ্টির সূচনা করেন, সেহেতু নাছারাগণ এ দিনটিকে পছন্দ করে । এভাবে তারা আল্লাহর নির্দেশের উপর নিজেদের যুক্তিকে অগ্রাধিকার দেয় । 
পক্ষান্তরে জুম‘আর দিনে সকল সৃষ্টিকর্ম সম্পন্ন হয় এবং সর্বশেষ সৃষ্টি হিসাবে আদমকে পয়দা করা হয় । তাই এ দিনটি হ’ল সকল দিনের সেরা । 
এই দিনটি মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক ইবাদতের দিন হিসাবে নির্ধারিত হওয়ায় বিগত সকল উম্মতের উপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় । কা‘ব বিন মালেক রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আযানের আওয়ায শুনে বিগলিত হৃদয়ে বলতেনঃ ‘আল্লাহ রহম করুন, আস‘আদ বিন যুরারাহর উপর, সেই-ই প্রথম আমাদের নিয়ে জুম‘আর ছালাত কায়েম করে নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কা থেকে আগমনের পূর্বেই ।
শহর হোক বা গ্রামে হোক জুম‘আর ছালাত প্রত্যেক বয়স্ক পুরুষ ও জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমানের উপরে জামা‘আত সহ আদায় করা ‘ফরযে আয়েন’ । 
তবে রোগী, মুসাফির, শিশু ও মহিলাদের উপরে জুম‘আ ফরয নয় । 
বাহরায়েনবাসীর প্রতি এক লিখিত ফরমানে খলীফা ওমর রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু বলেনঃ جَمِّعُوْا حَيْثُمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই থাক, জুম‘আ আদায় কর’। কারাবন্ধী অবস্থায় অনুমতি পেলে করবে, নইলে করবে না ।

মুহাররম ও আশুরা

আরবী বছর শুরুর প্রথম মাস মহররম । 
মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও হাদীস শরীফে এ মাস সম্পর্কে যা এসেছে তা হল, এটা অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ মাস । কুরআনের ভাষায় এটি ‘আরবাআতুন হুরুম’-অর্থাৎ চার সম্মানিত মাসের অন্যতম ।
এ মাসে রোযা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘রমযানের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা হল সর্বশ্রেষ্ঠ ।’
أفضل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم
-সহীহ মুসলিম ২/৩৬৮; জামে তিরমিযী ১/১৫৭
এর মধ্যে আশুরার রোযার ফযীলত আরও বেশি ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেনঃ ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমযান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোযা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি ।’
ما رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يتحرى صيام يوم فضله على غيره إلا هذا اليوم يوم عاشوراء وهذا الشهر يعني رمضان
-সহীহ বুখারী ১/২১৮
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমযানের পর আর কোন মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোযা রাখার আদেশ করেন ? তিনি বললেনঃ এই প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জনৈক সাহাবী করেছিলেন, তখন আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম । উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘রমযানের পর যদি তুমি রোযা রাখতে চাও, তবে মুহররম মাসে রাখ । কারণ, এটি আল্লাহর মাস । এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তা'আলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন ।’-জামে তিরমিযী ১/১৫৭
অন্য হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোযার কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন ।’
صيام يوم عاشوراء أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله  -সহীহ মুসলিম ১/৩৬৭; জামে তিরমিযী ১/১৫৮
আশুরার রোযা সম্পর্কে এক হাদীসে আছে যে, ‘তোমরা আশুরার রোযা রাখ এবং ইহুদীদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে; আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোযা রাখ ।’
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোযা রাখব ।’-সহীহ মুসলিম ১/৩৫৯
মহররম ও আশুরা কেন্দ্রিক নানা কুসংস্কার যেমন আছে তেমনি এ মাসে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ।
আশুরাকে কেন্দ্র করে এ মাসে যেসব অনৈসলামিক কাজকর্ম ঘটতে দেখা যায় তার মধ্যে শোকগাঁথা পাঠ, শোক পালন, মিছিল ও র‌্যালি বের করা, শোক প্রকাশার্থে শরীরকে রক্তাক্ত করা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত । এসব রসম-রেওয়াজের কারণে এ মাসটিকেই অশুভ মাস মনে করার একটা প্রবণতা অনেক মুসলমানের মধ্যেও লক্ষ করা যায় । এজন্য আবার অনেকে এ মাসে বিয়ে-শাদী থেকেও বিরত থাকে । বলাবাহুল্য এগুলো অনৈসলামিক ধারণা ও কুসংস্কার । মোটকথা, এ মাসের করণীয় বিষয়গুলো যখা, তওবা- ইস্তেগফার, নফল রোযা এবং অন্যান্য নেক আমল । এসব বিষয়ে যত্নবান হওয়া এবং সব ধরনের কুসংস্কার ও গর্হিত রসম-রেওয়াজ থেকে বেঁচে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক চলাই মুসলমানের একান্ত কর্তব্য । আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন ।
এ মাসের একটি ঘটনা শাহাদাতে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু । বলাবাহুল্য যে, উম্মতের জন্য এই শোক সহজ নয় । কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরই তো শিক্ষা-‘নিশ্চয়ই চোখ অশ্রুসজল হয়, হৃদয় ব্যথিত হয়, তবে আমরা মুখে এমন কিছু উচ্চারণ করিনা যা আমাদের রবের কাছে অপছন্দনীয় ।’ অতএব শাহাদাতে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হওয়া এবং সব ধরনের জাহেলী রসম-রেওয়াজ থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য ।
পবিত্র আশুরা
আশুরা হলো মুহররম মাসের দশম দিবস । আরবীতে "আশারা" মানে ১০ আর সে কারণে দিনটিকে "আশুরা" বলে অভিহিত করা হয় । ইসলামের ইতিহাসে এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত কারণ বহু ঐতিহাসিক ঘটনা এই তারিখে সংঘটিত হয়েছিল । এই দিনে আখেরী নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৌহিত্র ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলামের তৎকালীন শাসনকর্তা এজিদের সৈন্য বাহিনীর হাতে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেছেন । 
হিজরী ৬০ সনে এজিদ বিন মুয়াবিয়া পিতার মৃত্যুর পর নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসাবে ঘোষণা করে । সে প্রকৃত মুসলমান ছিল না, সে ছিল মোনাফেক । সে এমনই পথভ্রষ্ট ছিল যে সে মদ্যপানকে বৈধ ঘোষণা করেছিল । অধিকন্তু সে একই সঙ্গে দুই সহোদরাকে বিয়ে করাকেও বৈধ ঘোষণা করেছিল । শাসক হিসাবে সে ছিল স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী । হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এজিদের আনুগত্য করতে অস্বীকৃত হন এবং ইসলামের সংস্কারের লক্ষ্যে মদীনা ছেড়ে মক্কা চলে আসেন । উল্লেখযোগ্য যে, উমাইয়া শাসনামলে ইসলাম পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল । মক্কা থেকে তিনি কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন । শেষ পর্যন্ত তিনি কারবালার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন । এ সময় উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে । কয়েক ঘণ্টা পর শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদির নেতৃত্বে আরো বহু নতুন সৈন্য এসে তার সাথে যোগ দেয় ৷ কারবালায় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয় । নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় । এই অসম যুদ্ধে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তাঁর ৭২ জন সঙ্গী শাহাদৎ বরণ করেন । শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদি নিজে কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে অত্যান্ত নির্মমভাবে হত্যা করে । ওইদিন ছিল হিজরী ৬১ সনের ১০ মুহররম ।
এদিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলের জন্য কুদরত প্রকাশ করেছেন । 

এইদিন নবী মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমুদ্রে রাস্তা বের  নিরাপদে পার করে দিয়েছেন অপরদিকে শত্রু ফেরাউন ও তার অনুসারীদেরকে নীল নদে  ডুবিয়ে মেরেছেন।-সহীহ বুখারী ১/৪৮১ ডুবিয়ে দেয়া হয় ।   
صوموا عاشوراء وخالفوا فيه اليهود، صوموا قبله يوما أو بعده يوما -মুসনাদে আহমদ ১/২৪১
ইসলামের ইতিহাস অনুসারে এই দিনটি আরো অনেক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ । জনশ্রুত রয়েছে ১০ মুহররম তারিখে আসমান ও যমিন সৃষ্টি করা হয়েছে । এই দিনে পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদিপিতা হযরত আদম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টি করা হয়েছিল ।  এই দিন  নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিস্তি ঝড়ের কবল হতে রক্ষা পেয়েছিলো এবং তিনি জুডি পর্বতশৃংগে নোঙ্গর ফেলেছিলেন । এই দিনে দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাওবা কবুল হয়েছিলো । নমরূদের অগ্নিকুণ্ড থেকে হযরত খলিলুল্লাহ ইব্রাহীম আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্ধার পেয়েছিলেন । হযরত আইয়ুব আলাইহি ওয়াসাল্লাম দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত ও সুস্থতা লাভ করেছিলেন । এদিনে আল্লাহ তা'আলা হযরত ঈসা ইবনে মারিয়ম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উর্দ্ধাকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন । এই তারিখেই কেয়ামত সংঘটিত হবে ।