সোমবার, ২৯ জুন, ২০১৫

আল্লামা সাঈদী কারাবন্ধি দিবসঃ

আজও চোখের সামনে ভাসে  ২৯ জুন ২০১০  এর বিকেল বেলা । এখনো বুকের ভেতর রক্তক্ষরন হয় । বিকেল ৪.৪৫ মিনিটে ঢাকা মেট্রো-চ- ৫১-৬২৭১ সাদা মাইক্রোবাসে করে আমার প্রানপ্রিয় আব্বাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ ।  ঐদিন বিকেল ৪টা নাগাদ আমি ছিলাম অফিসে আর  আব্বা আসরের নামায পড়ে, পাশেই  আমার চাচার বাসায় দাদীর সাথে কথা বলছিলেন । পুলিশের ১০-১২টা ভ্যান গাড়ি ১০-১২টা মটোর সাইকেলে সাদা পোষাকে পুলিশ, এবং প্রায় ৪টার মতো মাইক্রোবাস সহ অসংখ্য পুলিশ দিয়ে  শহীদবাগ এলাকা ঘিরে রেখেছে । আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই রাফীক বিন সাঈদী (রঃ) আমাকে ফোনে জানালেন বাসায় পুলিশ এসেছে ।  বড় ভাই একই কথা আব্বাকেও বলেছেন । আব্বা পুলিশের মাঝ থেকে হেটে বাসায় এসেছেন আর আমিও বাসায় চলে আসলাম । সাদা মাইক্রোবাসে আব্বাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । আমরা তিন ভাই গাড়ির পিছে পিছে যাচ্ছি । কেন যাচ্ছি ? কোথায় যাচ্ছি ?  কিছু জানিনা । আব্বাকে কেন গ্রেফতার করা হলো ?

ঐবছর ১৭ই মার্চ রাজধানীর মগবাজার আলফালাহ মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের দেয়া বক্তব্য বিকৃত করে আওয়ামী সমর্থিত কতিপয় পত্রিকা রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে তুলনার মিথ্যা অভিযোগ প্রতিবেদন প্রকাশ করে । এরপর মিথ্যা অভিযোগ পুজি করে আওয়ামীলীগের  সুবিধাভোগী ব্যক্তি তরিকত ফেডারেশনের ধূর্ত সেক্রেটারী রেজাউল হক চাদপুরি বাদী হয়ে  মামলা দায়ের করে । ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় ধর্ম প্রচারক আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সহ আমীরে জামায়াত  মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহীদকে ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয় । 
পবিত্র হজ্জ সম্পর্কিত ধর্মদ্রোহী বক্তব্য দিয়ে জামিন পায়, আল্লাহর রাসুল (সাঃ)কে কটুক্তি করেও নতুন প্রজম্মের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট পায়  আর যারা সারটি জীবন কোরআনের দাওয়াত দিয়েছে বাংলাদেশ থেকে শুরু করে সারাবিশ্বে তাদের দেয়া হয় ফাসির রায় ! কী বিচিত্র দেশ -আর- কী অদ্ভুত বিচার !
আজ টানা পাঁচটি বছর আমার প্রানপ্রিয় আব্বা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জালিমের কারাগারে বন্দী । দুঃসহ গরমে, সীমাহীন মানসিক যন্ত্রণা সয়ে কারাগারের চার দেয়ালের মাঝে পাঁচটি বছর ধরে রোজা পালন করছেন তিনি।
দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যে ইবাদত পালনে বাধ্য করে কোরআনের খাদেমকে কোরআনের ময়দান থেকে দূরে রেখে জনগনকে কোরআন শোনা থেকে বঞ্চিত করেছে যারা, ও মাবুদ ....
পবিত্র রমজানের পবিত্র এই দিনে তাদের জন্য তোমার শাহী দরবারে রোজা রেখে ফরিয়াদ করছি মালিক .... !
তুমি তাদের হেদায়াত দাও আর যদি তাদের তকদিরে হেদায়াত না থাকে তাহলে নমরুদ ফেরাউনের মতো এদেরকে চরম জিল্লতির সাথে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দাও ।

বুধবার, ২৪ জুন, ২০১৫

কাবা শরীফের ইতিহাসঃ পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে - ২০১৫ সাল ( শুধু মাত্র ছবি ব্লগ- ২৪ টি বিরল ছবি)

কাবা শরীফের ইতিহাসের একটি ছবি ব্লগ । যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ,ইসলামিক দার্শনিক , গবেষকগন দ্বারা লিখা ইসলামের বিভিন্ন কিতাবে কাবা শরীফের যে ছবি ব্যাবহার করা হয়েছিল সেই সকল ছবির সংকলনের মাধ্যমে কাবা শরীফের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করবো ।
সাধারণত ২০ বছর থেকে ৫০ বছর পর পর কাবা শরীফের অভ্যন্তরীণ সংস্কার কাজ করা হয়ে থাকে ।
























সংক্ষেপে কাবা ঘর তৈরির ইতিহাসঃ
হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, চতুর্থ আকাশে বা দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে আকরিক পাথর দ্বারা নির্মিত একটি মসজিদ রয়েছে যার নাম বাইতুল-ইজ্জত যাকে বাইতুল মামুরও বলা হয় । এটি কাবা শরীফের বরাবরে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে ফেরেশতাদের ইবাদতগাহ । ফেরেশতারা এখানে আল্লাহ পাকের ইবাদতে মগ্ন থাকে । মুসলিম জাতির আদি পিতা হজরত আদম (আ.) ইবাদতের জন্য একটি মসজিদ চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন । তখন আল্লাহ্ পাকের হুকুমে ফেরেশতারা বাইতুল মামুনের নকশা পৃথিবীর মধ্যস্থলে ফেলে দেন । হজরত আদম (আ.)-এর ছেলে হজরত শীষ (আ.) ওই নকশার উপর ভিত্তি করে ওই স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন । এ মসজিদই আমাদের বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর । মক্কা শরীফের প্রসিদ্ধ স্থানসমূহ কাবা শরীফঃ কাবাঘর পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর । কাবা বা আল্লাহর ঘর, কাবা শরীফ পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থিত । কাবা শরীফ বা আল্লাহর ঘরখানা বর্গাকৃতির । কাবাঘরের উচ্চতা ৩৯ ফুট ৬ ইঞ্চি । এর পূর্ব দেওয়াল ৪৮ ফুট ৬ ইঞ্চি, পশ্চিম দেওয়াল ৪৬ ফুট ৫ ইঞ্চি, উত্তর দেওয়াল (হাতিমের পাশ) ৩৩ ফুট এবং দক্ষিণ দেওয়ালে (কালো পাথর কর্নার থেকে ইয়েমেনি কর্নার) ৩০ ফুট । (ইবরাহিমিক ফাউন্ডেশন) এ পবিত্র ঘরখানা মানব কল্যাণের জন্য তৈরি করা হয়েছে ।
ভবিষৎ  ক়া'বা 



শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০১৫

মীকাতঃ


হজ্জের পরিভাষায় মীকাত সে স্থানকে বলা হয়, হজ্জ বা উমরা করার উদ্দেশ্যে যে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে ইহরাম বাধতে হয় । সব থেকে উত্তম নিজ বাড়ি থেকে ইহিরাম বেধে হজ্জের সফরে যাত্রা করা । মক্কার বাইরের মানুষদের জন্য হাদীসে বেশ কয়েকটি স্থানের উল্লেখ করা হয়েছে । 

১ । ইয়ালামলাম পর্বত । এই পর্বতটি পবিত্র মক্কা থেকে ৯২ কিলোমিটার দূরে আরব সাগর তীরের অদুরে অবস্থিত ।বাংলাদেশ বা দক্ষিন এশিয়ার হাজীদের মীকাত ।
২ । যুলহুলাইফা । এ স্থানটি পবিত্র মদীনা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ।  মদীনা থেকে বা এ পথে যারা মক্কায় যাবেন এটিই তাদের মীকাত ।
৩ । যাতুল ইরাক । এরাকের অধিবাসী বা যারা এই পথে মক্কায় আসবেন এটা তাদের মীকাত । মক্কা থেকে ৯৪ কিলোমিটার দূরে পূর্ব উত্তর দিকে এই স্থানটি অবস্থিত ।
৪ । যুহফা । মিশর, ফিলিস্তিন ঐ অঞ্চলের আগত হাজীদের যুহফা নামক স্থানই মীকাত । এস্থানটি মক্কা থেকে ১৮৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ।

৫ । কারনুল মানাযিল । নজদবাসী বা এ পথে যারা মক্কায় যাবেন এই স্থানটিই তাদের মীকাত । এস্থানটি মক্কা থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । (চলবে)-------
"শারঈ' মানদন্ডে
দোয়া-যিকির,হজ্জ ও উমরা"

সালাতুত তারাবিহ কেন পড়বেন ?


তারাবির পরিচয়ঃ হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন: তারাবিহ শব্দটি তারবিহাতুন এর বহুবচন । তারবিহাতুন অর্থ একবার বিশ্রাম গ্রহণ করা। যেমন: তাসলিমাতুন অর্থ একবার সালাম দেয়া। মাহে রামাযানের বরকতময় রজনীতে জামাতের সঙ্গে যে নামায পড়া হয় তাকে তারাবি বলে। (ফাতহুল বারী, কিতাবু সালাতিত তারাবি ৪/২৯৪) আল মানার প্রণেতা বলেন: তারাবিহ বহুবচন; একবচন তারবিহাতুন, অর্থ বসা, তারাবির নামাযে প্রতি চার রাকাত অন্তর বসা। তারাবির আভিধানিক অর্থঃ তারাবি আরবী শব্দ। মূলধাতু রা-হাতুন; অর্থ প্রশান্তি অন্যতম ধাতু রাওহুন। সন্ধারাতের প্রশান্তি বা প্রশান্তির বৈঠক; যা রামাযান মাসে তারাবীহর নামাযে প্রতি চার রাকাত পরপর করা হয়ে থাকে। বহুবচন:‘তারাবি’ প্রশান্তির বৈঠক সমূহ। (আল মুনজিদ)নামকরণ: যখন থেকে সাহাবায়ে কেরাম এ নামায সম্মিলিতভাবে আদায় করতে আরম্ভ করেন তখন থেকেই তারা প্রতি দু’সালামের পর (চার রাকাতের পর) বিশ্রাম নিতেন ।

তাই এ নামাযের নাম তারাবি বলে করা হয়েছে । (ফাতহুল বারী)তারাবির গুরুত্ব ও ফযিলতহাদিসের ভাষ্যানুযায়ী আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জনের প্রধান মাধ্যম হল ফরয ইবাদত ও ফরয দায়িত্ব সমূহের ব্যাপারে যন্তবান হওয়া। অতঃপর সুন্নত ও নফলের মাধ্যমে যে পর্যায়ের নৈকট্য লাভের কথা হাদিসে এসেছে তাও অন্তরকে জাগ্রত করার জন্য এবং মানবাত্মাকে ব্যাকুল করার জন্য যথেষ্ট। যার সারাংশ হল ইখলাসে নিয়তের সাথে সুন্নত ও নফলের প্রতি মনোযোগি হলে বান্দার রুচি ও স্বভাব দুরস্ত হয়ে যায় । ফলে রেজায়ে খোদাওন্দীই হয় তার লক্ষ্য উদ্দেশ্য। তার প্রতিটি আমাল হয় প্রভু সন্তুষ্টির অনুগামী। তার প্রতি থাকে খোদায়ী মহব্বত ।
এ ব্যাপারে ইরশাদ হচ্ছে- ‘কেউ যদি আমার ওলী (বন্ধুর) সাথে দুশমনি করে তবে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা দিচ্ছি। (সহিহ বুখারী: ১১/৩৪০-৩৪১ ফাতহুল বারী, মাজমাউল ফাতাওয়া: ১৮/১২৯-১৩১)রামাযানুল মুবারক হচ্ছে রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের বসন্তকাল। এর বাস্তবাবস্থা শব্দ ও বাক্যের কথা মালায় প্রকাশ করা অসম্ভব। মহান রাব্বুল আলামিন কোরআনে কারিমে দ্বারা রামাযানে রোযা রাখার ফরযিয়াত ঘোষণা করেছেন এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)’র পবিত্র যবানে ‘কিয়াম’ যাকে কিয়ামে রামাযান বা তারাবি বলে। সুন্নত বানিয়েছেন। বিভিন্ন হেকমত এর ভিত্তিতে সুন্নতে মুআক্কাদাহ রাখা হয়েছে। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই যে, রামাযানের পূর্ণ বরকতের সাগরে গা ভেজাতে হলে তারাবির ব্যাপারে অবশ্যই যন্তবান হতে হবে।
এ কারণেই মুমিন বান্দা রামাযান ও কোরআনের হক আদায়ের জন্য, রোযার মাধ্যমে তাক্বওয়া হাসিলের জন্য, আল্লাহর অফুরন্ত রহমত ও মাগফিরাতের রারিধারায় সিক্ত হওয়ার জন্য, খোদায়ী মহব্বতের হক আদায়ের জন্য, সর্বোপরি আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সালাতুত তারাবিতে মগ্ন হয়ে থাকে। পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে ও পূণ্যতা লাভের আশায় এবং বিনয় ও নম্রতার সাথে রামাযানের রাত সমূহে (নামাযে) দাঁড়ানো ও সেজদায় মাথা অবনত রেখে সময় কাটাতে থাকে এবং এর মাধ্যমে মহান প্রভুর সাথে দীর্ঘক্ষণ একান্ত আলাপচারিতায় প্রভু প্রেমের তৃঞ্চা নিবারণ করে ক্বলবের পরিতৃপ্তি লাভে সক্ষম হয়।
এ থেকে তারাবির গুরুত্ব দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, সুন্নত ও নফলের সাধারণ নিয়মের বাইরে ফরয নামাযের মত জামাত হয়েছে। তবে রাসূলে মাক্ববুল (সা.) নিজে জামাতের ব্যবস্থা এ জন্য করেননি যে, তা যদি আবার উম্মতের উপর ফরয হয়ে যায়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, সালাতুত তারাবির মাকাম সাধারণ নফল ও অন্যান্য সুন্নত থেকে উর্ধ্বে। মোটকথা অনেক দলীল ও প্রমাণাধীর ভিত্তিতে মুফতিগণ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, তা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। হাল যামানায় কিছু লোক ইসলামের লেবেল গায়ে ঝুলিয়ে সাধারণ মুসলমানদেরকে এ কথার সবক শেখাচ্ছে যে, তা সাধারণ নফলের মত। না পড়লে কোন গুনাহ নেই। দোহাই লাগে এসব মিথ্যা আর প্রোপ্রাগান্ডার শিকার হয়ে নিজের আমালকে ধ্বংস করবেন না। রামাযানে আমালের পাল্লা ভারী করতে আসুন নিজে সচেতন হই।

প্রিয় পাঠক বৃন্দ! আমরা সবাই এ কথা জানি যে সালাতুত তারাবি হচ্ছে ২০ রাকাত। শুধু জানাতেই শেষ নয়, বরং আমরা ২০ রাকাত তারাবি আদায়ে খুব অভ্যস্ত বটে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গত দুয়েক বছর ধরে আমাদের শাহজালালের পূণ্যভূমির প্রায় সবকটি পাড়া-মহল্লার মসজিদে ‘আহলে হাদিস’ নামধারী মহল তাদের নিজ অর্থায়নে সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আকিদা নষ্ট করার জন্য তারাবি নামায ৮ রাকাত বলে লিফলেট, বই, প্রকাশ করে তা বিনামূল্যে হাতে তুলে দিচ্ছে।
আসুন সহীহ হাদিসের আলোকে জেনে নেই সালাতুত্ তারাবিহ রাকাত সংখ্যা কত?
রাকাআতে তারাবিঃ একটি সন্ধানী পর্যালোচনাশাসনের নামে শোষক ইংরেজদের পদার্পণ এ জমিনে ঘটার পূর্বে কিছু বলার বা লিখার প্রয়োজন ছিল না। কেননা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত এমনকি গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে প্রতিটি অলিগলির বাসিন্দাদের কাছে মুতাওয়াতির তরিকায় ২০ রাকাত তারাবি আদায়ের কথা পৌঁছেছে। আর আজও আদায় হচ্ছে বিশ্বের সবকটি মসজিদে। সে যুগে কোন কোন মসজিদে বিশ রাকাতের অধিক ও পড়া হত; তবে বিশ রাকাতের কম পড়া হত কেউ দেখাতে পারবেনা। মুখস্ত আর শিখিয়ে দেয়া বুলি ছোঁড়ে নিজেকে ‘হাদীস অনুসারী’ দাবী করা নিতান্তই বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। এই জামাতের নাম ‘আহলে হাদীস’।

মুসলমানদের ঐক্যে ফাঁটল সৃষ্টি করাই হচ্ছে এই দলের মূল লক্ষ্য। তাদেরই একজন তারাবি সংক্রান্ত মাসআলায় লিখেছে বিশরাকাত। (গোলাম রাসূল রচিত ‘রেসালায়ে তারাবি)ভারতবর্ষের পরে এ নিয়ে কথার্বাতা শুরু হয় আরবজাহানে। আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবিরা শায়খ আলবানিকে গুরু হিসেবে সম্মান করে থাকেন। তার রচিত গ্রন্থকে দলীল হিসেবে পেশ করেন। সেই আলবানিও আট রাকাতের পক্ষে কোন সাহবী, তাবেঈ, ফক্বীহ বা ইমাম এর নাম উল্লেখ করতে পারেন নি। তবে ইলমের আমানতদারীতে খেয়ানত করে এ ক্ষেত্রে ইমাম মালিক (রাহ.) এর নাম উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি নাকি বিশ রাকাত তারাবি পড়তে বাধা দিতেন। ইন্নালিল্লাহ! অথচ ইমাম মালিক (রাহ.) র মাযহাবের মৌলিকগ্রন্থ ‘আল্-মুদাওওনা’ গ্রন্থে স্পষ্ট বর্ণিত আছে তিনি তারাবির নামায বিতর তিন রাকাতসহ মোট ৩৯ রাকাত পড়তেন। মদীনার তখনকার আমির কমাতে চাইলে তিনি নিষেধ করেন। (আল্-মুদাওওয়ানাতুল কুবরা: ১/১৯৩)হিন্দুস্থানের সবচেয়ে বড় মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা হাবিবুর রহমান আজমি (রাহ.) ‘রাকাআতে তারাবি’ নামক একটি গবেষণাধর্মী গ্রন্থে সাহাবী যুগ থেকে শুরু করে লা-মাযহাবী ফিৎনার জন্ম হওয়ার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে ১২০০ শত বছরের ‘আমালে মুতাওয়াররাস’ উম্মতের সম্মিলিত, অবিচ্ছিন্ন কর্মধারা এক এক শতাব্দি করে দেখিয়েছেন যে, আট রাকাতে সীমাবদ্ধ রাখা এবং বিশ রাকাতের উপর আপত্তি করা কোন পূর্বের শতাব্দিগুলোতে ছিল না। হাদীসবিরোধী আহলে হাদিস তথা লা-মাযহাবিদের আবিস্কার। আল্লামা হাবিবুর রহমান আজমি (রাহ.)’র এই গ্রন্থ ১৩৭৭ হিজরিতে প্রথম প্রকাশিত। এই গ্রন্থে যে দলিল প্রমাণ দেখানো হয়েছে তা খন্ডন করার তো দূরের কথা। অর্ধ শতাব্দি পেরিয়ে গেছে এই গ্রন্থের জবাবে টু শব্দ করেননি কেউ।
তারাবির নামাযঃ ২০ রাকাত হওয়ার দলীলসহিহ হাদিসে রাসূলে কারিম (সা.) নিজ সুন্নতের পাশাপাশি খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতকে অনুসরণ করার এবং তা মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে- মনে রেখো! আমার পরে তোমাদের যারা জীবিত থাকবে, তারা বহু মতানৈক্য দেখতে পাবে। তখন আমার সুন্নত ও আমার খলিফাগণের সুন্নতকে আঁকড়ে ধরে রাখবে। একে অবলম্বন করবে এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে রাখবে ...। (সুনানে আবুদাউদ, হাদীস নং ৪৬০৭, জামে তিরমিযী ৫/৪৩হাদিস নং ২৬৭৬; সুনানে ইবনে মাজা হাদিস নং ৪২)জামে তিরমিযির ২২২৬ নং হাদিসে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)’র ইন্তেকালের পর খেলাফতের মেয়াদ ত্রিশ বছর হওয়ার ঘোষণা স্বয়ং নবীজি দিয়েছেন। সে হিসেবে খুলাফায়ে রাশেদীন চারজন ১. সিদ্দিকে আকবর (রা.) ২. ফারুকে আযম (রা.) ৩. উসমান (রা.) ৪. আলী (রা.)।

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০১৫

বিবিসি কর্তৃপক্ষের নিকট একটি নিবেদনঃ

সম্ভবত; শতাব্দীকাল থেকে লন্ডন হতে বহুল প্রচারিত সংবাদ মাধ্যম বিবিসি দল মতের উরধে সত্য প্রচারে বিশ্ব ব্যাপি সুখ্যাতি অর্জন করে আসছে । কালের আবর্তনে প্র্যোজনের তাগিদে বর্তমানে তা বাংলা ভাষা ভাষী মানুষদের সঠিক ও সাহসী খবর ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার জন্য চ্যানেল আই এর মাধ্যমে সপ্তাহে দুইবার খবর প্রচার ও জনমত প্রচারের যে ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন এর জন্য বিবিসিকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ ।
বিবিসি কর্তৃপক্ষের নিকট আমার একটি নিবেদন, খবর প্রচারে  প্রসঙ্গক্রমে আপনাদের মুসলিম খবর পাঠক পাঠিকারা যখন বিশ্ব নবীর নাম উচ্চারন করবেন তখন শুধু "নবী মুহাম্মাদ" বলবেন না,  "হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম"  বলবেন, কারন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার নবীর নামে দুরুদ পাঠান, ফেরেশতারা দুরুদ পড়েন, "হে মুমীনগন, তোমরাও তার নামে দুরুদ পড়ো" আল কুরআন সুরা আহযাব-৫৬ । হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি আমার নাম বললো বা শুনলো অথচ দুরুদ পড়লো না, সে আল্লাহর অভিশপ্ত" এটি বুখ্রী ও মুসলিমে উদ্ধৃত বিশুদ্ধ হাদীছ ।

ঢাকা বিমান বন্দ্রের নাম উল্লেখ করতে গিয়ে খবর পাঠকগন বলেন হযরত শাহজালাল (রঃ) বিমান বন্দর, অথচ বিশ্ব নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, আখেরী নবী, তার নামটি উচ্চারনের সময় বলা হয় শুধু "নবী মুহাম্মাদ" কতো বড় তাচ্ছিল্য । যেখানে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা প্রায় সকল নবীর নাম ধরে সম্মোধন করেছেন, কিন্তু গোটা কুরআনে একটি জায়গায়ও মুহাম্মাদ (সাঃ)কে নাম ধরে সম্মোধন করেন নি । যখন সম্মোধনের প্রয়োজন হয়েছে আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ হে নবী বা হে রাসুল অথবা হে বস্ত্র আচ্ছাদনকারী ইত্যাদী, পবিত্র কুরআন এর সাক্ষী ।
আল্লাহ প্রেমিক, রাসুল প্রেমিক, ইসলাম প্রেমিক মুদসলমানগন খুবই খুশী হবেন, বিবিসি তাদের মুসলিম খবর পাঠক পাঠিকারা "নবী মুহাম্মাদ" শব্দটি না বলে প্রসঙ্গ এলে বলবেন " হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম" আশা করি বিবিসি কর্তৃপক্ষ  এ সংশোধন টুকুন গ্রহন করবেন । বিবিসিকে অনেক মোবারকবাদ ।
প্রয়োজনের তাগিদে লেখাটি একটু লম্বা হয়ে গেলো এজন্যে দুঃখ প্রকাশ করছি ।

ধন্যবাদান্তে

Shameem Sayedee শামীম সাঈদী
চেয়ারম্যানঃ দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা এবং আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন


বুধবার, ১৭ জুন, ২০১৫

শুক্রবার থেকে রোজাঃ


দেশের কোথাও রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায় নি । তাই আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হবে সিয়াম সাধনা । জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি বৈঠক শেষে জানিয়েছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রথম তারাবীহ নামাজ হবে । বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সাহরি খেয়ে মুসলমানরা রোজা শুরু করবেন ।
বায়তুল মুকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ।

মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০১৫

ইহরাম ও তালবিয়া

পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে গোসল করে ইহরাম বেধে দুই রাকায়াত নামায আদায় করতে হবে । এই দুই রাকায়াত নামাযের অনেক বেশী ফজিলত ।নামায শেষে তালবিয়া পাঠ শুরু করতে হবে । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার কাছে জিবরাঈল (আঃ) এসে বলেছেন, আপনার সাথীদের উচ্চস্বরে পাঠ করতে বলুন, কারন এটা হজ্জের নিদর্শন । (ইবনে মাজাহ ) 

রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ যখন তালবিয়া পাঠ করা হয় তখন তালবিয়া পাঠকারী হাজীর ডান-বাম দিকের পাথর, গাছ, ও মাটি তার সাথে তালবিয়া পাঠ করতে থাকে । একজন হাজী যখন তালবিয়া পাঠ করে, মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহানত্বের প্রকাশ করে তখন আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত খুশী হন । 
তালবিয়া নিচে উল্লেখ করা হলোঃ 
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মূলক, লা শারিকা  লাক ।
আমি আপনার আহবানে উপস্থিত, হে আমার মালিক ! আমি আপনার দরবারে উপস্থিত । আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোনো অংশীদার নেই । নিঃসন্দেহে সকল প্রশংসা ও সম্পদরাশি আপনার এবং সমগ্র বিশ্বের একচ্ছত্র আধিপত্য সার্বভৌমত্ব আপনার । আপনার সার্বভৌমত্ব্যে অন্য কারো কোনো অংশীদার নেই । 
চলবে................
"শারঈ মানদন্ডে
দোয়া-যিকর, হজ্জ ও উমরা"


কাল দেশব্যাপী জামায়াতের হরতালঃ


বুধবার দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াত । মঙ্গলবার সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আপিলের রায়ে সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হলে দলটি এই হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে ।

সোমবার, ১৫ জুন, ২০১৫

মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্মানিত সেক্রেটারি জেনারেল ও সফল, সাবেক সমাজকল্যান মন্ত্রী, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবীদ, বাংলাদেশ সকল গনতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রসৈনিক জননেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল রেখেছে আওয়ামী সরকারের উচ্চ আদালতের বিচারকরা ।
এ রায় সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়নের রায়, ইসলামী নেতৃত্ব নিঃশেষ করার রায় । এদেশের তাওহীদি জনতা এমন পূর্ব পরিকল্পিত, সাজানো ও দলীয় রায় ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করেছে । ট্রাইব্যুনালের ......
৬নং অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ
ইতিহাস বিকৃতি, বানোয়াট অভিযোগ ও মিথ্যা সাক্ষীর ভিত্তিতে খুন হতে যাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মুজাহিদ । ৬ নং অভিযোগে বলা হয় যে, ১৯৭১ সালে, মোহাম্মাদপুর ফিজিকাল ইন্সটিটিউট বা শারীরিক শিক্ষা কলেজ পাকিস্তানী আর্মিদের একটি টর্চার ক্যাম্প ছিল সেখানে তিনি নিয়মিত ওই টর্চারক্যাম্পে যেতেন এবং পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তার সাথে শলাপরামর্শ করতেন । ঐ পরামর্শের আলোকেই ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বুদ্ধিজীবি হত্যাজজ্ঞ নিধন চলে । এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল জনাব মুজাহিদকে ফাসিঁর দন্ডাদেশ প্রদান করেন ।

এই অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট নয় ।
- জনাব মুজাহিদ কবে, কাকে, কিভাবে হত্যা বা অপহরন করেছেন সুনির্দিষ্ট কোন দিন তারিখ উল্লেখ নাই । - কোন আর্মি অফিসারের সংগে কোথায় বসে এই পরামর্শ হয়েছে সে ব্যপারেও কোন উল্লেখ নেই । - এই পরামর্শের সময় আর কেউ উপস্থিত ছিলো কিনা এই মর্মে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দেয়া হয়নি । এই ভাবে অভিযোগ গঠন ১৯৭৩ সালের আইনের পরিপন্থী । তাছাড়া- কোন বুদ্ধিজীবি পরিবারের কোন সদস্য কিংবা যারা এই ফিজিকাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের কথিত ঘটনার ভিকটিম তাদের কারও স্ত্রী বা সন্তান -সন্ততি ট্রাইবুনালে এসে জনাব মুজাহিদের বিরুদ্ধে কোন স্বাক্ষ্য প্রদান করেননি । এই মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী রুস্তম আলী মোল্লা । 
১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ১৪ বছর ।
তার বাবা রহম আলী মোল্লা ঐ ফিজিকাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরী করতেন । সে এখনও জীবিত আছে । কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ তাকে স্বাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির করেনি । ঐ সময়কার প্রিন্সিপাল বা অধ্যক্ষ এখনও জীবিত আছেন । তাকেও এই মামলার স্বাক্ষী করা হয়নি । তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, তৎকালীন কোয়ার্টারে থাকা কোন স্টাফ, অধ্যাপক বা অন্য কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তিনি এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করেননি ।
স্বাক্ষী রুস্তম আলী মোল্লা
প্রাপ্ত বয়স্ক কাউকে এই ঘটনায় স্বাক্ষী না করে ১৪ বছরের একজন বালককে স্বাক্ষী করা আইনের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ। সে ছিল নাবালক। সে নিজেই স্বীকার করেছে তার বাবা সার্বক্ষনিক গার্ডের কাজ করতেন। এটি হাস্যকর যে, সে তার জবানবন্দিতে বলেছে, এই ঘটনা সংক্রান্তে সে তার বাবার চেয়েও বেশী জানে ।
এহেন পরিস্থিতিতে এই স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যের উপর নির্ভর করে মাননীয় ট্রাইবুনাল জনাব মুজাহিদকে বেআইনীভাবে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা হল, তার বাবা রহম আলী বিভিন্ন টিভি সাক্ষাৎকারে ঘটনার বর্ননা করলেও জনাব মুজাহিদকে তার সাথে সম্পৃক্ত করেননি ।
এই স্বাক্ষী একজন অসৎ স্বাক্ষী । কেননা সে জেরায় স্বীকার করেছে আমি কোন স্কুলে লেখাপড়া করিনি তবে চাকুরীর জন্য পঞ্চম শ্রেণী পড়া একটি সার্টিফিকেট গ্রহন করেছে।
সে বলেছে, “আমার পিতা ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজের কোন পদে চাকরি করতেন সেটা আমার জানা নাই ।” এটা কি হতে পারে ? কোন সন্তান তার পিতার চাকুরীর পদ ও পদবী নিয়ে কিছু জানবেনা, এটা কি সম্ভব ! সে আরও জানায়, “১৯৭১ সালে ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজের টর্চার সেন্টারে নির্যাতিত এমন কারো নাম আমি বলতে পারব না । যাদেরকে টর্চার সেলে নির্যাতন করা হত তারা বুদ্ধিজীবি ছিলো শুনেছি ।”
স্বাক্ষী জেরায় স্বীকার করে যে, পূর্বে কোন সাক্ষাৎকারে সে বা তার পিতা ১৯৭১ সালে মুজাহিদ সাহেবকে চিনতো, তাকে দেখেছে কিংবা জনাব মুজাহিদ সাহেব ফিজিক্যাল কলেজে যাতায়াত করতেন মর্মে বিটিভি বা পত্রিকায় কোন বক্তব্য দেয়নি ।
এরকম মানের কোন স্বাক্ষ্য দিয়ে কোন ব্যক্তিকে আদৌ অভিযুক্ত করা বা এমন কোন স্বাক্ষ্যকে গুরুত্ব দিয়ে যদি কোন সিদ্ধান্তে আসা হয়, তা কি আদৌ গ্রহনযোগ্য হবে ?
ইয়া আল্লাহ ! তুমি তোমার বান্দাদেরকে হেফাযত কর ।

শুক্রবার, ১২ জুন, ২০১৫

আব্বার নুরানী হাসিমাখা মুখখানি দেখলাম অনেকদিন পর ।


দীর্ঘ এক মাস পর আমার শ্রদ্ধেয় আব্বার সাথে সাক্ষাত করলাম ।
আব্বা প্রসঙ্গে প্রথম লিখতেই হয় ভালো আছে কিনা ? সত্যিকার অর্থে প্রচন্ড গরমে ওই ছোট্ট রুমটিতে তিনি ভালো ছিলেন না । যদি লিখতাম ভালো নেই তবে নানান মানুষ নানান ভাবে নিত । 
এরই মধ্যে কে বা কারা একটি গুজব ছড়িয়ে দিয়েছে যে, আল্লামা সাঈদী কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন । গত দুদিন থেকেই হাজারো মানুষের ফোনে আমি প্রায় দিশেহারা । শোকর আলহামদুলিল্লাহ, আজ সাক্ষাতে জানলাম আমার আব্বা আল্লামা সাঈদী আল্লাহর মেহেরবাণীতে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন ।
আপনারা দোয়া করুন, যে বা যারা পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে মহান আল্লাহ এইসব গুজবের উসিলায় আল্লামা সাঈদীর নেক হায়াত আরো বাড়িয়ে দিন এবং সুস্থ রাখুন, আমীন । মানসিক ভাবে আগে যেমন দৃঢ় ছিলেন, এখনো তেমন সুদৃঢ় আছেন । গরমে শরীরটা তেমন ভালো যাচ্ছিলো না । আল্লাহর রহমতের বৃষ্টিতে সুস্থ, ভালো আছেন ।
কথা যা হলো তার পুরোটাই রমজান কেন্দ্রিক । প্রথমেই একটি হাদীস বললেন । হুজুরে পাক নবী কারীম মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলিহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীর মেম্বারে প্রথম ধাপে পা রাখলেন, বললেন, আল্লাহুম্মা আমীন । দ্বিতীয় ধাপে পা রাখলেন, বললেন, আল্লাহুম্মা আমীন । ত্রিতীয় ধাপে পা রাখলেন বললেন, আল্লাহুম্মা আমীন । নামাজ শেষে সাহবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন, ইয়া আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আমরাতো বুঝলাম না মেম্ব্রের প্রতি ধাপে ধাপে আপনি কেন আল্লাহুম্মা আমীন বললেন ?
রাসুলে কারীম (সাঃ) বললেন মেম্বরের কাছে আসতেই জিব্রাইল (আঃ) সালাম দিলেন, বললেন ঃ আমি দোয়া করব, আপনি আমীন বলবেন । তিনি দোয়া করলেন - 

১/ কোন সন্তান তার পিতা মাতা বা উভয়ের থেকে একজনকে জীবিত দশায় পেলো আর তার সেবা করে জান্নাত আদায় করাতে পারলো না, সে ধ্বংশ হোক । 
২/ কোন ব্যাক্তি আপনার নাম শুনলো, পড়লো, উচ্চারন করলো অথচ দুরুদ (সাঃ) পাঠ করলো না, সে ধ্বংশ হোক । 
৩/ যে ব্যক্তি রমজান মাস পেলো অথচ জান্নাত ওয়াজিব করতে পারলো না, সে ধ্বংশ হোক । (সহীহ বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ)
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং নিজের জন্য জান্নাতকে ওয়াজিব করতে হলে আল্লামা সাঈদী বললেন, তোমরা অবশ্যই করবে -
১ । ৫ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতে আদায় করবে ।
২ । প্রত্যেক নামাজের পর মনে মনে আল্লাহর প্রশংসায় তাসবিহ পাঠ করবে ।
৩ । প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট অর্থ সহ কোরআন অধ্যায়ন করুন ।
৪ । প্রতিদিন অন্তত ২টি হাদীস এবং ১০ পৃষ্ঠা ইসলামী গ্রন্থ পাঠ করুন ।
৫ । পর চর্চা এবং গীবত পুরোপুরি বর্জন করুন ।
৬ । যত বেশী সম্ভব দান, খয়রা্‌ নফল এবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের চেস্টা করুন ।
৭ । ইফতারীর ১০ মিনিট পূর্বে ইফতারী সামনে নিয়ে বসুন । সবাই মিলে মহান আল্লাহর মহিমা স্বরন করুন । নিজের ভুল ত্রুটির জন্য তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করুন ।
৮ । রমজান মাসে যে কোন ভালো কাজের সাওয়াব অনেক বেশী তাই মানবতার সেবায় যতটুকু সম্ভব কাজ করুন । দ্বীনের দাওয়াত দিন ।
৯ । রোজার পরও আপনি যেন সংযমী, সুন্দর ও কল্যাণের জীবন যাপন করতে পারেন এবং দ্বীনের দাওয়াতকারী হিসেবে নিজেকে নিবেদিত করতে পারেন
সেজন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করুন ।
১০ / সম্পদের হিসেব করে যাকাত দিন ।

বিদায়ের পূর্বে মোনাজাত করলেন । রোজাকে যেন কাজে লাগাতে পারি । রোজার সঠিক আমল যেন করতে পারি । মহান আল্লাহ যেন আমাদের সকলের গুনাহ খাতা মাফ করে দেন । আমীন । আব্বা বললেন ঃ আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই । রমজান মাসের ১২ থেকে ১৫টা রোজা পবিত্র মাক্কা এবং মদীনাতে কাটাতাম । গত পাচ বছর মরুভুমির দেশে আল্লাহর পবিত্র ঘর বায়তুল্লাহ দেখিনা । আমার কলিজাটাও মরুভুমি হয়ে গেছে । মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা, স্বপরিবারে পবিত্র মক্কা এবং রাসুল (সাঃ) এর রাওজা জিয়ারত না করিয়ে যেন মৃত্যু না দেন । 
আল্লাহুম্মা আমীন ।


রবিবার, ৭ জুন, ২০১৫

তায়াম্মুম পদ্ধতি এবং সফরের নামাজ

তায়াম্মুম পদ্ধতি
হজ্জের সফরের সময় বর্তমানে প্রায় সকলেই উড়ো জাহাজ বা প্লেনে যাতায়াত করে থাকেন । উড়ো জাহাজ বা প্লেনে অযু করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ । প্লেনে ওঠার পূর্বে অযু করে নেয়া ভালো । নামাজের সময় হলে কর্তৃপক্ষ প্লেনে মাটির চাকা সরবারহ করেন তায়াম্মুম করার জন্য । মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পবিত্র হবার নিয়ত করে বিসমিল্লাহ বলে দুই হাতের তালু একটু প্রসারিত করে পবিত্র মাটির ওপর ধীরে ধীরে মারতে হবে । অতঃপর  ফুক দিয়ে ঝেড়ে ফেলে প্রথমে মুখমন্ডল তারপর দুইহাত একবার হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করতে হবে । যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আম্মার রাদিআল্লাহু আনহুকে তায়াম্মুম করতে দেখে বলেছিলেন, "তোমর জন্য এইরুপ করাই যথেস্ট ছিলো" এই বলে তিনি তার দুই হাত মাটির উপর মারলেন এবং ফুক দিলেন । অতঃপর দুইহাত দ্বারা মুখমন্ডল ও দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন । (বোখারী-হা/৩৩৮, মুসলিম-হা/৮৬৪, মিশকাত-হা/৪৯৩)  
তায়াম্মুমের বিষয়টি নিয়ে মুহাদ্দিসীনের মধ্যে কিছুটা মতপার্থক্য রয়েছে । তবে সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম যাকে মুত্তাফাকুন আলাইহ বলা হয় এ দুটি হাদীস গ্রন্থে উল্লেখিত হাদীস অনুসরন করাই শ্রেয় বলে অধিকাংশ হাদীস বিশারদগন মনে করেন ।
সফরকালীন কসর নামাজ আদায়  
সফরে থাকাকালে কতোদিন অবস্থান করলে মুসাফির হিসেবে গন্য হবে, এ সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদগনের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে । সফরকালে মহান আল্লাহ তায়ালা ফরজ নামাজ যেখানে চার রাকায়াত সেখানে দুই রাকায়াত আদায় করার সুযোগ করে দিয়েছেন । আর সুন্নত ও নফল নামাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, কেউ ইচ্ছা করলে সুন্নত ও নফল নামাজ আদায় করতে পারেন । তবে সুন্নত নামাজে কোন কসর নেই । হজ্জের সফরে কোন ব্যস্ততা থাকে না বিধায় যতোবেশী নামাজ আদায় করা যায় ততোই ভালো । মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে যে সুযোগ দিয়েছেন তা গ্রহন করার মধ্যেই সওয়াব নিহিত রয়েছে ।
সফরকালীন দু'ওয়াক্ত নামাজ একত্রকরণ
হজ্জের সময় আরাফাত ও মুজদালিফায় যুহর-আসর ও মাগরিব- এশা একত্রে আদায় করার আদেশ রয়েছে এবং এটা হজ্জের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত । কিন্তু অন্য সময় সফরে গেলে দুই ওয়াক্তের নামাজ একই সাথে আদায় করা যাবে কিনা, এ সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদগনের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে । কেউ বলেছেন, দুই ওয়াক্ত নামাজ একত্রে আদায় করা শুধু আরাফাত ও মুজদালিফায় অর্থাৎ হজ্জের সময় সীমাবদ্ধ । আবার কেউ বলেছেন, বিষয়টি কেবল হজ্জের সময় সীমাবদ্ধ নয়, অন্য সময়ে সফরে গেলেও সফরকারী ব্যক্তি যুহর-আসর ও মাগরিব-এশা একত্রে আদায় করতে পারেন এবং এটাই হাদীস সম্মত । ---(চলবে)
"শারঈ' মানদন্ডে
দোয়া-যিকির,হজ্জ ও উমরা"

শনিবার, ৬ জুন, ২০১৫

রোহিঙ্গাদের রক্তলাল ইতিহাস

***রোহিঙ্গা শব্দের উৎসঃ 
রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে একটি গল্প রয়েছে, সপ্তম শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজন উপকূলে আশ্রয় নিয়ে বলেন, আল্লাহর রহমে বেঁচে গেছি । আর এই রহম থেকেই এসেছে রোহিঙ্গা ।
রোহিঙ্গাদেরকে আবার ‘রুইঙ্গা’ ও বলা হয়ে থাকেঃ
১৭৯৯ সালে প্রকাশিত "বার্মা সাম্রাজ্য"তে ব্রিটিশ ফ্রাঞ্চিজ বুচানন-হ্যামিল্টন উল্লেখ করেন, "মুহাম্মদ (সঃ) - এর অনুসারীরা", যারা অনেকদিন ধরে আরাকানে বাস করছে, তাদেরকে "রুইঙ্গা" বা "আরাকানের অধিবাসী" বলা হয় ।
***রোহিঙ্গাঃ মিয়ানমারে এক ঘৃণিত নাম
জাতিসংঘের তথ্যমতে, রোহিঙ্গারা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী । মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ডের অনেকের কাছেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী 'কালা' নামে পরিচিত । বাঙালিদেরও তারা 'কালা' বলে । ভারতীয়দেরও একই পরিচিতি । এ পরিচয়ে প্রকাশ পায় সীমাহীন ঘৃণা ।
***আরাকানে ইসলামঃ 
রোহিঙ্গারা পশ্চিম মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের একটি উলেখযোগ্য মজলুম মুসলিম জনগোষ্ঠী ।
আরাকানের মুসলিম ঐতিহ্যের রয়েছে সুপ্রাচীন এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস । সর্বপ্রথম হজরত আবু ওয়াক্কাস ইবনে ওয়াইব (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় (৬১৭-৬২৭ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে) আরাকান অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে আসেন । ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রা.)-এর শাসনামলে আরাকানের শাসকদের সঙ্গে আরবীয় মুসলমানদের যোগাযোগের বিষয়টিও প্রমাণিত । তবে দশম ও একাদশ শতাব্দীতে আরব বণিক ও সুফি-সাধকদের ব্যাপক আগমনের ফলে আরাকান অঞ্চলে দ্রুত ইসলামের প্রচার হতে থাকে ।
***ইংরেজদের রোষানলে রোহিঙ্গাঃ 
১৬৬৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে চার হাজার বছর আরাকান ছিল একটি সার্বভৌম ও মুসলিম প্রধান দেশ । ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে আরাকান ব্রিটিশের অধীনে চলে যায় । আর এর পর থেকে শুরু হয় তাদের রক্তভেজা ইতিহাস । তবে মাসিক ইতিহাস অন্বেষা নামক একটি সাময়িকী তে বলা হয়েছে- ১৬৬৬ সালের কথা । এতে আরো বলা হয়েছে- ১৭৮৫ সাল থেকে ১৮২৫ সাল পর্যন্ত আরাকানে বার্মার শাসন ছিল । তার মানে ব্রিটিশ শাসনের আগেও রোহিঙ্গারা পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়েছিল ।

***ধোঁকাবাজির শিকারঃ 
ইংরেজরা স্বভাবগত ভাবে বরাবরই মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে । স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি পেয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আরাকানের মুসলমানরা ইংরেজদের পক্ষাবলম্বন করেছিল । কিন্তু ব্রিটিশরা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি । সেই যে শুরু হয়েছিল, রোহিঙ্গাদের রক্তভেজা ইতিহাস আজো রচিত হচ্ছে । বরং রচনার সে গতি আজ তীব্র থেকে তীব্রতর । চারদিক থেকে ধেয়ে এসেছে তাদের উপর আজ জুলুমের তুফান ।  আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে তাদের বুকফাটা কান্নায় । মানবতা লাথি খাচ্ছে আরাকানে । দেখবার,শুনবার কেউ নেই । শিশুদের চাপা কান্নায় কাঁপছে না মুসলমান, কাঁপছে না বিশ্ব বিবেক । তবে মজলুমের ফরিয়াদ বৃথা যায় না । হয়তো কোন একদিন এমন আসবে, এ রক্তের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জীবনের আকাশে হেসে উঠবে ভোরের সূর্য ।
আরাকানে রোহিঙ্গাদের ওপর ইতিহাসের বর্বর, অমানবিক ও রোমহর্ষক নির্যাতনের ঘটনা এখন ‘টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’। মানবতাবিরোধী এমন কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিবেক আজ স্তব্ধ ও হতবাক ! এ যেন আধুনিক জাহেলিয়াতের আরেক নমুনা । মুসলিম নর-নারী আর শিশু-কিশোরদের আর্তনাদে আল্লাহর আরশ কাঁপছে ! কিন্তু ইয়াজিদের মতো মন গলছে না এ সমাজের নব্য ফেরাউন আর নমরুদের উত্তরসূরিদের । কারণ একটাই—নির্যাতিত, বঞ্চিত আর অবহেলিত ওরা তো মানুষ নয়, ওরা মুসলমান ! এখানে জাতিসংঘ, বিশ্বমানবাধিকার সংস্থা আর বিশ্ব মোড়লদের বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়া ছাড়া যেন আর কিছুই করার নেই । অথচ রোহিঙ্গা আজ একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা । শাসকদের অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে মানুষ আজ সাগরে মরতে রাজী তবুও নিজ দেশে যেতে রাজি না ।

খ্রিস্টপূর্ব ২৬৬৬ অব্দ থেকে ১৭৮৪ অব্দ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আরাকান ছিল বাঙালি মুসলমানদের গড়া এক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এখানে মগ এবং মুসলমানের মধ্যে অতীত ইতিহাসে সম্প্রীতির কোনো অভাব ছিল না। ম্রোহং (রোহাং) শহর ছিল আরাকানের রাজধানী। মহানবী (সা.)-এর জীবিতকালেই আরবদের সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে আরব বণিকদের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলগুলোর বাণিজ্যিক যোগাযোগের মাধ্যমে আরবীয় দ্বীপগুলোতে মুসলমানরা আলাদা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। এ রাজ্যের শাসকের উপাধি ছিল ‘সুলতান’। আরাকান মূলত ইসলামী রাষ্ট্রের আদলে গড়ে ওঠা প্রাচীন ঐতিহ্যমণ্ডিত একটি শহর। কিন্তু আজ নিজ মাটিতেই মুসলমানরা পরাধীন ।
কথিত আছে, এ বংশের রাজা মহত ইং চন্দ্রের রাজত্বকালে (৭৮৮-৮১০) মুসলমানদের কয়েকটি বাণিজ্য বহর রামব্রী দ্বীপের তীরে এক সংঘর্ষে ভেঙে পড়ে । জাহাজের আরবীয় আরোহীরা তীরে এসে ভিড়লে রাজা তাদের উন্নততর আচরণে সন্তুষ্ট হয়ে আরাকানে বসতি স্থাপন করান । আরবীয় মুসলমানরা স্থানীয় রমণীদের বিয়ে করেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন । আরবীয় মুসলমানরা ভাসতে ভাসতে কূলে ভিড়লে পর রহম, রহম ধ্বনি তুলে স্থানীয় জনগণের সাহায্য কামনা করতে থাকে । বলাবাহুল্য রহম একটি আরবি শব্দ—যার অর্থ দয়া করা । কিন্তু জনগণ মনে করে, এরা রহম জাতীয় লোক । রহম শব্দই বিকৃত হয়ে রোয়াং হয়েছে বলে রোহিঙ্গারা মনে করে থাকেন । এভাবেই আরাকানের গোড়াপত্তন ।
বঙ্গদেশের করদরাজ্য হিসেবে আরাকানকে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সূচিত হয় এক মহাযুগের, কিন্তু অষ্টাদশ শতকে বার্মার অধীন একটি প্রদেশ হিসেবে শাসিত হয়ে আরাকানিদের যেমন লাভ করার কিছুই ছিল না, তেমনি আরাকানিদের মতো এমন এক জাতিকে শেখানোর মতো বর্মীদেরও কিছুই ছিল না । কারণ আরাকানি জাতি কয়েক শতাব্দী ধরে জ্ঞান-গরিমার উচ্চশিখরে আরোহণকারী মুসলিম সমাজের ঘনিষ্ঠ সংশ্রবে ছিল । এ সময় বর্মীরা ছিল বিচ্ছিন্ন ও পশ্চাত্পদ একটি জাতি । ভোদাপায়া আরাকান দখল করে এ স্বাধীন অবস্থার বিলুপ্তি ঘটান । অথচ ঘা-থানডির সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ছিল, ভোদাপায়া আরাকানের স্বাধীন অবস্থা অক্ষুণ্ন রাখবেন আর বিনিময়ে আরাকান বার্মার রাজাকে বার্ষিক কর প্রদান করবে—যেমনটি করেছিল ১৪৩০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের গৌড়ের সুলতান জালালউদ্দিন শাহ । যা হোক, ভোদাপায়া ১৭৮৪ সালে আরাকান দখল করে বার্মাকে একটি প্রাদেশিক রাজ্যে পরিণত করলেন এবং ঘা-থানডিকে নিয়োজিত করলেন প্রাদেশিক গভর্নর হিসেবে ।

ভোদাপায়ার আরাকানের ক্ষমতা দখলের মাত্র এক বছরের মধ্যেই ঘা-থানডির ওপর এসে যায় আরেক প্রবল অথনৈতিক আঘাত। ভোদাপায়া শ্যাম রাজ্য (বর্তমান থাইল্যান্ড) আক্রমণের জন্য চল্লিশ হাজার সৈন্য ও চল্লিশ হাজার মুদ্রা চেয়ে ঘা-থানডির ওপর প্রজ্ঞাপন জারি করলেন । প্রকৃতপক্ষে প্রকট দারিদ্র্যের সর্বনিম্ন অবস্থানে নিপতিত আরাকানের জনগণের পক্ষে এর শতাংশ ভাগ পূরণও সম্ভব ছিল না । চাপের মুখে ঘা-থানডির দাবির অর্ধেক কোনোভাবে পূরণে রাজি হলে ভোদাপায়া রাগান্বিত হয়ে ঘা-থানডির এক ছেলেকে হত্যা করেন। পুরো দাবি আদায় না হলে পরিবারের সবাইকে অনুরূপ হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেন ।
এতে ভীত হয়ে ঘা-থানডি কয়েক হাজার অনুচর নিয়ে পালিয়ে আশ্রয় নেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধিকৃত সীমান্তবর্তী কক্সবাজার জেলার গভীর পার্বত্য অঞ্চলে । আর এরই সঙ্গে শুরু হয় আরাকানিদের মরণপণ স্বাধীনতা সংগ্রাম । অদৃষ্টের পরিহাস—যার অনুপ্রেরণায় ভোদাপায়া আরাকান দখল করলেন, তারই নেতৃত্বে মাত্র এক বছরের মধ্যে শুরু হলো একটি স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস । মূলত দীর্ঘদিনের স্বাধীনতা হারিয়ে এবং আরাকানিদের ওপর বর্মী সৈন্যদের চরম নির্যাতন এবং জনগণের ওপর ভোদাপায়ার অতিরিক্ত কর আরোপ প্রভৃতিতে আরাকানের জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে । আরাকান থেকে লুণ্ঠিত মাল ও বিশাল মহামুনি মূর্তি দুর্গম পার্বত্য পথ দিয়ে বার্মার মান্দালয়ে স্থানান্তর করতে হাজার হাজার মগ-মুসলিম আরাকানিদের জোর করে নিয়োগ করা হয়। দুর্গম গিরিপথ দিয়ে এ স্থানান্তরের কাজ ম্রোহং থেকে মানাদলয় পর্যন্ত পথ আরাকানিদের লাশে ভরে গিয়েছিল । এখনও ম্রোহং আন গিরিপথ পর্যন্ত এলাকা জনবসতি বিরল ।

আজ রোহিঙ্গাদের জন্য যেন কোনো আইনকানুন নেই । আইন যেন আজ নীরবে নিভৃতে কাঁদে । কারণ মুসলমানদের জন্য আইন নয় ! আইন এখানে অকেজো, বিবেক এখানে ভোঁতা । মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব দৃশ্য আর মানুষের বোবা কান্না যেন মানব সভ্যতাকে ভাবিয়ে তুলছে ! প্রতিটি রোহিঙ্গা মুসলমানের কান্নার আওয়াজ আমাদের আধুনিক সভ্যতার গালে এক-একটি চপেটাঘাত করে বলছে—হে আধুনিক পৃথিবীর মানবসমাজ! তুমি মুসলমানদের জন্য বড়ই অমানবিক। হে সভ্যতা! তুমি এখনও মুসলমানদের জন্য অনেক বর্বর । অথচ এই পৃথিবীতে মানবিকতা, ইনসাফ আর মজলুমের অধিকার আমরাই নিশ্চিত করেছি । প্রশ্ন হচ্ছে, আরাকানের নির্যাতিত, নিপীড়িত আর বঞ্চিত মুসলমানদের জন্য বিশ্বের ঘুমন্ত বিবেক জাগবে কবে ? কবে ফিরে পাবে আরাকানের মুসলমানরা তাদের হারানো স্বাধীনতা ?
কিন্তু কতদিন পর ? একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন । আমাদের মুসলিমদের উপর কেন এত অত্যাচার কেন এত নির্যাতন তা একমাত্র আমরা মুসলিমরা একতা মাঝে নেই বলে ।
হে আল্লাহ আমাদের সবাইকে এক করে দাও । মায়ানমারের মুসলমান ভাই বোনেরা  আমাদের ক্ষমা কোরো । ভয়ংকর এই  বিপদের দিনেও তোমাদের পাশে আমরা থাকতে পারছি না । ইয়া আল্লাহ ! ‎মায়ানমারের মুসলিম ভাই ও বোনদের হেফাযত কর । _আমীন_
** সুত্রঃ উইকিপিডিয়া, উইকিপিডিয়া মুক্তবিশ্বকোষ, কালের কন্ঠ, দৈনিক সোনার বাংলাদেশ (ঢাকা থেকে প্রকাশিত)