রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৬

যে ভাষণ যুগ যুগ ধরে প্রেরণা যোগাবে : কাঠগড়ায় আল্লামা সাঈদীর সেই বিখ্যাত ভাষণ...


মাননীয় আদালত,

২০১১ সালের অক্টোবরের ৩ তারিখ এই আদালতের তদানিন্তন চেয়ারম্যান নিজামুল হক আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ পড়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমি দোষী না নির্দোষ? আপনি তখন এই আদালতের ৩ সদস্য বিশিষ্ট বিচারকদের একজন সদস্য ছিলেন। তিনি ন্যায় বিচারে ভ্রষ্ট পথ অনুসরণ করেছিলেন বিধায় একরাশ গ্লানি নিয়ে স্বেচ্ছায় সরে পড়তে হয়েছে। আজ সেই চেয়ারে আপনি সম্মানিত চেয়ারম্যান। এটাই আল্লাহর বিচার।

সেদিন তখনকার চেয়ারম্যান নিজামুল হকের প্রশ্নের জবাবে আমি যা বলেছিলাম, সেখান থেকেই আমার সামান্য কিছু বক্তব্য শুরু করছি। ন্যায় বিচারের স্বার্থে আপনাদের যা শোনা জরুরী বলে আমি মনে করি। নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে আমি বলেছিলাম-আমার বিরুদ্ধে আনীত ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং শতাব্দীর জঘন্য ও নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার। আল্লাহর কসম! আমার বিরুদ্ধে রচনা করা চার সহা¯্রাধিক পৃষ্ঠার প্রতিটি পাতার প্রতিটি লাইন, প্রতিটি শব্দ, প্রত্যেকটি বর্ণ মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে কোন এক দেলোয়ার শিকদারের করা অপরাধ সমূহ আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউশন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যার পাহাড় রচনা করেছেন।

আজ আমি আল্লাহর নামে শপথ নিয়ে আপনাদের সামনে বলতে চাই, সরকার ও তার রাষ্ট্র যন্ত্র কর্তৃক চিত্রিত ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের হত্যাকারী, লুন্ঠন, গণ হত্যাকারী, ধর্ষক, অগ্নি সংযোগকারী, দেলোয়ার শিকদার বা ‘দেলু’ বা দেইল্যা রাজাকার আমি নই। আমি ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রিয় জন্মভূমি এই বাংলাদেশের আপামর জনসাধারনের নিকট চিরচেনা পবিত্র কোরআনের একজন তাফসীরকারক, কোরআনের পথে মানুষকে আহ্বানকারী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।

যে আমি সেই যৌবন কাল থেকেই শান্তি ও মানবতার উৎকর্ষ সাধনে পবিত্র কুরআনের শ্বাশ্বত বানী প্রচার করার লক্ষ্যে নিজ জন্মভূমি থেকে শুরু করে বিশ্বের অর্ধশত দেশ গ্রেফতারের পূর্ব পর্যন্ত ভ্রমন করেছি, সেই আমি আজ ৭৩ বছর বয়সে জীবন সায়াহ্নে এসে সরকার ও সরকারী দলের দায়ের করা ‘ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত হানার’ হাস্যকর ও মিথ্যা মামলায় গত ২৯ জুন ২০১০ থেকে আজ পর্যন্ত কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে মানবেতর অবস্থায় দিনাতিপাত করছি। অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস !
আমার বিরুদ্ধে ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত হানার অভিযোগ উত্থাপন এবং তজ্জন্য আমাকে তড়িৎ গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার কাজটি করলো এমন এক সরকার, যারা আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস কথাটি দেশের সংবিধানে বহাল রাখাকে সহ্য করতে না পেরে অবলীলায় তা মুছে দিতে কুন্ঠাবোধ করেনি। যাহোক, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই ৪২ বছরের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে কোন বিষয়েই কোন মামলা ছিলো না। সামান্য একটি জিডিও ছিলো না। গণতন্ত্রের লেবাসধারী বর্তমান এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের বদান্যতায়, মহানুভবতায় মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে আজ আমি ১৭টি মামলার আসামী। সেই জুন ২০১০ থেকে অদ্যাবধি কথিত মানবতাবিরোধী ২০ টি অপরাধের অভিযোগসহ ১৭টি মামলা আমার বিরুদ্ধে দায়ের করে এবং বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে সরকার আমাকে তাদের এক রাজনৈতিক তামাশার পাত্রে পরিণত করেছে, যা আজ দেশবাসীর কাছে মেঘমুক্ত আকাশে দ্বিপ্রহরের সূর্যের মতই স্পষ্ট।
মাননীয় আদালত,


যে ২০টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আজ আপনাদের সম্মুখে আমি দন্ডায়মান, সেগুলো সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই সাজানো। ১৯৭১ সনে পিরোজপুর বা পাড়েরহাটে পাক বাহিনী যা ঘটিয়েছে, সেসব কাহিনী সৃজন করে চরম মিথ্যাবাদী ও প্রতারক এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তার সহযোগীরা নীতি নৈতিকতার মূলে পদাঘাত করে আমার নামটি জুড়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী, আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী, মৃত্যুর পরের আযাবে বিশ্বাসী, পরকাল ও জাহান্নামের কঠিন শাস্তিতে বিশ্বাসী কোন মুসলমানের পক্ষে এতো জঘন্য মিথ্যাচার আদৌ সম্ভব নয়। তদন্ত কর্মকর্তা এবং সহযোগিতরা তাদের সৃজিত অভিযোগগুলো প্রমানের জন্য কয়েকজন বিতর্কিত চরিত্র ভ্রষ্ট ও সরকারী সুবিধাভোগী দলীয় লোক ব্যতিত স্বাক্ষী প্রদানের জন্য কাউকেই হাজির করতে পারেননি।
এতদসত্ত্বেও প্রচন্ড ক্ষিপ্রতার সাথে এই ট্রাইব্যুনালের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিচার প্রক্রিয়ার সমাপ্তি টেনেছেন। তিনি আইন-কানুন, ন্যায় বিচারের শপথ, অভিযুক্ত হিসেবে আমার বক্তব্য প্রদানের প্রাপ্য অধিকার প্রদান কোন কিছুরই তোয়াক্কা করেননি বরং তিনি রায় ঘোষনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এরই মধ্যে ঘটে যায় মহান রাব্বুল আলামিনের হস্তক্ষেপের ঘটনা। আজ সেই একদা সমাপ্তকৃত বিতর্কিত মামলার পূন: সমাপ্তির দ্বিতীয় আয়োজন। কিন্তু আমি পূর্বের ন্যায় একই উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি মামলা যেনো-তেনো প্রকারে শেষ করার সেই একই ত্রস্ততা।
মাননীয় আদালত,


এই ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৃত বিবেচনায় আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত মামলার রায় প্রকাশ করে গেছেন। সাবেক চেয়ারম্যান মিডিয়ায় প্রকাশিত স্কাইপ সংলাপকে মেনে নিয়ে অন্যায় ও বে-আইনী ভাবে পরিচালিত বিচার কার্যের সকল দায়ভার বহন করে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে বিদায় হয়েছেন। ষড়যন্ত্র ও অন্যায়ভাবে বিচার কার্য্য পরিচালনার বিষয়টি তার স্কাইপি কথোপকথনে প্রকাশ পেয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যানের বক্তব্যে প্রচ্ছন্নভাবে উঠে এসেছে কিভাবে সরকারের চাপে পড়ে, সুপ্রীম কোর্টের জনৈক বিচারপতির প্রলোভনে পড়ে, তথাকথিত ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের ডিকটেশন অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করে এবং তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে প্রসিকিউশনের সাথে অবৈধ যোগসাজসে বিচার কার্য পরিচালনায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে, আদালতের ক্ষমতাকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে আমার পক্ষের স্বাক্ষীর অগ্রিম তালিকা জমা দিতে বাধ্য করে সেই তালিকা প্রসিকিউশন এবং তাদের মাধ্যমে সরকার, সরকারী দল ও স্থানীয় প্রশাসনকে সরবরাহ করার ব্যবস্থা গ্রহন করে স্বাক্ষীদের উপর চাপ সৃষ্টি ও ভয় ভীতি দেখিয়ে স্বাক্ষ্য প্রদানের জন্য আদালতে হাজির না হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টিসহ নানাবিধ অনিয়ম ও বে আইনী কর্মপন্থার মাধ্যমে সমগ্র বিচার কার্যটি কলুষিত করেছেন।
এছাড়া সাবেক চেয়ারম্যানের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে সেইফ হাউজ স্ক্যান্ডাল, আদালত প্রাঙ্গন থেকে আমার স্বাক্ষীকে ডিবি পুলিশ কর্তৃক অপহরন ও গুম করার স্ক্যান্ডাল, ১৫ জন স্বাক্ষীর অনুপস্থিতিতে তদন্ত কর্মকর্তার জবানে তাদের বক্তব্য গ্রহন করার স্ক্যান্ডাল এর মতো বিষয়গুলোও আমার মামলায় প্রভাব বিস্তার করে আছে। এতো সব ষড়যন্ত্র ও স্ক্যান্ডাল জর্জরিত প্রসিডিংসকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের মাধ্যমে মূলত: সাবেক চেয়ারম্যান নিজেই পরিত্যাক্ত ও পরিত্যাজ্য ঘোষণা করে দিয়ে গেছেন। সুতরাং সেই পরিত্যাজ্য বিষয়ের উপর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কাজ নির্ভর করা যেতে পারে কিভাবে !!!

মাননীয় আদালত, দেশবাসীর কাছে, বিশেষ করে আপনাদের কাছে আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্র এবং ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচিত হওয়ার পরেও এই মামলা চলে কিভাবে ? গত ২৩/০১/১৩ তারিখে ট্রাইবুনাল-২ এর চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসান শাহীন সাহেব বলেছেন, “এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। প্রধানমন্ত্রী চাইলে ট্রাইাব্যুনাল থাকবে, না চাইলে আমরা চলে যাবো।” তাহলে মাননীয় আদালত, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠিত ট্রাইব্যুনাল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বাধীনভাবে বিচার পরিচালনা করবে কিভাবে ? স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলছেন বিচারকে দ্রুততর করা হবে। বিচার তাহলে কে করছে? এই ট্রাইব্যুনালের তাহলে প্রয়োজন কি? স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অস্তিত্ব তাহলে রইলো কোথায়?



মাননীয় আদালত,

আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সমূহের ব্যাপারে সাবেক চেয়ারম্যানের মতামত বা রায় তার কথোপকথনেই প্রকাশিত হয়েছে। স্কাইপি সংলাপে তিনি স্বীকার করেছেন যে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহের সাথে আইনের খুব একটা সম্পর্ক নেই। আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত এই মামলাটি দেশী দরবারের মতোই। তার ভাষায়; “সাঈদীর কেইসটা ডিফারেন্ট। এই সাঈদীর কেইসটার লগে আইনের সম্পর্ক খুব বেশি না। এডা আমাদের দেশী দরবারের মতই।” ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যানের প্রকাশিত এই মতামত বা মন্তব্যের পর এই মামলা চলার নৈতিক অবস্থান কোথায় থাকে?

বিদায়ী চেয়ারম্যান আমার মামলাটি আদ্যপ্রান্ত পরিচালিত করে একে যে দেশী দরবারের সাথে তুলনা করেছেন তার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। দেশি এই দরবার তথা গ্রাম্য শালিসী অনুষ্ঠিত হয় গ্রামের ছোট খাটো ঝগড়া বিবাদ নিয়ে। খুন, ধর্ষণ, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগের মত গুরুতর অপরাধ নিয়ে শালিশ বা দরবার হয়না।


বিদায়ী চেয়ারম্যানের ভাষায় “সরকার গেছে পাগল হইয়্যা, তারা একটা রায় চায়”। চেয়ারম্যান সাহেব ঠিকই বুঝেছিলেন যে, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সরকার আমাকে ঘায়েল করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কতগুলো ঘটনা সাজিয়ে, জঘন্য ও ন্যাক্কারজনক কিছু অপবাদ দিয়ে আমার বিচারের নামে প্রহসনের আশ্রয় নিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ব্যপাওে বিশ্বাসযোগ্য কোন স্বাক্ষী নেই, আমার কোন সংশ্লিষ্টতাও নেই। সুতরাং ট্রাইাব্যুনাল গঠন করে বিচার বিচার খেলা কেনো, দরবার করে মিট মাট করলেই তো চলে। এটিই ছিলো প্রাক্তন চেয়ারম্যান এর রায়।

মাননীয় আদালত,

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এর পূর্বে দু’বার ক্ষমতাসীন ছিলো। তখন আমি যুদ্ধাপরাধী ছিলাম না, আমার বিরুদ্ধে কোন মামলাও হয়নি। একটি জিডিও হয়নি বাংলাদেশের কোথাও। আর তদন্ত কর্মকর্তা এই আদালতে বলেছেন ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পর আমি নাকি ৮৫ সাল পর্যন্ত পলাতক ছিলাম। তিনি আমাকে ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম বলে মিথ্যচার করেছে। ১৯৭৯ সালে আমি সাধারন সমর্থক হিসেবে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করি। এর পূর্বে আমি কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক ছিলাম না। ১৯৯০ সনের শুরু অবধি আমার রাজনৈতিক কোন পরিচয়ও ছিল না। ১৯৮৯ সালে আমি জামায়াতের মজলিসে শুরায় সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হই। এরপর জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য, নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও পরবর্তীতে তথাকথিত মানবতাবিরোধী এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে আপনার কাঠগড়ায় দাড়ানোর পূর্ব পর্যন্ত আমি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দ্বায়িত্ব পালন করছিলাম। রাজনীতিতে আমার তালিকাভূক্তি ১৯৭৯ সালে জামায়াতে ইসলামীর একজন সাধারন সদস্য হিসেবে। উদ্দেশ্য পবিত্র কুরআনের মর্মবানী ও আদর্শের প্রচারকে বৃহত্তর পরিসরে নিয়ে যাওয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহনের বাইরে আমার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক তৎপরতায় সময় ব্যয় একেবারেই অনুল্লেখযোগ্য। সংকোচনহীন ভাবে বলতে গেলে, রাজনীতির জটিল সমীকরনের বিষয়ে আমার অজ্ঞতা এবং সময়ের অভাবহেতু প্রচলিত রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার অবস্থান একজন এ্যামেচার রাজনীতিবিদের পর্যায়ে।


দেশবাসী স্বাক্ষী, রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার কখনো কোনকালেই তেমন কোন ভূমিকা ছিল না। বরাবরই আমার বিচরন ছিলো কোরআনের ময়দানে। জনগনকে কোরআনের দাওয়াত পৌঁছানোই ছিল আমার কাজ। আমার তাফসীর মাহফিলগুলোতে হাজারো লাখো মানুষ অংশগ্রহন করে। এইসব মাহফিল থেকে অসংখ্য অগনিত মানুষ সঠিক পথের দিশা পেয়েছে, নামাজি হয়েছে। এটাই কি আমার অপরাধ? দেশ বিদেশের লক্ষ কোটি মানুষ আমার উপর আস্থা রাখেন, আমাকে বিশ্বাস করেন, আমাকে ভালবাসেন। আমি সাঈদী লক্ষ কোটি মানুষের চোখের পানি মিশ্রিত দোয়া ও ভালবাসায় সিক্ত। এই ভালবাসাই কি অপরাধ? বিগত অর্ধ শতাব্দী ধরে আমি কোরআনের দাওয়াত বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছি, এটাই কি আমার অপরাধ? আমি কোরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহন করেছি, এটাই কি আমার অপরাধ? মাননীয় আদালত এটা যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে, এ অপরাধে অপরাধী হয়ে হাজার বার ফাঁসির মঞ্চে যেতে আমি রাজি আছি।
মাননীয় আদালত,


১৯৬০ সালে ছাত্র জীবন শেষ করার পর থেকেই এদেশের সর্বত্র আমি পবিত্র কুরআনের তাফসীর, সীরাত মাহফিল, ওয়াজ মাহফিল ও বিভিন্ন সেমিনার সিম্পোজিয়ামে বক্তব্য রেখে আসছি। মানুষকে সত্য ও সুন্দরের পথে, কল্যাণের পথে, হেদায়তের দিকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বিরামহীন সফর করে যুগের পর যুগ অতিবাহিত করেছি। আমার মাহফিল গুলোতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার জনতার উপচে পড়া উপস্থিতি এবং তাদের প্রান ঢালা আবেগ উচ্ছাসে অনুপ্রানিত হয়ে ৬০ এর দশক থেকেই পবিত্র কুরআন প্রচারকে আমার জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহন করে নিয়েছি। সেই থেকে এটিই আমার প্রধান পরিচয় যে, আমি মহাগ্রন্থ আল-কোরআন এর প্রচারক, সত্য দ্বীনের প্রচারক, মানুষকে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পথে, চির শান্তির মহাসড়কে যোগদানের জন্য একজন আহবানকারী।
আমার পবিত্র কুরআনের খেদমতের সাক্ষী ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের সবুজ শ্যামল, স্বাধীন-স্বার্বভৌম এই বাংলাদেশ। মূলত ১৯৭৪ থেকে আমার তাফসীর মাহফিল সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয়। প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে আমি তাফসীর মাহফিল করেছি দেশের বিভিন্ন শহরে। এর মধ্যে কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় গ্রেফতারের পূর্ব পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি তাফসীর মাহফিল এর কথা আমি উল্লেখ করছি: 

-চট্টগ্রাম প্যারেড গ্রাউন্ড ময়দানে প্রতি বছর ৫ দিন করে টানা ২৯ বছর। পবিত্র কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম এ মাহফিলে দু’বার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। 

-খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দান সহ শহরের বিভিন্ন মাঠে প্রতি বছর ২ দিন করে ৩৮ বছর

-সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে প্রতি বছর ৩ দিন করে টানা ৩৩ বছর

-রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসা মাঠে প্রতি বছর ৩ দিন করে এক টানা ৩৫ বছর

-বগুড়া শহরে প্রতি বছর ২ দিন করে একটানা ২৫ বছর

-ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে ময়দান, মতিঝিল হাই স্কুল মাঠ ও পল্টন ময়দানে প্রতি বছর ৩ দিন করে একটানা ৩৪ বছর

-ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত বায়তুল মোকররম মসজিদ প্রাঙ্গনে সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে টানা ২০ বছর। এসব মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতেন তদানিন্তন মহামান্য রাষ্ট্রপতি।

-এই হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গনে ৭০ দশকের মাঝামাঝি থেকে ধারাবাহিক ৪/৫ বছর মাহফিল করেছি, যেখানে সভাপতিত্ব করেছেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, অংশগ্রহণ করেছেন অন্যান্য বিচারক মন্ডলী 

-পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা স্টেডিয়াম, পাবনা পলিটেকনিক ইন: ময়দানসহ বিভিন্ন মাঠে প্রতি ৩ দিন করে টানা ৩৭ বছর

-কুমিল্লা পাবলিক লাইব্রেরী ময়দান ও ঈদগাহ ময়দানে প্রতি বছর ৩ দিন করে টানা ২৮ বছর


-বরিশাল স্টেডিয়াম ও পরেশ সাগর ময়দান, ঝালকাঠী স্টেডিয়াম ময়দান ও পিরোজপুর সরকারী হাইস্কুল ও স্টেডিয়াম ময়দানে প্রতি বছর ২ দিন করে ২৬ বছর
এতদ্ব্যতীত বাংলাদেশের এমন কোন জেলা বা উপজেলা নেই সেখানে আমার মাহফিল হয়নি। উল্লেখযোগ্য শহর গুলোর মাহফিলের কোন কোনটিতে উপস্থিত থাকতেন দেশের রাষ্ট্রপতি, সেনা প্রধান, বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, সংসদের স্পীকার, মন্ত্রী, এম.পি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ।

অথচ মাননীয় আদালত, প্রসিকিউশনের দাবী আমি নাকি মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর পালিয়ে ছিলাম। মিথ্যচারেরও তো একটা সীমা থাকে!! তদন্ত কর্মকর্তা যাই রিপোর্ট করেছে প্রসিকিউশন সেটাকেই বেদবাক্য মনে করে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ঈমান বিসর্জন দিয়ে সমস্ত মেধা প্রজ্ঞা খাটিয়ে মিথ্যাকে সত্য বানাবার জন্য প্রানান্ত হয়েছেন, আফসোস। নিশ্চয়ই এ মিথ্যাচারের জন্য ইহকালে এবং কঠিন হাশরের ময়দানে প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থাকে চড়া মূল্য দিতে হবে ইনশাআল্লাহ, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই।
মাননীয় আদালত, 


পরিশেষে বলতে চাই, আমি আমার সারা জীবন নাস্তিক্যবাদী ইসলাম বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে কোরআন ও হাদীসের আলোকে বক্তব্য দিয়ে এসেছি। আমার মাহফিলে জনতার ঢল নামে। আমার মাহফিলে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ কিচ্ছা-কাহিনী শুনতে আসেনা। কোরআনের দাওয়াত ও রাসুল (সাঃ) এর জীবনাদর্শ জানতে আসেন। আল্লাহর স্বার্বভৌমত্ব ও একত্ববাদ এবং কোরআনের বিপ্লবী দাওয়াত প্রচারে আমি অকুন্ঠ চিত্ত। আমার এ দেহে প্রান থাকা পর্যন্ত এটিই আমার দৃঢ় অবস্থান। এর কোন হেরফের হবার নয়। সরকার এটি অবগত বিধায় তাদের ইসলাম বিদ্বেষী মিশন বাস্তবায়নে আমাকে প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত কওে আমাকে বিতর্কিত ও জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন করার এবং নিশ্চিহ্ন করার জন্যই আমার বিরুদ্ধে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উত্থপন করেছে। ১৯৯৬-২০০১ সালে ক্ষমতায় থাকা কালে কিংবা ৭২ থেকে ৭৫ মেয়াদকালে ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ইসলাম বিদ্বেষী বর্তমান অবস্থান ছিলনা বিধায় আমাকে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে যুক্ত থাকার কারণ খুঁেজ পায়নি। কিন্তু এবার ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদীদের সাথে আওয়ামী লীগ জোট বেঁধে সরকার আমাকে মানবতা বিরোধী অপরাধের মহানায়ক হিসেবে আবিস্কার করেছে।

মাননীয় আদলত,


১৯৯০ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রতিবছর রমযান মাসে পবিত্র মক্কা মদীনায় থাকা আমার বার্ষিক রুটিনে পরিণত হয়েছিল। রুটিন মাফিক রমযান মাসে ২০০৯ সালে আমি ওমরাহ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলে বর্তমান সরকার আমাকে মক্কা শরীফ যেতে দিল না। হাইকোর্ট ও সুপ্রীমকোর্টের রায় পাওয়ার পরও আমাকে যেতে দেয়া হয়নি। আমাকে বিদেশ যেতে আটকে দেয়ার জন্য পবিত্র রমযান মাসে দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪২ বছর পর পিরোজপুরে প্রথম বারের মত আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধসহ ২টা খুনের মামলা দায়ের করা হলো। রমযান মাসে পবিত্র মক্কা মদীনা যেতে না পেরে আমি মানসিক যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে পড়েছিলাম।


আল্লাহ তায়ালার অফুরন্ত মেহেরবানীতে পবিত্র হজ্জের মাত্র দু’সপ্তাহ পূর্বে সৌদী বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজীজ আমাকে রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজ পালনের জন্য দাওয়াত পত্র ও যাতায়াতের টিকেট পাঠালেন। আমি দু’টা খুনের মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে হজ্জ পালনে মক্কা শরীফ পৌঁছলাম। হজ্জের দু’দিন পরে মীনা কিং প্যালেস বাদশাহ লাঞ্চের দাওয়াত দিলেন। বাদশাহর সাথে করমর্দন হলো, কুশল বিনিময় হলো, পাশাপাশি টেবিলে খানা খেলাম। আমার মনে কোন দূর্বলতা থাকলে আমার জন্য এটা খুবই সহজ ছিলো যে, বাদশাহকে বলে সৌদী আরবে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়া। কিন্তু মাননীয় আদালত, আমি তা করি নাই। হজ্জের সকল কাজ সমাধা করে দেশে ফিরে এসেছি, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো আমার দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন। মাননীয় বিচারপতিগণ কারো নির্দেশে বা চাপে পড়ে অথবা আদর্শিক শত্রু ভেবে কারো প্রতি অবিচার করবেন না। তাঁরা আল্লাহ তায়ালা এবং নিজের সুস্থ বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকেই সিদ্ধান্ত নেবেন। মাননীয় আদালত, আমি আমার সে বিশ্বাস হারাতে চাই না।

মাননীয় আদালত,


স্কাইপি ষড়যন্ত্র ধরা পড়ে যাওয়ার পরে এই বিচারের উপর দেশবাসীর মতো আমার আস্থাও শুন্যের কোঠায়। তথাপি পূর্নগঠিত এই ট্রাইব্যুনালের মাননীয় বিচারপতিগন শুধুমাত্র ও একমাত্র আল্লাহ তায়ালার নিকট দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহীতার অনুভূতি থেকে আপনারা আপনাদের সুবিবেচনা ও বিবেক দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই মামলা নিষ্পত্তি করবেন, এই বিষয়ে আমি আশাবাদি হতে চাই, আস্থাশীল হতে চাই। বর্তমান সরকার ও সরকারীদল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমাকে তাদের বিশাল প্রতিপক্ষ বানিয়ে তাদের সকল ক্ষমতার অপব্যবহার করে, যুদ্ধাপরাধের কল্পকাহিনী তৈরী করে কোন এক দেলোয়ার শিকদারের অপরাধের দায় আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে আমাকে আজ আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আমি একজন ব্যক্তি মাত্র। আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা এবং মিথ্যাচার একাকার হয়ে গিয়ে আমার জন্য যে ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির আবহ সৃষ্টি করেছে তা উপলদ্ধি করা কিংবা মোকাবিলা করার কোনো ক্ষমতাই আমার নেই।
মাননীয় আদালত, 


আমি আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বেপরোয়া যথেচ্ছাচার এবং তা বাস্তবায়নের এক আগ্রাসী মিথ্যাচারের শিকার। আপনাদের এই মহান আদালত রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমি ব্যক্তি সাঈদীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য তথা ন্যায় বিচার করার জন্য ওয়াদাবদ্ধ। আমি আপনাদের সেই শপথ ও দায়বদ্ধতার বিষয়ে আস্থাশীল থাকতে চাই।

সবশেষে আবারও রাজাধিরাজ, সম্রাটের সম্রাট, সকল বিচারপতির মহা বিচারপতি আকাশও জমীনের সার্বভৌমত্বের একচ্ছত্র অধিপতি, মহান আরশের মালিক, সৃষ্টিকূলের ¯্রষ্টা, সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নামে শপথ করে বলছি, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কোন মানবতা বিরোধী অপরাধ আমি করি নাই। আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চারিতার্থ করার জন্য এবং আমাকে তাদের আদর্শিক শত্রু মনে করে সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে আমার বিরুদ্ধে শতাব্দীর জঘন্য ও নিকৃষ্টতম মিথ্যা এ মামলা পরিচালনা করেছেন। তাদের বর্নিত জঘন্য মিথ্যাচার সত্য হলে আমার মমতাময়ী মায়ের ইন্তেকালের পরে তার জানাযা এবং এর ঠিক ৮ মাস পরেই আমার জৈষ্ঠ্য সন্তান রাফীক বিন সাঈদীর নামাজে জানাযায় ঢাকা, খুলনা ও পিরোজপুরে লক্ষ মানুষের সমাগম হতোনা, জানাযায় মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নিতেন না। আমার মা ও ছেলের লাশ গোপনে গভীর রাতে ৫/১০ জন লোক নিয়ে জানাযা করে দাফন করতে হতো। মাননীয় আদালত, আমার বড় ছেলের ইন্তেকালের খবর শুনে মহান মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার, এই মামলার সরকার পক্ষের কথিত স্বাক্ষী মেজর জিয়া উদ্দীন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর শাহজাহান ওমর বীর প্রতীক আমার শহীদবাগের বাসায় গিয়ে আমার পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিয়েছেন, ঘন্টাকাল আমার বাসায় অবস্থান করেছেন। সরকারের নীল নকশা অনুযায়ী মিথ্যাবাদী তদন্ত কর্মকর্তা চিত্রিত রাজাকার ও দূর্র্ধষ যুদ্ধাপরাধী যদি আমি হতাম, তাহলে উনাদের মত সম্মানীত মুক্তিযোদ্ধাদের আমার বাসায় যাওয়ার প্রশ্নই উঠতো না।
আমি আমার এলাকায় ৩টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছি। এতে স্বনামখ্যাত অন্তত: ২০/২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা আমাকে নির্বাচনে জেতাবার জন্য দিনরাত নি:স্বার্থ পরিশ্রম করেছেন, গোটা পিরোজপুর বাসী এর স্বাক্ষী। তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউশনের বক্তব্য সত্য হলে এসব বীর মুক্তিযোদ্ধা তাদের মান মর্যাদা ধূলায় ধুসরিত করে আমার সাথে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে নির্বাচনী পরিশ্রম করতেন? হিন্দু সম্প্রদায় দায়ের লোকেরা আমাকে ভোট দিতেন?

মাননীয় আদালত,

আমি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, হে আল্লাহ! আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা, তার সহযোগী প্রসিকিউশন এবং মিথ্যা স্বাক্ষ্যদাতাদের হেদায়েত করো আর হেদায়েত তাদের নসীবে না থাকলে তাদের সকলকে শারিরিক, মানসিক ও পারিবারিকভাবে সে রকম অশান্তির আগুনে দগ্ধিভুত করো যেমনটি আমাকে, আমার পরিবারকে এবং বিশ্বব্যাপি আমার অগনিত ভক্তবৃন্দকে মানসিক যন্ত্রনা দিয়েছে। আর জাহান্নাম করো তাদের চিরস্থায়ী ঠিকানা।


হে মহান রাব্বুল আলামীন! এই আদালতের বিচারক মন্ডলীকে তোমাকে ভয় করে, পরকালের কঠিন শাস্তিকে ভয় করে, সকল প্রকার চাপ এবং কারো নির্দেশ পালন বা কাউকে খুশী করার উর্ধ্বে উঠে শুধু তোমাকে ভয় করে এবং বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে ন্যায় বিচার করার তওফিক দান করো।
মাননীয় আদালত
আমি আমার সকল বিষয় সেই মহান আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি, যিনি আমার কর্ম বিধায়ক এবং তাঁকেই আমি আমার একমাত্র অভিভাবক হিসেবে গ্রহন করেছি। সাহায্যকারী হিসেবে মহান আরশের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-ই আমার জন্য যথেষ্ট।


মাননীয় আদালত, আমাকে কিছু কথা বলতে দেয়ায় আপনাদেরকে ধন্যবাদ।