রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

আমার মাথায় গালে হাত বুলানো সেই আদর ও দোয়া হাসিমাখা মুখ কখনো ভুলবো না

আমার মাথায় গালে হাত বুলানো সেই আদর ও দোয়া হাসিমাখা মুখ কখনো ভুলবো না
يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ارْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً فَادْخُلِي فِي عِبَادِي وَادْخُلِي جَنَّتِي
"হে প্রশান্ত আত্মা ! চলো তোমার রবের দিকে, এমন অবস্থায় যে তুমি ( নিজের শুভ পরিণতিতে ) সন্তুষ্ট ( এবং তোমরা রবের প্রিয়পাত্র ৷ শামিল হয়ে যাও আমার (নেক) বান্দাদের মধ্যে । এবং প্রবেশ করো আমার জান্নাতে ৷ সুরা ফজর: ২৭-৩০
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ
প্রত্যেক প্রানীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে । কার কতো বয়স কিংবা তিনি খুউব আল্লাহ ওয়ালা ছিলেন বা প্রচন্ড নাস্তিক, এইটা বিষয় নয় । কখন, কার, কিভাবে মৃত্যু হবে সেটা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা নির্ধারণ করেন । আল্লাহর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো সাধ্য কারো নেই । চির সত্য বিধানুযায়ী ১০৪ বছর বয়সে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমেদ্বীন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমীর, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)-এর সম্মানিত চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক ও উপমহাদেশের লাখো লাখো আলেমের সম্মানিত ওস্তাদ, শায়খুল ইসলাম, আল্লামা শাহ আহমদ শফী রাহিমাহুল্লাহ মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ ছাত্র আলেম উলামা, ভক্ত মুরীদানকে কাদিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে চির নিদ্রায় চলে গেলেন । انا لله وانا اليه راجعون
আজ শুধু স্মৃতিচারণ । একজন আলেম হারানো কতোটা বেদনার তা আলেমদের প্রতি যাদের হৃদয়ে মুহাব্বত আছে তারাই অনুভব করতে পারে । আর তিনি তো সাধারণ আলেম নন, তিনি ছিলেন রাহবার, বাংলাদেশী ইসলাম প্রিয় তাওহিদী জনতার মাথার উপর ছাতার মতো । তিনি ক্বওমী কিংবা আলিয়ার হোক ত্বালিবে ইলমের কাছে একজন আলেম শুধুই সম্মানের অতঃপর চুড়ান্ত সম্মানেরই হয়ে থাকে । আমাদের সকল ওস্তাদগণ আমাদের মাথার তাজ । একজন আলেম তিনি যে প্লাটফর্মেরই হোক না কেন -ওনারা সবাই সম্মানিত ।
আজ খুব মনে পড়ছে বীর চট্রলার কৃতী সন্তান, লাখো আলেমের উস্তাদ আল্লামা শফী হুজুরের সাথে প্রথম সাক্ষাতের দিনের কথা । খুব বেশীদিন আগের কথা নয়, স্মৃতিতে মনে হচ্ছে এইতো সেদিন কিন্তু কতো দ্রুতই দিন মাস বছর চলে গেছে । গত ২০১২ সালের মে মাসের শেষের দিকে -জমিয়াতুল মুফাসসিরীন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা কে এম আব্দুস সোবহান, ছারছিনা দরবার শরীফের ছোট পীর সাহেব মাওলানা শাহ আরীফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, মিরেরশরাই দরবার শরীফের পীর সাহেব মাওলানা আব্দুল মোমেন নাছেরী, মাওলানা মোশারফ হোসাইন, হাফেজ মোহিবুল্লাহ আযাদ আমরা ক'জন সুহৃদ ভাইবন্ধু হাটহাজারী মাদরাসার প্রাঙ্গনে পৌছুলাম । ২৬ মে শনিবার দুপুরে আমাদের রাহবার ছিলেন চট্রগ্রামের মুহিবুল্লাহ ভাই । যাবার আগে আমাদের মনে অনেক কিছু চলছিলো, যে ওনারা আমাদেরকে স্বাভাবিকভাবে নিবেন কি না, বা কে কি মনে করে, হুজুরের খাদেমরা কেমন ব্যবহার করে এসব আমরা ভাবছিলাম । সেই সময় ট্রাইব্যুনালে আব্বার মামলা চলছে তাই নানান রকম ভাবনা ভেবে আমরা কিছুটা আশংকায় ছিলাম, কিন্তু আমাদের সব ভুল ভেঙ্গে গেলো, বিশেষ করে ইয়াসীন, নুমান, এনামুল, মনসুর নামের হুজুরের খাদেমদের ব্যাবহার ও আপ্যায়ন সত্যিই আমাদের শংকা কাটিয়ে দিয়েছে । তারা পুরো মাদরাসা আমাদের ঘুরে দেখালো । দারসে হাদীসের সেই জান্নাতি ক্লাসরুমটিও দেখলাম । বেশীক্ষন অপেক্ষা করতে হয়নি, চায়ে চুমুক দিতে দিতেই আল্লামা শফী হুজুরের নুরানী চেহারা দেখা গেলো । সাক্ষাত রুমে প্রবেশ করে তিনিই প্রথম السلام عليكم ورحمة الله বলেই প্রশ্ন করলেনঃ সাঈদীর বেটা কোনজন ? যার যার মতো সবাই দাড়িয়ে সালামের উত্তর দিলো আমি সামনে এগিয়ে গেলাম, মুসাফা করে বললাম-আমি, কেমন আছেন হুজুর ? তিনি আলহামদুলিল্লাহ বলে জিজ্ঞাসা করলেনঃ মাওলানা কেমন আছেন ? আমি জানালাম সুস্থ আছেন, আলহামদুলিল্লাহ ।
বয়সের ভারে নুহ্য হওয়া কিন্তু পাহাড়ের মতো অটল ব্যক্তিত্বের সামনে দাড়িয়ে আছি । জ্ঞানের সমুদ্র । গত ৮০ বছর যিনি লাখো লাখো শিক্ষার্থীকে পবিত্র হাদীসের শিক্ষা দিয়েছেন । আমি খুব অসহায় বোধ করছিলাম কারন দুপুরে তাঁর বিশ্রামের সময় অথচ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে এসেছে শুনে আরামের বিছানা ছেড়ে উঠে এসেছিলেন । কস্ট দেবার জন্য ক্ষমা চেয়েছি জবাবে তিনি যে অমায়িক হাসি দিয়েছিলেন তা কোনদিন ভুলবার নয় । হাসির মাঝে অভয় ছিলো, ছিলো আশ্বাস এবং নির্ভরতা । আমার সঙ্গী সাথীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম । সেদিন সাহস করে অনেক কথা বলেছিলাম-জেনেও ছিলাম অনেক কিছু । বিদায় বেলা মাথায়-গালে হাত বুলিয়ে আদর করে দোয়া করে বলেছিলেনঃ "আল্লামা সাঈদী উদার মনের মানুষ । তিনি ক্বওমী আর আলিয়াকে আলাদা চোখে দেখতেন না । মাওলানার কিছু হবে না । তিনি আবারও কুরআনের ময়দানে ফিরে আসবেন, ইনশাআল্লাহ । আন্তরিক হাসিমাখা মুখে বিদায় দিলেন, বললেন "আবার এসো" ।

আবারও এলাম হুজুর কিন্তু আপনাকে দেখতে পেলাম না ! জানাজায় উপস্থিত হলাম ।
বাতিলের আতংক, শাহবাগ নাস্তিক্য বিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেলেন ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় । আমাকে ফোন করলেন মাওলানা আবুল কালাম আযাদ আজহারী, আবুল কালাম আজাদ কিশোরগঞ্জ তারা জানাজায় যেতে চায় । শেষ মেশ ঠিক হলো ডঃ আবুল কালাম আযাদ বাশার ভাইএর নেতৃত্বে আমরা
হাটহাজারী যাবো । কথা মতো রাত ১২টায় একটা গাড়ি নিয়ে রওনা হলাম । পৌঁছেছিলাম ভোরবেলায় ৷ তখনো শাইখুল ইসলামের মরদেহ হাটহাজারী পৌছেনি ৷
ঐতিহ্যবাহী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মাঠ মানুষে ভরপুর ।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র নামাজে জানাজা’য় কত মানুষের জমায়েত হয়েছে ?
এর কোন হিসাব কারও কাছে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না ।
ফজরের নামাজের পর হতে দুপুর দুইটা পর্যন্ত মানুষের যে স্রোত চারিদিক থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসা মুখী ছিল সেই স্রোত আবার ফিরে যেতে সময় লেগেছে রাত প্রায় বারোটা ।
শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রাহিমাহুল্লাহর জানাযায় যে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিলো, সেটা তো বলা বাহুল্য ৷ বাংলাদেশের প্রায় সকল প্রান্তের মানুষকে দেখা গেছে বাস, মাইক্রোবাস, জীপ, প্রাইভেট কার, মটর সাইকেল অর্থাৎ যে যেভাবে পেরেছে হাজির হয়েছে কালকের জানাজায় । সারাদেশ থেকে দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ যেভাবে শাইখুল ইসলামকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য হাটহাজারীতে একত্রিত হয়েছিল, তাতে ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় জানাযায় পরিণত হয়েছে ৷ হযরতের প্রতি ব্যক্তিগত মুহাব্বাত ও ভালোবাসার তাগিদ থেকেই জানাজায় অংশগ্রহণ করার অভিপ্রায়ে লাখো মানুষের সাথে আমিও ছুটে গেছি হাটহাজারী ৷
আমরা কিছুক্ষন মসজিদে আশ্রয় নিলাম । ৮ তলা মসজিদ তখন ভরে যাচ্ছে আর গরমের তীব্রতাও যেন বেড়েই চলছে । এরই মাঝে মাইকে তীক্ষ্ণ আওয়াজে নানান ঘোষণা এবং ফু । আমি ভাবছি এই উত্তাল স্রোতস্বীনি জানাজার শৃংঙ্খলা রক্ষা করার যেমন উপায় নাই তেমনি বিশ্রামের কোন উপায় ছিলো নাই । ওই সময় আল্লাহ যেন ফেরেস্তা পাঠিয়ে আমাদেরকে সাহায্য করলেন । কোত্থেকে তিনজন ছাত্র নাজমুল, সাকিব, ইমতিয়াজ এসে আমাদেরকে অন্য এক বিল্ডিংএ নিয়ে গেলেন । বিশ্রাম এবং গোসলের ব্যবস্থা করলেন এরপর সাড়ে ১২টার দিকে আমাদের সবার জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয় । আলহামদুলিল্লাহ ! তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই । সেখানে যোগ দেন দূর থেকে আগত এবং স্থানীয় আরও কয়েকজন । তাদের কাছ থেকে গত কয়েকদিন যাবত হাটহাজারী মাদ্রাসার চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও ঘটনাবলীর বিশদ বিবরণ শুনলাম । ভিন্নমতের কয়েকজন ছাত্রের ভর্তি বাতিলকে কেন্দ্র করে কিভাবে সামান্য থেকে এতবড় স্মতস্ফূর্ত আন্দোলনের সূচনা হলো তা শুনে খুব অবাক এবং আলোড়িত হলাম । গত ১৬ সেপ্টেম্বর আল্লামা আহমদ শফীর পদত্যাগ এবং তার ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কারসহ ৫ দফা দাবি নিয়ে দারুল উলুম হাটহাজারীর ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে । দুপুর থেকে এ আন্দোলন শুরু হয়, রাত্রে আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয় এবং পরদিন আল্লামা শফী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন । স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের কারণ দেখিয়ে সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য হাটহাজারী মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করে । ছাত্ররা সরকারের এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যায় । অত্যান্ত দুঃখজনক যে, আল্লামা আহমদ শফী পদত্যাগ করলে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করা হয় ।
পিতা বরকত আলী ও মমতাময়ী মা মেহেরুন্নেছার ঘর আলোকিত করে জন্মেছিলেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ারটিলা গ্রামে ১৯১৬ সালে । সাধারণ পরিবারের সন্তান, একজন নিষ্ঠাবান আলেম, জ্ঞানতাপস, ছাত্রবান্ধব শিক্ষক কিভাবে তিলে তিলে হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার এবং তারপর সারাদেশের মানুষের আলোচিত প্রত্যাশিত ইসলামী নেতৃত্বের প্রতিক হয়ে গেলেন তা সত্যিই অভাবনীয় ।
প্রত্যেক মানুষেরই উত্থান এবং আলোকময় অবদান ও তাঁকে নিয়ে সমলোচনা থাকে । আল্লামা আহমদ শফী’রও থাকবে । কিন্তু তাঁর সম্পর্কে আমরা আসলে কতটুকু জানি ? কেন তাঁর কাছে আমাদের এত প্রত্যাশা জমা হয়েছে ? না জানলে আমরা সত্যের উপর দাঁড়িয়ে নিজ অবস্থান নির্ধারণ করতে পারবো না । এরপর কী ?
কওমী ওলামা সমাজ কী ঐক্যবদ্ধ থাকবে নাকি বিভেদের নতুন ডাল পালা মেলবে ? অতীত আমাদের কী বলে । ইতিহাস বলে বিপ্লবের পর প্রতি বিপ্লব একই সূত্রে গাঁথা ।

মাওলানা শফী’র প্রস্থানের পর একটি ইতিহাসের সমাপ্তি হল । জানাযার নামাজের প্রস্তুতি চলছে । আমার আরো একটি ঐতিহাসিক জানাজায় উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হলো । যোহরের সালাত আদায়ের জন্য মসজিদের নিচ তলায় আবার ফিরে এলাম । সেইসময় হেলিকপ্টারের আওয়াজ শুনলাম পরে জেনেছি স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এসেছেন । ভেবেছিলাম অনেক এমপি মন্ত্রী থাকবেন । তা হয়নি তবে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সেতু মন্ত্রী এবং আরো অনেকে । উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, শহিদী কাফেলা ইসলামী ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারী জেনারেল সালাউদ্দীন আইয়ুবী, জননেতা শাহজাহান চৌধুরী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অসংখ্য নেতৃবৃন্দ ও আলেম উলামা উস্তাদ এবং লাখো ছাত্র ।
জানাযা নামাজ শেষে দেখা পেলাম তিনজন আল্লামা সাঈদী ভক্তের । সৌদি প্রবাসী মাহমুদ এবং সাতকানিয়ার রিয়াদ ও রেদওয়ান । তারা আমাদেরকে নিরাপত্তার সাথে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিলো । লাখো মানুষের ভিড়ের ধাক্কা ধাক্কি আমাদেরকে স্পর্শ করেনি । গাড়ির কাছে ফিরতে ফিরতে অনেক কিছু দেখলাম । বহুদিন পর পুরোনো লোকজন সহ অনেক আপন মানুষের সাথে সাক্ষাৎ হলো । স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে কত মানুষের সাথে যে হাত মিলাতে হয়েছে তার কোন ইয়াত্তা নেই । এই ভিড়ের মাঝে সেলফি তোলার আবদারও মেটাতে হয়েছে ।
ঘুমহীন ক্লান্ত শরীর কিন্তু সময়ের কোন ক্লান্তি নেই । আমি ভারাক্রান্ত মনে ঢাকায় ফিরেছি, দোয়া করছি ।
দয়াময় মায়াময় আল্লাহ তা'য়ালা আহমাদ শফি হুজুরের কবরকে জান্নাতের নূর দিয়ে আলোকিত করুন । প্রশান্তির ঘুম পাড়িয়ে রাখুন বিচার দিবস পর্যন্ত, চুড়ান্ত দিনে আরশের ছায়ায় স্থান দিন । হুজুরের নসিহাহ ও একান্ত দোয়া গুলো আমাদের জীবনে বরকতময় করে দিন এটিই দোয়া করছি বার বার ।

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، وَعَافِهِ، وَاعْفُ عَنْهُ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ، وَأَبْدِلْهُ دَاراً خَيْراً مِنْ دَارِهِ، وَأَهْلاً خَيْراً مِنْ أَهْلِهِ، وَزَوْجَاً خَيْراً مِنْ زَوْجِهِ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ، وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ [وَعَذَابِ النَّارِ]
ইয়া আল্লাহ ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, তাকে দয়া করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন, তাকে মাফ করে দিন, তার মেহমানদারীকে মর্যাদাপূর্ণ করুন, তার প্রবেশস্থান কবরকে প্রশস্ত করে দিন । আর আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিলা দিয়ে, আপনি তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করুন যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিষ্কার করেছেন । আর তাকে তার ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর, তার পরিবারের বদলে উত্তম পরিবার ও তার জোড়ের (স্ত্রী/স্বামীর) চেয়ে উত্তম জোড় প্রদান করুন । আর আপনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং তাকে কবরের আযাব [ও জাহান্নামের আযাব] থেকে রক্ষা করুন । আমিন ইয়া রব্বাল আলামীন ।
মুসলিম ২/৬৬৩, নং ৯৬৩।




রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০

হতাশ হবেন না

হতাশাগ্রস্থদের জন্য.....!
স্যরি, এরপরও আমি বিশ্বাস করি, ডিপ্রেশন বলে কিছু নাই । সবটাই আমার আপনার মনের শয়তানি । আমরা যারা ডিপ্রেশনে ভুগি, প্রত্যেকেই শয়তানের পূজা করি । ডিপ্রেশনের যেসব গাল-গল্প আপনারা শোনান, সেসবেও আমি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করি না । আমাদের জীবন ব্যবস্থায় বিষন্ন হওয়া অবাঞ্ছিত ।
উম্মুল মু'মিনীন খাদিজা্তু কুবরা رضي الله عنه  খুব ধনী ঘরের মেয়ে ছিলেন । বিলাসিতার মধ্যেই বড় হওয়াটাই স্বাভাবিক ।
নবিজী صلى الله عليه وسلم এর ইসলাম প্রচারের কারণে অন্যান্য গোত্র যখন কুরাইশদের অবরোধ দিলো, তখন আল্লাহর রাসূল ﷺ আর উম্মুল মু'মিনীন খাদিজা্তু কুবরা رضي الله عنه গোত্রের শিশুদের আড়াই বছর তীব্র কষ্টে থাকতে হয়েছিলো ।
এমনকী খিদের তাড়নায় গাছের পাতা পর্যন্ত খেয়েছিলেন ।
এরপরও আপনি আমাকে আপনার ডিপ্রেশনের গল্প শোনান ?
হযরত বিলাল رضي الله عنه ছিলেন হাবশী ক্রীতদাস ।
ইসলাম কবুলের অপরাধে তাকে মরুভূমির রোদে ফেলে রাখা হতো, তার গায়ের চর্বি গলে যেতো ।
তারপরও তার মুখে লেগে থাকতো প্রশান্তি, রোদের তেজ তাঁর কালিমার তেজের কাছে পরাজিত হতো ।
এরপরও আপনি আমাকে আপনার কোন ডিপ্রেশনের গল্প শোনাবেন ?
ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা তাঁর জীবনে আট বছর জেল খেটেছেন । জেলেই মরেছেন ।
অথচ তিনি কী বলেছিলেন, জানেন ? বলেছিলেন, দুনিয়াতেও একটা জান্নাত আছে, আমি আমার হৃদয়ে সে জান্নাতের খোঁজ পেয়েছি । এরপরও আপনি আপনার ডিপ্রেশনের গল্প শোনাবেন ?
গান শোনা, মুভি দেখা, মোটিভেশনাল বই পড়া বা মানুষের সাথে আড্ডা দিয়েই যদি ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি মিলতো, তবে লিনকিন পার্কের শিল্পী আত্মহত্যা করলেন কেন ? কিংবা সুশান্ত শিংই বা সুইসাইড করলেন কেন ? মোটিভেশন গুরু ডেল কার্নেগি আত্মহত্যা করেছিলেন কেন ?
এইসব হাস্যকর চিন্তাভাবনা এখনও কীভাবে করেন আপনারা ? এত কিছু দেখার পরেও ?
আল্লাহ্ তাআলা, ইসলাম, ইমান আর ডিপ্রেশন এক অন্তরে একসঙ্গে থাকতে পারে না । যদি আপনার মনে বিন্দুমাত্র ডিপ্রেশন থাকে, তার মানে আপনার হৃদয়ে আল্লাহ্ নাই, বরং ওখানে শয়তান বাসা বেঁধেছে ।
যারা ডিপ্রেশনে পড়ে বা আত্মহত্যা করে, মোটা দাগে দেখবেন, এরা অজ্ঞেয়বাদী নাহয় অবিশ্বাসী । কোনো মুসলিম যদি ডিপ্রেশনের স্বীকার হন, তাহলে আপনার ইমান নিয়ে ভেবে দেখার সময় এসেছে ।
এবার অনেকেই তেড়ে এসে বলবেন, আমার পরিস্থিতি আপনি বুঝবেন না, আমার ফ্যামিলি প্রবলেম, মানি প্রবলেম, স্বামী প্রবলেম.....আরে ভাই থামেন তো !
কোন পরিস্থিতির গল্প শোনাবেন আপনি ? বউ ভালো না ? হযরত লূত عليه السلام এর স্ত্রীও ভালো ছিলো না আবার হযরত আছিয়া عليه السلام এর স্বামী ছিলেন কে জানেন ? ফেরাউন ।
ফেরাউনকে ঈশ্বর না মানার অপরাধে তাঁকে টুকরো করে কেটে গরম তেলের ডোবানো হয়েছিলো ।
আরও শুনবেন ? চেষ্টা করেও কিছু হচ্ছে না, তাই ডিপ্রেশন ?
হযরত নুহ عليه السلام প্রায় হাজার বছর দাওয়াত দিয়ে আশি জনকে দাওয়াত কবুল করাতে পেরেছিলেন।
আপনজন কষ্ট দিয়েছে ? অপবাদ দিয়েছে ?
হযরত ইউসুফ عليه السلامএর ভাইয়েরা তাকে কুয়ার মধ্যে ফেলে দিয়ে চলে গেলো । জুলেখার সাথে ব্যভিচার না করায় উল্টো অপবাদ দিয়ে সাত বছরের জেল দেওয়া হলো !
এরপরও আপনি আমাকে কোন পরিস্থিতির গল্প শোনাবেন ? আমার পরিবারের নির্যাতন নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরবো ?
২০১০ সালের ২৯ জুন আমার পরম শ্রদ্ধেয় আব্বা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আসরের নামেজ পর বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় । কুরআনের মুফাসসীর বয়োবৃদ্ধ এই আলেমকে টানা ৪২ দিন রিমান্ডে রাখে । এরপর শুরু করে স্কাইপ কেলেংকারীর ট্রাইব্যনালে প্রতিদিন আনা-নেওয়া এবং এই জেল থেকে সেই জেল । আজ মুন্সিগঞ্জ জেল মাস খানিক পর গাজিপুর জেলখানা । এরই ভিতর হাজিরা । রাস্তার জ্যাম এবং কাঠফাটা রোদ্দুরের গরম সহ্য করে যাতায়াত ।
২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর মাগরিব নামাজ পড়ার পরে সুরা ইয়াসীন শুনতে শুনতে "আল্লামা সাঈদীর মমতাময়ী মা" আমাদের শ্রদ্ধেয় দাদী পুত্রশোকে ইন্তকাল করলেন । পরেরদিন আসরে নামাজে জানাজায় আব্বাকে ৬ ঘন্টার প্যরোলে মুক্তি দিলেও জানাযার মাঠ থেকেই তাকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয় । আবার ৮ মাস যেতে না যেতেই ১৩ জুন ২০১২ আল্লামা সাঈদীর কলিজার টুকরা বড় সন্তান আমাদের বড় ভাই মাওলানা রাফীক বিন সাঈদী ট্রাইব্যুনালে শুনানী চলাকালিন সময়ে হৃদযন্ত্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন । তাঁর ইন্তেকালের পর পরিবারের কারো সাথেই দেখা কিংবা এতীম সন্তানদের একটু সান্তনা দেবার সুযোগ তাকে দেয়া হয়নি । শোকাহত আব্বা হার্ট এটাক করলে সন্ধ্যায় ইবরাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং আল্লামা সাঈদীর হার্টে দুইটা রিং বসানো হয় ।
আল্লামা সাঈদীর ভগ্নিপতি আমাদের ফুপা মৌলভী আবু সালেহ ইন্তকাল করেন ১০ মে ২০১৮ । আমার ছোট চাচা মীম হুমায়ুন কবীর সাঈদী, সুস্থ সবল একজন সুন্দর মনের মানুষ । তিনিও বড় ভাই আল্লামা সাঈদীর উপর সরকারের নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ১৮ জুন ২০১৮ । আপন ভাইএর মৃত্যুতে প্যারোলে মুক্তি পেতে আইনী কোন বাধা নেই তবুও আল্লামা সাঈদীকে জানাজায় শরিক হতে দেয়া হয়নি । আপনারা সবাই জানেন, এইতো কয়দিন আগে
আল্লামা সাঈদীর বড় পুত্রবধু আমাদের বড় ভাবী অর্থাৎ মরহুম মাওলানা রাফীক বিন সাঈদীর সহধর্মিণী সাইয়েদা সুমাইয়া বুলবুল সাঈদী গত ২৪ আগস্ট ২০২০ ইন্তেকাল করেন । করোনার এই মহামারীতে কতো বন্ধি মুক্তি পেলো অথচ বয়োবৃদ্ধ আলেমেদ্বীন কুরআনের পাখি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আজও অন্ধকার কারাগারে বন্ধী ।
ঈমানের লম্বা পরীক্ষা চলছে । আমাকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে বিনা অপরাধে অনেকগুলি মামলা দিলো এবং ৭ মাস জেল খাটলাম । আমার স্নেহের ছোট ভাই মাসুদ সাঈদী জিয়ানগর উপজেলা চেয়ারম্যান দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নাশকতার মামলা দিয়ে তাকেও জেলে পাঠালো । এখানেই শেষ নয়- ২০১২ সাল থেকে আমার সকল ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ করে দেয়া হয় ।
কর্মক্ষম একজন মানুষকে বেকার করে দেয়া হলো । আজ ৮ বছর কোন ব্যবসা করতে পারছি না । আয় রোজগার বিহিন আছি ।
খুব বেশি বলে ফেলেছি ? আচ্ছা আমি চুপ করি । চলুন দেখি কুরআন কী বলছে-
হযরত ইবরাহীম عليه السلام যখন বার্ধক্যে উপনীত, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একদল ফেরেশতা এসে তখন তাঁকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ শোনাল । বিস্ময়ভরা কণ্ঠে হযরত ইবরাহীম عليه السلام জিজ্ঞেস করলেন- আমাকে তো বার্ধক্য পেয়ে বসেছে, এরপরও তোমরা আমাকে এ সুসংবাদ দিচ্ছ ?! কীসের ভিত্তিতে তোমরা এ সুসংবাদ দিচ্ছ ? ফেরেশতারা বলল, আমরা তো সত্য কথাই বলছি । আপনাকে সত্য সুসংবাদই দিচ্ছি । বার্ধক্য আপনাকে স্পর্শ করেছে করুক, এ বৃদ্ধ বয়সেই আপনার সন্তান হবে । আপনি নিরাশদের দলে যাবেন না । হযরত ইবরাহীম عليه السلام তাদের কথার জবাবে বললেন, পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে আপন প্রতিপালকের রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে ?
قَالُوا لَا تَوْجَلْ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ
قَالَ أَبَشَّرْتُمُونِي عَلَىٰ أَن مَّسَّنِيَ الْكِبَرُ فَبِمَ تُبَشِّرُونَ
قَالُوا بَشَّرْنَاكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُن مِّنَ الْقَانِطِينَ
قَالَ وَمَن يَقْنَطُ مِن رَّحْمَةِ رَبِّهِ إِلَّا الضَّالُّونَ (সূরা হিজর, ৫৩-৫৬)
যারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় তাদেরকে বলা হলো পথভ্রষ্ট ! এরপরও আপনি আমাকে ডিপ্রেশনের গল্প শোনাবেন ?
দাঁড়ান, দাঁড়ান, আরেকটা গল্প শুনে যান-
হযরত ইয়াকুব عليه السلام এর সর্বাধিক প্রিয় সন্তান ছিলেন হযরত ইউসুফ عليه السلام । কিন্তু তাঁর ভাইয়েরা বাবার এই আদরকে সহজে মেনে নিতে পারেনি, তাই কৌশলে তাঁকে একদিন বাবার কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে কূপে ফেলে দিল ।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার অসীম কুদরতে কূপ থেকে উঠে এসে একদিন তিনি মিশরের ধনভান্ডারের দায়িত্বশীল হলেন । আর যে ভাইয়েরা তাঁকে নিয়ে চক্রান্ত করেছিল, দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে তারা খাবার আনতে হাজির হলো তাঁর কাছে । এরপর এক কৌশলে তিনি তাঁর সহোদর বিনইয়ামীনকে নিজের সঙ্গে রেখে দিলেন ।
দুই ছেলে হারিয়ে বাবা হযরত ইয়াকুব عليه السلام অন্য ছেলেদের বললেন, (তরজমা) ‘হে আমার ছেলেরা ! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করো । তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না । নিশ্চিত জেনো, আল্লাহর রহমত থেকে তো কাফের ছাড়া অন্য কেউ নিরাশ হতে পারে না ।’
يَا بَنِيَّ اذْهَبُوا فَتَحَسَّسُوا مِن يُوسُفَ وَأَخِيهِ وَلَا تَيْأَسُوا مِن رَّوْحِ اللَّهِ ۖ إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِن رَّوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ
-সূরা ইউসুফঃ ৮৭
শেষ লাইনটা আবার পড়েন তো !
শুধু তাই না আল্লাহর রহমত থেকে ডিপ্রেসড হয়ে যাওয়া কবিরা গুনাহ।
এই নিন হাদিস-
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ رضي الله عنه  আল্লাহর রাসূল ﷺ তাকে বলেছেন, ‘হাবরু হাযিহিল উম্মাহ’-এই উম্মতের বিদ্বান ব্যক্তি । তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে র্শিক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া ।
(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৯৭০১)
গান বাজনা বা মুভি, বই আপনাকে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি দিতে পারবে না । ডিপ্রেশনের একমাত্র চিকিৎসা হলো আল্লাহর দিকে ফেরত আসা । আপনার শয়তান যখন আপনাকে বলছে তোর অনেক কষ্ট, তোর চেয়ে কষ্টে কেউ নাই, তখন আল্লাহ্ তাআলা বলছেনঃ- فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে । إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে [সূরা আলাম নাশরাহঃ ৫-৬]
শেষকথা:
প্রিয় অভিনেতা সুশান্ত শিং রাজপুত সুইসাইড করেছেন । অথচ উনার ছিচোড়ে মুভিটা ছিলো মোটিভেশনাল, সুইসাইড বিরোধি একটা মুভি । মুভি তাঁকে ডিপ্রেশন থেকে ফেরাতে পারলো না । লাস্ট ছয়মাস উনি চিকিৎসাও নিচ্ছিলেন, লাভ হলো না । শরীরের রোগের চিকিৎসা আছে, মনে রোগের ভ্যাকসিন চিকিৎসা নাই ।
লিনকিন পার্ক । যে ব্যান্ড এর গান শুনে আমাদের রাত্রি ভোর হয়, প্রবল উৎসাহ পাই, অনেকে যার গানে বেঁচে থাকার উনাদান খুজেন, সেই ব্যান্ড এর নামকরা শিল্পী নিজের গানে নিজের বাঁচার উপাদান খুঁজে পেলেন না । শেষপর্যন্ত আত্মহত্যা করলেন ।
রবিন উইলিয়ামসন ।
অন্যতম সেরা কমেডিয়ান । পৃথিবীর নানান প্রান্তের মানুষকে হাসানো মানুষটির বোকা হাসির আড়ালে কী ব্যথা লুকিয়ে ছিলো, কেউ জানলো না । নিজেকে শেষ করে দিলেন । তাহলে সমাধান কী ? الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে । সুরা রাদ:২৮
আল্লাহ্ তাআলার দিকে ফিরে আসুন । কুরআনের দিকে ফিরে আসুন । সুন্নাহর দিকে ফিরে আসুন ।
যে অন্তরে রাহমানুর রাহীমের ভালোবাসা থাকে, যে হৃদয়ে আল্লাহ্ থাকেন, সে হৃদয়ে বিজ্ঞানের ডিপ্রেশন থাকতে পারে না ।
কোনোভাবেই না ।


বারাক ওবামা যখন প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর নেন তখন তার বয়স ৫৫ বছর । অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তখন তার বয়স ৬৯ বছর । ঢাকায় যখন সকাল ৬ টা বাজে, লন্ডনে তখন রাত ১২ টা । সময়ের হিসেবে ঢাকার থেকে লন্ডন ছয় ঘণ্টা পিছিয়ে, এতে কিন্তু প্রমাণ হয় না যে, লন্ডন ঢাকার থেকে শিক্ষা দিক্ষা উন্নয়নে পিছিয়ে আছে বা তাদের সাথে আমাদের কোন তুলনা চলে ।
সু-শিক্ষিত মানে সমাজের উচ্চবর্গের চিত্র ফুটে ওঠে । কু-শিক্ষিত মানে যত অপকর্মের চাবিকাঠি ।
পৃথিবীর সবকিছু আপন গতিতে এবং নিজ সময় অনুযায়ী চলে । কেউ গ্রাজুয়েশন শেষ করে ২২ বছর বয়সে, কিন্তু চাকরি পেতে আরো ৫ বছর লেগে যায় । আবার কেউ ২৭ বছরে গ্রাজুয়েশন শেষ করে পরের দিনই চাকরি পেয়ে যান !
অনেকে ২৫ বছর বয়সে কোম্পানির CEO হয়ে,মারা যান ৫০ বছর বয়সে । আবার অনেকে ৫০ বছর বয়সে CEO হয়ে, মারা যান ৯০ বছরে । কেউ ৩৩ বয়সে এখনও সিঙ্গেল, আবার কেউ ২২ বছর বয়সে বিয়ে করে সন্তান জন্ম দিয়েছেন !
মনে হতেই পারে, পরিচিতদের মধ্যে আপনার থেকে ,কেউ অনেক এগিয়ে আছেন, আবার কেউ আছেন অনেক পিছিয়ে । কিন্তু আপনার ধারনা ভুল, প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ সময়, অবস্থান এবং গতিতে আছেন । আগে থাকাদের হিংসা না করে, পিছিয়ে থাকাদের অবহেলা না করে, সব সময় শান্ত থাকুন । আপনি এগিয়েও নেই, পিছিয়েও নেই ! আপনার পথ আপনার, অন্যের পথ অন্যের । শুধু সময়কে গুরুত্ব দিয়ে পরিশ্রম করে যান । আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেস্টাকে অব্যাহত রাখুন । বাকিটা
সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিন ।
আরব বিশ্বের অত্যন্ত জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার, সুবক্তা ড. শায়খ আইদ আল কারনি (হাফিযাহুল্লাহ) তার এক বক্তৃতায় বলেন, আমাকে যদি পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতালব্ধ উপদেশ করতে বলা হয় তাহলে আমি চারটি বাক্য বলবো ।
আরো পঞ্চাশ বছর পর যদি আবারো আমার কাছে উপদেশ চাওয়া হয় তাহলে আমি এই চারটি বাক্যই বলবো ।
এই বাক্যগুলো দিয়ে তিনি যা বুঝিয়েছেন_
#লা_তাহযান لَا تَحْزَنُ
অতিত নিয়ে কখনো হতাশ হবেন না ।
অতিত কে দাফন করে ফেলতে হবে চিরতরে । ডিলিট করে ফেলতে হবে মেমোরি থেকে ।
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
যদি তোমরা ঈমানদার (মু’মিন) হয়ে থাক তবে তোমরা (তোমাদের শক্ৰদের বিরুদ্ধে) দুর্বল হয়ো না এবং দুশ্চিন্তাও করো না ।” সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৩৯
#লা_তাখাফ
ভবিষ্যৎ নিয়ে কখনো দুশ্চিন্তা করবেননা । তা ন্যস্ত করে দিতে হবে মহান মালিকের উপর ।
তাওয়াক্কুল করে নিতে হবে আরো সুদৃঢ়, আরো মজবুত । ﴿وَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱلۡحَيِّ ٱلَّذِي لَا يَمُوتُ﴾ [الفرقان
আর তুমি ভরসা কর এমন চিরঞ্জীব সত্তার ওপর যিনি মরবেন না । সূরা আল ফুরকান: ৫৮
#লা_তাগদাব
জীবনে চলার পথে বিভিন্ন সময় অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক বিষয়ের সম্মুখিন হতে হবে আপনাকে, কখনো রাগ করবেন না ।
#লা_তাসখাত
আল্লাহর কোনো ফয়সালার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেননা কখনো । মাথা পেতে সন্তষ্টচিত্তে মেনে নেয়ার মধ্যেই রয়েছে সফলতা ।
আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন, امين يارب العالمين

সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০

নিজের খেয়াল ও যত্ন নিও প্রিয়

প্রত্যেক প্রানীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে


كُلُّ نَفْسٍ ذَآىِٕقَةُ الْمَوْتِপ্রত্যেক মানুষই মরনশীল । আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা, প্রতিটি জীবনকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে । হাশরের ময়দানে একত্রিত করা ও বিচার শুরু হওয়ার আগে কবরেই মানুষের সংক্ষিপ্ত হিসাব তথা পরীক্ষা শুরু হবে ।

كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۖ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ۗ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ  প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়(সূরা আল ইমরান, আয়াত: ১৮৫)كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَنَبْلُوكُم بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً ۖ وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ  প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে । আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। -(সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩৫)أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ ۗ وَإِن تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَقُولُوا هَٰذِهِ مِنْ عِندِ اللَّهِ ۖ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُولُوا هَٰذِهِ مِنْ عِندِكَ ۚ قُلْ كُلٌّ مِّنْ عِندِ اللَّهِ ۖ فَمَالِ هَٰؤُلَاءِ الْقَوْمِ لَا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثًاতোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই । যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও । বস্তুতঃ তাদের কোন কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোন অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে, বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোন কথা বুঝতে চেস্টা করে না (সূরা আন নিসা, আয়াত: ৭৮)يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ كَفَرُوا وَقَالُوا لِإِخْوَانِهِمْ إِذَا ضَرَبُوا فِي الْأَرْضِ أَوْ كَانُوا غُزًّى لَّوْ كَانُوا عِندَنَا مَا مَاتُوا وَمَا قُتِلُوا لِيَجْعَلَ اللَّهُ ذَٰلِكَ حَسْرَةً فِي قُلُوبِهِمْ ۗ وَاللَّهُ يُحْيِي وَيُمِيتُ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ  হে ঈমাণদারগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা কাফের হয়েছে এবং নিজেদের ভাই বন্ধুরা যখন কোন অভিযানে বের হয় কিংবা জেহাদে যায়, তখন তাদের সম্পর্কে বলে, তারা যদি আমাদের সাথে থাকতো, তাহলে মরতোও না আহতও হতো না। যাতে তারা এ ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মনে অনুতাপ সৃষ্টি করতে পারে। অথচ আল্লাহই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। তোমাদের সমস্ত কাজই, তোমরা যা কিছুই কর না কেন, আল্লাহ সবকিছুৃই দেখেন  -(সূরা আল ইমরান, আয়াত: ১৫৬)أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ خَرَجُوا مِن دِيَارِهِمْ وَهُمْ أُلُوفٌ حَذَرَ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُمُ اللَّهُ مُوتُوا ثُمَّ أَحْيَاهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন? অথচ তারা ছিল হাজার হাজার। তারপর আল্লাহ তাদেরকে বললেন মরে যাও। তারপর তাদেরকে জীবিত করে দিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের উপর অনুগ্রহকারী। কিন্তু অধিকাংশ লোক শুকরিয়া প্রকাশ করে না ।-(সূরা বাকারাহ্, আয়াত: ২৪৩)
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ خَرَجُوا مِن دِيَارِهِمْ وَهُمْ أُلُوفٌ حَذَرَ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُمُ اللَّهُ مُوتُوا ثُمَّ أَحْيَاهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন? অথচ তারা ছিল হাজার হাজার। তারপর আল্লাহ তাদেরকে বললেন মরে যাও। তারপর তাদেরকে জীবিত করে দিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের উপর অনুগ্রহকারী। কিন্তু অধিকাংশ লোক শুকরিয়া প্রকাশ করে না ।-(সূরা বাকারাহ্, আয়াত: ২৪৩)لْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ ۖ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَىٰ عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ  বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে, অতঃপর তোমরা অদৃশ্য, দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন সেসব কর্ম, যা তোমরা করতে ।-(সূরা আল জুমুআহ, আয়াত: ৮)حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ
لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ ۚ كَلَّا ۚ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا ۖ وَمِن وَرَائِهِم بَرْزَخٌ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ  যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলেঃ হে আমার পালণকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে ) প্রেরণ করুন।যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করিনি। কখনই নয়, এ তো তার একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে পর্দা আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত ।-(সূরা আল মুমিনুন, আয়াত: ৯৯-১০০)يَوْمَ يَرَوْنَ الْمَلَائِكَةَ لَا بُشْرَىٰ يَوْمَئِذٍ لِّلْمُجْرِمِينَ وَيَقُولُونَ حِجْرًا مَّحْجُورًا  যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে দেখবে, সেদিন অপরাধীদের জন্যে কোন সুসংবাদ থাকবে না এবং তারা বলবে, কোন বাধা যদি তা আটকে রাখতো ।-(সূরা আল ফুরকান, আয়াত: ২২)فَكَيْفَ إِذَا تَوَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ  ফেরেশতা যখন তাদের মুখমন্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের অবস্তা কেমন হবে ?  -(সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ২৭)
وَلَوْ تَرَىٰ إِذْ يَتَوَفَّى الَّذِينَ كَفَرُوا ۙ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ  আর যদি তুমি দেখ, যখন ফেরেশতারা কাফেরদের জান কবজ করে; প্রহার করে, তাদের মুখে এবং তাদের পশ্চাদদেশে আর বলে, জ্বলন্ত আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো ।-(সূরা আল আনফাল, আয়াত: ৫০) الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنفُسِهِمْ ۖ فَأَلْقَوُا السَّلَمَ مَا كُنَّا نَعْمَلُ مِن سُوءٍ ۚ بَلَىٰ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
فَادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۖ فَلَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِينَ  ফেরেশতারা তাদের জান এমতাঅবস্থায় কবজ করে যে, তারা নিজেদের উপর যুলুম করেছে। তখন তারা অনুগত্য প্রকাশ করবে যে, আমরা তো কোন মন্দ কাজ করতাম না। হঁ্যা নিশ্চয় আল্লাহ সববিষয় অবগত আছেন, যা তোমরা করতে।অতএব, জাহান্নামের দরজসমূহে প্রবেশ কর, এতেই অনন্তকাল বাস কর। আর অহংকারীদেরআবাসস্থল কতই নিকৃষ্ট । -(সূরা নাহল, আয়াত: ২৮-২৯)وَلَن يُؤَخِّرَ اللَّهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا ۚ وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ  প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন ।-(সূরা মুনাফিকুন, আয়াত: ১১)يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ارْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً  হে প্রশান্ত মন, তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে ।-(সূরা আল ফজর, আয়াত: ২৭-২৮)الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ طَيِّبِينَ ۙ يَقُولُونَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ  ফেরেশতা যাদের জান কবজ করেন তাদের পবিত্র থাকা অবস্থায় । ফেরেশতারা বলেঃ তোমাদের প্রতি শাস্তি বর্ষিত হোক । তোমরা যা করতে, তার প্রতিদানে জান্নাতে প্রবেশ করো ।-(সূরা নাহল, আয়াত: ৩২)উপরের আয়াতসমূহে আল্লাহ্ সুবহানওয়া তা'আলা আমাদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন এবং কাফিরদের মৃত্যুযন্ত্রণা ও মুমিনদের সুসংবাদও প্রকাশ করে দিচ্ছেন । তাকওয়াবানদের এ ভয়ের অন্যতম কারণ হলো, যারা কবরের সংক্ষিপ্ত বিচারে পার পেয়ে যাবে, তাদের পরবর্তী ধাপগুলো সহজ হয়ে যাবে । আর যারা কবরের সংক্ষিপ্ত বিচারে আটকে যাবে তাদের দুঃখ ও লাঞ্ছনার শেষ নেই। কবরের এ সংক্ষিপ্ত বিচার তথা প্রশ্নোত্তর পর্ব পরকালীন জীবনের ওপর বিশ্বাসের প্রথম স্তর ।
এ কারণেই যারা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহকে বেশি ভয় করে তারা আখেরাতের প্রথম মঞ্জিল কবরের জীবন ও সংক্ষিপ্ত বিচারের সম্মুখীন হওয়াকেও বেশি ভয় করে ।
"হাদীস শরীফে রয়েছে যে, মানবাত্মা যখন দেহ পিঞ্জর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তখন আকাশমন্ডল থেকে অতি উচ্চঃস্বরে তিনবার ডেকে প্রশ্ন করা হয়,
"হে আদমসন্তান ! বল, তুমি কি পৃথিবীকে পরিত্যাগ করে এসেছো, না পৃথিবী তোমাকে পরিত্যাগ করেছে ? আর তুমি কি পৃথিবীকে অর্জন করেছিলে, না পৃথিবী তোমাকে অর্জন করেছিল ? আর হে বান্দা ! পৃথিবী কি তোমাকে গ্রহন করেছিল, নাকি তুমিই আল্লাহতায়ালাকে বিস্মৃত হয়ে পৃথিবীকে গ্রহন করেছিলে ?"
.
আবার যখন গোসল দেওয়ার জন্য গোসলের জায়গায় রাখা হয় তখনও গগনমন্ডল থেকে তিনবার উচ্চঃস্বরে আওয়াজ দিয়ে বলা হয় -
.
"ওহে আদম সন্তান ! তোমার যেই শক্তিমান দেহবল্লরী এখন কোথায় ? আর কে-ই বা তোমাকে এত দুর্বল ও অসহায় করেছে ? আর তোমার সেই বাকপটু জিহ্বা আজ কোথায় ? এখন কেন তুমি নির্বাক হয়ে পড়ে রয়েছো; আর তোমার সেই তীব্র শ্রবণেন্দ্রীয় কর্ণদ্বয়কে এমন বধির করেছে কে ? আর কেইবা নিষ্ঠুরের মত তোমাকে স্বীয় বন্ধু-বান্ধব থেকে পৃথক করে দিয়েছে ?"
.
তারপর যখন কাফন পরানো হয়, সেই সময়েও আকাশমন্ডল থেকে তিনবার অতি উচ্চঃস্বরে ডাক দিয়ে বলা হয় -
.
"হে আদম সন্তান ! তুমি যদি বেহেশতি বান্দা হয়ে থাক, তাহলে সুসংবাদের কথাই বটে, কিন্তু তুমি যদি জাহান্নামী বান্দা হয়ে থাক, তাহলে তোমার জন্য শত আক্ষেপ । আর হে আদম সন্তান ! তোমার প্রতি যদি আল্লাহপাক সন্তুষ্ট ও রাজী থাকেন, তবে অতি উত্তম; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা যদি তোমার প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে থাকেন, তবে এর পরিণাম অত্যান্ত ভয়াবহ ।" আর তৃতীয়বার বলা হয়, "ওহে আদম সন্তান ! তুমি এখন এক দুর্গম ও কন্টকাকীর্ণ পথে যাত্রা করবে । তুমি চিন্তা করেছ কি ? আর সেই দুর্গম পথের সম্বল তোমার আছে কি ? আজ তুমি সুখ-সজ্জা পরিত্যাগ করে অতি বিপদ-সঙ্কুল ভয়ঙ্কার স্হানে গমন করবে, কিন্তু কখনও আর ফিরে আসতে পারবে না ।"
.
আবার যখন মৃতব্যাক্তিকে খাটের ওপর রাখা হয়, তখন পূর্বের ন্যায় তিনবার ঘোষণা করা হয় -
.
"ওহে আদম সন্তান ! যদি তুমি পুণ্যবান হয়ে থাকো, তাহলে তোমার জন্য সুসংবাদ । আর দুষ্কর্মশীল হলে তোমার উদ্দেশ্যে রয়েছে দুঃসংবাদ; কিন্তু তুমি যদি আল্লাহপাকের রেজামন্দি হাসিল করে থাক এবং তওবা করে থাক, তাহলে খুব উত্তম করেছো । এছাড়া তোমার পরিণাম অত্যান্ত মন্দ হবে ।"
.
অতঃপর যখন খাটকে জানাযার নামাযের জন্য সারিবদ্ধ কাতারের সম্মুখে রাখা হয়, তখন আবার আগের মত ঘোষণা করা হয় -
.
"হে আদম সন্তান ! তুমি তোমার জীবনের ভাল-মন্দ যা কিছু সম্পন্ন করেছ, এখন সবকিছু প্রত্যক্ষ করবে । যদি সৎভাবে পূন্য সঞ্চয়ের মধ্য দিয়ে নিজ জীবনকে অতিবাহিত করে থাক, তবে তোমার জন্য রয়েছে সুসংবাদ; কিন্তু যদি মন্দভাবে পাপের স্রোতে গা ভাসিয়ে জীবনকে অতিবাহিত করে থাক, তবে তোমার ধ্বংস অবধারিত ।"
অতঃপর মৃত ব্যাক্তিকে যখন কবরের পাশে রাখা হয়, তখন কবর তাকে তিনবার প্রশ্ন করে -
.
"ওহে আদম সন্তান ! একদিন আমার ওপর দিয়ে পরমানন্দে হেসে-খেলে বেড়িয়েছো, এখন কেঁদে কেঁদে আমার অভ্যন্তরে প্রবেশ কর । আর এক কালে আমার পৃষ্ঠদেশে কত আনন্দ ও উৎফুল্ল হৃদয়ে সময় অতিবাহিত করেছিলে, কিন্তু এখন চিন্তিতাবস্হায় আমার মধ্যে প্রবেশ কর, আর এককালে তুমি বেশ বাকপটু ছিলে কিন্তু এখন নির্বাক ও বিমর্ষ চিত্তে আমার অভ্যন্তুরে দাখিল হও।"
.
তারপর দাফন কাফন সম্পাদন করে লোকজন যখন নিজ নিজ গন্তব্যস্হলে চলে যায়, তখন পরম কৌশলী আল্লাহ তায়ালা বলেন -
.
"ওহে আমার বান্দা ! আজ তুমি নির্জন কবরের মাঝে ঘোর অন্ধকার বন্ধু-বান্ধব ও দোসরহীন একা একা পড়ে রয়েছ। আত্মীয়-স্বজন সকলেই তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে ; কিন্তু একসময় তুমি তাদের জন্য আমার বিধি নিষেধের গন্ডি অতিক্রম করে পাপকাজে পরিলিপ্ত হয়েছিলে এবং আমাকে ভুলে গিয়েছিলে ।
কবরের সংক্ষিপ্ত বিচার: মৃত্যুর পর মৃতব্যক্তিকে যখন প্রথমে কবরে রাখা হবে, তখন মুনকার-নকির নামক অপরিচিত, অদ্ভুত ও বিকট আকৃতির দু'জন ফেরেশতা কবরে আসবেন । যাদেরকে দেখলে মুমিন ব্যক্তি ভয় পাবে না । কিন্তু অপরাধী ব্যক্তিরা অস্বাভাবিক ভয় পাবে । সেখানে প্রশ্নোত্তর মূলক সংক্ষিপ্ত বিচার শুরু হবে । যারা প্রশ্নের উত্তরগুলো যথাযথ দিতে পারবে, তারাই সফলকাম। আর যারা সংক্ষিপ্ত বিচারালয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না , তারা ব্যর্থ ।
মুনকার-নকির কবরে এসে মৃতব্যক্তিকে শোয়া থেকে উঠিয়ে বসাবে। তারপর ধারাবাহিকভাবে ৩টি প্রশ্ন করবে-
প্রথম প্রশ্ন
مَنْ رَبُّكَ ؟
মান রাব্বুকা ?
আপনার প্রভু কে ?

প্রশ্নের উত্তর
যদি সে ব্যক্তি নেককার হয় তবে বলবে-
رَبِّى الله
আল্লাহ আমার প্রভু ।

আর যদি সে মন্দ লোক হয় তবে প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারবে না ।
দ্বিতীয় প্রশ্ন
مَنْ دِيْنُكَ ؟
মান দ্বীনুকা ?
আপনার দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা কী ?

প্রশ্নের উত্তর
যদি সে ব্যক্তি নেককার হয় তবে বলবে-
دِيْنِىَ الْاِسْلَام
ইসলাম‌ আমার জীবন ব্যবস্থা বা দ্বীন।

আর যদি সে মন্দ লোক হয় তবে প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারবে না।
তৃতীয় প্রশ্ন
مَنْ هَذَا الرَّجُل؟
মান হাজার রাজুল?
এই ব্যক্তি কে?

প্রশ্নের উত্তর
যদি সে ব্যক্তি নেককার হয় তবে বলবে-
نَبِيُّنَا مَحَمَّدُ رَّسُوْلُ الله
তিনি আমাদের নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

আর যদি সে মন্দ লোক হয় তবে প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারবে না। সে বলবে আমি এ ব্যক্তিকে চিনি না। (নাউজুবিল্লাহ)
সংক্ষিপ্ত বিচারের ফলাফল: যারা এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে। তাদের কবরের সঙ্গে জান্নাতের যোগাযোগ স্থাপন করে দেয়া হবে। জান্নাতের হাওয়া এবং সুঘ্রাণ তাদের কবরে আসতে থাকবে। তাদেরকে বলা হবে-
‘এখন তুমি আরামে ঘুমাও। নতুন বিবাহ করা দম্পতির মতো। যারা মনের সুখে ঘুমোতে থাকে।' এভাবে তারা কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এক ঘুমে পুরো সময় পার করে দেবে।
আর যারা কবরের সংক্ষিপ্ত বিচারালয়ের ৩টি প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হবে তাদের কর্ম অনুযায়ী কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।
পরিশেষে... কবরের সফলতা লাভে পবিত্র কোরআনের সুসংবাদ গ্রহণ করাই মুমিন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তায়ালা সংক্ষিপ্ত বিচারালয়ে মুনকার-নকিরের প্রশ্নের উত্তর সহজ হওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখ করেন বলেন-
يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ ۚ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ
‘যারা শ্বাস্বত বাণীতে (কালেমায়) বিশ্বাসী, আল্লাহ তাদের দুনিয়া এবং আখেরাতে এ কালেমা তথা ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন।' (সূরা ইবরাহিম : আয়াত ২৭)
হে বান্দা ! আজ এই দুর্দিনে তোমার প্রতি আমি অত্যান্ত দয়ালু হবো ও মেহেরবান হবো । যা দেখে আমার সৃষ্ট জীবসকল বড়ই আশ্চার্যান্বিত হয়ে পড়বে । হে বান্দা ! জেনে রাখো, মাতা সন্তানের প্রতি কতটুকু স্নেহশীল ও মমতাময়ী হয়ে থাকে ।
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে পরকালের সংক্ষিপ্ত বিচারালয়ে সফল হওয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত বিচার-ফয়সালায় কামিয়াবি হওয়ার তাওফিক দান করুন। পবিত্র কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমি আমার বান্দার জন্য তদাপেক্ষাও অধিক স্নেহশীল ও দয়ালু । আল্লাহ্ আমাদের আত্মাকে পবিত্র করুন এবং আপনার সন্তোষভাজন হওয়ার যোগ্যতা দান করুন । আল্লাহুম্মা আমিন ।


রবিবার, ২৮ জুন, ২০২০

তোমরা অত্যাচার করতে করতেই ক্লান্ত হয়ে যাবে, আর আমরা অত্যাচারিত হয়ে হয়েও ক্লান্ত হবো না, ইনশাআল্লাহ ।

তোমরা অত্যাচার করতে করতেই ক্লান্ত হয়ে যাবে,আর আমরা অত্যাচারিত হয়ে হয়েও ক্লান্ত হবো না, ইনশাআল্লাহ ।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হাফিজাহুল্লাহ একটি নাম, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি আন্দোলন, একজন প্রেরনা, একটি ইতিহাস । আল্লামা সাঈদী একটি ব্রান্ড । শুধুমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার কুরআনের বানী মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার অপরাধে আজ ১০টি বছর জেলখানার অন্ধকার ছোট্ট কুঠরীতে বন্ধী ।
২০১০ সালের ২৯ জুন আসর নামাজের পর আমাদের বাসায় শত শত পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় মিন্টু রোডের ডিবি অফিসে । ৫০ বছরের অধিক কালের ধর্ম প্রচারককে "ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের" মতো হাস্যকর

এবং মিথ্যা ও সাজানো মামলায় গ্রেফতার করে, ৩০ জুন ঢাকা মহানগর আদালতে হাজির করে একে একে আরো ১৩টি মামলা দিয়ে টানা ৩৯ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় । সেই থেকে আজবধি বিনা অপরাধে- বিনা দোষে ১০টি বছর কেটে গেলো কারাগারে । যেহেতু জতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন কাজেই জেলকোড অনুযায়ী তিনি ডিভিশন পাওয়ার অধিকার রাখেন কিন্তু তাকে সেই সুবিধা দেয়া হয়নি । কোন অভিযোগ করেননি বরং দেশের সকল আইন মেনে চলেছেন ।
আল্লামা সাঈদী লাখো কোটি জনতার চোখের মনি, বিশ্ব নন্দিত মুফাসসীরে কুরআন, পবিত্র কুরআনের পাখি/স্পিকার/ভাস্যকর । রাম-বাম-নাস্তিকেরা তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলা দেয় যেই মামলায় তাকে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, খুনি‌ চোর, ডাকাত, লুটেরা ধর্ষক বানানোর জন্য মিথ্যা মামলা সাজানো ও সেফহোমের নামে প্রশিক্ষন দিয়ে সাক্ষির ব্যবস্থা করে আপ্রান চেস্টা করা হয় কিন্তু বিচারপতির স্কাইপ কেলংকারী ও আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আমাদের পক্ষের সাক্ষি অপহরন করে ঐ বিচার ব্যাবস্থার প্রতি জনগনের আস্থা এবং বিশ্বাস হারিয়েছিলো ফলে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে দেয়া ফাসির রায়ের প্রতিবাদে সারাদেশে ৭০জন শিশু, নারী পুরুষ পুলিশের গুলিতে রাজপথে অকাতরে জীবন দান করে । রায় কার্যকর নয় শুধুমাত্র রায়ের প্রতিবাদে সারাদেশে উত্তাল ছিলো পরবর্তী তিন দিনে আরো ১৭৯ জন (মোট ২৪৯জন) রাজপথে জীবন দান এবং অসংখ্য মানুষ মামলা হামলা নির্যাতনের স্বিকার হয়ে পজ্ঞুত্ব বরন করেন । জীবন ও রক্তদান করা ঐ সমস্ত কুরআন প্রেমিক ভাই বোনদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা জানাই ।
আল্লামা সাঈদী বিশ্বের অগণন মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন, রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, বিজ্ঞ পার্লামেন্টেরিয়ান । ১০ বছরের কারা জীবনে তিনি হারিয়েছেন তার মমতাময়ী মা । যে মাকে তিনি নিজের জীবনের চেয়ে বেশী ভালোবাসতেন । আমার পরম শ্রদ্ধেয় দাদীও তাকে অত্যান্ত স্নেহ করতেন । কতোটা ভালোবাসতেন ? ইন্তেকালের আগমুহূর্ত পর্যন্ত দাদীকে দেখেছি আব্বার ব্যবহৃত একটা পাঞ্জাবী মাথার কাছে নিয়ে ঘুমুতেন । বুকের কাছে নিয়ে বিড়বিড় করে কথা বলতেন, সব সময় অযু অবস্থায় থাকতেন আর আব্বার জন্য খুব দোয়া করতেন । ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবরের মাগরিবের নামাজের পর সুরা ইয়াসীন শুনতে শুনতে তিনি ইন্তেকাল করেন انا لله وانا اليه راجعون
২০১২ সালের ১৩ জুন বুধবার প্রতিদিনের মতো "তথাকথিত" মানবতা বিরোধী ট্রাইব্যুনাল চলছে । আপনাদের প্রিয় মুফাসসীর আল্লামা সাঈদীর কলিজার টুকরা বড় ছেলে, সদা হাস্যুজ্জল, অমায়িক ব্যবহারে আপনাদের প্রিয়মুখ, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসীরে কুরাআন মাওলানা রাফীক বিন সাঈদী আদালত প্রাজ্ঞনে হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন কিন্তু জালিমেরা সেদিন কোর্ট চলমান রেখেছিলো । আমরা হাসপাতালে ছুটাছুটি করছি ওদিকে আদালতে সাক্ষি চলছে । ফাসি দেয়ার জন্য তাদের কতো তাড়া , হাতে সময় নেই ! বড় ছেলের মৃত্যুতে ১৪ জুন ৬ ঘন্টার প্যারলে আব্বাকে মুক্তি দেয়া হয় কিন্তু মাওলানা রাফীক বিন সাঈদীর বিধবা স্ত্রী এবং তার এতীম সন্তানদের সাথে দেখা সাক্ষাত কথা বলার সুযোগ সেদিন আব্বাকে দেয়া হয়নি । চোখের পানি চোখেই শুকিয়ে গেছে । বুকের ভিতর হাহাকার নিয়ে আব্বা জেলখানায় ফিরে গেছেন এবং সেখানে তার বুকে খুব ব্যাথা উঠে ফলে ইব্রাহীম কার্ডিয়াকে নেয়া হয় । হাসপাতালে ভরতী করলে টেস্টে জানা যায় তার হার্টে তিনটা বল্ক পরে মিরপুর হার্ট ফাঊন্ডেশনে রিং বসানো হয় ।
মীম হুমায়ুন কবীর সাঈদী আমার শ্রদ্ধেয় ছোট চাচা । আল্লামা সাঈদীর ছোট ভাই । আব্বা তাকে খুব স্নেহ করতেন, তার কোন আবদার ফেলতেন না । শহীদ বাগেই থাকতেন । শহীদবাগ জামে মসজিদে আমরা একসাথে এতেকাফ করতাম । ২০১৮ সালে রমযানে আমি কাতার সফরে ছিলাম । রমজানের শেষ দিকে জানলাম কাক্কু অসুস্থ । ঈদের পরের দিন সকালে এয়ারপোর্টে নেমে সরাসরি বারডেম হাসপাতালে গেলাম, অনেকটা সুস্থ শুনলাম । বাসায় ফিরে সন্ধ্যায় আবার গেলাম, সুস্থই দেখলাম , আহা ! ১৮ জুন ২০১৮ ফজরের আগমুহূর্তে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন انا لله وانا اليه راجعون সবাইকেই যেতে হবে ।আমি আপনি কেউ থাকবো না । তবে যে চীরতরে চলে যায় তার পরিবারকে সমবেদনা জানানোর হাজার বছরের সামাজিকতা আমাদের দেশে প্রচলিত আছে । দেশের আইনে কোন বাধা নেই কিন্তু পরিবারকে সান্তনা দেয়া দুরের কথা সেদিন আব্বাকে জানাযার নামাজে পর্যন্ত আসতে দেয়া হয়নি ।
জুলুম নির্যাতন এখানেই শেষ নয় । পেশায় আমি একজন ব্যবসায়ী । ১৯৯৮ সাল থেকে ব্যবসা করি কিন্তু ২০১১ সালে আমার হজ্জ -উমরা লাইসেন্স এবং ১২ সাল থেকে ট্রাভেল এজেন্সী লাইসেন্সটি নবায়ন করা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে । সেই থেকে বেকার বাসায় বসে আছি । ভুল বললাম । বাসায় আর থাকতে পারি কোথায় সরকারের নানান বাহিনী আমাদের খোজ খবর রাখেন । প্রথম প্রথম খুব ভয় পেতাম । একদিন সকালে সেই ভয়কে জয় করলাম ।
খুব মনে আছে । ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ উত্তরায় সকাল ১০টায় বিএনপি মহা সচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেবের সাথে দেখা করে ফেরার পথে ডিবি পুলিশ কোন কারন ছাড়া আমাকে গ্রেফতার করে । আমাকে গ্রেফতার করে শান্তি তাদের পূর্ণ মেলেনি, আমার সাথী সঙ্গী ৩জন সাথে ড্রাইভার এমনকি বোবা যন্ত্র আমার গাড়ীটাকেও গ্রেফতার করে । সময়ের ব্যবধানে জামিন পাই এবং ২০১৩ সালে ১৮ মে আবার গ্রেফতার করে ।
মামলা হামলা এখানেই শেষ নয় । ২০১৯ সালে জানুয়ারী মাসে আমার স্নেহের ছো্ট ভাই "জিয়ানগর" বর্তমান ইন্দুরকানি উপজেলার চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায় । মামলা হামলা জুলুম নির্যাতনের শেষ নাই তবে আমরা নিরাশ কিংবা হতাশ নই ।
আজ প্রায় চার মাস করোনায় লকডাউনের কারনে আব্বার সাথে দেখা নাই, সাক্ষাত নাই, কথা নাই তবুও সেজদাবনত চিত্তে জানাই আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার অশেষ দয়ায় আব্বা সহ আমরা ভালোই আছি, সুস্থ আছি الحمد لله.


আমার হৃদয়ে সঞ্চিত সবটুকুন ভালবাসা যাঁর পবিত্র দু'পায়ে নিবেদিত তিনি আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হাফিজাহুল্লাহ । তাঁর জন্য বিশেষ কোন দিনে নয়, আমি প্রত্যেকটি দিনই তাঁকে ভালবাসি । প্রত্যেকটি দিনই তাঁকে স্মরন করি আর প্রত্যেকটি দিনই তাঁর জন্য দোয়া করি ।

আর দোয়া তো মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মজীদে শিখিয়ে দিয়েছেন । সুরা বনী ইসরাইলের ২৪নং আয়াতে
. رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
- হে আমার রব, আমার পিতা-মাতা উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন ।
আরো দোয়াকরি -যারা জুলুম -নির্যাতন -মামলা -জেল -দুর্ব্যবহার করেছেন করোনার মতো মহামারিতে আল্লাহ তাদেরকে শিক্ষা দিন, হেদায়েত দিন, সুপথে ফিরিয়ে আনুন, সুস্থ রাখুন আর যারা বিপদে আপদে এই দুর্দিনে সাহায্য- সহযোগিতা করেছেন মনে শক্তি জুগিয়েছেন তাদের ঋণ কোনদিন শোধ করার উপায় নাই তবে মহাশক্তিধর আল্লাহ তাদেরকে উত্তম পুরষ্কার প্রতিদান দিন ।
পরিশেষে বলতে চাই- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আপনার জন্যও হৃদয় উজাড় করে দোয়া করতে ইচ্ছা হয় কিন্তু আমি একজন সাধারন মানুষ, পিতা জেলে- মন কাদে, হৃদয় হাহাকার করে । আপনার দরদী মনে এতোটুকুন কি মায়া হয় না যে, ৮৩ বছরের বয়োবৃদ্ধ আলেমেদ্বীন, কুরআনের খাদেম, আপনারই সংসদের একসময়ের সঙ্গী, করোনার এই মহামারীতে ছোট্ট একটি ঘরে একা একা থাকেন ! আপনার কি এতোটুকু চিন্তা হয় না যে, ৪৩ বছরের ডায়াবেটিক্স রুগী -যার বুকে ৫টা রিং বসানো, যে কিনা একা একা হাটতে পারেন না, দাড়িয়ে নামাজ পড়তে পারেন না তিনি কেন করোনার মতো ভয়ংকর মহামারীতে বন্ধী থাকবেন ?! ১০ বছর তো হয়ে গেলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী- আল্লাহ রওয়াস্তে আল্লামা সাঈদীকে মুক্তি দিন ।