বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৬

ভুমিকম্প কেন হয় ?


আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কতৃক বর্ণিত, আল্লাহর নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে কিন্তু তার খিয়ানত করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না),যাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে কিন্তু তার মায়ের সাথে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নিবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দিবে, মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল (কথাবার্ত) হবে, জাতির সবচেয়ে দূর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসক রুপে আবির্ভূত হবে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি জনগণের নেতা হবে, একজন মানুষ যে খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে তাকে তার খারাপ কাজের ভয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হবে, বাদ্যযন্ত্র এবং নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হয়ে যাবে, মদ পান করা হবে (বিভিন্ন নামে মদ ছড়িয়ে পড়বে), শেষ বংশের লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষগুলোকে অভিশাপ দিবে, এমন সময় আসবে যখন তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে তখন একটি ভূমিকম্প সেই ভূমিকে তলিয়ে দিবে (ধ্বংস স্তুপে পরিণত হবে বা পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাবে) । [তিরমিযি কতৃক বর্ণিত, হাদিস নং – ১৪৪৭] এই হাদিসের মাঝে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে যে আল্লাহ মহানের পক্ষ থেকে জমিনে কখন ভুমিকম্পের আজাব প্রদান করা হয় এবং কেন প্রদান করা হয় ।
আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে উঠার অনুমতি দেন, যার ফলে তখন বড় ধরণের ভূমিকম্প অনুষ্ঠিত হয় । তখন এই ভূমিকম্প মানুষকে ভীত করে । তারা মহান আল্লাহর নিকট তাওবা করে, পাপ কর্ম ছেড়ে দেয়, আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয় এবং তাদের কৃত পাপ কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মুনাজাত করে । আগেকার যুগে যখন ভূমিকম্প হত, তখন সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকেরা বলত, ‘মহান আল্লাহ আমাদেরকে সতর্ক করেছেন' ।

বিজ্ঞান কী বলে ?

ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানের আলোকে ভূপৃষ্ঠের নীচে একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় রয়েছে কঠিন ভূত্বক । ভূত্বকের নীচে প্রায় ১০০ কি.মি. পূরু একটি শীতল কঠিন পদার্থের স্তর রয়েছে । একে লিথোস্ফেয়ার (Lithosphere) বা কঠিন শিলাত্বক নামে অভিহিত করা হয় । আমাদের পৃথিবী নামের এই গ্রহের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, কঠিন শিলাত্বক (লিথোস্ফেয়ার) সহ এর ভূপৃষ্ঠ বেশ কিছু সংখ্যক শক্ত শিলাত্বকের প্লেট (Plate) এর মধ্যে খন্ড খন্ড অবস্থায় অবস্থান করছে । ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানের আলোকে এই প্লেটের চ্যুতি বা নড়া-চড়ার দরুণ ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয় ।

ভুমিকম্প বিষয়ক কুরআনতত্ত্বঃ

ভূমিকম্প বিষয়ে পবিত্র কুরআনে সূরা ‘যিলযাল’ নামে একটি সূরাই নাযিল করা হয়েছে । মানুষ শুধু কোন ঘটনা ঘটার কার্যকারণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয় এবং ভূতত্ত্ববিজ্ঞানও এই কার্যকারণ সম্পর্কেই আলোচনা করে থাকে । কিন্তু কুরআনুল কারীম একই সাথে কোন ঘটনা ঘটার কার্যকারণ বর্ণনার পাশাপাশি উক্ত ঘটনা থেকে শিক্ষনীয় বিষয় কি এবং এই ঘটনা থেকে অন্য আরো বড় কোন ঘটনা ঘটার সংশয়হীনতার প্রতি ইংগিত করে । ভূমিকম্প বিষয়ে কুরআনুল কারীমে দু’টি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে । একটি হল ‘যিলযাল’, যার অর্থ হল একটি বস্তুর নড়াচড়ায় অন্য আরেকটি বস্তু নড়ে ওঠা । দ্বিতীয় শব্দটি হল ‘দাক্কা’, এর অর্থ হল প্রচন্ড কোন শব্দ বা আওয়াজের কারণে কোন কিছু নড়ে ওঠা বা ঝাঁকুনি খাওয়া । পৃথিবীতে বর্তমানে যেসব ভূমিকম্প ঘটছে, তা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে কঠিন শিলাত্বকে চ্যুতি বা স্থানান্তরের কারণে । কিয়ামতের দিন আরেকটি ভূমিকম্পে পৃথিবী টুকরো টুকরো হয়ে ধুলিকনায় পরিণত হবে এবং তা হবে ফেরেশেতা হযরত ইসরাফিলের আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিঙ্গায় ফুৎকারের কারণে, যাকে বলা হয় ‘দাক্কা’। যা হবে এক প্রচন্ড আওয়াজ ।

পৃথিবীতে মাঝে মাঝে কঠিন শিলাত্বকের স্থানান্তরের কারণে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প আমাদেরকে এ কথার প্রতি ইংগিত করে যে, একদিন ওই ‘দাক্কা’ সংঘটিত হবে, যার নাম কেয়ামত । তখন এই চাকচিক্যময় দুনিয়ার সবকিছুই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে । মানুষ যেন কিয়ামতকে ভুলে না যায়, দুনিয়াকেই তার আসল ঠিকানা মনে না করে, তাই মাঝে মাঝে মহান আল্লাহ ভূমিকম্পসহ আরো অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ দিয়ে মানুষকে সতর্ক করে থাকেন ।

ভুমিকম্প একটি আজাবঃ

আল্লাহ মহান পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, বলোঃ  আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর, তোমাদের উপর থেকে (আসমান থেকে) অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম, অথবা তিনি তোমাদের দল-উপদলে বিভক্ত করে একদলকে আরেক দলের শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাতেও সম্পূর্ণরূপে সক্ষম ।” (সূরা আল আনআম : ৬৫)

আল-বুখারি তার সহিহ বর্ণনায় জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ যখন তোমদের উপর থেকে (আসমান থেকে) নাজিল হলো তখন  নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি তোমার সম্মূখ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, অথবা যখন, অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আজাব নাযিল হলো, তখন রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমার সম্মূখ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি । (সহিহ বুখারি, ৫/১৯৩)

আবূল-শায়খ আল-ইস্পাহানি এই আয়াতের তাফসিরে বর্ণনা করেন, “বলোঃ আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর, তোমাদের উপর থেকে (আসমান থেকে) তীব্র শব্দ, পাথর অথবা ঝড়ো হাওয়া; আর অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম- যার ব্যাখ্যা হলো, ভুমিকম্প এবং ভূমি ধ্বসের মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাওয়া ।

বান্দার ওপর আজাব কেন আসে ?

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  হতে বর্ণিত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনঃ যখন আমার উম্মত যখন ১৫ টি কাজে লিপ্ত হতে শুরু করবে তখন তাদের প্রতি বালা মুসীবত আসতে আরম্ভ করবে । কাজগুলো হলোঃ
১. গণীমতের মাল ব্যাক্তিগত সম্পদে পরিণিত হবে ।
২. আমানতের সম্পদ পরিনত হবে গনীমতের মালে ।
৩. জাকাত আদায় করাকে মনে করবে জরিমানা আদায়ের ন্যায় ।
৪. স্বামী স্ত্রীর বাধ্য হবে ।
৫. সন্তান মায়ের অবাধ্য হবে ।
৬. বন্ধু-বান্ধবের সাথে স্বদব্যাবহার করা হবে ।
৭. পিতার সাথে করা হবে জুলুম ।
৮. মসজিদে উচ্চস্বরে হট্টোগোল হবে ।
৯. অসাম্মানী ব্যাক্তিকে জাতির নেতা মনে করা হবে ।
১০. ব্যাক্তিকে সম্মান করা হবে তার অনিষ্ট থেকে বাচার জন্য ।
১১. প্রকাশ্যে মদপান করা হবে ।
১২. পুরুষ রেশমী পোষাক পরবে ।
১৩. গায়িকা তৈরি করা হবে ।
১৪. বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা হবে। 
১৫.পুর্ববর্তী উম্মতদের (সাহাবী, তাবে তাবেঈন) প্রতি অভিসমাপ্ত করবে পরবর্তীরা ।
এই কাজগুলি যখন পৃথিবীতে হতে শুরু হবে তখন অগ্নীবর্ষী প্রবল ঝড়, ভুমিকম্প ও কদাকৃতিতে রূপ নেয়ার অপেক্ষা করবে । এখন একটু চিন্তা করা উচিত যে আমরা এগুলোর মাঝেই লিপ্ত রয়েছি । আর যখন আমাদের উপর মুসীবত আসে তখন প্রকৃতির বা মানুষের বা অন্যান্য জিনিসের দোষ দেই । আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত যে সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন আমরা হই তা আসলে আমাদের গুনাহের কারনেই এত আযাব ।

ভুমিকম্প হলে করনীয় কি?

যখন কোথাও ভূমিকম্প সংগঠিত হয় অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন মানুষদের উচিত মহান আল্লাহর নিকট অতি দ্রুত তওবা করা, তাঁর নিকট নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা এবং মহান আল্লাহকে অধিকহারে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য গ্রহণ দেখলে বলতেন, যদি তুমি এরকম কিছু দেখে থাক, তখন দ্রুততার সাথে মহান আল্লাহকে স্মরণ কর, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর । [বুখারি ২/৩০ এবং মুসলিম ২/৬২৮] বর্ণিত আছে যে, যখন কোন ভূমিকম্প সংগঠিত হতো, উমর ইবনে আব্দুল আযিয রাহিমাহুল্লাহ তার গভর্ণরদের দান করার কথা লিখে চিঠি লিখতেন ।
মহা গ্রন্থ আল-কুরআনের একাধিক আয়াতে বলা হয়েছে যে, জলে স্থলে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় তা মানুষেরই কৃতকর্মের ফল । আল্লাহ সুভানাহু তায়ালা মানুষের অবাধ্যতার অনেক কিছুই মাফ করে দেন । তারপরও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় ।পবিত্র কুরআন নাজিল হওয়ার পূর্বেকার অবাধ্য জাতি সমূহকে আল্লাহপাক গজব দিয়ে ধ্বংস করেছেন । সে সবের অধিকাংশ গজবই ছিল ভুমিকম্প । ভুমিকম্প এমনই একটা দুর্যোগ যা নিবারন করার মতো কোন প্রযুক্তি মানুষ আবিষ্কার করতে পারে নাই । এর পূর্বাভাষ পাওয়ার মতো কোন প্রযুক্তিও মানুষ আজ পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারে নাই । হাদিস শরীফেও একাধিকবার বলা হয়েছে যে, মানুষের দুষ্কর্মের জন্যই ভুমিকম্পের মতো মহা দুর্যোগ ডেকে আনে । পবিত্র কুরআন এবং হাদীসে আদ, সামুদ, কওমে লুত এবং আইকার অধিবাসীদের ভুমিকম্পের দ্বারা ধ্বংস করার কাহিনী বিভিন্ন আঙ্গিকে বর্ণনা করা হয়েছে ।


একটু ভাবুন তো...

সামান্য এই ভূমিকম্পেই সম্পদের মায়া ছেড়ে আমরা রাস্তায় নামছি । এটা যখন আরো বাড়বে, তখন সম্পর্কের মায়াও ছেড়ে দেবো আমরা । নিজেকে বাচানোর চেষ্টায় ব্রতী হবো সবাই । যখন তার চাইতেও আরো বাড়বে তখন যেই মা দুধ খাওয়াচ্ছেন তিনিও তার বাচ্চাকে ছুড়ে ফেলে দেবেন, গর্ভের শিশুকেও বের করে দেবেন । ভূমিকম্পের সময় কে কি অবস্থায় ছিলাম, কে টের পেয়েছে, কে টের পায়নি, চেয়ার টেবিল নড়ছিলো কিনা, ফ্যান দুলছিলো কিনা- এই সব গবেষণা পরে করলেও হবে । আগে করা দরকার তওবা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া । সবচেয়ে বড় কথা হল, এটি আল্লাহ কর্তৃক একটি নিদর্শন । যাতে করে মানুষ স্বীয় অপরাধ বুঝতে সক্ষম হয় । ফিরে আসে আল্লাহর পথে । আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের সবাইকে আন্তরিকতার সাথে খাটি তওবা করার তাওফিক দান করুন । আমিন ইয়া রব ।









রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৬

আপনি কোনটি পালন করছেন ?

আজ ঐতিহাসিক ১৫ই আগষ্ট ।

১৯৪৬ সালের এইদিনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জন্ম গ্রহন করেন । খালেদা জিয়ার শুভ জন্মদিন কিন্তু  দেশের ‘চলমান সংকট, উত্তরঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি ও নেতা-কর্মীদের জেল-গুম-খুনের’ কারণে খালেদা জিয়া এ বছর জন্মদিনের অনুষ্ঠান না করার জন্য নেতা কর্মী ও ভক্তবৃন্দকে নির্দেশ দিয়েছেন । 

১৯৪৭ সালে ১৫ আগষ্ট ২০০ বছর ইংরেজদের গোলামীর জিঞ্জির থেকে ভারত স্বাধীন হয় । আজ  ভারতের মহান স্বাধীনতা দিবস । 
---
১৯৬৯ সালের ১৫ আগষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের মেধাবী ছাত্র আব্দুল মালেক নিহত হন । পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত এ বিষয়ে তিনি তার মতামত যুক্তি সহকারে তুলে ধরার চেষ্টা করেন । তার প্রতিপক্ষ ছিল তৎকালীন ছাত্রলীগ ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলি । তারা এখনকার মতই যুক্তির বদলে শক্তিকেই বেছে নেয় ! ততকালীন রেসকোর্স ময়দানে নির্মমভাবে পিটিয়ে মাথায় ইট দিয়ে থেতলিয়ে আহত করে তাকে । পরে হাসপাতালে মারা যান তিনি । এ ঘটনায় সব শ্রেণীপেশার মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ! রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে সরকারের শিক্ষামন্ত্রীসহ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন । তৎকালীন পাকিস্তান আওয়ামীলীগ এর জনপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান । তাই ইসলামী ছাত্র শিবির আজকের দিনকে "শিক্ষা দিবস" হিসেবে পালন করে ।  

সবাই জানেন, জাতীয় শোক দিবস । ১৯৭৫ সালের এইদিনে স্বপরিবারের নিহত হন স্বাধীনতার স্থপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান । এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় এই নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার । পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ নেতা খন্দকার মুশতাক ক্ষমতা গ্রহণ করেন । কিন্তু দূর্ভাগের বিষয় দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকমীদের কাছে সেই সময়ে সামান্যতম সহানুভূতিও পাননি এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট । ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আবারও আওয়ামীলীগ রাস্ট্র ক্ষমতায় । বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে যারা আগে কখনও আওয়ামী শাসন দেখেননি তারা নতুন করে তাদের শাসন স্টাইল(!) নতুন করে উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছেন ।
সময় মানুষকে সম্মানিত করে আর সময়ের কারণেই মানুষ অসম্মান বয়ে আনে । সম্মানজনক জীবনই শেষ কথা নয় সম্মানের মৃত্যুও সমান গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ ।

রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৬

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ইসলামঃ মাওলানা সাঈদী (পর্ব - ৬)

শক্তি প্রয়োগে আদর্শ প্রতিষ্ঠা

ইতিহাসে দেখা যায়, রাষ্ট্র বা দলীয় শক্তি প্রয়োগ করে কোনো কোনো আদর্শ দেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে । শাস্তির ভয়ে প্রকাশ্যে অনিচ্ছাকৃতভাবে মানুষ সে আদর্শের অনুসরণ করেছে আর আড়ালে প্রকাশ করেছে অন্ত্রের ঘৃণা । অনেক রাজা বদশাহই এ ধরনের হঠকারিতামূলক কাজ করেচ্ছেন । তারা যে বোধ-বিশ্বাস অন্তরে লালন করতেন, তাই জোরপূর্বক জাতির উপর আইন প্রয়োগ করে চাপিয়ে দিতেন । বিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নেও আমরা দেখতে পেয়েছি, ইয়াহুদী সন্তান কার্লমার্কস সৃষ্ট সমাজতন্ত্র নামক আদর্শও রাস্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়ার নির্মম-নিষ্ঠুর কার্যক্রম । 
কিন্তু যারা এই অবাস্তব পদ্ধতি প্রয়োগ করে আদর্শ টিকিয়ে রাখার প্রচেস্টা চালিয়েছে, তারা এ কথা ভুলে গিয়েছে যে, বিশ্বাস হলো মানুষের মনের সাথে সম্পৃক্ত । শক্তি প্রয়োগে কোনো বিশ্বাসের প্রতি মানুষের মৌখিক স্বীকৃতি আদায় করা যায় বা কিছু সময়ের জন্য পালন করানোও যায় কিন্তু হৃদয়-মনে তা প্রতিষ্ঠিত করা যায় না । মানুষ তো পরম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও নিষ্ঠার সাথে সেই আদর্শই অনুসরণ করে, যারা তা মনপ্রান দিয়ে বিশ্বাস করে । যে আদর্শের শিকড় হৃদয়- গভীরে প্রোথিত, তাই মানুষের বাহ্যিক অবয়বে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে ।
সম্রাট অশোক, সম্রাট আকবর, হালাকু খান, চেঙ্গিশ খান শক্তি প্রয়োগ করে কতো নিয়ম-নীতি চালু করেছিলেন, এসবের কোন অস্তিত্বও নেই । নিকট অতীতে সমাজতান্ত্রিক দেশসমুহে সমাজতন্ত্রের প্রবক্তাদের প্রচলিত নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা তো দূরে থাক, তাদের বিশাল বিশাল মূর্তি গুলোর গলায় শিকল লাগিয়ে টেনে নামানো হয়েছে । শক্তি প্রয়োগ করে, লোভ লালসা দেখিয়ে, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা করে যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা হয়, সে আদর্শ অত্যন্ত ভঙ্গুর এবং এর স্থায়িত্ব নেই- ক্ষণস্থায়ী । সামান্য কিছু কালের ব্যবধানে এর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে ।
পৃথিবীতে একমাত্র ইসলামই হলো ব্যতিক্রম সেই আদর্শ, যা লোভ-লালসা দেখিয়ে, প্রতারনা-প্রবঞ্চনা করে অথবা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রচার-প্রসার করা হয়নি । ইসলামী আদর্শের বাহ্যিক ও অভ্যান্তরিন অনুপম গুন-বৈশিস্ট্য, নবী- রাসুলদের আকর্ষণীয় চারিত্রিক গুন এবং সাহবায়ে কেরামের আচরিত তুলনাহীন গুনাবলীর প্রতি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল শ্রেনীর মানুষ আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম কবুল করেছে । আর এভাবেই ইসলামের প্রচার -প্রসার ঘটেছে । সুতরাং সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, বোমাবাজি করে, মানুষ হত্যা করে জঙ্গি পন্থায় যারা আল্লহর আইন চালু করার চিন্তা করে, তাদের বোঝা উচিত এপথ ইসলামের নয় এবং এপথ অবলম্বন করে মানুষের মনে আল্লাহর আইনের প্রতি সম্মানবোধ, শ্রদ্ধা-ভালোবাসা সৃষ্টি করা যাবে না ।
ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর ঢাল চুরির ঘটনা ইতিহাসের পাঠক মাত্রই অবগত রয়েছেন । তার ঢাল চুরি করলো এক ইয়াহুদী, তিনি রাস্ট্রপ্রধানের পদে আসীন । রাস্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে ইয়াহুদীকে চরম শাস্তি দিয়েই তো ঢালটি উদ্ধার করতে পারতেন কিন্তু ইসলামী শিক্ষা তাকে সে পথে অগ্রসর হতে না দিয়ে আদালতে বিচারকের কাছে পাঠিয়েছে । আদলতে সাক্ষী গ্রহনযোগ্য না হবার কারনে ইয়হুদীর পক্ষে আর ইসলামী রাস্ট্রপ্রধানের বিপক্ষে রায় দিয়েছে । রাস্ট্রপ্রধান আদালতের রায় মেনে নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরছেন । পথিমধ্যে সেই ইয়াহুদী ছুটে এসে হযরত আলীকে জড়িয়ে ধরে ব্যাকুল কন্ঠে বলছে, যাদের আদর্শ এতো সুন্দর মানুষ সৃষ্টি করেছে, আমি সেই আদর্শ গ্রহন করে মুসলমান হলাম । এই নিন আপনার ঢাল, এটি আমিই চুরি করেছিলাম ।  
ইসলাম এভাবেই প্রসারিত হয়েছে, শক্তি প্রয়োগে নয় ।  ***** চলবে *****

বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ইসলামঃ মাওলানা সাঈদী (পর্ব - ৫)

আল্লাহর আইন- বৃটিশ ও পাকিস্তান যুগঃ

বৃটিশ এদেশকে প্রায় দুইশত বছরব্যাপী শাসন করেছে । এরপর ২৪ বছর বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে পরিচিত ছিলো । তখন তো কেউ-ই  'আল্লাহর আইন চালু'র নামে এদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপর্যয় সৃষ্টি করেনি । ১৯৭১ সালে মহান  মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ স্থান করে নিলো, একের পর এক সরকার পরিবর্তন হলো, দীর্ঘ এ সময়েও কেউ উক্ত দাবি তুলে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেনি ।
১৯৯৬ সালের পরে এদেশের শাসন ক্ষমতায় যারা এলেন, তাদের শাসনামলে ১৯৯৯ সালের ৬ই মার্চ যশোরে উদীচীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করা হলো । একই সালের ৮ই অক্টোবর খুলনায় কাদিয়ানীদের উপাসনালয়ে বোমা নিক্ষেপ করে ৮ জনকে হত্যা করা হলো এবং ফরিদপুর জেলার এক মাজারে বোমা নিক্ষেপ করে হত্যা করা হলো ৪ জনকে । ২০০১ সালের ২০শে জানুয়ারী ঢাকার পল্টন মাঠে কমিউনিস্ট পার্টির সমাবেশে বোমা হামলা করে হত্যা করা হলো ৭ জনকে এবং  একই সময়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বোমা বিস্ফোরন ঘটানো হলো । ২০০১ সালের ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখে ঢাকার রমনা বটমুলে নববর্ষের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা করে ১০ জনকে হত্যা করা হলো । ২০০১ সালের জুন মাসের ৩ তারিখে গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরের একটি গির্জায় বোমা বিস্ফোরন ঘটিয়ে ১০ জনকে হত্যা করেছে । একই বছরের ঘটনা অর্থাৎ কয়েকদিন পর ১৫ই জুন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে বোমা বিস্ফোরন করে হত্যা করা হয় ২২ জনকে । ২৩শে সেপ্টেম্বর বাঘেরহাটের মোল্লারহাটে বোমা বিস্ফোরন করে হত্যা করলো ৮ জনকে । ২৬শে সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে আওয়ামীলীগ সমাবেশে বোমা নিক্ষেপ করে হত্যা করলো ৪ জনকে ।
অর্থাৎ ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০১ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বোমা নিক্ষেপ করে অনেক মানুষ হত্যা করা হয়েছিলো, চিরতরে পঙ্গু করে দিয়েছে কয়েক শত মানুষকে এবং কয়েক কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করা হয়েছিলো । এসব বোমাবাজি যেখানে যেখানে ঘটলো বা ঘটানো হলো, সেখানের কোথাও 'আল্লাহর আইন চালু'র দাবি তুলে বোমা নিক্ষেপ হয়েছে বলে শোনা যায়নি এবং 'আল্লাহর আইন চালু'র পক্ষে কোন সংগঠনের লিফলেটও পাওয়া যায়নি । এ সময়ে বাংলাদেশের কোন একটি আদালতের  বিচারককেও হুমকি দিয়ে কেউ-ই কোনো চিঠি দিলো না, আদালতেও কেউ বোমা নিক্ষেপ করলো না এবং আত্মঘাতিকোনো লোকেরও সন্ধান পাওয়া গেলো না ।
বাংলাদেশকে 'অকার্যকর ও ব্যর্থরাষ্ট্র' হিসেবেও কোন মহল থেকে চিহ্নিত করার চেষ্টা পরিলক্ষিত হলো না ।
২০০১ সালের ১লা অক্টোবরের নির্বাচনে ইসলামী মুল্যবোধে বিশ্বাসী চার দলীয় ঐক্যজোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শাসন ক্ষমতায় আসীন হলো । ইতিপূর্বে যখন কুকুরের মাথায় টুপি পরিয়ে ইসলামপন্থীদের অমর্যাদা করা হয়েছে, খুনের অভিযোগে শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীন আলেমকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়েছে, মসজিদ মাদরাসা বন্ধ করা হয়েছে, অগণিত আলেম উলামাকে গ্রেফতার করে জেলখানা পরিপূর্ণ করা হয়েছে । সেখানে ১লা অক্টোবরের নির্বাচনের পরে আলেম-উলামাগন সম্মান মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছেন । প্রচার মাধ্যমে তারা বক্তব্য রাখার ও সরকারী অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছেন । প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী ও এমপিগন আলেমদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সৃষ্টি করেছেন, মাদরাসা শিক্ষার প্রতি সরকার গুরুত্ব দিয়েছিলো ও সন্ত্রাস নির্মূলের লক্ষে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করেছিলো ফলে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছিলো । এই যখন দেশের বাস্তব অবস্থা, ঠিক তখনই চার দলীয় জোট সরকারের শেষ বছরে হঠাৎ করে নানা ধরনের ভুঁইফোড় সংগঠনের নাম দিয়ে 'আল্লাহর আইন চালু'র নামে আত্মঘাতি বোমাবাজদের মাধ্যমে দেশে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করা  এবং সরকারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছিলো ।

ইসলামের নাম শুনলেই যাদের গাত্রদাহ শুরু হয় এবং আলেম দেখলেই যাদের নাকে কয়েকটি ভাজ দেখা যয়, কুকুরের মাথায় টুপি পরিয়ে যারা ইসলামকে ব্যং-বিদ্রুপ করে, মাদরাসাকে যারা মৌলবাদী ও সন্ত্রাসীদের আখড়া বলে চিহ্নিত করে, সংবিধানের শুরু থেকে  "বিসমিল্লাহ" মুছে দিতে চায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রাম থেকে যারা কুরআনের আয়াত মুছে দেয়, নাস্তিক-মুরতাদদের যারা পরম হিতৈষী -বন্ধু এবং আলেমদেরকে শত্রু মনে করে, চারদলীয় জোটকে ক্ষমতায় যাবার প্রধান বাধা মনে করে যারা, জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র-এ ব্যর্থ হয়ে প্রকাশ্যে দাবি তোলে, উদ্ভুত সমস্যা সমাধানের লক্ষে জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষে যারা আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানায়, 'আল্লাহর আইন চালু'র নামে আত্মঘাতি বোমাবাজ তাদেরই তত্ত্বাবধানে সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে কিনা, এ প্রশ্ন বর্তমানে সর্বস্তরের নাগরিকদের মনে সৃষ্টি হয়েছে ।   ***** চলবে *****

বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০১৬

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ইসলামঃ মাওলানা সাঈদী (পর্ব - ৪)

রোযা ও পুজার দেশে সন্ত্রাসী সৃষ্টির কৌশলঃ 

আল্লাহর আইন চালুর নামে যেসব মুসলমান নামধারী কিশোর, তরুন ও যুবকদের ব্যবহার করা হচ্ছে, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে এরা প্রায় সকলেই বাম-রাম ঘরনার ধনী পরিবারের কর্মহীন- বেকার, ভবঘুরে, হতাশাগ্রস্ত অর্থলোভী, বুদ্ধি-বিবেচনাহীন সদস্য । এদের কাছে অর্থই মুখ্য বিষয় । ইসলাম-মুসলমান, দেশ-জাতি ও মানবতার দুশমনরা এসব মোটা মাথার লোকদেরই রিক্রুট করে আল্লাহর আইন চালুর নামে সন্ত্রাস সৃষ্টির প্রশিক্ষন দিয়েছে । এসব যুবকে বন্ধু-বান্ধবের সাথে এখানে-সেখানে আড্ডা এবং নারী ও মাদকে আসক্ত করে । এরপর এসব ছেলেকে পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও পরিবারের অন্য সকল সদস্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে 'আল্লাহর আইন চালুর' নামে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে ।
টিভি-রেডিও, ইন্টারনেট, সোস্যাল মিডিয়া এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে পেশাধারী সম্মোহনকারী আমদানী করে এদেরকে এমনভাবে প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে যে, এদের মধ্যে থেকে মানবীয় সুকুমার বৃত্তিসমুহের মৃত্যু ঘটিয়ে হৃদয়কে করা হয়েছে মায়া-মমতাশুন্য । পিতা-মাতা, ভাই-বোন দূরে থাক- নিজ জীবনের প্রতিও এমন বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করা হয়েছে যে, নিজ জীবনকে  নিজের কাছেই এক দুর্বহ বোঝা -এই অনুভুতি এদের মধ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে । এদেরকে এশিক্ষাও দেয়া হয় যে, জীবন নামক এই দুর্বহ বোঝা থেকে নিজেকে মুক্ত করে বেহেশতে যাবার সবথেকে সহজ পদ্ধতি হলো আল্লাহর আইন চালুর জন্য অন্য মানুষ ও নিজেকে হত্যা করা । কুরান-হাদীসের জ্ঞান বিবর্জিত বুদ্ধি-বিবেচনাহীন জাহিল এসব লোকদেরকে দীর্ঘ প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সমাজ, দেশ-জাতির প্রতি বিদ্রোহী করে গোড়ে তোলা হয়েছে । সুস্থ চিন্তার পরিবর্তে  এদের মাথায় প্রবেশ করানো হয়েছে অসুস্থ চিন্তা । অর্থাৎ এরা জীবন সম্পর্কে হতাশা ও অবসাদগ্রস্থ হয়ে জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া লোক । এসব লোকদের প্রতি আমাদের করুনা হয় ।
গোয়েন্দাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এসব যুবকেরা দীর্ঘ দিন যাবৎ পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে, কেউ কেউ বছরে মাত্র দু-একবার পিতামাতা বা পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে কিছু টাকা দিয়েই আবার নিরুদ্দেশ হয়ে যায় । প্রশিক্ষনের মাধ্যমে এদেরকে নিজ পরিবার-পরিজন, সমাজ ও দেশের আনুগত্য না করে একমাত্র নেতার আনুগত্যের মধ্যেই মুক্তি, এই ধারনা সৃষ্টি করা হয়েছে । সম্মোহনের মাধ্যমে মন-মস্তিস্ক, সমাজ সংসারের চেতনাশুন্য করে আল্লাহর আইন চালুর মায়াজালে বন্ধি করা হয়েছে । ফলে এসব লোকের পরিবারের অন্য সদস্যগনও এসব লোকদের প্রতি মায়া-মমতাশুন্য  হয়ে পড়েছে । এর প্রমান হিসেবে গোয়েন্দা সুত্রে সংবাদ মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আত্মঘাতি এসব লোকের মরদেহ তাদের পরিবারের কেউ-ই গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ ও এদের সম্পর্কে কিছু শুনতেও অনিচ্ছা প্রকাশ করছে ।
এভাবে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সংসার, সমাজ ও দেশের প্রতি বিরাগ ভাজন করে এসব যুবকদের মাধ্যমে নিকটতম ও দুরতম ঐসব প্রতিবেশী দেশই শান্তির দেশ- বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ অস্থির করে তুলে দুনিয়ার সম্মুখে 'অকার্যকর ও জঙ্গিরাষ্ট্র' হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করে আগ্রাসনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে । ক্ষমতায় টিকে থাকতে জঙ্গি ইস্যু তৈরি করে বহির্বিশ্বের নাক গলানোর সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে । প্রকৃত অপরাধীদের না ধরে একে অপরের দোষারপ করা হচ্ছে । বাংলাদেশ  সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল ভুমি, এখানে মুসলমানদের সাথে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীগন শান্তির সাথে বসবাস ও নির্বিঘ্নে আনন্দ চিত্তে শঙ্কামুক্ত মনে ধর্ম পালন করছে । মুসলমনাদের কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র মাস রমজান মাসেও অত্যান্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশে পুজা-পার্বণ অনুষ্ঠিত হয় । এদেশে মসজিদ-মন্দির পাশাপাশি অবস্থান করছে এবং উভয়স্থানে একই সময়ে যার যার ধর্ম সে সে পালন করছে । একই অফিসে পাশাপাশি টেবিলে বসে চাকরী করছে, পরস্পরের বাড়িতে দাওয়াত খাচ্ছে, একে অপরের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, এমনকি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হবার পরও মরণাপন্ন রুগীকে নিজের দেহের রক্ত দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করছে ।

বাংলাদেশের উন্নতি, অগ্রগতি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, উদার গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট, শান্তিপূর্ণ  পরিবেশ যাদের কাছে অসহ্য, ঢাকা ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা ও বঙ্গভঙ্গের ব্যাপারে যারা বিরোধিতা করেছে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষেই অস্ত্র ও এদেশের কলকারখানার যন্ত্রপাতি লুট করেছে, যারা ১৯৪৭ সালের ভূগোলিক সীমারেখা মানতে নারাজ এবং বাংলাদেশী নয়-বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, মঙ্গল প্রদীপ বা অগ্নি প্রজ্জলন ও রাখিবন্ধন সংস্কৃতির অনুসারী, বাংলাদেশের প্রতি যারা বন্ধুত্বের প্রশ্নে উত্তীর্ণ নয় এবং সাম্প্রদায়িক দুষ্টক্ষতে আক্রান্ত হবার কারনে দুনিয়াব্যাপী বদনাম অর্জন করেছে, তারাই তাদের গোয়েন্দা সংস্থা ও এদেশীয় তল্পীবাহকদের মাধ্যমে বাংলাদেশে 'আল্লাহর আইন' চালুর নামে আত্মঘাতি লোকদের দ্বারা সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে বিশ্বের কাছে এ দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থরাষ্ট্র এবং তাদেরকে দালালদেরকে আজীবন ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার অপচেস্টা করছে কিনা, এপ্রশ্ন সচেতন মহলের মনে সৃষ্টি হয়েছে । ***** চলবে *****

মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০১৬

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ইসলামঃ মাওলানা সাঈদী

ইসলাম-মুসলমান বনাম সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ

আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা তাঁর অনুসরণের ক্ষেত্রে দুই ধরনের পদ্ধতি দিয়েছেন । মানুষ ব্যতীত অন্যান্য সমগ্র সৃষ্টির জন্য তাঁর আইন পালন বাধ্যতামুলক করেছেন । চিন্তাবিদগণ সাধারন দৃষ্টিতে যা বুঝে তা হলো, তিনি যদি অন্যান্য সকল সৃষ্টির জন্য তাঁর আইন অনুসরন বাধ্যতামুলক না করতেন, তাহলে মানুষসহ সমগে সৃষ্টি ক্ষতিগ্রস্ত হতো, যেমন মহাশুন্যে গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ, নিহারীকাপুঞ্জ, ব্লাকহোল ও অন্যান্য যা কিছুই রয়েছে, এসব কিছুর পরিভ্রমনের জন্য গতিপথ বা পরিভ্রমনের পথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, এসব পথে ওগুলো চলতে বাধ্য । ওসব সৃষ্টিসমুহের পরিভ্রমনের পথে আল্লাহ তায়ালা যদি স্বধীনতা দিতেন, তাহলে পরিভ্রমনের পথে একটির সাথে আরেকটির সংঘর্ষ ছিলো অবশ্যম্ভাবী এবং সেগুলো স্বয়ং যেমন ধ্বংস হতো তেমনি অন্যান্য সৃষ্টির জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারন হতো ।
অপরদিকে আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা তাঁর আইন পালনের ক্ষেত্রে একমাত্র মানুষকেই স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং সতর্ক করে দিয়ে পবিত্র কুরআনে এ কথাও উল্লেখ করেছেন যে, "আলো-অন্ধকারের পথ বা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সুস্পস্ট পার্থক্য করে দেয়া হয়েছে" । কেউ ইচ্ছা করলে আলোর পথ বা সত্যপথ অনুসরণ করে দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তির পথে এগিয়ে যেতে পারে, এস্বাধীনতা যেমন মানুষের রয়েছে তেমনি সে অন্ধকার পথ অনুসরণ করে পৃথিবী ও আখিরাতে নিজেকে ধ্বংসও করে দিতে পারে, এ স্বাধীনতাও মানুষের রয়েছে । একই সাথে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে মানব মন্ডলীকে এ কথাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, "ইসলামই মানুষের জন্য একমাত্র মনোনীত জীবন ব্যবস্থা" ।
সমগ্র সৃষ্টি জগতের মালিক এ কথাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, "ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো আদর্শ কেউ যদি অনুসরণ করে, তাহলে সে নিশ্চিতভাবে পৃথিবী ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে" । যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করবে, শান্তি, স্বস্তি ও সার্বিক নিরাপত্তার লক্ষে তাঁর জন্য আল্লাহর বিধান অনুসরণ করা অবশ্যই বাধ্যতামুলক । আল্লাহর বিধান অনুসরণ না করে কেউ যদি নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করে, আল্লাহ তা'য়ালার কাছে তাঁর এই দাবির কানাকড়িও মুল্য নেই । কারন 'মুসলিম ও ইসলাম' এই শব্দ দুটো একটির সাথে আরেকটি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত, পরস্পর সম্পুরক এবং অবিচ্ছিন্ন । এই শব্দ দুটোর মুলেই নিহিত রয়েছে মানুষের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নতি, প্রগতি, স্বস্তি, নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের বিভীষিকামুক্ত শঙ্কাহীন এক উন্নত জীবন যাপনের পরিবেশ ।
'ছিলমুন' শব্দ থেকে 'ইসলাম' শব্দের উৎপত্তি এবং এর অর্থ হলো শান্তি ।  আর মুসলিম শব্দের অর্থ হলো 'আত্মসমর্পণকারী' । আল্লাহ তা'য়ালা মানবমন্ডলীর শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নতি, প্রগতি, স্বস্তি, শঙ্কামুক্ত নিরাপত্তাপূর্ণ  যে বিধানাবলী দান করেছেন, এর সমষ্টির নামই হলো ইসলাম এবং এই বিধানাবলীর নিকট যে মানুষ আত্মসমর্পণ করেছে, সে-ই হলো মুসলমান ।
সহজ কথায় সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের বিপরীতে শান্তি, সমৃদ্ধি,  প্রগতি, স্বস্তি, উন্নতি ও নিরাপত্তা দানের নিশ্চয়তামুলক বিধানের নিকট যে মানুষ তাঁর সমগ্র সত্তাকে সমর্পণ করেছে, সেই হলো মুসলমান । এ কারনেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেনঃ 'যে ব্যক্তির হাত ও মুখের কথা থেকে অন্য মানুষ নিরাপদ নয়, সে ব্যক্তি মুসলমান নয়' ।
যে আল্লাহ তা'য়ালা মানুষের নিরাপত্তার প্রতীক ও শান্তির নিশ্চয়তামুলক জীবন বিধান ইসলামকেই মানুষের জন্য একমাত্র জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করেছেন, সেই আল্লাহ তায়ালার নিরানব্বইটি নামের মধ্যে গুনবাচক নামসমুহের একটি নাম হলো 'সালাম' অর্থাৎ শান্তিদাতা । অপরদিকে রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে 'সালাম' নামের অধিকারী আল্লাহ তা'য়ালা স্বয়ং পবিত্র কুরআনে সুরা আম্বিয়ায় ঘোষণা করেছেনঃ 'হে নবী ! আপনাকে আমি সমগ্র জগতের জন্য করুণার প্রতীক হিসেবেই প্রেরণ করেছি' ।
অর্থাৎ মহান আল্লাহ বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে 'করুণার প্রতীক তথা নবীয়ে রহমত' উপাধি দান করেছেন । তাহলে বিষয়টি এভাবেই স্পস্ট হয়ে গেলো যে, 'শান্তিদাতা' সালাম আল্লাহ তা'য়ালা সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের বিপরীতে শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা, সুখ- সমৃদ্ধি, উন্নতি-প্রগতি ও শঙ্কামুক্ত জীবন বিধান শান্তির আদর্শ ইসলামকে করুণার মূর্তপ্রতীক নবীয়ে রহমতের কাছে প্রেরণ করেছেন এবং তিনি এ সর্বোত্তম আদর্শ পৃথিবীতে বাস্তবায়ন করেও দেখিয়েছেন ।
আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা, নবী-রাসুলের মাধ্যমে তাঁর বান্দাদেরকে নামাজ শেষ করার আদেশও দিয়েছেন  শান্তি কামনা করার মাধ্যমে । অর্থাৎ নামাজের শেষ বৈঠকে 'আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ' মুখে উচ্চারন করেই নামাজ শেষ করতে হবে । নামাজ শেষ করেই মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে যে দোয়া করতেন সে দোয়ার অর্থ হলোঃ "হে আল্লাহ ! তুমি শান্তিময় আর তোমার নিকট থেকেই শান্তির আগমন, তুমি কল্যানময়, হে মর্যাদাবান কল্যাণময় ! তোমার কাছেই আমি শান্তির শেষ আশ্রয়স্থল জান্নাত কামনা করছি" । আল্লাহর রাসুলের শিখানো এই দোয়া অধিকাংশ আলেমগন নামাজ শেষ করেই তেলাওয়াত করেন এবং মুসলমানদের মধ্যে যারা এই দোয়া মুখস্ত করেছেন তারাও করে থাকেন ।
এরপর মুসলমানদের পরস্পরের দেখা-সাক্ষাত হলেও শান্তি কামনা করার আদেশ দেয়া হয়েছে অর্থাৎ 'আসসালামু আলাইকুম' 'তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক' প্রথমে বলে তারপর অন্যান্য কুশলাদি জানতে হবে । শিশুর বাক শক্তি নেই, সে জবাব দিতে পারবে না তবুও তাকে সালাম জানাতে হবে অর্থাৎ তাঁর জন্য শান্তি কামনা করতে হবে । মানুষ ইন্তেকাল করলে জানাযা আদায় করার সকল দোয়া সমুহেও মৃতের জন্য শান্তি কামনা করতে হয় । মুসলমানদের কবর দেখলে বা জিয়ারত করার সময় কবরবাসীকে আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর অর্থাৎ কবরবাসীর জন্য শান্তি কামনা করতে হবে । 

মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম পবিত্র কা'বার দোয়া কবুলের স্থানে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন । সুরা বাকারার ১২৬ আয়াতে আছে, ইব্রাহীম যখন বলেছিলো, হে মালিক ! এ শহরকে তুমি শান্তিময় ও নিরাপত্তার নগর বানিয়ে দাও ।
যে জাতির পিতা স্বয়ং সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর শাহী দরবারে ধরনা ধরেন, সেই জাতি কি সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদে নিজেদেরকে জড়াতে পারে ? ইসলাম মানুষকে আল্লাহ তা'য়ালার কাছে সহজ-সরল শান্তির পথ কামনা করতে শিক্ষা দিয়েছে । নামাজ আদায়কারী ব্যক্তিগন প্রত্যেকদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে বারবার সুরা ফাতিহা তেলাওয়াত করে থাকেন । এই সুরার মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে থাকেনঃ 'তুমি আমাদের সহজ-সরল ও অবিচল পথটি দেখিয়ে দাও' । 
যে মুসলমান প্রত্যেকদিন ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত নামাজেই সুরা ফাতুহার মাধ্যমে ৩২বার মহান আল্লাহর কাছে কাঁতর কন্ঠে আবেদন করে "আমাদের সহজ-সরল ও অবিচল পথটি দেখাও" সেই মুসলমানের পক্ষে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী বা জঙ্গিবাদী তৎপরতার পথে অগ্রসর হওয়া কি সম্ভব ? প্রকৃত মুসলমানদের সাথে সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের ঐ দুরত্ব রয়েছে, যে দুরত্ব পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে রয়েছে । ইসলামের নামে যে বা যারা সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী তৎপরতা চালাচ্ছে, তারা না জেনে অথবা ইসলামের দুশমনদের হাতের পুতুল হিসেবেই চালাচ্ছে । বলাবাহুল্য ইসলাম ও ইসলামপন্থিদের বদনাম করার লক্ষেই শত্রুপক্ষ মুসলিম নামধারী এসব লোককে ব্যবহার করছে ।
ইসলামের ক্ষুদ্র থেকে বৃহত্তর প্রত্যেক পরিসরে ও মুসলিম জীবনের সুচনা এবং সমাপ্তি তথা দুনিয়া-আখিরাতের সবস্থানে শধু শান্তি কামনা ও প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে । সেই ইসলামে সন্ত্রাসবাদ আর জঙ্গিবাদের গন্ধ অনুসন্ধান করা, আল্লাহর আইন চালুর নামে মানুষ হত্যা করা, দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করা, একমাত্র মূর্খ, জাহিল, জ্ঞানপাপী, ইসলাম-মুসলমান ও দেশের শত্রুদেরই কাজ হতে পারে । আর যারা নিজেকে মুসলমান দাবি কোরে ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পথ অনুসরণ কোরে দেশে বিশৃঙ্খল ও বিপর্যয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তারা স্পষ্টতই ভ্রান্ত পথের অনুসারী এবং এ পথ গিয়েছে জাহান্নামে । বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এসব লোকদের জন্য আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ "তাদেরকে যখনই বলা হয়েছে 'তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না' তখনই তারা বলেছে ' আমরা তো সংশোধনকারী মাত্র । (সুরা বাকারা -১১) 
সন্রাস আর জঙ্গিবাদ নির্ভর পথ অনুসরণ করে বোমা বিস্ফোরন ঘটিয়ে মানুষ হত্যাকারীদের যখন বলা হচ্ছে, 'তোমরা কেনো এই বিপর্যয় সৃষ্টি করছো ? তারা জবাব দিচ্ছে, আমরা আল্লাহর আইন কায়েমের জন্য এই কাজ করছি' । অর্থাৎ অশান্তি সৃষ্টিকারী অন্য সকল আইন বাতিল করে আল্লাহর শান্তিময় আইন কায়েমের লক্ষে এসব করছি । এসব মূর্খ জাহিলরাই যে প্রকৃত অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী, এই চেতনাই এদের মধ্যে নাই । এসব চেতনাহীন দুষ্কৃতিদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারার ১২ আয়াতে বলেনঃ "সাবধান ! প্রকৃতপক্ষে এরাই বিপর্যয় সৃষ্টিকারী, কিন্তু এর কোনো চেতনাই তাদের নেই" । 
ইসলামের দুশমন কর্তৃক বিভ্রান্ত হয়ে বোমাবাজ মানুষ হত্যাকারী সন্ত্রাসীরা ইসলামের নামে দেশে যে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে এবং নিজেকে যে নবীর উম্মত তথা অনুসারী হিসেবে দাবি করছে, সেই নবীয়ে রহমত সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ "রাসুলের জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ" । নিশ্চয় তুমি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী । তুমিই সবথেকে সহজ-সরল পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত ।
যে মহামানবকে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বোত্তম আদর্শের অধিকারী ও করুণার মূর্তপ্রতীক  হিসেবে সনদ দিয়েছেন, সেই মহামানব রহমাতুল্লিল আলামীনের অনুসারী হিসেবে নিজেকে দাবি করে বোমা বিস্ফোরন ঘটিয়ে কিংবা মানুষের গলা কেটে হত্যা করে এবং নিজেকে হত্যা করে 'জান্নাতে যাবার' প্রলোভন যারা দেখাচ্ছে, তাদের পরিচয়, তারা ইসলাম-মুসলমান, দেশ-জাতি ও সমগ্র মানবতার দুশমন । সচেতন মহলের চোখগুলোকে সিসি টিভিতে পরিণত করে এদেরকে ধরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দিতে হবে এবং এদের ওপর কুরআন ঘোষিত বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের সাথে সম্পর্কিত সর্বোচ্চ দন্ড প্রয়োগ করাই বর্তমান সময়ের দাবি । ***** চলবে *****