শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাই না

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণপ্রিয় নাতি,
৬১ হিজরির ১০ মহররম হযরত ইমাম হোসেন রাদিয়াল্লাহু আনহু রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ইসলামের পতাকা উড্ডীন রাখতে বুকের তাজা রক্তে কারবালার প্রান্তরকে রঙিন করে শাহাদাতের পেয়ালা গ্রহণ করেন । শহিদ হওয়াকে কেন্দ্র করে বর্তমানে আশুরার গুরুত্ব পেলেও ইসলামের ইতিহাসে এইদিনে অসংখ্য তাৎপর্যময় ঘটনা রয়েছে । অনেক কারণে মুসলমানরা দিনটিকে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে স্মরণ করে থাকেন ।
মহররম আরবি বর্ষের প্রথম মাস । আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাস । এ মাসের রয়েছে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা । যা ইসলামের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে, এ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করেন এবং পৃথিবীর প্রথম মানব-মানবী হজরত আদম ও মা হাওয়া আলাহিমুস সালাম শয়তানের প্রতারণায় আল্লাহর হুকুম লংঘন করে তাঁর শাস্তির সম্মুখীন হন । অবশেষে দুনিয়ায় আগমন, দু’জনের মিলন, আল্লাহর ক্ষমা লাভসহ সবই এ মাসের সংঘটিত হয় ।
পৃথিবীতে আগত সব নবী-রাসূলগণেরই কম-বেশি স্মৃতিবিজড়িত এ মহররম মাস । মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আলাহিস সালামের জন্য নমরুদের আগুন শান্তিতে পরিণত হয় এ মাসেই । যখন তাওহিদের দাওয়াত দেয়ায় জালিম শাসক নমরুদ হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে আগুনে নিক্ষেপ করেছিলেন । আল্লাহ তাঁর প্রিয় খলিলকে অগ্নিকুণ্ডলি থেকে রক্ষা করেন । হযরত নূহ আলাইহিস সালামের আমলের মহাপ্লাবন থেকে তাঁর উম্মতগণও ১০ মহররমে পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করেন । হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা ফেরাউনের অত্যাচার থেকে রক্ষা করে তার দম্ভ চূর্ণ করে দেন এ মহররমের ১০ তারিখে । যার শোচনীয় পরিণতি হচ্ছে দলবলসহ ফেরাউন নীল নদে ডুবে যায় । সেই নির্মম করুন ধংসের আজও এক নজির হয়ে আছে পৃথিবীতে ।

সর্বোপরি হযরত ইমাম হোসেন রাদিয়াল্লাহু আনহু যা সমগ্র মুসলিম হৃদয়ে আজও চির অম্লান । এ দিনে অনেক মানুষ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যা ইসলাম সম্মত নয় । মহররমের তাৎপর্য ও গুরুত্বকে উজ্জীবিত রাখতে যারা কারবালার শোকাবহ ঘ্টনার জন্য শোক প্রকাশ করতে চান তারা অপাত্রে রক্ত অপচয় না করে রোগিদের জন্য হাসপাতালে রক্ত দান করলে অনেক সাওয়াবের অধিকারী হবেন বলেও আলেম সমাজ মনে করেন ।
বিশ্বের কোনো কোনো অঞ্চলে আশুরা ও মহররমের শোক প্রকাশের নামে অনেকেই নানা পন্থায় শরীরকে রক্তাক্ত করেন । আর এ বিষয়টি মহররমের পবিত্রতা ও শোক-প্রকাশকারীদের সম্পর্কে নানা নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করছে অনেকের মধ্যেই । এ ধরনের তৎপরতার ফলে ইসলামের শত্রুরা এই মহান ধর্ম সম্পর্কে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানোর সুযোগ নিচ্ছে বলে শীর্ষস্থানীয় অনেক আলেম মনে করেন । আবার অনেকে বলেন, মহররমে শরীর রক্তাক্ত করে শোক পালন হারাম ।
হাদিসের প্রায় সব কিতাবে মহররম মাসের ফজিলত এবং এ মাসের ১০ তারিখ আশুরার রোজা সম্পর্কে সাইয়েদুল মুরসালীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত একাধিক হাদিস রয়েছে । হযরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ রমজানের রোজার পর মহররম মাসের রোজা আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে বেশি ফজিলতময় । -সহিহ মুসলিম: ১৯৮২
মদিনায় হিজরতের পর যখন প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদিদের এ মাসের ১০ তারিখে রোজা রাখতে দেখলেন, তখন তিনি এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন । ইহুদিরা জানালো, এ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন । এ তারিখে ফেরাউন নীল নদে ডুবে মারা যায় । এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হযরত মুসা আলাইহিস সালাম এ দিনটিতে রোজা রাখতেন । মানবতার নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেনঃ আমরাও মুসা (আ.)-এর অনুসরণ করবো । তোমাদের চেয়ে আমাদের অধিকার বরং বেশি । তিনি তখন থেকে মহররমের ১০ তারিখ রোজা রাখা শুরু করলেন এবং সবাইকে নির্দেশ দিলেন । -সহিহ বোখারি: ১৮৬৫
এ মাসের প্রতিটি দিন ও রজনীকে ইবাদাত-বন্দেগি, নফল নামাজ, রোজা পালনের মাধ্যমে অতিবাহিত করা উচিত । আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ মাসে ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকার তৌফিক দান করুন । আমিন

বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আরবী নববর্ষের শুভেচ্ছা

প্রথম কথা হল, ১লা মুহাররম হিজরী বর্ষের প্রথম দিন । কিন্তু এটা ‘ইসলামী পবিত্র দিনসমূহ’ বা ‘ইসলামী ফযীলতপূর্ণ দিবস-রজনী’ শিরোনামে আসবে কিনা সেটা ভাববার বিষয় । ইসলামী ফযীলতপূর্ণ দিবস হতে হলে কুরআন-সুন্নাহয় তার আলাদা ফযীলত উল্লেখ থাকতে হবে । এছাড়া এখানে হিজরী নববর্ষ শব্দ থেকে কেউ বুঝতে পারে যে, অন্যান্য জাতি যেমন নববর্ষ উদযাপন করে, হিজরী নববর্ষও মুসলমানদের জন্য সে রকম উদযাপনের দিবস । অথচ ইসলামে নববর্ষ, বর্ষপূর্তি কিংবা জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার কোনো বিধান নেই । তবে চান্দ্রমাস ও বছরের সাথে যেহেতু রোযা, হজ্ব, ঈদুল ফিত্র, ঈদুল আযহা ও যাকাতসহ বহু ইবাদাত ও শরয়ী বিধিবিধান সম্পৃক্ত এ জন্য এর হেফাযত ও চর্চা রাখা ফরযে কেফায়া । এবং এ ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করা জাতীয় আত্মমর্যাদাবোধ হ্রাস বা বিলুপ্তিরই নামান্তর ।

মুহররম (আরবী: محرم ) ইসলামিক বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। চারটি পবিত্রতম মাসের মধ্যে এটি একটি। মুহররম শব্দটি আরবী যার অর্থ পবিত্র, সম্মানিত। প্রাচীনকাল থেকে মুহররম মাস পবিত্র হিসাবে গন্য। মহররমের ১০ তারিখ বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন দিন, যাকে আশুরা বলা হয়ে থাকে। মহররম মাসের পরবর্তি মাসের নাম সফর
besas kichu din== আশুরার দিনের ঘটনা == মুহররম মাসের দশম দিন ইসলামে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন একটি দিন, কারণ এই দিনে ইসলাম ধর্মমতে অনেক ঘটনার অবতারণা হয়েছে। বিভিন্ন ঘটনাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
  • এই দিনে প্রথম মানব আদি পিতা হযরত আদম [আ.]-কে সৃষ্টি করেন ঈশ্বর (আল্লাহ)।
  • হযরত আদম [আ.]-কে এদিনেই স্বর্গ বা বেহেশতে স্থান দেয়া হয়, এবং পরবর্তীতে এই দিনেই পৃথিবীতে পাঠিয়ে আল্লাহ তাঁকে প্রতিনিধি মনোনীত করেছেন।
  • হযরত নূহ [আ.]-এর সময়কালে এই দিনে মহাপ্লাবন হয়।
  • হযরত ইব্রাহীম [আ.] জন্ম নেন এই দিনে, এবং হযরত মুসা আঃ ও তার বাহিনী ফেরাউনের কবল থেকে উদ্ধার পানও এই দিনে
  • Hajrat Musha [আ.] সমসাময়িক ফেরাউনকে আল্লাহ এই দিনে নীল নদের পানিতে ডুবিয়ে মারেন।
  • হযরত ইউনুছ [আ.] মাছের পেট থেকে মুক্তি পান এই দিনে।
  • হযরত আইয়ূব [আ.] রোগ মুক্তি পান এই দিনে।
  • হযরত ঈসা [আ.] (খ্রিস্টধর্মমতে যিশু) এই দিনে জন্ম নেন এবং পরবর্তিতে তাঁকে সশরীরে ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নেয়া হয় এই দিনে।