সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭

প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন আর নেই


মহান মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবন সাব সেক্টর কমান্ডার ও প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা পিরোজপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দিন আহমেদ সিংগাপুর মাউন্ট এলিজাভেত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন । 
ইন্তানালিল্রলাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন । তাঁর দু’টি কিডনী অচল এবং লিভারের অবস্থাও খারাপ ছিলো । 
পরিবারের পক্ষ থেকে কামাল উদ্দিন দেশবাসীর কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধে এই অকুতোভয় সেনা নায়কের জন্য দোয়া কামনা করেছেন ।  
পিরোজপুরের অহংকার সুন্দরবনের মুকুটহীন সম্রাট মেজর (অব) জিয়াউদ্দিন সম্পর্কে কিছু তথ্য--
জন্ম:
পিরোজপুর জেলা শহরের তিনবারের নির্বাচিত পৌর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দীন আহম্মেদের সন্তান।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা:
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ৯ নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার। তাঁকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা অনন্য।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী :
জিয়াউদ্দিন আহমেদ ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭১ সালে সেনাবাহিনীর মেজর হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জুলাই মাসে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দায়িত্ব পান ৯ নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন অঞ্চলের সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধে রাখেন বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ব্যারাকে ফিরে যান। পরে মেজর হিসেবে পদমর্যাদা পান। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু যখন সপরিবারে নিহত হন তখন তিনি ঢাকায় ডিজিএফআইতে কর্মরত ছিলেন। ৭ নভেম্বর কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহি- জনতার বিপ্লবে তিনি অংশ নেন। এরপর সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কর্নেল তাহেরের সৈনিক সংস্থার পক্ষে অবস্থান নিয়ে তার অনুসারীদের নিয়ে সুন্দরবনে আশ্রয় নেন। '৭৬ সালের জানুয়ারিতে সুন্দরবনে সেনা অভিযানে মেজর জিয়াউদ্দিন গ্রেফতার হন। সামরিক আদালতে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি ও আ স ম আবদুর রব, মেজরজলিল সহ অন্যদের সঙ্গে মেজর জিয়াউদ্দিনও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ নিয়ে তখন সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধারা আন্দোলন শুরু করলে আ স ম আবদুর রব, মেজর জলিলসহ অন্যদের সঙ্গে মেজর জিয়াউদ্দিনও ১৯৮০ সালে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি লাভ করেন। '৮৩ সালে জেনারেল এরশাদের সময় মেজর জিয়াউদ্দিন দেশ ছেড়ে আশ্রয় নেন সিঙ্গাপুরে।
কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন:
'৮৪ সালের অক্টোবরে ছোট ভাই কামালউদ্দিন আহমেদ, ভাগ্নে শামীমসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে চলে যান সুন্দরবনের দুবলার চরে। বনদস্যু বাহিনীগুলোর হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত সুন্দরবনের জেলেদের সংগঠিত করে শুরু করেন শুঁটকি মাছের ব্যবসা। ৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুন্দরবনের মূর্তিমান আতঙ্ক ডাকাত দল কবিরাজ বাহিনীর সঙ্গে শ্যালারচরে সরাসরি বন্দুকযুদ্ধে জয়ী হন মেজর জিয়াউদ্দিন, নিহত হয় কবিরাজ বাহিনীর প্রধান। এরই মাঝে '৮৯ সালে পৌরবাসীর দাবির মুখে নির্বাচন করে তিনি পিরোজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গড়ে তুলেছেন সুন্দরবন বাঁচাও কর্মসূচি নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এর চেয়ারম্যানও তিনি। কর্মজীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত দুলবার চর ফিসারমেন গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছেন। আর সংগত কারণে হাজার হাজার জেলের স্বার্থ রক্ষায় ডাকাতদের প্রতিরোধ করতে হয়েছে। কখনো জেলেদের নিয়ে, কখনো প্রশাসনকে সহায়তা দিয়ে ডাকাতদের নির্মুলের নায়কের ভূমিকা রেখেছেন। আর এ কারণেই অনেকশত্রু তার পিছু নিয়েছে। বিশেষ করে বন ও জল দস্যুদের দমনে তার ভূমিকা প্রশংসিত। আবার প্রশাসনের বনদস্যু নির্মুলে জনবল ও বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন। সুন্দরবনের একাধিক ডাকাত গ্রুপ বিভিন্ন সময় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এসব ডাকাত গ্রুপ জিয়াউদ্দিনকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। এর আগে তিনি একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন।' এরপর দীর্ঘ সময় ধরে দুবলার চরসহ সুন্দরবনের শুঁটকিপলি্ল থেকে দূরে থেকেছে বনদস্যু বাহিনীগুলো। কয়েক বছর ধরে সুন্দরবনে জুলফিকার, গামা, রাজু, মোর্তজাসহ বেশ কয়েকটি শক্তিশালী বনদস্যু বাহিনী জেলে-বাওয়ালীদের মুক্তিপণের দাবিতে একের পর এক অপহরণ শুরু করে। এসব বাহিনী দুবলার চরসহ শুঁটকিপল্লিতে মাঝে মাঝে হানা দিতে থাকে। এসব বাহিনী দুবলার চর ফিশারমেন গ্রুপের কাছে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সর্বশেষ মোর্তজা বাহিনীর সদস্যরা পূর্ব সুন্দরবনের হারবাড়িয়া ও মেহেরালীর চর এলাকার মাঝামাঝি চরপুঁটিয়ায় মেজর জিয়াকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। বন্দুকযুদ্ধে মোর্তজা বাহিনীর চার সদস্য নিহত ও মেজর জিয়া মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।

প্রকাশণা:
মুক্তিযুদ্ধে নিজের ও অন্যান্যদের অংশগ্রহণ এবং যুদ্ধের বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি "সুন্দরবন সমরে ও সুষমায়" নামে একটি বই লিখেছেন।
প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন আর নেই 
মহান মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবন সাব সেক্টর কমান্ডার ও প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা পিরোজপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দিন আহমেদ সিংগাপুর মাউন্ট এলিজাভেত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন । 
ইন্তানালিল্রলাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন । তাঁর দু’টি কিডনী অচল এবং লিভারের অবস্থাও খারাপ ছিলো । 
পরিবারের পক্ষ থেকে কামাল উদ্দিন দেশবাসীর কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধে এই অকুতোভয় সেনা নায়কের জন্য দোয়া কামনা করেছেন ।  
পিরোজপুরের অহংকার সুন্দরবনের মুকুটহীন সম্রাট মেজর (অব) জিয়াউদ্দিন সম্পর্কে কিছু তথ্য--
জন্ম:
পিরোজপুর জেলা শহরের তিনবারের নির্বাচিত পৌর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দীন আহম্মেদের সন্তান।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা:
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ৯ নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার। তাঁকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা অনন্য।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী :
জিয়াউদ্দিন আহমেদ ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭১ সালে সেনাবাহিনীর মেজর হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জুলাই মাসে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দায়িত্ব পান ৯ নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন অঞ্চলের সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধে রাখেন বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ব্যারাকে ফিরে যান। পরে মেজর হিসেবে পদমর্যাদা পান। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু যখন সপরিবারে নিহত হন তখন তিনি ঢাকায় ডিজিএফআইতে কর্মরত ছিলেন। ৭ নভেম্বর কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহি- জনতার বিপ্লবে তিনি অংশ নেন। এরপর সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কর্নেল তাহেরের সৈনিক সংস্থার পক্ষে অবস্থান নিয়ে তার অনুসারীদের নিয়ে সুন্দরবনে আশ্রয় নেন। '৭৬ সালের জানুয়ারিতে সুন্দরবনে সেনা অভিযানে মেজর জিয়াউদ্দিন গ্রেফতার হন। সামরিক আদালতে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি ও আ স ম আবদুর রব, মেজরজলিল সহ অন্যদের সঙ্গে মেজর জিয়াউদ্দিনও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ নিয়ে তখন সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধারা আন্দোলন শুরু করলে আ স ম আবদুর রব, মেজর জলিলসহ অন্যদের সঙ্গে মেজর জিয়াউদ্দিনও ১৯৮০ সালে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি লাভ করেন। '৮৩ সালে জেনারেল এরশাদের সময় মেজর জিয়াউদ্দিন দেশ ছেড়ে আশ্রয় নেন সিঙ্গাপুরে।
কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন:
'৮৪ সালের অক্টোবরে ছোট ভাই কামালউদ্দিন আহমেদ, ভাগ্নে শামীমসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে চলে যান সুন্দরবনের দুবলার চরে। বনদস্যু বাহিনীগুলোর হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত সুন্দরবনের জেলেদের সংগঠিত করে শুরু করেন শুঁটকি মাছের ব্যবসা। ৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুন্দরবনের মূর্তিমান আতঙ্ক ডাকাত দল কবিরাজ বাহিনীর সঙ্গে শ্যালারচরে সরাসরি বন্দুকযুদ্ধে জয়ী হন মেজর জিয়াউদ্দিন, নিহত হয় কবিরাজ বাহিনীর প্রধান। এরই মাঝে '৮৯ সালে পৌরবাসীর দাবির মুখে নির্বাচন করে তিনি পিরোজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গড়ে তুলেছেন সুন্দরবন বাঁচাও কর্মসূচি নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এর চেয়ারম্যানও তিনি। কর্মজীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত দুলবার চর ফিসারমেন গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছেন। আর সংগত কারণে হাজার হাজার জেলের স্বার্থ রক্ষায় ডাকাতদের প্রতিরোধ করতে হয়েছে। কখনো জেলেদের নিয়ে, কখনো প্রশাসনকে সহায়তা দিয়ে ডাকাতদের নির্মুলের নায়কের ভূমিকা রেখেছেন। আর এ কারণেই অনেকশত্রু তার পিছু নিয়েছে। বিশেষ করে বন ও জল দস্যুদের দমনে তার ভূমিকা প্রশংসিত। আবার প্রশাসনের বনদস্যু নির্মুলে জনবল ও বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন। সুন্দরবনের একাধিক ডাকাত গ্রুপ বিভিন্ন সময় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এসব ডাকাত গ্রুপ জিয়াউদ্দিনকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। এর আগে তিনি একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন।' এরপর দীর্ঘ সময় ধরে দুবলার চরসহ সুন্দরবনের শুঁটকিপলি্ল থেকে দূরে থেকেছে বনদস্যু বাহিনীগুলো। কয়েক বছর ধরে সুন্দরবনে জুলফিকার, গামা, রাজু, মোর্তজাসহ বেশ কয়েকটি শক্তিশালী বনদস্যু বাহিনী জেলে-বাওয়ালীদের মুক্তিপণের দাবিতে একের পর এক অপহরণ শুরু করে। এসব বাহিনী দুবলার চরসহ শুঁটকিপল্লিতে মাঝে মাঝে হানা দিতে থাকে। এসব বাহিনী দুবলার চর ফিশারমেন গ্রুপের কাছে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সর্বশেষ মোর্তজা বাহিনীর সদস্যরা পূর্ব সুন্দরবনের হারবাড়িয়া ও মেহেরালীর চর এলাকার মাঝামাঝি চরপুঁটিয়ায় মেজর জিয়াকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। বন্দুকযুদ্ধে মোর্তজা বাহিনীর চার সদস্য নিহত ও মেজর জিয়া মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।

প্রকাশণা:
মুক্তিযুদ্ধে নিজের ও অন্যান্যদের অংশগ্রহণ এবং যুদ্ধের বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি "সুন্দরবন সমরে ও সুষমায়" নামে একটি বই লিখেছেন।

সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭

স্কাইপ কেলেংকারীর পর

স্কাইপ কেলেংকারীর পর 

তিনি ন্যায় বিচারে ভ্রষ্ট পথ অনুসরন করেছিলেন বিধায় একরাশ গ্লানি নিয়ে স্বেচ্ছায় সরে পড়তে হয়েছে ।
২৯ জানুয়ারি – ২০১৩ (নতুন করে যুক্তি-তর্ক শেষে)
মাননীয় আদালত,
২০১১ সালের অক্টোবরের ৩ তারিখ এই আদালতের তদানিন্তন চেয়ারম্যান নিজামুল হক আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ পড়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমি দোষী না নির্দোষ ? আপনি তখন এই আদালতের ৩ সদস্য বিশিষ্ট বিচারকদের একজন সদস্য ছিলেন । তিনি ন্যায় বিচারে ভ্রষ্ট পথ অনুসরন করেছিলেন বিধায় একরাশ গ্লানি নিয়ে স্বেচ্ছায় সরে পড়তে হয়েছে । আজ সেই চেয়ারে আপনি সম্মানিত চেয়ারম্যান । এটাই আল্লাহর বিচার ।
সেদিন তখনকার চেয়ারম্যান নিজামুল হকের প্রশ্নের জবাবে আমি যা বলেছিলাম, সেখান থেকেই আমার সামান্য কিছু বক্তব্য শুরু করছি । ন্যায় বিচারের স্বার্থে আপনাদের যা শোনা জরুরী বলে আমি মনে করি । নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে আমি বলেছিলাম- আমার বিরুদ্ধে আনীত ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং শতাব্দীর জঘন্য ও নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার । আল্লাহর কসম ! আমার বিরুদ্ধে রচনা করা চার সহস্রাধিক পৃষ্ঠার প্রতিটি পাতার প্রতিটি লাইন, প্রতিটি শব্দ, প্রত্যেকটি বর্ণ মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে কোন এক দেলোয়ার শিকদারের করা অপরাধ সমূহ আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউশন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যার পাহাড় রচনা করেছেন।
আজ আমি আল্লাহর নামে শপথ নিয়ে আপনাদের সামনে বলতে চাই, সরকার ও তার রাষ্ট্র যন্ত্র কর্তৃক চিত্রিত ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের হত্যাকারী, লুন্ঠন, গণ হত্যাকারী, ধর্ষক, অগ্নি সংযোগকারী, দেলোয়ার শিকদার বা ‘দেলু’ বা দেইল্যা রাজাকার আমি নই । আমি ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রিয় জন্মভূমি এই বাংলাদেশের আপামর জনসাধারনের নিকট চিরচেনা পবিত্র কোরআনের একজন তাফসীরকারক, কোরআনের পথে মানুষকে আহ্বানকারী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ।
যে আমি সেই যৌবন কাল থেকেই শান্তি ও মানবতার উৎকর্ষ সাধনে পবিত্র কুরআনের শ্বাশ্বত বানী প্রচার করার লক্ষ্যে নিজ জন্মভূমি থেকে শুরু করে বিশ্বের অর্ধশত দেশ গ্রেফতারের পূর্ব পর্যন্ত ভ্রমন করেছি, সেই আমি আজ ৭৩ বছর বয়সে জীবন সায়াহ্নে এসে সরকার ও সরকারী দলের দায়ের করা ‘ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত হানার’ হাস্যকর ও মিথ্যা মামলায় গত ২৯ জুন ২০১০ থেকে আজ পর্যন্ত কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে মানবেতর অবস্থায় দিনাতিপাত করছি । অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস !
আমার বিরুদ্ধে ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত হানার অভিযোগ উত্থাপন এবং তজ্জন্য আমাকে তড়িৎ গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার কাজটি করলো এমন এক সরকার, যারা আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস কথাটি দেশের সংবিধানে বহাল রাখাকে সহ্য করতে না পেরে অবলীলায় তা মুছে দিতে কুন্ঠাবোধ করেনি । যাহোক, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই ৪২ বছরের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে কোন বিষয়েই কোন মামলা ছিলো না । সামান্য একটি জিডিও ছিলো না । গণতন্ত্রের লেবাসধারী বর্তমান এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের বদান্যতায়, মহানুভবতায় মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে আজ আমি ১৭টি মামলার আসামী । সেই জুন ২০১০ থেকে অদ্যাবধি কথিত মানবতাবিরোধী ২০ টি অপরাধের অভিযোগসহ ১৭টি মামলা আমার বিরুদ্ধে দায়ের করে এবং বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে সরকার আমাকে তাদের এক রাজনৈতিক তামাশার পাত্রে পরিনত করেছে, যা আজ দেশবাসীর কাছে মেঘমুক্ত আকাশে দ্বিপ্রহরের সূর্যের মতই স্পষ্ট ।
মাননীয় আদালত,
যে ২০টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আজ আপনাদের সম্মুখে আমি দন্ডায়মান, সেগুলো সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই সাজানো। ১৯৭১ সনে পিরোজপুর বা পাড়েরহাটে পাক বাহিনী যা ঘটিয়েছে, সেসব কাহিনী সৃজন করে চরম মিথ্যাবাদী ও প্রতারক এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তার সহযোগীরা নীতি নৈতিকতার মূলে পদাঘাত করে আমার নামটি জুড়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী, আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী, মৃত্যুর পরের আযাবে বিশ্বাসী, পরকাল ও জাহান্নামের কঠিন শাস্তিতে বিশ্বাসী কোন মুসলমানের পক্ষে এতো জঘন্য মিথ্যাচার আদৌ সম্ভব নয়।
তদন্ত কর্মকর্তা এবং সহযোগিতরা তাদের সৃজিত অভিযোগগুলো প্রমানের জন্য কয়েকজন বিতর্কিত চরিত্র ভ্রষ্ট ও সরকারী সুবিধাভোগী দলীয় লোক ব্যতিত স্বাক্ষী প্রদানের জন্য কাউকেই হাজির করতে পারেননি ।
এতদসত্ত্বেও প্রচন্ড ক্ষিপ্রতার সাথে এই ট্রাইব্যুনালের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিচার প্রক্রিয়ার সমাপ্তি টেনেছেন । তিনি আইন-কানুন, ন্যায় বিচারের শপথ, অভিযুক্ত হিসেবে আমার বক্তব্য প্রদানের প্রাপ্য অধিকার প্রদান কোন কিছুরই তোয়াক্কা করেননি বরং তিনি রায় ঘোষনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন । এরই মধ্যে ঘটে যায় মহান রাব্বুল আলামিনের হস্তক্ষেপের ঘটনা । আজ সেই একদা সমাপ্তকৃত বিতর্কিত মামলার পূন: সমাপ্তির দ্বিতীয় আয়োজন । কিন্তু আমি পূর্বের ন্যায় একই উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি মামলা যেনো-তেনো প্রকারে শেষ করার সেই একই ত্রস্ততা ।
মাননীয় আদালত,
এই ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৃত বিবেচনায় আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত মামলার রায় প্রকাশ করে গেছেন । সাবেক চেয়ারম্যান মিডিয়ায় প্রকাশিত স্কাইপ সংলাপকে মেনে নিয়ে অন্যায় ও বে-আইনী ভাবে পরিচালিত বিচার কার্যের সকল দায়ভার বহন করে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে বিদায় হয়েছেন । ষড়যন্ত্র ও অন্যায়ভাবে বিচার কার্য্য পরিচালনার বিষয়টি তার স্কাইপি কথোপকথনে প্রকাশ পেয়েছে । সাবেক চেয়ারম্যানের বক্তব্যে প্রচ্ছন্নভাবে উঠে এসেছে কিভাবে সরকারের চাপে পড়ে, সুপ্রীম কোর্টের জনৈক বিচারপতির প্রলোভনে পড়ে, তথাকথিত ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের ডিকটেশন অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করে এবং তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে প্রসিকিউশনের সাথে অবৈধ যোগসাজসে বিচার কার্য পরিচালনায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে, আদালতের ক্ষমতাকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে আমার পক্ষের স্বাক্ষীর অগ্রিম তালিকা জমা দিতে বাধ্য করে সেই তালিকা প্রসিকিউশন এবং তাদের মাধ্যমে সরকার, সরকারী দল ও স্থানীয় প্রশাসনকে সরবরাহ করার ব্যবস্থা গ্রহন করে স্বাক্ষীদের উপর চাপ সৃষ্টি ও ভয় ভীতি দেখিয়ে স্বাক্ষ্য প্রদানের জন্য আদালতে হাজির না হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টিসহ নানাবিধ অনিয়ম ও বে আইনী কর্মপন্থার মাধ্যমে সমগ্র বিচার কার্যটি কলুষিত করেছেন ।
এছাড়া সাবেক চেয়ারম্যানের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে সেইফ হাউজ স্ক্যান্ডাল, আদালত প্রাঙ্গন থেকে আমার স্বাক্ষীকে ডিবি পুলিশ কর্তৃক অপহরন ও গুম করার স্ক্যান্ডাল, ১৫ জন স্বাক্ষীর অনুপস্থিতিতে তদন্ত কর্মকর্তার জবানে তাদের বক্তব্য গ্রহন করার স্ক্যান্ডাল এর মতো বিষয়গুলোও আমার মামলায় প্রভাব বিস্তার করে আছে ।
এতো সব ষড়যন্ত্র ও স্ক্যান্ডাল জর্জরিত প্রসিডিংসকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের মাধ্যমে মূলত: সাবেক চেয়ারম্যান নিজেই পরিত্যাক্ত ও পরিত্যাজ্য ঘোষনা করে দিয়ে গেছেন । সুতরাং সেই পরিত্যাজ্য বিষয়ের উপর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কাজ নির্ভর করা যেতে পারে কিভাবে !?
মাননীয় আদালত, 
দেশবাসীর কাছে, বিশেষ করে আপনাদের কাছে আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্র এবং ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচিত হওয়ার পরেও এই মামলা চলে কিভাবে ? গত ২৩/০১/১৩ তারিখে ট্রাইবুনাল-২ এর চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসান শাহীন সাহেব বলেছেন, “এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে । প্রধানমন্ত্রী চাইলে ট্রাইাব্যুনাল থাকবে, না চাইলে আমরা চলে যাবো ।” তাহলে মাননীয় আদালত, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠিত ট্রাইব্যুনাল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বাধীনভাবে বিচার পরিচালনা করবে কিভাবে ? স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলছেন বিচারকে দ্রুততর করা হবে। বিচার তাহলে কে করছে? এই ট্রাইব্যুনালের তাহলে প্রয়োজন কি ? স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অস্তিত্ব তাহলে রইলো কোথায়?
মাননীয় আদালত,
আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সমূহের ব্যাপারে সাবেক চেয়ারম্যানের মতামত বা রায় তার কথোপকথনেই প্রকাশিত হয়েছে । স্কাইপি সংলাপে তিনি স্বীকার করেছেন যে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহের সাথে আইনের খুব একটা সম্পর্ক নেই ।
আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত এই মামলাটি দেশী দরবারের মতোই । তার ভাষায়; “সাঈদীর কেইসটা ডিফারেন্ট । এই সাঈদীর কেইসটার লগে আইনের সম্পর্ক খুব বেশি না । এডা আমাদের দেশী দরবারের মতই ।” ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যানের প্রকাশিত এই মতামত বা মন্তব্যের পর এই মামলা চলার নৈতিক অবস্থান কোথায় থাকে ?
বিদায়ী চেয়ারম্যান আমার মামলাটি আদ্যপ্রান্ত পরিচালিত করে একে যে দেশী দরবারের সাথে তুলনা করেছেন তার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত । দেশি এই দরবার তথা গ্রাম্য শালিসী অনুষ্ঠিত হয় গ্রামের ছোট খাটো ঝগড়া বিবাদ নিয়ে । খুন, ধর্ষণ, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগের মত গুরুতর অপরাধ নিয়ে শালিশ বা দরবার হয়না ।
বিদায়ী চেয়ারম্যানের ভাষায় “সরকার গেছে পাগল হইয়্যা, তারা একটা রায় চায়”। চেয়ারম্যান সাহেব ঠিকই বুঝেছিলেন যে, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সরকার আমাকে ঘায়েল করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কতগুলো ঘটনা সাজিয়ে, জঘন্য ও ন্যাক্কারজনক কিছু অপবাদ দিয়ে আমার বিচারের নামে প্রহসনের আশ্রয় নিয়েছে । আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ব্যপাওে বিশ্বাসযোগ্য কোন স্বাক্ষী নেই, আমার কোন সংশ্লিষ্টতাও নেই । সুতরাং ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার বিচার খেলা কেনো, দরবার করে মিট মাট করলেই তো চলে । এটিই ছিলো প্রাক্তন চেয়ারম্যান এর রায় ।
মাননীয় আদালত,
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এর পূর্বে দু’বার ক্ষমতাসীন ছিলো । তখন আমি যুদ্ধাপরাধী ছিলাম না, আমার বিরুদ্ধে কোন মামলাও হয়নি । একটি জিডিও হয়নি বাংলাদেশের কোথাও । আর তদন্ত কর্মকর্তা এই আদালতে বলেছেন ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পর আমি নাকি ৮৫ সাল পর্যন্ত পলাতক ছিলাম । তিনি আমাকে ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম বলে মিথ্যচার করেছে । ১৯৭৯ সালে আমি সাধারন সমর্থক হিসেবে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করি । এর পূর্বে আমি কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক ছিলাম না । ১৯৯০ সনের শুরু অবধি আমার রাজনৈতিক কোন পরিচয়ও ছিল না । ১৯৮৯ সালে আমি জামায়াতের মজলিসে শুরায় সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হই । এরপর জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য, নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও পরবর্তীতে তথাকথিত মানবতাবিরোধী এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে আপনার কাঠগড়ায় দাড়ানোর পূর্ব পর্যন্ত আমি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দ্বায়িত্ব পালন করছিলাম । রাজনীতিতে আমার তালিকাভূক্তি ১৯৭৯ সালে জামায়াতে ইসলামীর একজন সাধারন সদস্য হিসেবে । উদ্দেশ্য পবিত্র কুরআনের মর্মবানী ও আদর্শের প্রচারকে বৃহত্তর পরিসরে নিয়ে যাওয়া । জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহনের বাইরে আমার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক তৎপরতায় সময় ব্যয় একেবারেই অনুল্লেখযোগ্য । সংকোচনহীন ভাবে বলতে গেলে, রাজনীতির জটিল সমীকরনের বিষয়ে আমার অজ্ঞতা এবং সময়ের অভাবহেতু প্রচলিত রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার অবস্থান একজন এ্যামেচার রাজনীতিবিদের পর্যায়ে । দেশবাসী স্বাক্ষী, রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার কখনো কোনকালেই তেমন কোন ভূমিকা ছিল না । বরাবরই আমার বিচরন ছিলো কোরআনের ময়দানে । জনগনকে কোরআনের দাওয়াত পৌঁছানোই ছিল আমার কাজ । আমার তাফসীর মাহফিলগুলোতে হাজারো লাখো মানুষ অংশগ্রহন করে । এইসব মাহফিল থেকে অসংখ্য অগনিত মানুষ সঠিক পথের দিশা পেয়েছে, নামাজি হয়েছে । এটাই কি আমার অপরাধ ? দেশ বিদেশের লক্ষ কোটি মানুষ আমার উপর আস্থা রাখেন, আমাকে বিশ্বাস করেন, আমাকে ভালবাসেন । আমি সাঈদী লক্ষ কোটি মানুষের চোখের পানি মিশ্রিত দোয়া ও ভালবাসায় সিক্ত । এই ভালবাসাই কি অপরাধ ? বিগত অর্ধ শতাব্দী ধরে আমি কোরআনের দাওয়াত বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছি, এটাই কি আমার অপরাধ ? আমি কোরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহন করেছি, এটাই কি আমার অপরাধ ? মাননীয় আদালত এটা যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে, এ অপরাধে অপরাধী হয়ে হাজার বার ফাঁসির মঞ্চে যেতে আমি রাজি আছি ।
মাননীয় আদালত,
১৯৬০ সালে ছাত্র জীবন শেষ করার পর থেকেই এদেশের সর্বত্র আমি পবিত্র কুরআনের তাফসীর, সীরাত মাহফিল, ওয়াজ মাহফিল ও বিভিন্ন সেমিনার সিম্পোজিয়ামে বক্তব্য রেখে আসছি । মানুষকে সত্য ও সুন্দরের পথে, কল্যাণের পথে, হেদায়তের দিকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বিরামহীন সফর করে যুগের পর যুগ অতিবাহিত করেছি। আমার মাহফিল গুলোতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার জনতার উপচে পড়া উপস্থিতি এবং তাদের প্রান ঢালা আবেগ উচ্ছাসে অনুপ্রানিত হয়ে ৬০ এর দশক থেকেই পবিত্র কুরআন প্রচারকে আমার জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহন করে নিয়েছি । সেই থেকে এটিই আমার প্রধান পরিচয় যে, আমি মহাগ্রন্থ আল-কোরআন এর প্রচারক, সত্য দ্বীনের প্রচারক, মানুষকে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পথে, চির শান্তির মহাসড়কে যোগদানের জন্য একজন আহবানকারী ।
আমার পবিত্র কুরআনের খেদমতের সাক্ষী ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের সবুজ শ্যামল, স্বাধীন-স্বার্বভৌম এই বাংলাদেশ । মূলত ১৯৭৪ থেকে আমার তাফসীর মাহফিল সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয় । প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে আমি তাফসীর মাহফিল করেছি দেশের বিভিন্ন শহরে । এর মধ্যে কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় গ্রেফতারের পূর্ব পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি তাফসীর মাহফিল এর কথা আমি উল্লেখ করছি ।
চট্টগ্রাম প্যারেড গ্রাউন্ড ময়দানে প্রতি বছর ৫ দিন করে টানা ২৯ বছর । পবিত্র কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম এ মাহফিলে দু’বার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ।
খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দান সহ শহরের বিভিন্ন মাঠে প্রতি বছর ২ দিন করে ৩৮ বছর.সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে প্রতি বছর ৩ দিন করে টানা ৩৩ বছর | রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসা মাঠে প্রতি বছর ৩ দিন করে এক টানা ৩৫ বছর | বগুড়া শহরে প্রতি বছর ২ দিন করে একটানা ২৫ বছর|ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে ময়দান, মতিঝিল হাই স্কুল মাঠ ও পল্টন ময়দানে প্রতি বছর ৩ দিন করে একটানা ৩৪ বছর
ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত বায়তুল মোকররম মসজিদ প্রাঙ্গনে সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে টানা ২০ বছর । এসব মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতেন তদানিন্তন মহামান্য রাষ্ট্রপতি এই হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গনে ৭০ দশকের মাঝামাঝি থেকে ধারাবাহিক ৪/৫ বছর মাহফিল করেছি, যেখানে সভাপতিত্ব করেছেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, অংশগ্রহন করেছেন অন্যান্য বিচারক মন্ডলীপাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা স্টেডিয়াম, পাবনা পলিটেকনিক ইন: ময়দানসহ বিভিন্ন মাঠে প্রতি ৩ দিন করে টানা ৩৭ বছরকুমিল্লা পাবলিক লাইব্রেরী ময়দান ও ঈদগাহ ময়দানে প্রতি বছর ৩ দিন করে টানা ২৮ বছর বরিশাল স্টেডিয়াম ও পরেশ সাগর ময়দান, ঝালকাঠী স্টেডিয়াম ময়দান ও পিরোজপুর সরকারী হাইস্কুল ও স্টেডিয়াম ময়দানে প্রতি বছর ২ দিন করে ২৬ বছরএতদ্ব্যতীত বাংলাদেশের এমন কোন জেলা বা উপজেলা নেই সেখানে আমার মাহফিল হয়নি । উল্লেখযোগ্য শহর গুলোর মাহফিলের কোন কোনটিতে উপস্থিত থাকতেন দেশের রাষ্ট্রপতি, সেনা প্রধান, বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, সংসদের স্পীকার, মন্ত্রী, এম.পি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাগন । অথচ মাননীয় আদালত, প্রসিকিউশনের দাবী আমি নাকি মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর পালিয়ে ছিলাম । মিথ্যচারেরও তো একটা সীমা থাকে !! তদন্ত কর্মকর্তা যাই রিপোর্ট করেছে প্রসিকিউশন সেটাকেই বেদবাক্য মনে করে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ঈমান বিসর্জন দিয়ে সমস্ত মেধা প্রজ্ঞা খাটিয়ে মিথ্যাকে সত্য বানাবার জন্য প্রানান্ত হয়েছেন, আফসোস । নিশ্চয়ই এ মিথ্যাচারের জন্য ইহকালে এবং কঠিন হাশরের ময়দানে প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থাকে চড়া মূল্য দিতে হবে ইনশাআল্লাহ, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই ।
মাননীয় আদালত,
পরিশেষে বলতে চাই, আমি আমার সারা জীবন নাস্তিক্যবাদী ইসলাম বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে কোরআন ও হাদীসের আলোকে বক্তব্য দিয়ে এসেছি । আমার মাহফিলে জনতার ঢল নামে । আমার মাহফিলে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ কিচ্ছা-কাহিনী শুনতে আসেনা । কোরআনের দাওয়াত ও রাসুল (সাঃ) এর জীবনাদর্শ জানতে আসেন । আল্লাহর স্বার্বভৌমত্ব ও একত্ববাদ এবং কোরআনের বিপ্লবী দাওয়াত প্রচারে আমি অকুন্ঠ চিত্ত । আমার এ দেহে প্রান থাকা পর্যন্ত এটিই আমার দৃঢ় অবস্থান । এর কোন হেরফের হবার নয় । সরকার এটি অবগত বিধায় তাদের ইসলাম বিদ্বেষী মিশন বাস্তবায়নে আমাকে প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত কওে আমাকে বিতর্কিত ও জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন করার এবং নিশ্চিহ্ন করার জন্যই আমার বিরুদ্ধে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উত্থপন করেছে । ১৯৯৬-২০০১ সালে ক্ষমতায় থাকা কালে কিংবা ৭২ থেকে ৭৫ মেয়াদকালে ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ইসলাম বিদ্বেষী বর্তমান অবস্থান ছিলনা বিধায় আমাকে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে যুক্ত থাকার কারন খুজে পায়নি । কিন্তু এবার ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদীদের সাথে আওয়ামী লীগ জোট বেঁধে সরকার আমাকে মানবতা বিরোধী অপরাধের মহা নায়ক হিসেবে আবিস্কার করেছে ।
মাননীয় আদলত,
১৯৯০ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রতিবছর রমযান মাসে পবিত্র মক্কা মদীনায় থাকা আমার বার্ষিক রুটিনে পরিণত হয়েছিল । রুটিন মাফিক রমযান মাসে ২০০৯ সালে আমি ওমরাহ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলে বর্তমান সরকার আমাকে মক্কা শরীফ যেতে দিল না । হাইকোর্ট ও সুপ্রীমকোর্টের রায় পাওয়ার পরও আমাকে যেতে দেয়া হয়নি । আমাকে বিদেশ যেতে আটকে দেয়ার জন্য পবিত্র রমযান মাসে দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪২ বছর পর পিরোজপুরে প্রথম বারের মত আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধসহ ২টা খুনের মামলা দায়ের করা হলো । রমযান মাসে পবিত্র মক্কা মদীনা যেতে না পেরে আমি মানসিক যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে পড়েছিলাম ।
আল্লাহ তায়ালার অফুরন্ত মেহেরবানীতে পবিত্র হজ্জের মাত্র দু’সপ্তাহ পূর্বে সৌদী বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজীজ আমাকে রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজ পালনের জন্য দাওয়াত পত্র ও যাতায়াতের টিকেট পাঠালেন । আমি দু’টা খুনের মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে হজ্জ পালনে মক্কা শরীফ পৌছুলাম । হজ্জের দু’দিন পরে মীনা কিং প্যালেস বাদশাহ লাঞ্চের দাওয়াত দিলেন । বাদশাহর সাথে করমর্দন হলো, কুশল বিনিময় হলো, পাশাপাশি টেবিলে খানা খেলাম । আমার মনে কোন দূর্বলতা থাকলে আমার জন্য এটা খুবই সহজ ছিলো যে, বাদশাহকে বলে সৌদী আরবে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়া । কিন্তু মাননীয় আদালত, আমি তা করি নাই । হজ্জের সকল কাজ সমাধা করে দেশে ফিরে এসেছি, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো আমার দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন । মাননীয় বিচারপতিগন কারো নির্দেশে বা চাপে পড়ে অথবা আদর্শিক শত্রু ভেবে কারো প্রতি অবিচার করবেন না । তাঁরা আল্লাহ তায়ালা এবং নিজের সুস্থ বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকেই সিদ্ধান্ত নেবেন । মাননীয় আদালত, আমি আমার সে বিশ্বাস হারাতে চাই না ।
মাননীয় আদালত,
স্কাইপি ষড়যন্ত্র ধরা পড়ে যাওয়ার পরে এই বিচারের উপর দেশবাসীর মতো আমার আস্থাও শুন্যের কোঠায় । তথাপি পূর্নগঠিত এই ট্রাইব্যুনালের মাননীয় বিচারপতিগন শুধুমাত্র ও একমাত্র আল্লাহ তায়ালার নিকট দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহীতার অনুভূতি থেকে আপনারা আপনাদের সুবিবেচনা ও বিবেক দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই মামলা নিষ্পত্তি করবেন, এই বিষয়ে আমি আশাবাদি হতে চাই, আস্থাশীল হতে চাই।
বর্তমান সরকার ও সরকারীদল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমাকে তাদের বিশাল প্রতিপক্ষ বানিয়ে তাদের সকল ক্ষমতার অপব্যবহার করে, যুদ্ধাপরাধের কল্পকাহিনী তৈরী করে কোন এক দেলোয়ার শিকদারের অপরাধের দায় আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে আমাকে আজ আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে । আমি একজন ব্যক্তি মাত্র । আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা এবং মিথ্যাচার একাকার হয়ে গিয়ে আমার জন্য যে ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির আবহ সৃষ্টি করেছে তা উপলদ্ধি করা কিংবা মোকাবিলা করার কোনো ক্ষমতাই আমার নেই ।
মাননীয় আদালত,
আমি আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বেপরোয়া যথেচ্ছাচার এবং তা বাস্তবায়নের এক আগ্রাসী মিথ্যাচারের শিকার । আপনাদের এই মহান আদালত রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমি ব্যক্তি সাঈদীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য তথা ন্যায় বিচার করার জন্য ওয়াদাবদ্ধ । আমি আপনাদের সেই শপথ ও দায়বদ্ধতার বিষয়ে আস্থাশীল থাকতে চাই ।সবশেষে আবারও রাজাবিরাজ, স¤্রাটের স¤্রাট, সকল বিচারপতির মহা বিচারপতি আকাশও জমীনের সার্বভৌমত্বের একচ্ছত্র অধিপতি, মহান আরশের মালিক, সৃষ্টিকূলের ¯্রষ্টা, সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নামে শপথ করে বলছি, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কোন মানবতা বিরোধী অপরাধ আমি করি নাই ।
আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চারিতার্থ করার জন্য এবং আমাকে তাদের আদর্শিক শত্রু মনে করে সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে আমার বিরুদ্ধে শতাব্দীর জঘন্য ও নিকৃষ্টতম মিথ্যা এ মামলা পরিচালনা করেছেন । তাদের বর্নিত জঘন্য মিথ্যাচার সত্য হলে আমার মমতাময়ী মায়ের ইন্তেকালের পরে তার জানাযা এবং এর ঠিক ৮ মাস পরেই আমার জৈষ্ঠ্য সন্তান রাফীক বিন সাঈদীর নামাজে জানাযায় ঢাকা, খুলনা ও পিরোজপুরে লক্ষ মানুষের সমাগম হতোনা, জানাযায় মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নিতেন না । আমার মা ও ছেলের লাশ গোপনে গভীর রাতে ৫/১০ জন লোক নিয়ে জানাযা করে দাফন করতে হতো । মাননীয় আদালত, আমার বড় ছেলের ইন্তেকালের খবর শুনে মহান মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার, এই মামলার সরকার পক্ষের কথিত স্বাক্ষী মেজর জিয়া উদ্দীন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর শাহজাহান ওমর বীর প্রতীক আমার শহীদবাগের বাসায় গিয়ে আমার পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিয়েছেন, ঘন্টাকাল আমার বাসায় অবস্থান করেছেন । সরকারের নীল নকশা অনুযায়ী মিথ্যাবাদী তদন্ত কর্মকর্তা চিত্রিত রাজাকার ও দূর্ধর্ষ যুদ্ধাপরাধী যদি আমি হতাম, তাহলে উনাদের মত সম্মানীত মুক্তিযোদ্ধাদের আমার বাসায় যাওয়ার প্রশ্নই উঠতো না ।
আমি আমার এলাকায় ৩টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছি । এতে স্বনামখ্যাত অন্তত: ২০/২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা আমাকে নির্বাচনে জেতাবার জন্য দিনরাত নি:স্বার্থ পরিশ্রম করেছেন, গোটা পিরোজপুর বাসী এর স্বাক্ষী । তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউশনের বক্তব্য সত্য হলে এসব বীর মুক্তিযোদ্ধা তাদের মান মর্যাদা ধূলায় ধুসরিত করে আমার সাথে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে নির্বাচনী পরিশ্রম করতেন ? হিন্দু সম্প্রদায় দায়ের লোকেরা আমাকে ভোট দিতেন ?
মাননীয় আদালত,
আমি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, হে আল্লাহ ! আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা, তার সহযোগী প্রসিকিউশন এবং মিথ্যা স্বাক্ষ্যদাতাদের হেদায়েত করো আর হেদায়েত তাদের নসীবে না থাকলে তাদের সকলকে শারিরিক, মানসিক ও পারিবারিকভাবে সে রকম অশান্তির আগুনে দগ্ধিভুত করো যেমনটি আমাকে, আমার পরিবারকে এবং বিশ্বব্যাপি আমার অগনিত ভক্তবৃন্দকে মানসিক যন্ত্রনা দিয়েছে। আর জাহান্নাম করো তাদের চিরস্থায়ী ঠিকানা ।
হে মহান রাব্বুল আলামীন ! এই আদালতের বিচারক মন্ডলীকে তোমাকে ভয় করে, পরকালের কঠিন শাস্তিকে ভয় করে, সকল প্রকার চাপ এবং কারো নির্দেশ পালন বা কাউকে খুশী করার উর্ধ্বে উঠে শুধু তোমাকে ভয় করে এবং বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে ন্যায় বিচার করার তওফিক দান করো । মাননীয় আদালত, আমি আমার সকল বিষয় সেই মহান আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি, যিনি আমার কর্ম বিধায়ক এবং তাঁকেই আমি আমার একমাত্র অভিভাবক হিসেবে গ্রহন করেছি । সাহায্যকারী হিসেবে মহান আরশের মালিক আল্লাহ রব্বুল আলামীন-ই আমার জন্য যথেষ্ঠ । মাননীয় আদালত, আমাকে কিছু কথা বলতে দেয়ায় আপনাদেরকে ধন্যবাদ ।


চার্য গঠনের দিন বক্তব্য

চার্য গঠনের দিন বক্তব্য (০৩.১০.২০১১)

আমার বিরুদ্ধে আনীত ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং শতাব্দীর নিকৃষ্ট মিথ্যাচার । 

আমার বিরুদ্ধে রচনা করা ৪ সহস্রাধিক পৃষ্ঠার প্রতিটি পাতার, প্রতিটি লাইনের, প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি বর্ণ মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা । ২০টি অভিযোগের সব ক’টিই বানোয়াট । এর সাক্ষীও মিথ্যা । আমি ১৯৭১ সালে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস কিছুই ছিলাম না, কমান্ডার হওয়া তো অনেক দূরের কথা । পাক হানাদার বাহিনীর সাথে ১ মিনিটের জন্যেও কখনো কোনো বৈঠক হয়নি ।
মাননীয় বিচারপতি, সেদিন আপনি প্রথম হজ্ব করে এসেছেন । আপনার মাথায় টুপি ছিল । তখনও আপনার চেহারা থেকে হজ্জের নূরানী আভা মলিন হয়নি । সেদিন আমাকে এখানে আনার পর একজন সম্মানিত প্রসিকিউটর আমার নাম বারবার বিকৃত করে বলছিলেন । আমি আশা করেছিলাম আমার নাম বিকৃত না করার জন্য আপনি প্রসিকিউটরকে নির্দেশ দিবেন । কিন্তু আপনি সেটা করেননি। বরং আপনিও আদেশ দেয়ার সময় প্রসিকিউটরের সুরে সুর মিলিয়ে একই বিকৃত নাম বলেছেন ।”
“আমার সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, পার্লামেন্ট কোথাও কি এ রকম বিকৃত নামের উল্লেখ আছে, যে নাম প্রসিকিউটর উল্লেখ করেছেন । আমি সেদিনই বুঝেছিলাম যে, আমি মারাত্মক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার ।” সূরা হুজুরাতের ১১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “কোন মানুষকে বিকৃত নামে ডেকো না ।”
মাননীয় বিচারপতি, আপনি একদিন এখানে বলেছিলেন, “আল্লাহ আমাকে একটি বিরাট দায়িত্ব দিয়েছেন । আসলেই তাই । বিচারপতির দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মহান । বুখারী, মুসলিম ও মেশকাতসহ সহীহ হাদিস গ্রন্থগুলোতে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আল্লাহর আরশের ছায়ায় সাত শ্রেণীর মানুষ আশ্রয় পাবে । তার মধ্যে ন্যায় বিচারকরা প্রথমেই রয়েছেন । আপনার কাছে সেই ন্যায় বিচারই আশা করি ।
“একজন বিচারপতির জবাবদিহিতা থাকে আল্লাহ তায়ালা এবং নিজ বিবেকের কাছে । এর বাইরে তৃতীয় কোনো স্থানে জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতা থাকলে ন্যায় বিচার করা যায় না। বরং সেটা জুলুম হয়ে যায় । আর জুলুমের পরিণতি জাহান্নাম ।
“১৯৭১ সালে আমি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী ছিলাম না । মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এক যুগেরও বেশি সময় পর্যন্ত আমাকে নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি । ১৯৮০ সালে যখন জামায়াতে ইসলামী আমাকে মজলিসে শূরার সদস্য নির্বাচিত করে তখনই একটি শ্রেণী আমার বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে ।
১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে সরকার গঠন হয় তখন সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই আমি ২০ মিনিটের বক্তব্য দিয়ে বলেছিলাম, “আমি রাজাকার নই । কেবলমাত্র ভারতীয় রাজাকাররাই আমাকে রাজাকার বলতে পারে । মহান স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আমার সামান্যতম ভূমিকাও ছিল না ।” আমার সেই ২০ মিনিটের বক্তব্যের একটি কথাও স্পিকার এক্সপাঞ্জ করেননি । সেই বক্তব্য আজও সংসদে সংরক্ষিত আছে । আজ আমার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে । অথচ আমি গত অর্ধশতাব্দী ধরে বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে মানবতার পক্ষে বক্তব্য রেখে এসেছি ।”
আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার বাদী মিথ্যা, সাক্ষী মিথ্যা । যারা এই অভিযোগনামা রচনা করেছে, যারা মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছে, যারা বাদী হয়েছে তাদের মনে আল্লাহর ভয় ছিল না, হাশরের ময়দানে রাসূলের (সা.) শাফায়াতের আশা ছিল না । তাদের পক্ষে এ কারণেই এ ধরনের চরম মিথ্যাচার সম্ভব হয়েছে । আমাকে জনসম্মুখে হেনস্থা করা, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে । কুরআনের সূরা ইব্রাহীমের ৪৬ ও ৪৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “ওরা ভীষণ ষড়যন্ত্র করেছিল, কিন্তু তা আগেই আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ ছিল । আর ওদের সেই ষড়যন্ত্র এমন ছিল যে, তা বাস্তবায়িত হলে পর্বতসমূহ টলে পড়তো । সুতরাং এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা ভঙ্গ করবেন । বরং আল্লাহই বিজয়ী এবং চরম প্রতিশোধ গ্রহণকারী ।”
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন একটি রচনা ছাড়া আর কিছুই নয় । একটি মিথ্যা রচনার ভিত্তিতে বিচার নামক নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে । এমন মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে আমার প্রতি বিনা অপরাধে আক্রোশমূলকভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত অবিচার করা হলে আল্লাহর আরশ কাঁপবে ।
আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে যারা এমন মিথ্যা প্রতিবেদন রচনা করেছে তাদের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসবে । আমি সেই লানত দেখার অপেক্ষায় থাকবো ।”
আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা। আমি নির্দোষ । আমাকে এসব অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেয়া হোক ।


রাফীক বিন সাঈদীর জানাযায় বক্তব্য ১৪/০৬/১২

রাফিক বিন সাঈদীর জানাজায় বক্তব্য (১৪.০৬.২০১২)

ছেলের লাশের চেয়ে বাপের কাছে বড় বোঝা আর কিছু নেই । 

আমার কলিজার টুকরা রাফিক দেশে-বিদেশে কোরআনের তাফসির করত । তাকে আল্লাহ নিয়ে গেলেন । ক’মাস আগে আমার মায়ের জানাজা পড়ে গেলাম । আর আজ ছেলের জানাজা পড়ছি । আল্লাহ আমাকে সময়ও দিল না ।
আজই (গতকাল) আছরের পর জানতে পারলাম ছেলের মৃত্যুর কথা । আমি বলতাম, আমার ছেলে আমার জানাজা পড়াবে । কিন্তু সে আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল । আল্লাহ, তার কবরে নূর বানিয়ে দাও, তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব কর ।
আমার ছেলের মৃত্যুর পরও আমাকে বাড়িতে যেতে দেয়া হলো না । আমার স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হলো না । ও আল্লাহ!!! তোমার কাছে নালিশ করলাম । আমি মজলুম, আমার দোয়া কবুল কর । যারা কষ্ট করে জানাজায় এসেছেন, তাদের মঙ্গল কর । এদেশকে তুমি কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, আফগান, আলজেরিয়ার মতো বানিওনা । এদেশের মুসলমান, কোরআন-সুন্নাহকে বাঁচাও । দীনের খাদেমদের বাঁচাও ।
আমাকে বানানো হয়েছে যুদ্ধাপরাধী, হত্যা ও ধর্ষণকারী । আল্লাহর কসম করে বলছি, ’৭১ সালের এক ফোঁটা পানি বা কাদা আমার গায়ে লাগেনি । আমার কাজ ছিল কোরআনের প্রচার করা । নাস্তিকরা আমাকে সহ্য করতে না পেরে বন্দী করে রেখেছে ।
আমি শহীদ হতে চাই । তবে কোনো কলঙ্কের বোঝা নিয়ে ফাঁসি তো দূরের কথা, একদিনও সাজা দিও না । আল্লাহ জালেমদের হেদায়াত দাও অথবা বিদায় কর ।


ট্রাইবুনালে সাঈদীর পক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু দিনের বক্তব্য

ট্রাইবুনালে সাঈদীর পক্ষে যুক্তিতর্ক শুরুর দিন বক্তব্য (১৮.১১.২০১২)

আইন ও বিচারের নামে অনিয়মের সবকিছুই ঘটেছে এ পবিত্র আদালত অঙ্গনে । স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলছেন বিচারকে দ্রুততর করা হবে । বিচার তাহলে কোথায় ? স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অস্তিত্ব তাহলে রইলো কোথায় ? আমাকে ৪০ বছর আগে সংঘটিত কিছু অপরাধের ব্যাপারে অভিযুক্ত করা হয়েছে ।
এসব অপরাধের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না । পিরোজপুরের লাখো মানুষ আমার এ কথার সাক্ষী । আমি এর আগেও আপনাদের সামনে কথাগুলো বলার চেষ্টা করেছি । অভিযুক্ত হিসেবে অভিযোগের জবাব দেয়াটা ছিল আমার সাংবিধানিক অধিকার । কিন্তু আমাকে আমার এ অধিকার থেকে আপনারা বঞ্চিত করেছেন । আমাকে কথা বলতে না দিয়েই, অভিযোগের ব্যাপারে আমার জবাব না শুনেই আপনারা কথিত এ বিচার চালিয়ে যাচ্ছেন । অথচ, এ ট্রাইব্যুনালেই দিনের পর দিন কিছু সুবিধাভোগী সাক্ষী, এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং ৯ দিন ধরে একজন বিজ্ঞ প্রসিকিউটরের আরগুমেন্ট আপনি শুনেছেন । শুধু আমার কথাই আপনারা শুনতে চাচ্ছেন না, কিন্তু আপনারা আমারই কথিত বিচারে ব্যস্ত আছেন । আজকে আমার পক্ষের আরগুমেন্ট শুরু হওয়ার দিন ধার্য আছে । এই ট্রাইব্যুনালে আমি আর কোনো কথা বলার সুযোগ পাব কি না তা আমার জানা নেই । তাই আজকে আমি কিছু কথা বলার জন্য মনস্থির করেছি ।
এরআগে এই তথাকথিত মামলার আইও এবং একজন বিজ্ঞ প্রসিকিউটর আমার ব্যাপারে নানাবিধ অপরাধের অভিযোগ তুলেছেন । তারা একই অসত্য কথা বারবার বলছেন, আগেও বলেছেন এখনও বলছেন । আমি কোরআনে কারিমের সূরা বাকারার ৪২নং আয়াতটি এখানে উল্লেখ করতে চাই । আল্লাহতায়ালা বলেছেন (এ সময় চেয়ারম্যান বলেন, প্লিজ, প্লিজ সাঈদী সাহেব, শোনানোর দরকার নেই, এগুলো আমরা শুনেছি আগে।) (তখন সাঈদী বলেন,) আপনি কোরআনে কারিমের আয়াত কেন শুনবেন না ? (চেয়ারম্যান বলেন, এখন বইলেন না, পরে শুনব, এগুলো আগেও শুনেছি।) মাওলানা সাঈদী পবিত্র কোরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, কোরআনে কারিমে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার পোশাক দিয়ে ঢেকে দিও না ।’ বিজ্ঞ প্রসিকিউটর যে কথাগুলো এখানে বলেছেন, যে কথাগুলোর সরাসরি উনার কোনো জ্ঞান নেই, নিজে দেখেননি, নিজে শোনেনওনি । তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে এসব অসত্য বক্তব্য গ্রহণ করেছেন । এ ব্যাপারে সূরা বনি ইসরাইলে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যে ব্যাপারে তোমার সরাসরি কোনো জ্ঞান নেই, তুমি দেখনি সেই ব্যাপারে তুমি বলতে যেও না ।’ একটি হাদিসে সাক্ষী সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, আমি নবী করীমকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এমন এক মুসলমানের বিরুদ্ধে এমন স্বাক্ষ্য প্রদান করল যে অন্যায় সে করেনি, সে স্বাক্ষ্য প্রদানকারী ব্যক্তি নিজেই নিজের ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নিল ।’
মাননীয় আদালত, সূরা হুজুরাতে আল্লাহতায়ালা কী বলেছেন দেখেন, (এ পর্যায়ে চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক আবারও থামার জন্য বললে সাঈদী বলেন,) -চেয়ারম্যান সাহেব আপনি শোনেন মেহেরবানী করে । সূরা হুজুরাতের ৬নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘হে ঈমানদার ব্যক্তিরা যদি কোনো পাপাচারী, দুষ্ট প্রকৃতের লোক তোমাদের কাছে কোনো তথ্য নিয়ে আসে, তবে তোমরা তার সত্যতা পরখ করে দেখবে । (কখনও যেন এমন না হয়) যে, না জেনে তোমরা কোনো একটি সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে ফেললে এবং এর পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদেরই অনুতপ্ত হতে হলো।’ মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা মায়েদার ৮ নং আয়াতে পুনরায় হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, (আরবি) ‘হে ঈমানদারগণ ! তোমরা সত্যের ওপর স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত ও ইনসাফের সাক্ষ্যদাতা হয়ে যাও । কোনো দলের শত্রুতা তোমাদেরকে যেন এমন উত্তেজিত না করে দেয়, যার কারণে তোমরা যাতে ইনসাফ (তথা ন্যায়বিচার) থেকে সরে না যাও।’
মাননীয় আদালত, আমি আমার কথাগুলো বলতে চেয়েছিলাম আপনার কাছে, বিচারকদের অভিযুক্তের কথা শুনতে হয় । আপনি হজ্জ্ব করে এসেছেন, আপনাদের আমি ঈমানদার ব্যক্তি বলে বিশ্বাস করতে চাই । আপনি একদিন বলেছিলেন, আমি ফজরের নামাজ পড়ে অমুক পত্রিকাটি পড়ি, আমি পত্রিকাটির নাম নিলাম না । আবার একদিন এই ট্রাইব্যুনালে আপনি বলেছেন, আল্লাহ আমাকে অনেক বড় দায়িত্ব দিয়েছেন, এ দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে । সে প্রসঙ্গে নবী করীম (সা.) কী বলেছেন শোনেন, (আরবি) ‘হজরত আলী (রা) বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন : ‘যদি দুটি পক্ষ কোনো মোকদ্দমা তোমাদের কাছে নিয়ে আসে, তখন দ্বিতীয় ব্যক্তির অর্থাত্ অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য শ্রবণ না করে অভিযোগকারীর অনুকূলে কোনো রায় দেবে না । হজরত আলী (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর এই নির্দেশ আমি সারা জীবন পালন করেছি । সুতরাং আপনি বিচারক, আপনি বিচার করবেন কীভাবে ? একজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে হাজার হাজার অভিযোগ এলো আর অভিযুক্তের কাছ থেকে যদি তার কোনো কথা না শোনেন, জিজ্ঞাসাবাদ না করেন, তাহলে আপনি সঠিক বিচার কীভাবে করবেন !’ আর যেভাবে আপনি বিচার ত্বরান্বিত করছেন তাতে তো জাতি এটা ভাবতেই পারে যে, আগে তো সাধারণ মন্ত্রীরা বলতেন, আগে তো বুদ্ধিজীবীরা বলতেন, এখন তো স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলছেন—বিচার দ্রুততর করা হবে । বিচার তাহলে কোথায় ? স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অস্তিত্ব তাহলে রইল কোথায় ?
এজন্য আমি আপনাকে অনুরোধ করব, রসুলের বিশুদ্ধ এই হাদিস অনুযায়ী আমার কথা আপনার শোনা উচিত । আমি অভিযুক্ত; আমাকে বলা হয়েছে, আমি পনের বছর পালিয়ে ছিলাম । আমি কোথায় ছিলাম ? আমি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন দীর্ঘ আড়াই মাস পর্যন্ত যশোরে রওশনের বাড়িতে ছিলাম । সেই যশোরে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা রওশনের কাছ থেকে তার কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ করেন নাই, তাকে সাক্ষী বানান নাই । তাকে সাক্ষী করা হয় নাই; কারণ মিথ্যা বলতে সে রাজি হয় নাই । সেখানে আওয়ামী লীগের সভাপতি-সেক্রেটারিকে সাক্ষী করা হয়েছে । বলা হচ্ছে, আমি ত্রিশ হাজার মানুষকে হত্যা করেছি, আমি পিরোজপুরে ঘরবাড়ি ভেঙেছি, নিয়মিত ধর্ষণ করেছি । এই কাজটা যে লোকটা করে, সেই লোককে সেই এলাকার মুসলমানরা তার পেছনে নামাজ পড়ে কী করে? তাকে ভোট দেয় কী করে ? আমি পিরোজপুরের এমন কোনো মসজিদ নাই যে মসজিদে আমাকে দিয়ে ইমামতি করানো হয় নাই । এসব কথা যদি আমার কাছ থেকে না শোনেন, তাহলে আপনারা সুবিচার করবেন কীভাবে ?
আপনি বিচারপতি । আপনার মানবিক সত্তার কাছে আমার দাবি, আপনার মুখের কথাই আইন । আপনাদের আল্লাহতায়ালা অনেক মর্যাদা দিয়েছে ন। যে ব্যক্তি আজকের প্রধানমন্ত্রী, অসম্ভব নয় তিনি আজকের এই কাঠগড়ায় আপনার সামনে এসে দাঁড়াবেন । আজ যিনি প্রেসিডেন্ট, অসম্ভব নয় তিনি একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এসে আসামির বেশে দাঁড়াবেন । আপনাদের এই ক্ষমতা আল্লাহতায়ালা দান করেছেন । এখন আপনি যদি আমার বক্তব্য না শোনেন, তাহলে আমি আজকের মতো শেষ হাদিসটি শোনাই আপনাদের । বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ শরিফে এই হাদিসটি বর্ণনা করা হয়েছে । নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘বিচারক তিন প্রকার হয়ে থাকে । তার মধ্যে শুধুমাত্র একশ্রেণীর বিচারক জান্নাত লাভ করবে । আর বাকি দুই শ্রেণী যাবে জাহান্নামে । যে বিচারক জান্নাতে যাবে সে এমন ব্যক্তি, যে প্রকৃত সত্যকে বুঝতে পেরেছে, অতঃপর সে অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করেছে । দ্বিতীয় সেই বিচারক, যে প্রকৃত সত্য জানতে বা বুঝতে পেরেও রায় দেয়ার ব্যাপারে অবিচার ও জুলুম করেছে, সে জাহান্নামে যাবে । আর তৃতীয় সেই বিচারক, যে অজ্ঞতাবশত ফয়সালা করেছে, সেও জাহান্নামে যাবে ।’
হাদিস বিশারদগণ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, উপরোক্ত হাদিস অনুযায়ী বিচারকদের আসন যেন পুলসিরাতের ওপর স্থাপন করা, যার নিচে জাহান্নামের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড আর সম্মুখপানে জান্নাত লাভের অফুরন্ত নেয়ামতের হাতছানি । এখন বিচারকবৃন্দ সুবিচার অথবা জুলুম করার মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রকৃত গন্তব্য বেছে নিতে পারেন । এখন আপনারা ডিসিশন নিতে পারেন কোনদিকে আপনারা যাবেন । জুলুমের মাধ্যমে এটাকে শেষ করবেন, না আপনি জান্নাতের পথ বেছে নেবেন ।
আমার কথা বলার অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে, আমি আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলাম ।
আইন ও বিচারের নামে অনিয়মের সবকিছুই ঘটেছে এই পবিত্র আদালত অঙ্গনে । তারপরও আমি সুবিচারের প্রত্যাশায় আপনাদের ন্যায়পরায়ণতা ও হক বিচারিক সিদ্ধান্তের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি । একই সঙ্গে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ফয়সালার প্রতীক্ষায় আছি । মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘হে নবী আপনি বলুন ! সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা (চিরতরে) বিলুপ্ত হয়ে গেছে । অবশ্যই মিথ্যাকে বিলুপ্ত হতেই হবে ।