বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ইসলামঃ মাওলানা সাঈদী

অভিভাবক, খতীব ও ঈমামগনের দায়িত্ব


বর্তমানে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে শত্রুপক্ষ যে কৌশলে অপতৎপরতা চালাচ্ছে, তা প্রতিহত করা সরকারেরই দায়িত্ব নয় । দেশের জনগনকে নিজেদেরই স্বার্থে এ ব্যপারে পূর্ণ সচেতন হতে হবে এবং শত্রুদের দমন করার জন্য ঐকান্তিক প্রচেস্টা চালাতে হবে । এ ব্যাপারে দল, মত,  জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল শ্রেনীর নাগরিককেই এগিয়ে সাওতে হবে । 'আমার পছন্দের দল সরকারে নেই, সুতরাং সরকারের দুর্নাম হলে আমার কিছুই যায় আসে না' এই মনোভাব ত্যাগ করতে হবে । যান-বাহনে বা স্কুল অথবা মসজিদে বোমা বিস্ফোরন ঘটলে এতে শুধু সরকারি দলের লোক বা সরকারি দলের সমর্থক লোকদের সন্তানরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না । সকল শ্রেনীর মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সতরাং দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে দলপ্রেম নয় দেশ প্রেমিক হিসেবে সাধ্যানুযায়ী ভুমিকা পালন করতে হবে ।
অভিভাবকগণকে লক্ষ রাখতে হবে, সন্তান কি করছে, কোথায় যাচ্ছে ? এবং কোন শ্রেনীর লোকদের সাথে মেলামেশা করছে । দল হিসেবে সন্তান, ভাই অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন এবং অধীনস্ত কর্মচারী কোন দলকে পছন্দ করছে । ইসলামের নামে কোনো ব্যাক্তি কাউকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করছে কিনা সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে । কে কোন ধরনের বই পড়ছে, ফোনে আভাষে- ইঙ্গিতে জাতিসত্তা ও দেশের প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোন আলোচনা করছে কিনা এ ব্যাপারে অভিভাবকগনকে সচেতন ভুমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে ।


অভিভাবকগন যদি অনুভব করেন যে, তার সন্তান, ভাই অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের কেউ অথবা অধীনস্থ কেউ ইসলামের লেবাসধারী হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোনো সংগঠনের প্রতি সহানুভূতিশীল, তাহলে তাকে প্রকৃত ইসলাম ও ইসলামী দল সম্পর্কে বুঝিয়ে ঐসব সন্রাসবাদী-জঙ্গিবাদী সংগঠনের ছোবল মুক্ত করতে হবে । আর যদি বুঝা যায় যে, আদর ভালোবাসা দিয়ে, চেস্টা সাধনা করেও এদেরকে ভ্রান্ত পথ থেকে ফেরানো যাবে না, তাহলে মায়া মমতা বিসর্জন দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতে নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে এদেরকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিন । মনে রাখবেন, আপনার অধীনস্থদের ব্যাপারে কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর আদালতে কঠিনভাবে জবাব্দিহি করতে হবে । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যে বান্দাকেই বেশী অথবা কম লোকের তত্ত্বাবধায়ক বানিয়েছেন, কিয়ামতের দিন অবশ্যই তাকে প্রশ্ন করা হবে যে, সে অধীনস্থ লোকদের দ্বীনের উপর চালিয়েছিল না ধ্বংস করে দিয়েছিলো । বিশেষ করে তার বাড়ির পরিবারের লোকদের ব্যাপারেও হিসেব গ্রহন করবেন ।
মায়া মমতা ও ভালোবাসার বশবর্তী হয়ে আপনজনদেরকে যদি ধ্বংসের পথ থেকে ফিরানো না হয়, তাহলে কিয়ামতের দিন এরা যখন আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলবে, যারা আমাদের সঠিকপথের সন্ধান দেননি, ভুল পথে চলতে দেখেও নিষেধ করেননি, তারা আজ কোথায় ? তাদেরকে পায়ের নিচে ফেলে পিষে তারপর জাহান্নামে যাবো । তারা যা বলবে, পবিত্র কুরআনে সে কথাগলো এভাবে তুলে ধরা হয়েছেঃ আমরা তাদের পদদলিত করবো, যাতে তারা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয় । আস-সাজদাহ#২৯ 
শিক্ষকগন অভিভাবকদের বড় অভিভাবক । তারা শ্রেনীকক্ষে পাঠদানের সময়  ছাত্রদেরকে বুঝাবেন 'আল্লাহর আইন চালুর নামে যারা সন্ত্রাস করছে তারা আসলে আল্লাহর আইনের দুষমন । ইসলামের শত্রুদের হাতের পুতুল হিসেবেই তারা কাজ করছে । ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান নেই এবং ইসলাম সবসময় নিয়মতান্ত্রিক পন্থাই অনুসরন করে । আদালতে বোমা মেরে বিচারক হত্যা, রেস্টুরেন্টে বিদেশি বন্ধিকরে গলা কেটে হত্যা করে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমান করে বিদেশী আগ্রাসনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে ।
সম্মানিত খতীব, ঈমাম ও ওয়ায়েজীনগনকে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে । এভাবে যদি ইসলামের নামে শ্ত্রুপক্ষ সন্ত্রাস চালাতে থাকে তাহলে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ইসলাম সম্পর্কে অনভিজ্ঞ লোকগুলো ইসলামের ব্যাপারে ভুল ধারনা পোষণ করবে । আর এ জন্য আল্লাহর দরবারে আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখদেরই দায়ী হতে হবে । আলেম সমাজই ইসলাম সম্পর্কে সবথেকে বেশী জ্ঞান রাখেন এবং আল্লাহর আদালতে কোন কোন বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে, এব্যাপারেও তারা পূর্ণ সচেতন রয়েছেন । 'আল্লাহর আইন চালুর নামে যারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে, এ ব্যাপারে সাধারন মানুষকে প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে না করে আল্লাহর আদালতে সর্বগ্রে আলেমদেরই জবাবদিহি করতে হবে, এব্যাপারেও আলেম সমাজ সচেতন রয়েছেন ।
যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী মাহফিলে বক্তৃতা করেন, তারা কুরআন-হাদীস দিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখবেন এবং ইসলামী জীবন বিধান শ্রোতাদের সম্মুখে তুলে ধরবেন । খতীব ও ঈমামগন সপ্তাহে একদিন অর্থাৎ জুমাবারে অনেকলোক সম্মুখে পেয়ে থাকেন । বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে খুতবায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আলোচনা করে সাধারন নাগরিকদেরকে সচেতন করুন । তাদেরকে একথা বুঝান,  যারা আল্লাহর আইন চালুর নামে বোমা বিস্ফোরন ঘটিয়ে বা বিচার বহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে পিতামাতাকে সন্তানহারা করছে, স্ত্রীকে স্বামীহারা করছে, সন্তানকে এতিম করছে, বোনকে ভাইহারা করছে, পরিবারের উপার্জনশীল একমাত্র ব্যক্তিকে হত্যা করে গোটা পরিবারকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করছে, তারা অবশ্যই ইসলাম, মুসলমান, দেশ-জাতি ও সমগ্র মানবতার দুষমন । এদের সন্ধান পাওয়ামাত্র আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফোন করে ধরিয়ে দিন । তাদেরকে বিচারের সম্মুখিন করুন ।
সরযন্ত্রকারীরা বোমাবাজদের দিয়ে যে লক্ষ ও উদ্দেশ্য নিয়ে সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে সৃষ্টিতে নামিয়েছে, তারা যদি আল্লাহ না করুন সফল হয়, তাহলে এর প্রথম শিকার আলেম-উলাম মাশায়েখ তথা ইসলাম পন্থীদেরকেই হতে হবে । দেশের মাদরাসা গুলো বন্ধ করে দেয়া হবে । কারাগার গুলো আলেম উলামা দিয়ে পরিপূর্ণ করা হবে । সংবিধান থেকে আল্লাহর প্রতি আস্থা, বিসমিল্লাহ উঠিয়ে দেয়া হবে । নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলিহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কুটুক্তি বা কটুবাক্য প্রয়োগ করে কবিতা- সাহিত্য রচনা করা হবে । ইসলামী প্রতিষ্ঠান সমুহ বন্ধ করে দেয়া হবে । মুসলমানদের কলিজা পবিত্র কুরআনের অবমাননা করা হবে । সর্বোপরি ইসলাম ও মুসলমানদের হেয়-প্রতিপন্ন করা হবে এবং আলেম-উলামদেরকে ব্যং-বিদ্রুপের পাত্রে পরিনত করা হবে । সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা হবে, যার ফলশ্রুতিতে কুরআন-হাদীসের বিধান প্রচার, প্রসার- স্বাধীনভাবে খুতবা পাঠ ও ইসলামী আন্দোলন নিসিদ্ধ ঘোষণা করা হবে ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে ভয়াবহ এই পরিস্থিতি সাফল্যের সাথে উত্তরণের তাওফিক এনায়েত করুন । আমীন- ইয়া রব্বাল আলামীন























কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন