রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

মৃত্যু মানেই শেষ নয়, অনন্ত জীবনের শুরু ...

وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا
তার প্রতি সালাম আর শান্তি-যেদিন সে জন্মগ্রহণ করে এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করবে এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবে । মরিয়ামঃ ১৫
সফল উদ্যোক্তা, সমাজ সেবক, উদ্যমী  সংগঠক,  মানব দরদী মীর কাশেম আলী জন্মে ছিলেন ১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর । পিতাঃ মীর তৈয়েব আলী মাতাঃ রাবেয়া আখতার । তিনি ২ পুত্র এবং ৩ কন্যার পিতা । ১৯৬৭ সালে SSCতে মেধা তালিকায় ১৫তম স্থান অধিকার করেন । ১৯৬৯ সালে HSC এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন । 
১৯৭৭এর ৬ই ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের যাত্রা শুরু হয় । মীর কাশেম আলী শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় সভাপতি । ১৯৭৯তে তিনি জামায়াত ইসলামিতে যোগদান করেন এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা, কর্ম পরিষদ ও নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন । 
সফল উদ্যোক্তা মীর কাশেম একে একে গড়ে তোলেন ইসলামি ব্যাংক, ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল, ইসলামি ব্যাংক স্কুল এন্ড কলেজ, ইবনে সিনা হসপিটাল, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল, ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ, ফুয়াদ আল খতীব হসপিটাল, দিগন্ত টিভি, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকা এবং কেয়ারী গ্রুপ । এই প্রতিষ্ঠান গুলোর মুনাফার তুলনায় তিনি বেশী মনযোগী ছিলেন মানব সেবায় ।
মহান এই ব্যাক্তিটিকে ২০১২ সালের ১৭জুন  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক জঘন্য মিথ্যা মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয় । গ্রফতারের পূর্বে তাঁর নামে কোথাও কোন মামলা ছিলো না । নানান ভাবে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন । গত ৩০ আগস্ট আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতির এস কে সিনহার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বিচারপতিগন মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন । রায়ের ৫দিনের মাথায় গতকাল ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০:৩৫ মিনিটে কাশিমপুর কারাগার-২এ  ফাসি কার্যকর করা হয় । إِنَّا للهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ
জন্মস্থান মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার সুতালরি গ্রামের বাড়িতে নিজের প্রতিষ্ঠিত মসজিদের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়ীত হয়েছেন শহীদ মীর কাসেম আলী ।


وَلَا تَقُولُوا لِمَن يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَٰكِن لَّا تَشْعُرُونَ
আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না ৷ এই ধরনের লোকেরা আসলে জীবিত ৷ কিন্তু তাদের জীবন সম্পর্কে তোমাদের কোন চেতনা থাকে না"৷ 
And do not say  about those who are killed  in the way of Allah, "They are dead" Rather, they are alive, but you perceive(it) not. Baqarah: 154

আজ পৃথিবীর সমস্ত লাল গোলাপ আপনার জন্যই ফুটেছে ! আমি বিশ্বাস করি ফেরেশতাগণ আজ আপনাকে অভিবাদন জানাতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাবেন । আপনার অন্যান্য সম্মানীত সাথীগনও আপনাকে অভিবাদন জানোর জন্য অপেক্ষা করছে নিশ্চয়ই । ওমর আল মুখতার, সাইয়্যেদ কুতুব, কাদের মোল্লা, নিজামী থেকে শুরু করে আপনি ।
যে হিমালয়সম ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের মানুষের জন্য হৃদয়ে আকাশসম স্বপ্ন আজ সেই অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো । আপনি হাসপাতাল গড়েছেন, ব্যাংক গড়েছেন, টিভি গড়েছেন, স্কুল, কলেজ, মসজিদ গড়েছেন আরও কত কিছু ইতিহাস অবশ্যই স্বাক্ষ্য দেবে ।
সময়টা এখন সৃষ্টিশীল মানুষদের নয় । ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ব্যাংক ডাকাত, শেয়ার মার্কেটর লুটেরারা আজ আমাদের নৈতিকতার জ্ঞান দিতে আসছে ! আসলে ক্ষমতা জিনিসটাই বুঝি এমন ।
যে জাতি যেমন তাদের নেতাও তেমন এটাই চুড়ান্ত সত্য । আপনি আসলে এই জাতির নেতা হওয়ার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি । চেয়ে দেখুন, এই জাতির নেতৃত্বের চেয়ারগুলোতে কারা বসে আছে ?
আপনি দেশের বাইরে গেলেন আর এদেশের মিডিয়া পাড়ার শিয়ালগুলো হুক্কাহুয়া আওয়াজ তুললো, ‘মীর কাসিম পালিয়েছেন!”। আপনি আসলেন’ জানান দিলেন, মীর কাশেমরা পালাতে জানে না’। ইতিহাসের সকল সময়েই মীর কাশেমরা জীবন দিয়েছে কিন্তু তাদের দ্বায়িত্ব ছেড়ে পালায়নি । আপনার শুভাকাংখিরা বারবার আপনাকে দেশে ফিরতে বারণ করেছেন, তারা বলেছেন আপনি ন্যায় বিচার পাবেন না ! কিন্তু আপনি বললেন, ইসলামী আন্দোলনে হাজার হাজার কর্মী প্রাণ দিচ্ছে, নেতারা প্রাণ দেবে না তা কি করে হয় ?
আপনি জানতেন আপনার সাথে কি করা হবে । আপনি জয় করেছেন জীবনকে । মৃত্যুও আপনাকে হারাতে পারেনি । হে মহান কারিগর, আপনি জেনে রাখুন নিস্তব্ধতার এই গহীন রজনীতে পথ হারা মানুষ মীর কাশেমদের দেখানো আলোতেই পথ খুঁজে পাবে ইনশাঅাল্লাহ । ভানুমতির গল্প দিয়ে যারা তাদের বিজয় কেতন উড়াতে চায় সেই বেকুব আত্ম-অহংকারীদের জন্য আফসোস ! সেই দিন তাদের অবশ্যই আসবে যারা আজকের কৃতকর্মের জন্য সবচেয়ে বেশি আফসোস করবে !  সকলকে একদিন আল্লাহ তায়ালার নিকটে হাজিরা দিতে হবে এবং সেদিন তিনি প্রতিটা কাজের হিসেব নেবেন ।
আমাদের বিনাশ নেই । মেঘ দেখে তুই করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে ! 
প্রতিটি গভীর রাত্রি শেষে সুবহে সাদিকের আলোর মত আমরা জেগে উঠবোই । 
 
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، وَعَافِهِ، وَاعْفُ عَنْهُ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ، وَأَبْدِلْهُ دَاراً خَيْراً مِنْ دَارِهِ، وَأَهْلاً خَيْراً مِنْ أَهْلِهِ، وَزَوْجَاً خَيْراً مِنْ زَوْجِهِ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ، وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ [وَعَذَابِ النَّارِ]

ইয়া আল্লাহ ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, তাকে দয়া করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন, তাকে মাফ করে দিন, তার মেহমানদারীকে মর্যাদাপূর্ণ করুন, তার প্রবেশস্থান কবরকে প্রশস্ত করে দিন । আর আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিলা দিয়ে, আপনি তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করুন যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিষ্কার করেছেন । আর তাকে তার ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর, তার পরিবারের বদলে উত্তম পরিবার ও তার জোড়ের (স্ত্রী/স্বামীর) চেয়ে উত্তম জোড় প্রদান করুন । আর আপনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং তাকে কবরের আযাব [ও জাহান্নামের আযাব] থেকে রক্ষা করুন । আমিন ইয়া রব্বাল আলামীন ।
মুসলিম ২/৬৬৩, নং ৯৬৩।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন