রবিবার, ২৮ জুন, ২০২০

তোমরা অত্যাচার করতে করতেই ক্লান্ত হয়ে যাবে, আর আমরা অত্যাচারিত হয়ে হয়েও ক্লান্ত হবো না, ইনশাআল্লাহ ।

তোমরা অত্যাচার করতে করতেই ক্লান্ত হয়ে যাবে,আর আমরা অত্যাচারিত হয়ে হয়েও ক্লান্ত হবো না, ইনশাআল্লাহ ।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হাফিজাহুল্লাহ একটি নাম, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি আন্দোলন, একজন প্রেরনা, একটি ইতিহাস । আল্লামা সাঈদী একটি ব্রান্ড । শুধুমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার কুরআনের বানী মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার অপরাধে আজ ১০টি বছর জেলখানার অন্ধকার ছোট্ট কুঠরীতে বন্ধী ।
২০১০ সালের ২৯ জুন আসর নামাজের পর আমাদের বাসায় শত শত পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় মিন্টু রোডের ডিবি অফিসে । ৫০ বছরের অধিক কালের ধর্ম প্রচারককে "ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের" মতো হাস্যকর

এবং মিথ্যা ও সাজানো মামলায় গ্রেফতার করে, ৩০ জুন ঢাকা মহানগর আদালতে হাজির করে একে একে আরো ১৩টি মামলা দিয়ে টানা ৩৯ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় । সেই থেকে আজবধি বিনা অপরাধে- বিনা দোষে ১০টি বছর কেটে গেলো কারাগারে । যেহেতু জতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন কাজেই জেলকোড অনুযায়ী তিনি ডিভিশন পাওয়ার অধিকার রাখেন কিন্তু তাকে সেই সুবিধা দেয়া হয়নি । কোন অভিযোগ করেননি বরং দেশের সকল আইন মেনে চলেছেন ।
আল্লামা সাঈদী লাখো কোটি জনতার চোখের মনি, বিশ্ব নন্দিত মুফাসসীরে কুরআন, পবিত্র কুরআনের পাখি/স্পিকার/ভাস্যকর । রাম-বাম-নাস্তিকেরা তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলা দেয় যেই মামলায় তাকে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, খুনি‌ চোর, ডাকাত, লুটেরা ধর্ষক বানানোর জন্য মিথ্যা মামলা সাজানো ও সেফহোমের নামে প্রশিক্ষন দিয়ে সাক্ষির ব্যবস্থা করে আপ্রান চেস্টা করা হয় কিন্তু বিচারপতির স্কাইপ কেলংকারী ও আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আমাদের পক্ষের সাক্ষি অপহরন করে ঐ বিচার ব্যাবস্থার প্রতি জনগনের আস্থা এবং বিশ্বাস হারিয়েছিলো ফলে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে দেয়া ফাসির রায়ের প্রতিবাদে সারাদেশে ৭০জন শিশু, নারী পুরুষ পুলিশের গুলিতে রাজপথে অকাতরে জীবন দান করে । রায় কার্যকর নয় শুধুমাত্র রায়ের প্রতিবাদে সারাদেশে উত্তাল ছিলো পরবর্তী তিন দিনে আরো ১৭৯ জন (মোট ২৪৯জন) রাজপথে জীবন দান এবং অসংখ্য মানুষ মামলা হামলা নির্যাতনের স্বিকার হয়ে পজ্ঞুত্ব বরন করেন । জীবন ও রক্তদান করা ঐ সমস্ত কুরআন প্রেমিক ভাই বোনদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা জানাই ।
আল্লামা সাঈদী বিশ্বের অগণন মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন, রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, বিজ্ঞ পার্লামেন্টেরিয়ান । ১০ বছরের কারা জীবনে তিনি হারিয়েছেন তার মমতাময়ী মা । যে মাকে তিনি নিজের জীবনের চেয়ে বেশী ভালোবাসতেন । আমার পরম শ্রদ্ধেয় দাদীও তাকে অত্যান্ত স্নেহ করতেন । কতোটা ভালোবাসতেন ? ইন্তেকালের আগমুহূর্ত পর্যন্ত দাদীকে দেখেছি আব্বার ব্যবহৃত একটা পাঞ্জাবী মাথার কাছে নিয়ে ঘুমুতেন । বুকের কাছে নিয়ে বিড়বিড় করে কথা বলতেন, সব সময় অযু অবস্থায় থাকতেন আর আব্বার জন্য খুব দোয়া করতেন । ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবরের মাগরিবের নামাজের পর সুরা ইয়াসীন শুনতে শুনতে তিনি ইন্তেকাল করেন انا لله وانا اليه راجعون
২০১২ সালের ১৩ জুন বুধবার প্রতিদিনের মতো "তথাকথিত" মানবতা বিরোধী ট্রাইব্যুনাল চলছে । আপনাদের প্রিয় মুফাসসীর আল্লামা সাঈদীর কলিজার টুকরা বড় ছেলে, সদা হাস্যুজ্জল, অমায়িক ব্যবহারে আপনাদের প্রিয়মুখ, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসীরে কুরাআন মাওলানা রাফীক বিন সাঈদী আদালত প্রাজ্ঞনে হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন কিন্তু জালিমেরা সেদিন কোর্ট চলমান রেখেছিলো । আমরা হাসপাতালে ছুটাছুটি করছি ওদিকে আদালতে সাক্ষি চলছে । ফাসি দেয়ার জন্য তাদের কতো তাড়া , হাতে সময় নেই ! বড় ছেলের মৃত্যুতে ১৪ জুন ৬ ঘন্টার প্যারলে আব্বাকে মুক্তি দেয়া হয় কিন্তু মাওলানা রাফীক বিন সাঈদীর বিধবা স্ত্রী এবং তার এতীম সন্তানদের সাথে দেখা সাক্ষাত কথা বলার সুযোগ সেদিন আব্বাকে দেয়া হয়নি । চোখের পানি চোখেই শুকিয়ে গেছে । বুকের ভিতর হাহাকার নিয়ে আব্বা জেলখানায় ফিরে গেছেন এবং সেখানে তার বুকে খুব ব্যাথা উঠে ফলে ইব্রাহীম কার্ডিয়াকে নেয়া হয় । হাসপাতালে ভরতী করলে টেস্টে জানা যায় তার হার্টে তিনটা বল্ক পরে মিরপুর হার্ট ফাঊন্ডেশনে রিং বসানো হয় ।
মীম হুমায়ুন কবীর সাঈদী আমার শ্রদ্ধেয় ছোট চাচা । আল্লামা সাঈদীর ছোট ভাই । আব্বা তাকে খুব স্নেহ করতেন, তার কোন আবদার ফেলতেন না । শহীদ বাগেই থাকতেন । শহীদবাগ জামে মসজিদে আমরা একসাথে এতেকাফ করতাম । ২০১৮ সালে রমযানে আমি কাতার সফরে ছিলাম । রমজানের শেষ দিকে জানলাম কাক্কু অসুস্থ । ঈদের পরের দিন সকালে এয়ারপোর্টে নেমে সরাসরি বারডেম হাসপাতালে গেলাম, অনেকটা সুস্থ শুনলাম । বাসায় ফিরে সন্ধ্যায় আবার গেলাম, সুস্থই দেখলাম , আহা ! ১৮ জুন ২০১৮ ফজরের আগমুহূর্তে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন انا لله وانا اليه راجعون সবাইকেই যেতে হবে ।আমি আপনি কেউ থাকবো না । তবে যে চীরতরে চলে যায় তার পরিবারকে সমবেদনা জানানোর হাজার বছরের সামাজিকতা আমাদের দেশে প্রচলিত আছে । দেশের আইনে কোন বাধা নেই কিন্তু পরিবারকে সান্তনা দেয়া দুরের কথা সেদিন আব্বাকে জানাযার নামাজে পর্যন্ত আসতে দেয়া হয়নি ।
জুলুম নির্যাতন এখানেই শেষ নয় । পেশায় আমি একজন ব্যবসায়ী । ১৯৯৮ সাল থেকে ব্যবসা করি কিন্তু ২০১১ সালে আমার হজ্জ -উমরা লাইসেন্স এবং ১২ সাল থেকে ট্রাভেল এজেন্সী লাইসেন্সটি নবায়ন করা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে । সেই থেকে বেকার বাসায় বসে আছি । ভুল বললাম । বাসায় আর থাকতে পারি কোথায় সরকারের নানান বাহিনী আমাদের খোজ খবর রাখেন । প্রথম প্রথম খুব ভয় পেতাম । একদিন সকালে সেই ভয়কে জয় করলাম ।
খুব মনে আছে । ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ উত্তরায় সকাল ১০টায় বিএনপি মহা সচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেবের সাথে দেখা করে ফেরার পথে ডিবি পুলিশ কোন কারন ছাড়া আমাকে গ্রেফতার করে । আমাকে গ্রেফতার করে শান্তি তাদের পূর্ণ মেলেনি, আমার সাথী সঙ্গী ৩জন সাথে ড্রাইভার এমনকি বোবা যন্ত্র আমার গাড়ীটাকেও গ্রেফতার করে । সময়ের ব্যবধানে জামিন পাই এবং ২০১৩ সালে ১৮ মে আবার গ্রেফতার করে ।
মামলা হামলা এখানেই শেষ নয় । ২০১৯ সালে জানুয়ারী মাসে আমার স্নেহের ছো্ট ভাই "জিয়ানগর" বর্তমান ইন্দুরকানি উপজেলার চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায় । মামলা হামলা জুলুম নির্যাতনের শেষ নাই তবে আমরা নিরাশ কিংবা হতাশ নই ।
আজ প্রায় চার মাস করোনায় লকডাউনের কারনে আব্বার সাথে দেখা নাই, সাক্ষাত নাই, কথা নাই তবুও সেজদাবনত চিত্তে জানাই আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার অশেষ দয়ায় আব্বা সহ আমরা ভালোই আছি, সুস্থ আছি الحمد لله.


আমার হৃদয়ে সঞ্চিত সবটুকুন ভালবাসা যাঁর পবিত্র দু'পায়ে নিবেদিত তিনি আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হাফিজাহুল্লাহ । তাঁর জন্য বিশেষ কোন দিনে নয়, আমি প্রত্যেকটি দিনই তাঁকে ভালবাসি । প্রত্যেকটি দিনই তাঁকে স্মরন করি আর প্রত্যেকটি দিনই তাঁর জন্য দোয়া করি ।

আর দোয়া তো মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মজীদে শিখিয়ে দিয়েছেন । সুরা বনী ইসরাইলের ২৪নং আয়াতে
. رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
- হে আমার রব, আমার পিতা-মাতা উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন ।
আরো দোয়াকরি -যারা জুলুম -নির্যাতন -মামলা -জেল -দুর্ব্যবহার করেছেন করোনার মতো মহামারিতে আল্লাহ তাদেরকে শিক্ষা দিন, হেদায়েত দিন, সুপথে ফিরিয়ে আনুন, সুস্থ রাখুন আর যারা বিপদে আপদে এই দুর্দিনে সাহায্য- সহযোগিতা করেছেন মনে শক্তি জুগিয়েছেন তাদের ঋণ কোনদিন শোধ করার উপায় নাই তবে মহাশক্তিধর আল্লাহ তাদেরকে উত্তম পুরষ্কার প্রতিদান দিন ।
পরিশেষে বলতে চাই- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আপনার জন্যও হৃদয় উজাড় করে দোয়া করতে ইচ্ছা হয় কিন্তু আমি একজন সাধারন মানুষ, পিতা জেলে- মন কাদে, হৃদয় হাহাকার করে । আপনার দরদী মনে এতোটুকুন কি মায়া হয় না যে, ৮৩ বছরের বয়োবৃদ্ধ আলেমেদ্বীন, কুরআনের খাদেম, আপনারই সংসদের একসময়ের সঙ্গী, করোনার এই মহামারীতে ছোট্ট একটি ঘরে একা একা থাকেন ! আপনার কি এতোটুকু চিন্তা হয় না যে, ৪৩ বছরের ডায়াবেটিক্স রুগী -যার বুকে ৫টা রিং বসানো, যে কিনা একা একা হাটতে পারেন না, দাড়িয়ে নামাজ পড়তে পারেন না তিনি কেন করোনার মতো ভয়ংকর মহামারীতে বন্ধী থাকবেন ?! ১০ বছর তো হয়ে গেলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী- আল্লাহ রওয়াস্তে আল্লামা সাঈদীকে মুক্তি দিন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন