রবিবার, ১০ মে, ২০২০

ইসলামের ইতিহাসে বদরের যুদ্ধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম

ইসলামের ইতিহাসে বদরের যুদ্ধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম ।

এ যুদ্ধের সাথে মুসলমানদের আস্তিত্ব ও ইসলামের ভবিষ্যত্ জড়িত ছিল ।

৫৭০ খ্রিস্টাব্দে যাঁর আগমন, ৬১০ খ্রিস্টাব্দে তিনিই নবুয়ত প্রাপ্ত হন । ৬২২ খ্রিস্টাব্দে যিনি মায়াভরা-বুকভরা ব্যথা নিয়ে মদীনায় হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাহলে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ বা ২য় হিজরি কেন বিখ্যাত ? এতদিন যাঁর এক হাতে ছিলো পবিত্র আল কুরআন, অপর শূন্য হাতটিতে এই সালের ১৭ রমজান শুক্রবার তুলে নিলেন উন্মুক্ত তরবারি । কে তিনি ? উম্মতের শাফায়াতকারী, রাসূলে আরাবী, বিশ্বনবী রাহমাতুলি্লল আলামীন হযরত মুহাম্মদ ﷺ । কেন তরবারি হাতে নিলেন ? ইকামাতে দ্বীন প্রতিষ্ঠাকল্পে এবং হক-বাতিল নামক দু'টি শব্দের মর্ম উম্মতের মাঝে সাবলীলভাবে বুঝিয়ে দিতে । সামরিক এ মহা অভিযানের কেন্দ্রবিন্দু কোথায় ছিলো ? সোনার মদীনা মুনাওয়ারা থেকে সোজাপথে ৮০ মাইল পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে; ব্যক্তি, এলাকা বা কূপের নামে নামকরণ করা ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরে ।

প্রধান সেনাপতির সাথে প্রধানত ছিলো আসমানী সাহায্য, ভিন্নধর্মী সেনাবাহিনী মাত্র ৩১৩ জন । সমগ্র সেনাদলে ঘোড়া ছিলো মাত্র দু'টি, ৭০টি উট, ৮টি তরবারি-তাও কিছু তরবারি ছিলো ভাঙ্গা, ৬টি তীর ধনুক, একটি আওয়াজ 'আল্লাহু আকবার' এসব নিয়েই যিনি ও তাঁর সাথীরা বদর প্রান্তরে এসেছিলেন তারা চেয়েছিলেন পরিবর্তন করতে পুরো পৃথিবীর তকদীর । এই তাওহীদী নেশার কারণেই প্রচন্ড- গরমে, রমজানুল মোবারকের ১৭তম দিনে মুখে রোজা, স্বল্পসংখ্যক সৈন্য, অথচ শত্রুপক্ষের ঈমানবিহীন ১০০০ সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী, একশ অশ্বারোহী, ৭০০ উষ্ট্রারোহী, দু'শতাধিক পদাতিক, অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত গোটা বাহিনী, কোটি কোটি টাকার সম্পদ-তাতে ভয় কী মুসলমান ! আখেরীনবী মুহাম্মদ ﷺ-এর সৈন্য বাহিনী জান দিতে ভয় করে না, শিরকেটে যাক কিংবা অক্ষত থাকুক তার কোনো পরোয়া করেনা, বরং সিদ্দিকে আকবর (রাঃ) ও ফারুকে আজম (রাঃ) সে সময়ে দয়াল নবী ﷺকে অভয় দিয়ে বলেই ফেলেছেন-হে হাদীয়ে যামান, আমাদের জান-মাল-সন্তান, আপনার ওপর কোরবান, সুবহান আল্লাহ !

বদরযুদ্ধের পটভূমি :
একটা যুদ্ধের জন্য পরিস্থিতি যে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলো, তাতে কোন সন্দেহ নেই । বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ মক্কার কাফির কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে জন্মভূমি মক্কা, খানায়ে কাবা, বাড়িঘর, আত্মীয়-স্বজন প্রভৃতির মায়া কাটিয়ে সাহাবাগণসহ একটু শান্তিতে বসবাস করার আশায় মদীনায় আগমন করেছিলেন । কিন্তু এখানে এসে তিনি শান্তিতে বসবাস করতে পেরেছেন ? হ্যাঁ, মক্কা থেকে একটু ভালো পরিবেশ সৃষ্টি হলেও ভিতরে ভিতরে ইহুদী, খ্রিস্টান ও পৌত্তলিক ধর্মাবলম্বীদের মনের তীব্র জ্বালা বৃদ্ধি পেয়েছে । তারা গোপনে গোপনে মহানবী ﷺ কে নিঃশেষ করার জন্যে মক্কার কোরাইশ সর্দারদের সাথে বৈঠক করতো সুকৌশলে । মানবতার দুত নবীজী ﷺ এর সাথে ইহুদীদের শত্রুতার প্রধান কারণ ছিলো সুদ নিয়ে । কারণ ইহুদীগণ ছিলো সবাই বিরাট ধনী ও সুদখোর । তারা অন্য কোনো কাজ কর্ম করতো না । কেবল টাকা ধার দিত আর বসে বসে সুদের দ্বারাই পরম সুখে কাল যাপন করতো । আর হযরত রাসুলূল্লাহ ﷺ ছিলেন সুদের ঘোর বিরোধী । কারণ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্টভাবে সুদকে হারাম বলে ঘোষণা করেছেন । শুধু সুদ গ্রহণ করাই নয়, বরং সুদ প্রদান করাও হারাম বলে ঘোষিত হয়েছে । তাই মদীনার মুসলমানগণ সুদ প্রদানের শর্তে টাকা ধার করা সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়েছিলেন । যার ফলে সুদখোর ইহুদীগণ বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল । অতঃপর তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জোট পাকিয়েছিল ।' সীরাতে মুস্তফা, ৩৪৫ পৃঃ

পরবর্তীতে মক্কা থেকে কোরাইশগণ দলবদ্ধভাবে একাধিক্রমে কয়েকবার মদীনার উপকণ্ঠে এসে দস্যুবেশে হামলা করে লুটপাট করে নিয়ে গেলো ।
কিরয বিন যাবের ফেহরির ডাকাতি মদীনার জন্য নিঃসন্দেহে একটা যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ ছিল । কেননা কোন জ্যান্ত জাগ্রত সরকার নিজ সীমানার অভ্যান্তরে বহিরাগতদের এমন অপরাধজনক অনুপ্রবেশকে আক্রমন ছাড়া অন্য কোন অর্থে গ্রহন করতে পারে না । অপরদিকে নাখলার ঘটনা ঘটে গেলো । ঐ ঘটনা যদিও সীমান্ত সংঘর্ষের মতোই ছিল, যা সরকার ও সেনাপতির অনুমতি ছাড়াই দু'দেশের সৈনিকদের মধ্যে সংগঠিত হয়ে থাকে । এ দুটিই ছিলো মক্কা-মদীনায় যুদ্ধের ভূমিকা বা বদর যুদ্ধের প্রাথমিক সূত্রপাত ।

বদরের যুদ্ধকালীন সময় :
বিভিন্ন ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর একদিন হাবিবুল্লাহ রাসুলুল্লাহ মুহাম্মদ ﷺ জানতে পারলেন যে, আবু সুফিয়ান ইবনে হারবের নেতৃত্বে কোরাইশদের একটি বিরাট কাফেলা সিরিয়ার দিক থেকে এগিয়ে আসছে । সে কাফেলায় কুরাইশদের সম্পদ এবং বাণিজ্যিক সম্ভার রয়েছে । আবু সুফিয়ান এক পর্যায়ে জানতে পারলেন যে, সাইয়্যেদুল মুরসালীন মুহাম্মদ ﷺ ও তাঁর সাথীগণ যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছেন । হিজাযের কাছাকাছি এসে আবু সুফিয়ান ব্যাপারটা আঁচ করতে পারলো এবং দামদাম ইবনে আমর গিফারীকে তৎক্ষণাৎ মজুরীর বিনিময়ে মক্কা পাঠিয়ে দিল । কুরাইশদের ধন-সম্পদ রক্ষা করার জন্যে অস্ত্রে সজ্জিত লোক পাঠাতে ও বিশ্বনবী মুহাম্মদ ﷺ এর দলবলকে আক্রমণ করার জন্যে লোক পাঠাতে বলল । দামদাম খুব দ্রুত সংবাদ নিয়ে মক্কায় পৌঁছে গেল ।

মক্কার কুরাইশ সরদাররা সংবাদ শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল, তারা দাঁত কিড়মিড় করে বলেছিল, মুহাম্মদ এবং তাঁর সাহাবাদের মক্কার বাণিজ্য কাফেলার প্রতি চোখ তুলে তাকানোর সাহস কি করে হলো ? সর্দার আবু জাহেলের নেতৃত্বে মক্কার সৈন্যবাহিনী অতঃপর পথে বেরিয়ে পড়লো ।

পরিস্থিতির আলোকে বিশ্বনবী রাসুলুল্লাহ ﷺ মজলিশে শুরার বৈঠক আহ্বান করলেন । বৈঠকে সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় । সেনা অধিনায়ক এবং সাধারণ সৈন্যদের মতামত নেয়া হয় । কিছু সংখ্যক মুসলমান রক্তাক্ত সংঘর্ষের কথা শুনে কাঁপতে শুরু করলো । নেতাদের মতামত চাওয়া হলো । সকলেই চমৎকার মনোভাব প্রকাশ করলো । ইয়া রাসূল আল্লাহ ﷺ, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি । মুহাজিরগণ ও আনসারগণ অভয় দিয়ে মহানবী মুহাম্মাদ ﷺকে বললেন, সেই আল্লাহর শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন । আপনি যদি আমাদের সঙ্গে নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে চান, তবে আমরাও ঝাঁপিয়ে পড়বো । সুবহানআল্লাহ । আমাদের একজন লোকও পেছনে পড়ে থাকবে না । আগামীকাল আপনি আমাদের সঙ্গে নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই । আমাদের মনে কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই । আমরা রণনিপুণ । এমনও হতে পারে আল্লাহ তায়ালা আমাদের মাধ্যমে এমন বীরত্বের প্রকাশ ঘটাবেন, যা দেখে আপনার চক্ষু শীতল হয়ে যাবে । সুবহান আল্লাহ । আর রাহীকুল মাখতুম, ২১৬ পৃঃ স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত গ্রন্থ ।

অতঃপর সাইয়্যেদুল মুরসালীন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবারা সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে হেমান নামক পাহাড় ডান দিকে রেখে বদর প্রান্তরের কাছাকাছি এসে তাঁবু স্থাপন করলেন । এখানে অবতরণের পর মানবতার বন্ধু হুজুর ﷺ তাঁর গারে ছুরের সাথী হযরত আবু বকর (রাঃ)কে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সংগ্রহে বের হলেন । মক্কার সৈন্যদের তাঁবু দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন । এমন সময় আরবের একজন বৃদ্ধের দেখা পেলেন ।

দয়ালনবী আখেরী রাসুল ﷺ নিজের পরিচয় গোপন রেখে তাঁকে কুরাইশ ও মোহাম্মদের সাহাবী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন । কিন্তু বুড়ো বেঁকে বসলেন । সে বললো, নিজের ও দলের পরিচয় দিন অন্যথায় আমি কিছু বলবো না । মহানবী রাষ্ট্রনায়ক মুহাম্মাদ ﷺ বললেন, আপনার কাছে আগে আমরা যা জানতে চেয়েছি তা বলুন পরে আমারা আমাদের পরিচয় দিবো । বৃদ্ধ বললেন,
মুহাম্মদ ﷺ ও তাঁর সাথীরা যদি আমাকে সত্য বলে থাকে তাহলে তারা অমুক জায়গায় থাকার কথা এবং মক্কার কুরাইশ যোদ্ধারা যদি সত্য বলে থাকে তাহলে তারা অমুক জায়গায় থাকার কথা । ঠিক তার কথামত সে জায়গায়ই প্রত্যেকে অবস্থান করেছিল । অতঃপর মক্কার কোরাইশ বাহিনী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নেয়া শুরু করলেন সাহাবায়ে কেরাম । পরের দিন সাহাবী রিপোর্টাররা কয়েকজন ব্যক্তিকে ধরে এনে নবীজীর কাছে উপস্থাপন করলেন, বিশ্বনবী বললেন, আবু জাহেলের লোক কত ? তারা বলল জানি না । দৈনিক তারা কয়টি উট জবাই করে ? তারা বলল ৯টি আবার কোন্ দিন ১০টি । তখন হুজুরে পাক মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, তাদের সংখ্যা ৯০০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে হবে । সুবহান আল্লাহ । আর রাহীকুল মাখতুম, ২১৭ পৃঃ।
জামে তিরমিযী, আবওয়াবুল জিহাদ ১ম খ-, পৃঃ ২০১ রাসূল ﷺ এরপর সেনা বিন্যাস করেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে রওয়ানা হয়ে যান । সেখানে আখেরী রাসুল ﷺ হাতে ইশারা করে দেখিয়ে বলেছিলেন যে, আগামীকাল ইনশাআল্লাহ এই জায়গা হবে অমুকের বধ্যভূমি । অতঃপর সাহাবারা নিরুদ্বেগ প্রশান্তির সাথে রাত কাটালেন ফলে আল্লাহ তায়ালা সে রাতেই রহমতের বৃষ্টি দিয়ে জানিয়ে দিলেন, মাওলার রহমত তোমার সাথে আছে । সূরা আনফাল, ১১নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিলেন- إِذْ يُغَشِّيكُمُ النُّعَاسَ أَمَنَةً مِّنْهُ وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُم مِّنَ السَّمَاءِ مَاءً لِّيُطَهِّرَكُم بِهِ وَيُذْهِبَ عَنكُمْ رِجْزَ الشَّيْطَانِ وَلِيَرْبِطَ عَلَىٰ قُلُوبِكُمْ وَيُثَبِّتَ بِهِ الْأَقْدَامَ
"অর্থাৎ যখন তিনি আরোপ করেন তোমাদের উপর তন্দ্রাচ্ছন্ন তা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রশান্তির জন্য এবং তোমাদের উপর আকাশ থেকে পানি অবতরণ করেন, যাতে তোমাদিগকে পবিত্র করে দেন এবং যাতে তোমাদের থেকে অপসারিত করে দেন শয়তানের কুমন্ত্রণা অপবিত্রতা । আর যাতে করে সুরক্ষিত করে দিতে পারেন তোমাদের অন্তরসমূহকে এবং তাতে যেন সুদৃঢ় করে দিতে পারেন তোমাদের পা গুলোথা
খোঁজ নিয়ে জানা গেল সে সময়ে শত্রুদের মাঝে পারস্পরিক মতবিরোধ দেখা দিয়েছে । একদল যুদ্ধ করবে আরেকদল যুদ্ধ না করে ফিরে যাবে কিন্তু আবু জাহেলের কুটনৈতিক বুদ্ধির কাছে তারা হার মানলো । উভয় বাহিনী যখন মুখোমুখি হতে শুরু করল । প্রিয়নবী রাহমাতুলি্লল আলামীন হযরত মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর কাছে দরখাস্ত করলেন, 'হে আল্লাহ কুরাইশরা পরিপূর্ণ অহঙ্কারের সাথে তোমার বিরোধীতায় এবং তোমার রাসূলকে মিথ্যা প্রমাণ করতে এগিয়ে এসেছে । হে আল্লাহ আজ তোমার প্রতিশ্রুত সাহায্য বড় বেশি প্রয়োজন । হে আল্লাহ, আজ তুমি ওদের ছিন্ন ভিন্ন করে দাও ।'

কাতার সোজা করার পর রাহমাতুলি্লল আলামীন হযরত মুহাম্মদ ﷺ সাহাবীদের বললেন, তার পক্ষ থেকে নির্দেশনা না পেয়ে কেউ যেন যুদ্ধ না করে । পৌত্তলিকরা যখন দলবদ্ধভাবে তোমাদের কাছে আসবে তখন তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করবে, লক্ষ্য রাখবে যেন তীরের অপচয় না হয় । "ওরা তোমাদেরকে ঘিরে না ফেলা পর্যন্ত তরবারি চালনা করবেনা।" অতঃপর নবীজী ﷺ আবুবকর (রাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে অবস্থান কেন্দ্রে চলে গেলেন ।

অন্যদিকে পৌত্তলিকদের হেডমাস্টার ও সভাপতি আবু জেহেল আল্লাহর কাছে ফয়সালার জন্য দোয়া করলো । সে বললো, হে আল্লাহ আমাদের মধ্যে যে দল আত্মীয়তার সম্পর্ক অধিক ছিন্ন করেছে এবং ভুল কাজ করেছে, আজ তুমি তাদেরকে ধ্বংস করে দাও এবং তুমি আমাদের সাহায্য কর । পরবর্তী সময়ে আবু জেহেলের এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করেই আল্লাহ তায়ালা সূরা আনফালের ১৯নং আয়াতে বলেন- إِن تَسْتَفْتِحُوا فَقَدْ جَاءَكُمُ الْفَتْحُ ۖ وَإِن تَنتَهُوا فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَإِن تَعُودُوا نَعُدْ وَلَن تُغْنِيَ عَنكُمْ فِئَتُكُمْ شَيْئًا وَلَوْ كَثُرَتْ وَأَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ
তোমরা যদি মীমাংসা কামনা কর, তাহলে তোমাদের নিকট মীমাংসা পৌছে গেছে । আর যদি তোমরা প্রত্যাবর্তন কর, তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম এবং তোমরা যদি তাই কর, তবে আমি ও তেমনি করব । বস্তুতঃ তোমাদের কোনই কাজে আসবে না তোমাদের দল-বল, তা যত বেশীই হোক । জেনে রেখ আল্লাহ রয়েছেন ঈমানদারদের সাথে ।

অতঃপর মুসলিম বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ মুজাহিদ উবাইদা (রাঃ) উতবা ইবনে রাবীয়ার বিরুদ্ধে. হযরত হামযা (রাঃ) শাইবার বিরুদ্ধে, হযরত আলী (রাঃ) ওয়ালীদ ইবনে উতবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন এবং প্রত্যেককে খতম করে দিলেন । সীরাতে ইবনে হিশাম, ৩৪৩ পৃঃ।

উভয় পক্ষে প্রচন্ড- যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাহমাতুলি্লল আলামীন সাইয়্যেদুল মুরসালীন আখেরীনবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর দরবারে এই দোয়া করলেন, হে আল্লাহ যদি আজ মুসলমানদের এই দল নিশ্চিহৃ হয়ে যায়; তবে দুনিয়ায় এবাদত করার মতো কেউই থাকবে না । হে আল্লাহ তুমি কি এটা চাও যে, আজকের পরে কখনোই তোমার এবাদত করা না হোক ? হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসুল আল্লাহ ﷺ হাত নামান, থামুন, আপনার দোয়ার কারণে আল্লাহর আরশ কাপঁতেছে । এদিকে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের প্রতি আদেশ পাঠালেন যা সূরা আনফালের ১২নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে- إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلَائِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُوا الَّذِينَ آمَنُوا ۚ سَأُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُوا الرُّعْبَ فَاضْرِبُوا فَوْقَ الْأَعْنَاقِ وَاضْرِبُوا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ
"স্মরণ করো, তোমাদের প্রতিপালক ফেরেশতাদের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন যে, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। সুতরাং তোমরা মোমেনদেরকে অবিচলিত রাখো; যারা কুফরী করে আমি তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করে দেব। হে ফেরেশতাগণ, তোমরা শত্রুদের গর্দানের উপরিভাগে আঘাত করো; আরো আঘাত হানো প্রত্যেক গিরায় গিরায় জোড়ায় জোড়ায়' ।
এদিকে আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয়নবী রাহমাতুলি্লল আলামীন সাইয়্যেদুল মুরসালীন আখেরীনবী হযরত মুহাম্মদ ﷺএর প্রতি এ মর্মে অহী পাঠালেন, যা সূরা আনফালের ৯ নং আয়াতে বর্ননা করা হয়েছে--إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُم بِأَلْفٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ مُرْدِفِينَ
"তোমরা যখন ফরিয়াদ করতে আরম্ভ করেছিলে স্বীয় পরওয়ারদেগারের নিকট, তখন তিনি তোমাদের ফরিয়াদের মঞ্জুরী দান করলেন যে, আমি তোমাদিগকে সাহায্য করব ধারাবহিকভাবে আগত হাজার ফেরেশতার মাধ্যমে" ।

রাহমাতুলি্লল আলামীন সাইয়্যেদুল মুরসালীন আখেরী রাসুল হযরত মুহাম্মদ ﷺ কাছে এ সময় হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আসলেন । তিনি চকিতে মাথা তুলে বললেন, আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) খুশি হও । তোমাদের কাছে আল্লাহর সাহায্য এসে পৌঁছেছে । জিব্রাঈল ঘোড়ার লাগাম ধরে ঘোড়ার আগে আগে আসছেন । ধুলোবালি উড়ছে ।

মহানবী বিশ্বনবী বিশ্বনেতা ﷺ এরপর কামরা থেকে বর্ম পরিহিত অবস্থায় বের হলেন এবং উদ্দীপনাময় ভঙ্গিতে সামনে অগ্রসর হওয়ার জন্যে সাহাবীদেরকে বলেছিলেন যে, আর তিনি এক মুঠো ধূলি কাফেরদের প্রতি নিক্ষেপের সময় বললেন, 'শাহাতিল উজুহ' অর্থাৎ ওদের চেহারা আচ্ছন্ন হোক । এই নিক্ষিপ্ত ধুলি প্রত্যেক কাফেরের চোখ, মুখ, নাক ও গলায় প্রবেশ করলো । একজনও বাদ গেলনা । যা বর্তমান সময়ের মারনাস্ত্র, ক্ষেপনাস্ত্র, চালকবিহীন ড্রোন থেকেও হাজার হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী ছিলো । এ সর্ম্পকে আল্লাহ তায়ালা সূরা আনফালের ১৭ নং আয়াতে বলেন-- فَلَمْ تَقْتُلُوهُمْ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ قَتَلَهُمْ ۚ وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ رَمَىٰ ۚ وَلِيُبْلِيَ الْمُؤْمِنِينَ مِنْهُ بَلَاءً حَسَنًا ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
"সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন । আর তুমি মাটির মুষ্ঠি নিক্ষেপ করনি, যখন তা নিক্ষেপ করেছিলে, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলেন আল্লাহ স্বয়ং যেন ঈমানদারদের প্রতি এহসান করতে পারেন যথার্থভাবে । নিঃসন্দেহে আল্লাহ শ্রবণকারী; পরিজ্ঞাত"।
তখন সাইয়্যেদুল মুরসালীন আখেরী রাসুল হযরত মুহাম্মদ ﷺ সকলকে অগ্রগামী হয়ে যুদ্ধ করার জন্যে তাগিদ দিলেন এবং বললেন, যারা এই যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করবে তারা জান্নাতি । সাহাবায়ে কেরাম এ কথা শুনে আরো খুশি হয়ে গেলেন । রাসূল আকরাম ﷺ যখন এই জবাবী হামলার নির্দেশ দেন তখন শত্রুদের হামলার তীব্রতা কমে আসে ।

মানবতার বন্ধু মহানবী বিশ্বনবী বিশ্বনেতা ﷺ এর উৎসাহে সাহাবীরা বিপুল বিক্রমে লড়াই করেন । এ সময়ে ফেরেশতারা মুসলমানদের সাহায্য করেন ।" যখন অভিশপ্ত ইবলিস কুরাইশদের কাছে সুরাকা ইবনে মালেকের আকৃতি ধারন করে যুদ্ধে সাহায্য করার কথা বলেছিল কিন্ত যুদ্ধের ময়দান থেকে পালায়নের সময় মক্কার মুশরিকরা বলতে লাগল, সুরাকা তুমি কোথায় যাচ্ছ ? তুমি কি বল নি আমাদের সাহায্য করবে ? সুরাইকা বললো, আমি এমন কিছু দেখতে পাচ্ছি যা তোমরা দেখতে পাওনা । আল্লাহকে আমার ভয় হচ্ছে, তিনি কঠোর শাস্তিদাতা । এরপর ইবলিশ সমুদ্রে গিয়ে আত্নগোপন করলো । আররাহীকুল মাখতুম ২২৫ পৃঃ

শয়তানের পালায়ন করার কারণ সর্ম্পকে সে যা বলল আল্লাহ তায়ালা সূরা আনফালের ৪৮ নং আয়াতে তা বিশ্ববাসীকে শুনিয়ে দিলেন-
وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَّكُمْ ۖ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِّنكُمْ إِنِّي أَرَىٰ مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ ۚ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ
"আর যখন সুদৃশ্য করে দিলো শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপকে এবং বললো যে, আজকের দিনে কোন মানুষই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না আর আমি হলাম তোমাদের সমর্থক, অতঃপর যখন সামনা সামনী হল উভয় বাহিনী তখন সে অতি দ্রুত পায়ে পেছনে দিকে পালিয়ে গেল এবং বললো, আমি তোমাদের সাথে না-আমি দেখছি, যা তোমরা দেখছ না; আমি ভয় করি আল্লাহকে । আর আল্লাহর আযাব শাস্তি অত্যন্ত কঠিন" ।

বদর যুদ্ধে ফেরেশতাগণ অংশগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু কিভাবে শত্রু নিধন করতে হয় তা তাদের জানা ছিল না । আল্লাহ্ তায়ালা সূরা আনফালের ১২নং আয়াতে তাঁদেরকে শত্রুর উপর আঘাত হানার কৌশল শিক্ষা দিয়ে এরশাদ করেন ।
হে ফেরেশতাগণ, তোমরা শত্রুদের গর্দানের উপরিভাগে আঘাত করো; আরো আঘাত হানো প্রত্যেক গিরায় গিরায়ব। ফেরেশতাগণ কর্তৃক শত্রু নিধনের আলামত ছিল গলায় কালো দাগ । সাহাবায়ে কেরাম বলেন, আমরা তরবারি দ্বারা আঘাত করার পূর্বেই কাফেরদের মস্তক দ্বিখন্ডিত- হয়ে পড়তো । এভাবে ৭০ জনের মধ্যে ৬৪ জন ছিল ফেরেশতাদের আঘাতে নিহত হয়েছে । আমাদের হাতে মাত্র ৬ জন নিহত হয়েছে । (তাফসীরে রুহল বয়ান)।

অপরদিকে আখেরী রাসুল বিশ্ব নবী ﷺ এর মুজেযা যুদ্ধের ময়দানে প্রকাশ পেলে সাহাবায়ে কেরাম আরো তেজদীপ্ত হয়ে উঠেন । যুদ্ধে ওকাশা (রাঃ) নামক এক সাহাবীর তরবারি ভেঙ্গে যায় । মহানবী বিশ্বনবী বিশ্বনেতা ﷺ তাকে খেজুরের একটি শুকনো ডাল দিয়ে বললেন, তুমি এটা দিয়ে যুদ্ধ করো । আল্লাহর কুদরতে খেজুরের ডাল ইস্পাতের তলোয়ারে পরিণত হয়ে গেলো । সুবহানআল্লাহ এই তলোয়ারের নাম রাখা হয় আউন বা আল্লাহর সাহায্য । যা দিয়ে ওকাশা (রাঃ) জীবনভর যুদ্ধ করেছেন ।

অন্যদিকে যুদ্ধের ময়দানে মুয়ায ইবনে আমর (রাঃ) এর একটি হাত আবু জেহেলের পুত্র ইকরামার আঘাতে দ্বিখন্ডিত হয়ে যায় । তিনি হাতের খন্ডিত অংশ নিয়ে আখেরী রাসুল বিশ্ব নবী ﷺএর কাছে উপস্থিত হলেন এবং নবীজী ﷺ সেই খন্ডিত হাত সংযুক্ত করে তাতে থুথু মোবারক লাগিয়ে জোড়া দিয়ে দিলেন । সাথে সাথে আল্লাহর মেহেরবাণীতে তার হাতখানা জোড়া লেগে গেল । তিনি উক্ত হাত নিয়ে সুস্থ অবস্থায় হযরত ওসমান (রা:) এর খেলাফাতকাল পর্যন্ত বেঁচেছিলেন ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই অমুসলিমদের বাহিনীতে ব্যর্থতা ও হতাশার সুস্পষ্ট লক্ষণ ফুটে উঠলো । মুসলমানদের প্রবল আক্রমণের মুখে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লো । কাফের কোরাইশরা পশ্চাদপসারণ করতে লাগলো এবং তাদের মনে হতাশা ছেয়ে গেল । মুসলমানরা কাউকে হত্যা করেছিলেন, কাউকে যখম করেছিলেন, কাউকে ধরে নিয়ে আসছিলেন । ফলে কাফেররা সুস্পষ্ট পরাজয় বরণ করলো । তবুও আবু জেহেল লাত, মানাত, উর্যার কসম খেয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল ওৎবা, শায়বা, অলীদ নিহত হয়েছে দেখে তোমরা হিম্মত হারিওনা । অতঃপর মুসলমানরা লক্ষ্য করলেন যে, আবু জেহেল একটি ঘোড়ার পিঠে রয়েছে এবং তার মৃত্যু পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছিল । সহীহ বুখারীর ১ম খ- পৃ. ৪৪৪ এ আবু জেহেলের হত্যাকান্ডের বর্ননা প্রদান করা হয়েছে । মায়াজ ও মুয়াওয়াজ নামক দুই আনসার কিশোর আবু জেহেলকে হত্যার মূল নায়ক ছিল । অতঃপর মহানবী বিশ্বনবী বিশ্বনেতা ﷺ তাদের দুইভাইকে আবু জেহেলের যুদ্ধলব্ধ সম্পত্তি ভাগ করে দিয়েছেন । এরপর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) আবু জেহেলের মাথা কেটে আখেরী রাসুল বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ কাছে এনে বললেন ইয়া রাসুল আল্লাহ ﷺ এই হচ্ছে মক্কার কুরাইশ সরদার মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু আবু জেহেলের মাথা । মহানবী বিশ্বনবী বিশ্বনেতা ﷺ তা দেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন ।

পরে আখেরী নবী রাসুলুল্লাহ্ ﷺ কুরাইশ নেতৃবৃন্দের লাশ কুয়ার মধ্যে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিলেন । তিনি কুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে একে একে কুয়ায় নিক্ষিপ্ত সকলের নাম নিয়ে ধ্বনি করে বললেন, - হে কুয়ার অধিবাসী, হে উৎবা, হে শায়বা, আল্লাহ্ তোমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা যথাযথভাবে পেয়েছো ? আমি তো আমার রবের প্রতিশ্রুতি বাস্তবরূপে পেয়েছি" বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ।

ফলাফল ও যুদ্ধে পরবর্তী ঘটনা :
মুসলমানদের বিজয় পরিপূর্ণ হওয়ার পর রাহমাতুলি্লল আলামীন সাইয়্যেদুল মুরসালীন আখেরী রাসুল হযরত মুহাম্মদ ﷺ মদীনাবাসীদের তাড়াতাড়ি সুসংবাদ দেওয়ার জন্য দুইজনকে দ্রুত মদীনায় প্রেরণ করলেন । তারা হলেন, আব্দুল্লাহ্ ইবনে রওয়াহা ও যায়েদ ইবনে হারেসা (রাঃ)। মদীনায় ঐ সময় বিজয়ের খবর পৌছুলো যখন দয়ালনবী রাসুলুল্লাহ ﷺএর মেয়ে হযরত ওসমান (রাঃ) এর সহধর্মিণী হযরত রোকাইয়া (রাঃ) এর কবরের মাটি সমান করা হচ্ছিল । রোকাইয়া অসুস্থ ছিলেন, যার কারণে নবীজী ﷺ প্রিয় সন্তানের মায়া ত্যাগ করে মহান আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য তার পাশে হযরত ওসমান (রাঃ) কে রেখে বদর যুদ্ধে গিয়েছিলেন ।

কালের গোটা ইতিহাস সম্ভবত বদরের ক্ষুদ্র ময়দানে পুঞ্জীভুত হয়ে গিয়েছিলো ।
এই ইতিহাসকে সচলকারী দু'ধরনের শক্তি নিজ নিজ চেতনা ও প্রেরণায় পুরোপুরি উজ্জীবিত হয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিলো ।
যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর দয়ালনবী হাবীবুল্লাহ ﷺ তিনদিন বদর ময়দানে অবস্থান করেছিলেন এবং যুদ্ধলব্ধ গণীমতের মাল ও সাহাবীদের নিয়ে মদিনায় রওয়ানা দিলেন । অতঃপর কাফেলা যখন মদীনার রওয়াহা নামক স্থানে পৌছলো, তখন মদীনা বাসীরা বিশ্বনবী বিশ্বনেতা প্রিয়নবী ﷺকে স্বাগত জানাতে শুরু করলেন । হুুজুরপাক ﷺ মদীনায় সাহাবীদের নিয়ে বিজয়ের বেশে প্রবেশ করলেন । যার ফলে বহু অমুসলিম মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করেছিল । মানবতার দুত মানবতার বন্ধু বিশ্বনেতা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ﷺ মদীনার সকল মুসলমানদের লক্ষ্য করে বললেন, হে মুসলমানগন, আল্লাহর প্রশংসা ও শোকর আদায় কর । আল্লাহর মেহেরবাণীতে আমরা সম্পূর্ণরূপে জয়ী হয়েছি । মক্কার কুরাইশরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করেছে । তাদের ৭০ জনকে বন্দী করে এনেছি । শত্রুদের বহু ধন-সম্পদ আমাদের হস্তগত হয়েছে । অন্যদিকে মুসলমানদের মধ্য থেকে ১৪ জন শাহাদাত বরণ করেছেন । أنا لله وانا إليه راجعون
অতঃপর তিনি সঠিকভাবে সকলের মাঝে গণীমতের মাল সমবন্টন করে দিলেন ।


পরিশেষে বদরের যুদ্ধ থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যে, আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে, ধৈর্য ধারণ করার মাধ্যমে এবং নেতার আনুগত্যের দ্বারা আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের সাহায্য লাভ করা যায় । যার উজ্জল দৃষ্টান্ত হলো বদরের ঐতিহাসিক যুদ্ধ । সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত । বাতিলের পতন এবং হক্কপন্থীদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী ।
শামীম বিন সাঈদী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন