হতাশাগ্রস্থদের জন্য.....!
স্যরি, এরপরও আমি বিশ্বাস করি, ডিপ্রেশন বলে কিছু নাই । সবটাই আমার আপনার মনের শয়তানি । আমরা যারা ডিপ্রেশনে ভুগি, প্রত্যেকেই শয়তানের পূজা করি । ডিপ্রেশনের যেসব গাল-গল্প আপনারা শোনান, সেসবেও আমি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করি না । আমাদের জীবন ব্যবস্থায় বিষন্ন হওয়া অবাঞ্ছিত ।
উম্মুল মু'মিনীন খাদিজা্তু কুবরা رضي الله عنه খুব ধনী ঘরের মেয়ে ছিলেন । বিলাসিতার মধ্যেই বড় হওয়াটাই স্বাভাবিক ।
নবিজী صلى الله عليه وسلم এর ইসলাম প্রচারের কারণে অন্যান্য গোত্র যখন কুরাইশদের অবরোধ দিলো, তখন আল্লাহর রাসূল ﷺ আর উম্মুল মু'মিনীন খাদিজা্তু কুবরা رضي الله عنه গোত্রের শিশুদের আড়াই বছর তীব্র কষ্টে থাকতে হয়েছিলো ।
এমনকী খিদের তাড়নায় গাছের পাতা পর্যন্ত খেয়েছিলেন ।
এরপরও আপনি আমাকে আপনার ডিপ্রেশনের গল্প শোনান ?
হযরত বিলাল رضي الله عنه ছিলেন হাবশী ক্রীতদাস ।
ইসলাম কবুলের অপরাধে তাকে মরুভূমির রোদে ফেলে রাখা হতো, তার গায়ের চর্বি গলে যেতো ।
তারপরও তার মুখে লেগে থাকতো প্রশান্তি, রোদের তেজ তাঁর কালিমার তেজের কাছে পরাজিত হতো ।
এরপরও আপনি আমাকে আপনার কোন ডিপ্রেশনের গল্প শোনাবেন ?
ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা তাঁর জীবনে আট বছর জেল খেটেছেন । জেলেই মরেছেন ।
অথচ তিনি কী বলেছিলেন, জানেন ? বলেছিলেন, দুনিয়াতেও একটা জান্নাত আছে, আমি আমার হৃদয়ে সে জান্নাতের খোঁজ পেয়েছি । এরপরও আপনি আপনার ডিপ্রেশনের গল্প শোনাবেন ?
গান শোনা, মুভি দেখা, মোটিভেশনাল বই পড়া বা মানুষের সাথে আড্ডা দিয়েই যদি ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি মিলতো, তবে লিনকিন পার্কের শিল্পী আত্মহত্যা করলেন কেন ? কিংবা সুশান্ত শিংই বা সুইসাইড করলেন কেন ? মোটিভেশন গুরু ডেল কার্নেগি আত্মহত্যা করেছিলেন কেন ?
এইসব হাস্যকর চিন্তাভাবনা এখনও কীভাবে করেন আপনারা ? এত কিছু দেখার পরেও ?
আল্লাহ্ তাআলা, ইসলাম, ইমান আর ডিপ্রেশন এক অন্তরে একসঙ্গে থাকতে পারে না । যদি আপনার মনে বিন্দুমাত্র ডিপ্রেশন থাকে, তার মানে আপনার হৃদয়ে আল্লাহ্ নাই, বরং ওখানে শয়তান বাসা বেঁধেছে ।
যারা ডিপ্রেশনে পড়ে বা আত্মহত্যা করে, মোটা দাগে দেখবেন, এরা অজ্ঞেয়বাদী নাহয় অবিশ্বাসী । কোনো মুসলিম যদি ডিপ্রেশনের স্বীকার হন, তাহলে আপনার ইমান নিয়ে ভেবে দেখার সময় এসেছে ।
এবার অনেকেই তেড়ে এসে বলবেন, আমার পরিস্থিতি আপনি বুঝবেন না, আমার ফ্যামিলি প্রবলেম, মানি প্রবলেম, স্বামী প্রবলেম.....আরে ভাই থামেন তো !
কোন পরিস্থিতির গল্প শোনাবেন আপনি ? বউ ভালো না ? হযরত লূত عليه السلام এর স্ত্রীও ভালো ছিলো না আবার হযরত আছিয়া عليه السلام এর স্বামী ছিলেন কে জানেন ? ফেরাউন ।
ফেরাউনকে ঈশ্বর না মানার অপরাধে তাঁকে টুকরো করে কেটে গরম তেলের ডোবানো হয়েছিলো ।
আরও শুনবেন ? চেষ্টা করেও কিছু হচ্ছে না, তাই ডিপ্রেশন ?
হযরত নুহ عليه السلام প্রায় হাজার বছর দাওয়াত দিয়ে আশি জনকে দাওয়াত কবুল করাতে পেরেছিলেন।
আপনজন কষ্ট দিয়েছে ? অপবাদ দিয়েছে ?
হযরত ইউসুফ عليه السلامএর ভাইয়েরা তাকে কুয়ার মধ্যে ফেলে দিয়ে চলে গেলো । জুলেখার সাথে ব্যভিচার না করায় উল্টো অপবাদ দিয়ে সাত বছরের জেল দেওয়া হলো !
এরপরও আপনি আমাকে কোন পরিস্থিতির গল্প শোনাবেন ? আমার পরিবারের নির্যাতন নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরবো ?
২০১০ সালের ২৯ জুন আমার পরম শ্রদ্ধেয় আব্বা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আসরের নামেজ পর বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় । কুরআনের মুফাসসীর বয়োবৃদ্ধ এই আলেমকে টানা ৪২ দিন রিমান্ডে রাখে । এরপর শুরু করে স্কাইপ কেলেংকারীর ট্রাইব্যনালে প্রতিদিন আনা-নেওয়া এবং এই জেল থেকে সেই জেল । আজ মুন্সিগঞ্জ জেল মাস খানিক পর গাজিপুর জেলখানা । এরই ভিতর হাজিরা । রাস্তার জ্যাম এবং কাঠফাটা রোদ্দুরের গরম সহ্য করে যাতায়াত ।
২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর মাগরিব নামাজ পড়ার পরে সুরা ইয়াসীন শুনতে শুনতে "আল্লামা সাঈদীর মমতাময়ী মা" আমাদের শ্রদ্ধেয় দাদী পুত্রশোকে ইন্তকাল করলেন । পরেরদিন আসরে নামাজে জানাজায় আব্বাকে ৬ ঘন্টার প্যরোলে মুক্তি দিলেও জানাযার মাঠ থেকেই তাকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয় । আবার ৮ মাস যেতে না যেতেই ১৩ জুন ২০১২ আল্লামা সাঈদীর কলিজার টুকরা বড় সন্তান আমাদের বড় ভাই মাওলানা রাফীক বিন সাঈদী ট্রাইব্যুনালে শুনানী চলাকালিন সময়ে হৃদযন্ত্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন । তাঁর ইন্তেকালের পর পরিবারের কারো সাথেই দেখা কিংবা এতীম সন্তানদের একটু সান্তনা দেবার সুযোগ তাকে দেয়া হয়নি । শোকাহত আব্বা হার্ট এটাক করলে সন্ধ্যায় ইবরাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং আল্লামা সাঈদীর হার্টে দুইটা রিং বসানো হয় ।
আল্লামা সাঈদীর ভগ্নিপতি আমাদের ফুপা মৌলভী আবু সালেহ ইন্তকাল করেন ১০ মে ২০১৮ । আমার ছোট চাচা মীম হুমায়ুন কবীর সাঈদী, সুস্থ সবল একজন সুন্দর মনের মানুষ । তিনিও বড় ভাই আল্লামা সাঈদীর উপর সরকারের নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ১৮ জুন ২০১৮ । আপন ভাইএর মৃত্যুতে প্যারোলে মুক্তি পেতে আইনী কোন বাধা নেই তবুও আল্লামা সাঈদীকে জানাজায় শরিক হতে দেয়া হয়নি । আপনারা সবাই জানেন, এইতো কয়দিন আগে
আল্লামা সাঈদীর বড় পুত্রবধু আমাদের বড় ভাবী অর্থাৎ মরহুম মাওলানা রাফীক বিন সাঈদীর সহধর্মিণী সাইয়েদা সুমাইয়া বুলবুল সাঈদী গত ২৪ আগস্ট ২০২০ ইন্তেকাল করেন । করোনার এই মহামারীতে কতো বন্ধি মুক্তি পেলো অথচ বয়োবৃদ্ধ আলেমেদ্বীন কুরআনের পাখি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আজও অন্ধকার কারাগারে বন্ধী ।
ঈমানের লম্বা পরীক্ষা চলছে । আমাকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে বিনা অপরাধে অনেকগুলি মামলা দিলো এবং ৭ মাস জেল খাটলাম । আমার স্নেহের ছোট ভাই মাসুদ সাঈদী জিয়ানগর উপজেলা চেয়ারম্যান দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নাশকতার মামলা দিয়ে তাকেও জেলে পাঠালো । এখানেই শেষ নয়- ২০১২ সাল থেকে আমার সকল ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ করে দেয়া হয় ।
কর্মক্ষম একজন মানুষকে বেকার করে দেয়া হলো । আজ ৮ বছর কোন ব্যবসা করতে পারছি না । আয় রোজগার বিহিন আছি ।
খুব বেশি বলে ফেলেছি ? আচ্ছা আমি চুপ করি । চলুন দেখি কুরআন কী বলছে-
হযরত ইবরাহীম عليه السلام যখন বার্ধক্যে উপনীত, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একদল ফেরেশতা এসে তখন তাঁকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ শোনাল । বিস্ময়ভরা কণ্ঠে হযরত ইবরাহীম عليه السلام জিজ্ঞেস করলেন- আমাকে তো বার্ধক্য পেয়ে বসেছে, এরপরও তোমরা আমাকে এ সুসংবাদ দিচ্ছ ?! কীসের ভিত্তিতে তোমরা এ সুসংবাদ দিচ্ছ ? ফেরেশতারা বলল, আমরা তো সত্য কথাই বলছি । আপনাকে সত্য সুসংবাদই দিচ্ছি । বার্ধক্য আপনাকে স্পর্শ করেছে করুক, এ বৃদ্ধ বয়সেই আপনার সন্তান হবে । আপনি নিরাশদের দলে যাবেন না । হযরত ইবরাহীম عليه السلام তাদের কথার জবাবে বললেন, পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে আপন প্রতিপালকের রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে ?
قَالُوا لَا تَوْجَلْ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ
قَالَ أَبَشَّرْتُمُونِي عَلَىٰ أَن مَّسَّنِيَ الْكِبَرُ فَبِمَ تُبَشِّرُونَ
قَالُوا بَشَّرْنَاكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُن مِّنَ الْقَانِطِينَ
قَالَ وَمَن يَقْنَطُ مِن رَّحْمَةِ رَبِّهِ إِلَّا الضَّالُّونَ (সূরা হিজর, ৫৩-৫৬)
যারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় তাদেরকে বলা হলো পথভ্রষ্ট ! এরপরও আপনি আমাকে ডিপ্রেশনের গল্প শোনাবেন ?
দাঁড়ান, দাঁড়ান, আরেকটা গল্প শুনে যান-
হযরত ইয়াকুব عليه السلام এর সর্বাধিক প্রিয় সন্তান ছিলেন হযরত ইউসুফ عليه السلام । কিন্তু তাঁর ভাইয়েরা বাবার এই আদরকে সহজে মেনে নিতে পারেনি, তাই কৌশলে তাঁকে একদিন বাবার কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে কূপে ফেলে দিল ।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার অসীম কুদরতে কূপ থেকে উঠে এসে একদিন তিনি মিশরের ধনভান্ডারের দায়িত্বশীল হলেন । আর যে ভাইয়েরা তাঁকে নিয়ে চক্রান্ত করেছিল, দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে তারা খাবার আনতে হাজির হলো তাঁর কাছে । এরপর এক কৌশলে তিনি তাঁর সহোদর বিনইয়ামীনকে নিজের সঙ্গে রেখে দিলেন ।
দুই ছেলে হারিয়ে বাবা হযরত ইয়াকুব عليه السلام অন্য ছেলেদের বললেন, (তরজমা) ‘হে আমার ছেলেরা ! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করো । তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না । নিশ্চিত জেনো, আল্লাহর রহমত থেকে তো কাফের ছাড়া অন্য কেউ নিরাশ হতে পারে না ।’
يَا بَنِيَّ اذْهَبُوا فَتَحَسَّسُوا مِن يُوسُفَ وَأَخِيهِ وَلَا تَيْأَسُوا مِن رَّوْحِ اللَّهِ ۖ إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِن رَّوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ
-সূরা ইউসুফঃ ৮৭
শেষ লাইনটা আবার পড়েন তো !
শুধু তাই না আল্লাহর রহমত থেকে ডিপ্রেসড হয়ে যাওয়া কবিরা গুনাহ।
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ رضي الله عنه আল্লাহর রাসূল ﷺ তাকে বলেছেন, ‘হাবরু হাযিহিল উম্মাহ’-এই উম্মতের বিদ্বান ব্যক্তি । তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে র্শিক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া ।
(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৯৭০১)
গান বাজনা বা মুভি, বই আপনাকে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি দিতে পারবে না । ডিপ্রেশনের একমাত্র চিকিৎসা হলো আল্লাহর দিকে ফেরত আসা । আপনার শয়তান যখন আপনাকে বলছে তোর অনেক কষ্ট, তোর চেয়ে কষ্টে কেউ নাই, তখন আল্লাহ্ তাআলা বলছেনঃ- فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে । إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে [সূরা আলাম নাশরাহঃ ৫-৬]
প্রিয় অভিনেতা সুশান্ত শিং রাজপুত সুইসাইড করেছেন । অথচ উনার ছিচোড়ে মুভিটা ছিলো মোটিভেশনাল, সুইসাইড বিরোধি একটা মুভি । মুভি তাঁকে ডিপ্রেশন থেকে ফেরাতে পারলো না । লাস্ট ছয়মাস উনি চিকিৎসাও নিচ্ছিলেন, লাভ হলো না । শরীরের রোগের চিকিৎসা আছে, মনে রোগের ভ্যাকসিন চিকিৎসা নাই ।
লিনকিন পার্ক । যে ব্যান্ড এর গান শুনে আমাদের রাত্রি ভোর হয়, প্রবল উৎসাহ পাই, অনেকে যার গানে বেঁচে থাকার উনাদান খুজেন, সেই ব্যান্ড এর নামকরা শিল্পী নিজের গানে নিজের বাঁচার উপাদান খুঁজে পেলেন না । শেষপর্যন্ত আত্মহত্যা করলেন ।
অন্যতম সেরা কমেডিয়ান । পৃথিবীর নানান প্রান্তের মানুষকে হাসানো মানুষটির বোকা হাসির আড়ালে কী ব্যথা লুকিয়ে ছিলো, কেউ জানলো না । নিজেকে শেষ করে দিলেন । তাহলে সমাধান কী ? الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে । সুরা রাদ:২৮
আল্লাহ্ তাআলার দিকে ফিরে আসুন । কুরআনের দিকে ফিরে আসুন । সুন্নাহর দিকে ফিরে আসুন ।
যে অন্তরে রাহমানুর রাহীমের ভালোবাসা থাকে, যে হৃদয়ে আল্লাহ্ থাকেন, সে হৃদয়ে বিজ্ঞানের ডিপ্রেশন থাকতে পারে না ।
কোনোভাবেই না ।
বারাক ওবামা যখন প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর নেন তখন তার বয়স ৫৫ বছর । অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তখন তার বয়স ৬৯ বছর । ঢাকায় যখন সকাল ৬ টা বাজে, লন্ডনে তখন রাত ১২ টা । সময়ের হিসেবে ঢাকার থেকে লন্ডন ছয় ঘণ্টা পিছিয়ে, এতে কিন্তু প্রমাণ হয় না যে, লন্ডন ঢাকার থেকে শিক্ষা দিক্ষা উন্নয়নে পিছিয়ে আছে বা তাদের সাথে আমাদের কোন তুলনা চলে ।
সু-শিক্ষিত মানে সমাজের উচ্চবর্গের চিত্র ফুটে ওঠে । কু-শিক্ষিত মানে যত অপকর্মের চাবিকাঠি ।
পৃথিবীর সবকিছু আপন গতিতে এবং নিজ সময় অনুযায়ী চলে । কেউ গ্রাজুয়েশন শেষ করে ২২ বছর বয়সে, কিন্তু চাকরি পেতে আরো ৫ বছর লেগে যায় । আবার কেউ ২৭ বছরে গ্রাজুয়েশন শেষ করে পরের দিনই চাকরি পেয়ে যান !
অনেকে ২৫ বছর বয়সে কোম্পানির CEO হয়ে,মারা যান ৫০ বছর বয়সে । আবার অনেকে ৫০ বছর বয়সে CEO হয়ে, মারা যান ৯০ বছরে । কেউ ৩৩ বয়সে এখনও সিঙ্গেল, আবার কেউ ২২ বছর বয়সে বিয়ে করে সন্তান জন্ম দিয়েছেন !
মনে হতেই পারে, পরিচিতদের মধ্যে আপনার থেকে ,কেউ অনেক এগিয়ে আছেন, আবার কেউ আছেন অনেক পিছিয়ে । কিন্তু আপনার ধারনা ভুল, প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ সময়, অবস্থান এবং গতিতে আছেন । আগে থাকাদের হিংসা না করে, পিছিয়ে থাকাদের অবহেলা না করে, সব সময় শান্ত থাকুন । আপনি এগিয়েও নেই, পিছিয়েও নেই ! আপনার পথ আপনার, অন্যের পথ অন্যের । শুধু সময়কে গুরুত্ব দিয়ে পরিশ্রম করে যান । আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেস্টাকে অব্যাহত রাখুন । বাকিটা
সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিন ।
আরব বিশ্বের অত্যন্ত জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার, সুবক্তা ড. শায়খ আইদ আল কারনি (হাফিযাহুল্লাহ) তার এক বক্তৃতায় বলেন, আমাকে যদি পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতালব্ধ উপদেশ করতে বলা হয় তাহলে আমি চারটি বাক্য বলবো ।
আরো পঞ্চাশ বছর পর যদি আবারো আমার কাছে উপদেশ চাওয়া হয় তাহলে আমি এই চারটি বাক্যই বলবো ।
এই বাক্যগুলো দিয়ে তিনি যা বুঝিয়েছেন_
#লা_তাহযান । لَا تَحْزَنُ
অতিত নিয়ে কখনো হতাশ হবেন না ।
অতিত কে দাফন করে ফেলতে হবে চিরতরে । ডিলিট করে ফেলতে হবে মেমোরি থেকে ।
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
যদি তোমরা ঈমানদার (মু’মিন) হয়ে থাক তবে তোমরা (তোমাদের শক্ৰদের বিরুদ্ধে) দুর্বল হয়ো না এবং দুশ্চিন্তাও করো না ।” সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৩৯
ভবিষ্যৎ নিয়ে কখনো দুশ্চিন্তা করবেননা । তা ন্যস্ত করে দিতে হবে মহান মালিকের উপর ।
তাওয়াক্কুল করে নিতে হবে আরো সুদৃঢ়, আরো মজবুত । ﴿وَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱلۡحَيِّ ٱلَّذِي لَا يَمُوتُ﴾ [الفرقان
আর তুমি ভরসা কর এমন চিরঞ্জীব সত্তার ওপর যিনি মরবেন না । সূরা আল ফুরকান: ৫৮
জীবনে চলার পথে বিভিন্ন সময় অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক বিষয়ের সম্মুখিন হতে হবে আপনাকে, কখনো রাগ করবেন না ।
আল্লাহর কোনো ফয়সালার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেননা কখনো । মাথা পেতে সন্তষ্টচিত্তে মেনে নেয়ার মধ্যেই রয়েছে সফলতা ।
আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন, امين يارب العالمين