সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭

চার্য গঠনের দিন বক্তব্য

চার্য গঠনের দিন বক্তব্য (০৩.১০.২০১১)

আমার বিরুদ্ধে আনীত ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং শতাব্দীর নিকৃষ্ট মিথ্যাচার । 

আমার বিরুদ্ধে রচনা করা ৪ সহস্রাধিক পৃষ্ঠার প্রতিটি পাতার, প্রতিটি লাইনের, প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি বর্ণ মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা । ২০টি অভিযোগের সব ক’টিই বানোয়াট । এর সাক্ষীও মিথ্যা । আমি ১৯৭১ সালে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস কিছুই ছিলাম না, কমান্ডার হওয়া তো অনেক দূরের কথা । পাক হানাদার বাহিনীর সাথে ১ মিনিটের জন্যেও কখনো কোনো বৈঠক হয়নি ।
মাননীয় বিচারপতি, সেদিন আপনি প্রথম হজ্ব করে এসেছেন । আপনার মাথায় টুপি ছিল । তখনও আপনার চেহারা থেকে হজ্জের নূরানী আভা মলিন হয়নি । সেদিন আমাকে এখানে আনার পর একজন সম্মানিত প্রসিকিউটর আমার নাম বারবার বিকৃত করে বলছিলেন । আমি আশা করেছিলাম আমার নাম বিকৃত না করার জন্য আপনি প্রসিকিউটরকে নির্দেশ দিবেন । কিন্তু আপনি সেটা করেননি। বরং আপনিও আদেশ দেয়ার সময় প্রসিকিউটরের সুরে সুর মিলিয়ে একই বিকৃত নাম বলেছেন ।”
“আমার সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, পার্লামেন্ট কোথাও কি এ রকম বিকৃত নামের উল্লেখ আছে, যে নাম প্রসিকিউটর উল্লেখ করেছেন । আমি সেদিনই বুঝেছিলাম যে, আমি মারাত্মক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার ।” সূরা হুজুরাতের ১১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “কোন মানুষকে বিকৃত নামে ডেকো না ।”
মাননীয় বিচারপতি, আপনি একদিন এখানে বলেছিলেন, “আল্লাহ আমাকে একটি বিরাট দায়িত্ব দিয়েছেন । আসলেই তাই । বিচারপতির দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মহান । বুখারী, মুসলিম ও মেশকাতসহ সহীহ হাদিস গ্রন্থগুলোতে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আল্লাহর আরশের ছায়ায় সাত শ্রেণীর মানুষ আশ্রয় পাবে । তার মধ্যে ন্যায় বিচারকরা প্রথমেই রয়েছেন । আপনার কাছে সেই ন্যায় বিচারই আশা করি ।
“একজন বিচারপতির জবাবদিহিতা থাকে আল্লাহ তায়ালা এবং নিজ বিবেকের কাছে । এর বাইরে তৃতীয় কোনো স্থানে জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতা থাকলে ন্যায় বিচার করা যায় না। বরং সেটা জুলুম হয়ে যায় । আর জুলুমের পরিণতি জাহান্নাম ।
“১৯৭১ সালে আমি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী ছিলাম না । মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এক যুগেরও বেশি সময় পর্যন্ত আমাকে নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি । ১৯৮০ সালে যখন জামায়াতে ইসলামী আমাকে মজলিসে শূরার সদস্য নির্বাচিত করে তখনই একটি শ্রেণী আমার বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে ।
১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে সরকার গঠন হয় তখন সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই আমি ২০ মিনিটের বক্তব্য দিয়ে বলেছিলাম, “আমি রাজাকার নই । কেবলমাত্র ভারতীয় রাজাকাররাই আমাকে রাজাকার বলতে পারে । মহান স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আমার সামান্যতম ভূমিকাও ছিল না ।” আমার সেই ২০ মিনিটের বক্তব্যের একটি কথাও স্পিকার এক্সপাঞ্জ করেননি । সেই বক্তব্য আজও সংসদে সংরক্ষিত আছে । আজ আমার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে । অথচ আমি গত অর্ধশতাব্দী ধরে বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে মানবতার পক্ষে বক্তব্য রেখে এসেছি ।”
আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার বাদী মিথ্যা, সাক্ষী মিথ্যা । যারা এই অভিযোগনামা রচনা করেছে, যারা মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছে, যারা বাদী হয়েছে তাদের মনে আল্লাহর ভয় ছিল না, হাশরের ময়দানে রাসূলের (সা.) শাফায়াতের আশা ছিল না । তাদের পক্ষে এ কারণেই এ ধরনের চরম মিথ্যাচার সম্ভব হয়েছে । আমাকে জনসম্মুখে হেনস্থা করা, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে । কুরআনের সূরা ইব্রাহীমের ৪৬ ও ৪৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “ওরা ভীষণ ষড়যন্ত্র করেছিল, কিন্তু তা আগেই আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ ছিল । আর ওদের সেই ষড়যন্ত্র এমন ছিল যে, তা বাস্তবায়িত হলে পর্বতসমূহ টলে পড়তো । সুতরাং এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা ভঙ্গ করবেন । বরং আল্লাহই বিজয়ী এবং চরম প্রতিশোধ গ্রহণকারী ।”
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন একটি রচনা ছাড়া আর কিছুই নয় । একটি মিথ্যা রচনার ভিত্তিতে বিচার নামক নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে । এমন মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে আমার প্রতি বিনা অপরাধে আক্রোশমূলকভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত অবিচার করা হলে আল্লাহর আরশ কাঁপবে ।
আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে যারা এমন মিথ্যা প্রতিবেদন রচনা করেছে তাদের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসবে । আমি সেই লানত দেখার অপেক্ষায় থাকবো ।”
আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা। আমি নির্দোষ । আমাকে এসব অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেয়া হোক ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন