সোমবার, ২০ জুলাই, ২০১৫

আব্বাকে ছাড়া ১১টি ঈদ ... !



২০১০ সালের ২৯ জুন শহীদবাগের বাসা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আমার আব্বা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের হাস্যকর এক মামলায় গ্রেফতার করে নিয়ে যায় । সেই থেকে কেটে গেছে আজ পাঁচটি বছর । একে একে হারিয়ে গেছে আমাদের জীবন থেকে ১১টি ঈদ । যে মানুষটি বিগত পঞ্চাশটি বছর ধরে বিশ্বব্যাপি বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে, প্রতিটি জনপদের মানুষকে কোরআনের দাওয়াত দিয়েছেন, মানুষকে কোরআনের পথে আহবান করেছেন সেই তিনিই নাকি মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করেছেন !!

হাস্যকর মামলায় গ্রেফতারের পরপরই তথাকথিত যুদ্ধাপরাধসহ আওয়ামী সরকার তাদরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়নের জন্য আমার আব্বার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকা মহানগরীর রমনা থানায় গাড়ি ভাংচুর, গাড়ি পোড়ানো ও পুলিশের কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগে (!) ২টি মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে (!) উত্তরা মডেল থানায় ১টি মামলা, পল্টন মডেল থানায় গাড়ি ভাংচুর, গাড়ি পোড়ানো, পুলিশের কাজে বাঁধা ও রাষ্ট্রপতির গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগে (!) ৩টি মামলা, শেরেবাংলা নগর থানায় যাকাতের ৫ লক্ষ টাকা আত্নসাতের অভিযোগে (!) ১টি মামলা, কদমতলী থানায় বোমা/ককটেল বানানোর অভিযোগে (!) ১টি মামলা, রাজশাহীর মতিহার থানায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যার অভিযোগে (!) ১টি হত্যা মামলা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আয়কর ফাঁকির অভিযোগে (!) মামলা ১টি মামলা দায়ের করে । অন্যদিকে আল্লামা সাঈদীর জন্মভূমি পিরোজপুরে অর্থের প্রলোভন ও ভীতি প্রদর্শন করে ২টি কল্পিত যুদ্ধাপরাধের মামলাসহ মোট ১৩টি মামলা দায়ের করানো হয় । এইসব কল্পিত অভিযোগ আর মিথ্যা মামলায় আমার আব্বাকে টানা ৪১ দিন রিমান্ডে নেয়া হয় । এছাড়া সেফ হোমেও তাকে একদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল । এভাবে টানা রিমান্ডে নিয়ে আমার আব্বার উপর মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে । আল্লামা সাঈদীর মতো একজন কোরআনের দা'ঈ ও সিনিয়র রীজনীতিবিদকে এতোদিন রিমান্ডে নেয়ার বিষয়টিও বিরল এক ঘটনা ।


গ্রেফতার হওয়ার সময় আমার আব্বার বয়স ছিল ৭২ । এই ৭২ বছরের মধ্যে আমার আব্বার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন থানায় কোন মামলা তো বহুদূরের কথা সামান্য একটি জিডিও কোন বিষয়ে ছিলনা । কিন্তু কি আশ্চর্যের বিষয়, ৭২ বছরের মধ্যে যার বিরুদ্ধে একটি মামলাও ছিলোনা সেই তার বিরুদ্ধেই আওয়ামী লীগ গায়ের জোড়ে ক্ষমতায় আসার পরপরই এক এক করে মোট ১৩টি মামলা দায়ের করে !!

আওয়ামী সরকারের রোষানলে কারান্তরীণ অবস্থায়ই আমার আব্বা হারিয়েছেন তার মমতাময়ী প্রিয় মা গুলনাহার ইউসুফ সাঈদী এবং কলিজার টুকরা বড় সন্তান রাফীক বিন সাঈদীকে । মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে একই মাঠে সন্তান হয়ে মায়ের এবং পিতা হয়ে পুত্রের নামাজের জানাজা কারান্তরীন অবস্থায় পড়ানোর মতো দুঃসহ যন্ত্রনা সইতে হয়েছে তাকে । শুধু তাই নয়, মা কিংবা সন্তানের লাশের পাশে এমনকি স্বজনদের সাথেও ব্যাথা ভোলার জন্য সামান্য কিছ সময়ও তাকে কাটাতে দেয়া হয়নি । জানাজা শেষেই মাঠ থেকে আবার তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কারাগারে। আহ্! কী অব্যক্ত বেদনাময় সময়-ই না কাটিয়েছেন আমার আব্বা তখন !!

আসলে বিশ্বব্যাপি আল্লামা সাঈদীর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় দিশেহারা তার আদর্শিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ । শুধুমাত্র এ কারনেই তাঁকে জনগণ থেকে বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী নানাবিধ অপবাদ ছড়ানো হয়েছে । আল্লাহর রহমতে ষড়যন্ত্রকারীদের সকল প্রচেষ্টাই এ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে । তার প্রমান হলো, মিডিয়ার হাজারো প্রপাগান্ডা শেষে সরকারের ইচ্ছামাফিক সাজানো মিথ্যা মামলায় মিথ্যা স্বাক্ষের ভিত্তিতে দেয়া অন্যায় রায়ের পর দেশের আপামর জনতা মিথ্যা রায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে । রায়ের প্রতিবাদে সারাদেশে জীবন দিয়েছে তরতাজা ২৪৭জন নারী-পুরুষ । আল্লাহর মেহেরবানীতে, সরকারের হাজারো ষড়যন্ত্র আর মিডিয়ার পরিকল্পিত শত অপপ্রচারও জনগন থেকে আল্লামা সাঈদীকে বিচ্ছন্ন করতে পারেনি আর পারবেওনা কোনোদিন । 'আল্লামা সাঈদী’ নামটি শুনলেই মানুষের হৃদয় হাহাকার করে ওঠে এখনো । আল্লামা সাঈদীর প্রতি মানুষের এ ভালবাসা তুলনাহীন, এ ভালবাসা উপমাহীন ।

ইসলামের শত্রুদের কাছে এ বিষয়টিই অসহনীয় এবং এ কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন করে ‘আজীবন কারাদন্ডে’ দন্ডিত করে কারাগারের চারদেয়ালের মাঝে বন্দি করে রেখেছে ।

গত পড়শু ছিল ঈদের দিন । আব্বাকে কারাগারে রেখে এটি আমাদের ১১তম ঈদ । আমাদের ঈদ যেন জালিমের কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী । পরম শ্রদ্ধেয় আব্বা কারাগারে থাকা অবস্থাতেই হারালাম কলিজার টুকরা বড় ভাইকে, তেমনি হারিয়েছি প্রিয় দাদীকেও । আমাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ বলতে এখন আর কিছু নেই । আমাদের ঈদের আনন্দ এখন আমরা খুঁজে বেড়াই অতীত স্মৃতির মাঝে । চারপাশের মানুষের ঈদের আনন্দ দেখে আজকাল মাঝে মধ্যে বড় ঈর্ষা হয় । আহারে ! এই ঈদ আনন্দ এক সময় আমাদেরোতো ছিল  !
সরকার আমাদের এই আনন্দটুকুনও কেড়ে নিয়েছে ।

আমার প্রান প্রিয় আব্বার বয়স এখন ৭৭ চলছে ।নানারকম শারিরীক অসুস্থতা নিয়ে কারাগারে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন তিনি । চিকিৎসার অভাবে হাটু ও কোমড়ের ব্যথার তীব্রতা প্রতিদিন বাড়ছেই । আছে ৩৭ বছরের সঙ্গী ডায়াবেটিক আর হার্টের সমস্যাতো রয়েছই । ৭৭ বছর বয়স্ক আমার আব্বা শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও তার মানসিক মনোবল আল্লাহর মেহেরবাণীতে পর্বতসম । আমার বিশ্বাস, লাখো-কোটি কুরআন প্রেমিকের দোয়া ও চোখের পানির বিনিময়ে তিনি অবশ্যই আবারও কুরআনের ময়দানে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ ।

ইনশাআল্লাহ ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের সকল কালো পর্দা ভেদ করে কুরআনের সূর্য আল্লামা সাঈদী অচিরেই সমগ্র জগৎময় পুনরায় পবিত্র কুরআনের কিরণচ্ছটা বিকিরণ করবেন, কুরআনের স্নিগ্ধ আলোয় মুসলমানদের হৃদয় আলোকিত করবেন, অমুসলিমরা তাঁর কণ্ঠ নিঃসৃত পবিত্র কুরআনের অমীয় বাণী শুনে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে ধন্য হবেন, তাঁর বজ্র কন্ঠের প্রতিরোধে ইসলাম বিরোধী শক্তি আবারো থরথর করে কেঁপে উঠবে, সংসদে কিংবা সংসদের বাইরে কোরআন বিরোধী কোন বক্তব্য বা আইন করতে গেলে গর্জে উঠবে এই সিংহ মানব, ঘুমন্ত এই জাতিকে আবারো ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলবেন ঘুম ভাঙানোর পাখি আল্লামা সাঈদী এটাই আমার অন্তরের বিশ্বাস ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন