মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০১৫

ইতেকাফের অশেষ ফজিলত

রমজান মোবারকের আজ ১৯টা রোজা শেষ । আর মাত্র একদিন পর রমজানের শেষ দশক শুরু । ২০ রমজানের পর থেকে চাঁদ দেখা অর্থাৎ এমাসের শেষ দিন  পর্যন্ত একটি বিশেষ এবাদত রয়েছে । এবাদতটির নাম এতেকাফ । রোজা সহকারে ২৪ ঘন্টাই মসজিদে অবস্থান ও এবাদত বন্দেগীতে কাটানোকে এতেকাফ বলা হয় । হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিআল্লাহু আনহা বলেছেনঃ রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবছর রমজানের শেষ দশদিন এতেকাফ করতেন । 
এতেকাফের ফজিলত সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এতেকাফকারী সব ধরনের গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকে এবং তার নামে লেখা হয়-সব নেক কাজ সম্পাদনকারীর মতোন সাওয়াব অর্থাৎ এতেকাফ না করলে তার পক্ষে যেসব নেক কাজ করার সুযোগ ছিলো, এখন সেগুলো করতে না পারলেও তাকে সেই পরিমান সাওয়াব দেয়া হয় ।  রমজানের ২০ তারিখের সূর্যাস্তের আগ থেকে তা শুরু করতে হয় আর এতেকাফ শেষ হ্য় ঈদের চাঁদ দেখা গেলে । অর্থাৎ আজ ০৮/০৬/২০১৫ আসরের পর ইফতারীর আগেই মসজিদে অবস্থান নিতে হবে ।
এতেকাফ করা সুন্নাত, তবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু প্রতি বছর রমজান মোবারকের শেষ দশদিন এতেকাফে অতিবাহিত করতেন এবং এক বছর তা ভঙ্গ করায় পরের বছর ২০ দিন এতেকাফ করেছিলেন এজন্য এতেকাফ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা 'আলাল কিফায়াহ" । অর্থাৎ কমপক্ষে একজন মুসল্লীর এতেকাফ  দ্বারাই মহল্লার সবাই দায় মুক্ত হবে । পক্ষান্তরে কেউ এতেকাফ না করলে ওই মসজিদের আওতাধীন মহল্লার সকলকেই জবাবদিহি করতে হবে । 


ইসলামে বৈরাগ্য নেই । মানবতার বন্ধু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা স্পস্ট জানিয়ে দিয়েছেন । পারিবারিক ও সামস্টিক জীবনের কাঠামো বজায় রেখেই মানুসকে আখিরাতের কাজ করতে হবে । কিন্তু স্থায়ী বৈরাগ্য অনুমোদিত না হলেও সাময়িকভাবে নিজের পরিবার ও বৈষয়িক কাজকর্ম থেকে বিমুখ হয়ে পুরোটা সময় নামায, কুরআন তেলাওয়াত, যিকির, তাসবিহ তাহলিল করে কাটানোর ব্যবস্থা এই শরিয়াতে আছে । এতেকাফ সেই সাময়িক বৈরাগ্য । রমজানের শেষ দশদিন পার্থিব সকল কাজকর্ম হতে মুক্ত থেকে মসজিদে এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে অতিবাহিত করা  মুহাম্মাদ (সাঃ)এর উম্মাতের জন্য বিশেষ ব্যাবস্থা । 


এতেকাফ দুনিয়ার প্রতি আসক্তি কমাতে ও আখেরাতের দিকে মনোযোগ বাড়াতে সহায়ক । এজন্য প্রিয়নবী আহমাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ দিয়েছেন । রোজা রেখে শুধু মসজিদে অবস্থান এবং ফরজ নামায গুলো আদায় করলেই এতেকাফের হুকুম পালন হয়ে যায় কিন্তু, উত্তম এইযে, নুনতম সময় বিশ্রাম ও নিদ্রায় কাটিয়ে বাকি পুরো সময় নফল নামা্‌ কুরআন তেলাওয়াত, যিকির, তাসবিহ পাঠে কাটানোর চেস্টা করতে হবে । সাময়িক বৈরাগ্য অনুশীলন এতেকাফের প্রথম তাৎপর্য । দ্বিতীয়তঃ পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখার ধারাবাহিকতা বান্দার মধ্যে আল্লাহপ্রেমের বিশেষ প্রেরনা সৃষ্টি করে । আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ মোতাবেক নিজের দৈহিক চাহিদা ও আচরন সংযত রাখার ফলে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনে বান্দা অনেক উন্নতি লাভ করে । নশ্বর পৃথিবীর আকর্ষণ দুর্বল হতে থাকে - পরজগতের চিন্তা প্রবল হতে থাকে, মহান আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের জন্য তার মধ্যে ব্যাকুলতা বাড়তে থাকে । তারই অভিব্যাক্তি ঘটানো হয় সংসার ও বৈষয়িক জীবন থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহর ঘরে নিরবিচ্ছিন্ন অবস্থানের মধ্য দিয়ে । 

সমগ্র পৃথিবীর একচ্ছত্র মালিক মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার প্রতি বান্দার অনুরাগ ও প্রেমের পরাকাষ্ঠা ঘটে বায়তুল্লাহর হজ্জের মাধ্যমে । আর রমজান মাসের পরই শুরু হয় হজ্জের মৌসুম । এতেকাফের মাধ্যমে বায়তুল্লাহর হজ্জের প্রস্তুতি নিতে থাকে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা । সুতরাং এতেকাফ আল্লাহ প্রেম ও আখেরাত মুখিতার উজ্জল নমুনা । 
আল্লাহ আমাদেরকে সুন্দর ও সুস্থভাবে এতেকাফ পালনের তাওফিক দান করুন । আমিন । 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন