শক্তি প্রয়োগে আদর্শ প্রতিষ্ঠা
ইতিহাসে দেখা যায়, রাষ্ট্র বা দলীয় শক্তি প্রয়োগ করে কোনো কোনো আদর্শ দেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে । শাস্তির ভয়ে প্রকাশ্যে অনিচ্ছাকৃতভাবে মানুষ সে আদর্শের অনুসরণ করেছে আর আড়ালে প্রকাশ করেছে অন্ত্রের ঘৃণা । অনেক রাজা বদশাহই এ ধরনের হঠকারিতামূলক কাজ করেচ্ছেন । তারা যে বোধ-বিশ্বাস অন্তরে লালন করতেন, তাই জোরপূর্বক জাতির উপর আইন প্রয়োগ করে চাপিয়ে দিতেন । বিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নেও আমরা দেখতে পেয়েছি, ইয়াহুদী সন্তান কার্লমার্কস সৃষ্ট সমাজতন্ত্র নামক আদর্শও রাস্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়ার নির্মম-নিষ্ঠুর কার্যক্রম ।
কিন্তু যারা এই অবাস্তব পদ্ধতি প্রয়োগ করে আদর্শ টিকিয়ে রাখার প্রচেস্টা চালিয়েছে, তারা এ কথা ভুলে গিয়েছে যে, বিশ্বাস হলো মানুষের মনের সাথে সম্পৃক্ত । শক্তি প্রয়োগে কোনো বিশ্বাসের প্রতি মানুষের মৌখিক স্বীকৃতি আদায় করা যায় বা কিছু সময়ের জন্য পালন করানোও যায় কিন্তু হৃদয়-মনে তা প্রতিষ্ঠিত করা যায় না । মানুষ তো পরম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও নিষ্ঠার সাথে সেই আদর্শই অনুসরণ করে, যারা তা মনপ্রান দিয়ে বিশ্বাস করে । যে আদর্শের শিকড় হৃদয়- গভীরে প্রোথিত, তাই মানুষের বাহ্যিক অবয়বে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে ।
সম্রাট অশোক, সম্রাট আকবর, হালাকু খান, চেঙ্গিশ খান শক্তি প্রয়োগ করে কতো নিয়ম-নীতি চালু করেছিলেন, এসবের কোন অস্তিত্বও নেই । নিকট অতীতে সমাজতান্ত্রিক দেশসমুহে সমাজতন্ত্রের প্রবক্তাদের প্রচলিত নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা তো দূরে থাক, তাদের বিশাল বিশাল মূর্তি গুলোর গলায় শিকল লাগিয়ে টেনে নামানো হয়েছে । শক্তি প্রয়োগ করে, লোভ লালসা দেখিয়ে, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা করে যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা হয়, সে আদর্শ অত্যন্ত ভঙ্গুর এবং এর স্থায়িত্ব নেই- ক্ষণস্থায়ী । সামান্য কিছু কালের ব্যবধানে এর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে ।
পৃথিবীতে একমাত্র ইসলামই হলো ব্যতিক্রম সেই আদর্শ, যা লোভ-লালসা দেখিয়ে, প্রতারনা-প্রবঞ্চনা করে অথবা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রচার-প্রসার করা হয়নি । ইসলামী আদর্শের বাহ্যিক ও অভ্যান্তরিন অনুপম গুন-বৈশিস্ট্য, নবী- রাসুলদের আকর্ষণীয় চারিত্রিক গুন এবং সাহবায়ে কেরামের আচরিত তুলনাহীন গুনাবলীর প্রতি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল শ্রেনীর মানুষ আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম কবুল করেছে । আর এভাবেই ইসলামের প্রচার -প্রসার ঘটেছে । সুতরাং সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, বোমাবাজি করে, মানুষ হত্যা করে জঙ্গি পন্থায় যারা আল্লহর আইন চালু করার চিন্তা করে, তাদের বোঝা উচিত এপথ ইসলামের নয় এবং এপথ অবলম্বন করে মানুষের মনে আল্লাহর আইনের প্রতি সম্মানবোধ, শ্রদ্ধা-ভালোবাসা সৃষ্টি করা যাবে না ।
ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর ঢাল চুরির ঘটনা ইতিহাসের পাঠক মাত্রই অবগত রয়েছেন । তার ঢাল চুরি করলো এক ইয়াহুদী, তিনি রাস্ট্রপ্রধানের পদে আসীন । রাস্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে ইয়াহুদীকে চরম শাস্তি দিয়েই তো ঢালটি উদ্ধার করতে পারতেন কিন্তু ইসলামী শিক্ষা তাকে সে পথে অগ্রসর হতে না দিয়ে আদালতে বিচারকের কাছে পাঠিয়েছে । আদলতে সাক্ষী গ্রহনযোগ্য না হবার কারনে ইয়হুদীর পক্ষে আর ইসলামী রাস্ট্রপ্রধানের বিপক্ষে রায় দিয়েছে । রাস্ট্রপ্রধান আদালতের রায় মেনে নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরছেন । পথিমধ্যে সেই ইয়াহুদী ছুটে এসে হযরত আলীকে জড়িয়ে ধরে ব্যাকুল কন্ঠে বলছে, যাদের আদর্শ এতো সুন্দর মানুষ সৃষ্টি করেছে, আমি সেই আদর্শ গ্রহন করে মুসলমান হলাম । এই নিন আপনার ঢাল, এটি আমিই চুরি করেছিলাম ।
ইসলাম এভাবেই প্রসারিত হয়েছে, শক্তি প্রয়োগে নয় । ***** চলবে *****
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন