আল্লাহর আইন- বৃটিশ ও পাকিস্তান যুগঃ
বৃটিশ এদেশকে প্রায় দুইশত বছরব্যাপী শাসন করেছে । এরপর ২৪ বছর বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে পরিচিত ছিলো । তখন তো কেউ-ই 'আল্লাহর আইন চালু'র নামে এদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপর্যয় সৃষ্টি করেনি । ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ স্থান করে নিলো, একের পর এক সরকার পরিবর্তন হলো, দীর্ঘ এ সময়েও কেউ উক্ত দাবি তুলে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেনি ।
১৯৯৬ সালের পরে এদেশের শাসন ক্ষমতায় যারা এলেন, তাদের শাসনামলে ১৯৯৯ সালের ৬ই মার্চ যশোরে উদীচীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করা হলো । একই সালের ৮ই অক্টোবর খুলনায় কাদিয়ানীদের উপাসনালয়ে বোমা নিক্ষেপ করে ৮ জনকে হত্যা করা হলো এবং ফরিদপুর জেলার এক মাজারে বোমা নিক্ষেপ করে হত্যা করা হলো ৪ জনকে । ২০০১ সালের ২০শে জানুয়ারী ঢাকার পল্টন মাঠে কমিউনিস্ট পার্টির সমাবেশে বোমা হামলা করে হত্যা করা হলো ৭ জনকে এবং একই সময়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বোমা বিস্ফোরন ঘটানো হলো । ২০০১ সালের ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখে ঢাকার রমনা বটমুলে নববর্ষের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা করে ১০ জনকে হত্যা করা হলো । ২০০১ সালের জুন মাসের ৩ তারিখে গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরের একটি গির্জায় বোমা বিস্ফোরন ঘটিয়ে ১০ জনকে হত্যা করেছে । একই বছরের ঘটনা অর্থাৎ কয়েকদিন পর ১৫ই জুন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে বোমা বিস্ফোরন করে হত্যা করা হয় ২২ জনকে । ২৩শে সেপ্টেম্বর বাঘেরহাটের মোল্লারহাটে বোমা বিস্ফোরন করে হত্যা করলো ৮ জনকে । ২৬শে সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে আওয়ামীলীগ সমাবেশে বোমা নিক্ষেপ করে হত্যা করলো ৪ জনকে ।
অর্থাৎ ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০১ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বোমা নিক্ষেপ করে অনেক মানুষ হত্যা করা হয়েছিলো, চিরতরে পঙ্গু করে দিয়েছে কয়েক শত মানুষকে এবং কয়েক কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করা হয়েছিলো । এসব বোমাবাজি যেখানে যেখানে ঘটলো বা ঘটানো হলো, সেখানের কোথাও 'আল্লাহর আইন চালু'র দাবি তুলে বোমা নিক্ষেপ হয়েছে বলে শোনা যায়নি এবং 'আল্লাহর আইন চালু'র পক্ষে কোন সংগঠনের লিফলেটও পাওয়া যায়নি । এ সময়ে বাংলাদেশের কোন একটি আদালতের বিচারককেও হুমকি দিয়ে কেউ-ই কোনো চিঠি দিলো না, আদালতেও কেউ বোমা নিক্ষেপ করলো না এবং আত্মঘাতিকোনো লোকেরও সন্ধান পাওয়া গেলো না ।
বাংলাদেশকে 'অকার্যকর ও ব্যর্থরাষ্ট্র' হিসেবেও কোন মহল থেকে চিহ্নিত করার চেষ্টা পরিলক্ষিত হলো না ।
২০০১ সালের ১লা অক্টোবরের নির্বাচনে ইসলামী মুল্যবোধে বিশ্বাসী চার দলীয় ঐক্যজোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শাসন ক্ষমতায় আসীন হলো । ইতিপূর্বে যখন কুকুরের মাথায় টুপি পরিয়ে ইসলামপন্থীদের অমর্যাদা করা হয়েছে, খুনের অভিযোগে শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীন আলেমকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়েছে, মসজিদ মাদরাসা বন্ধ করা হয়েছে, অগণিত আলেম উলামাকে গ্রেফতার করে জেলখানা পরিপূর্ণ করা হয়েছে । সেখানে ১লা অক্টোবরের নির্বাচনের পরে আলেম-উলামাগন সম্মান মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছেন । প্রচার মাধ্যমে তারা বক্তব্য রাখার ও সরকারী অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছেন । প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী ও এমপিগন আলেমদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সৃষ্টি করেছেন, মাদরাসা শিক্ষার প্রতি সরকার গুরুত্ব দিয়েছিলো ও সন্ত্রাস নির্মূলের লক্ষে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করেছিলো ফলে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছিলো । এই যখন দেশের বাস্তব অবস্থা, ঠিক তখনই চার দলীয় জোট সরকারের শেষ বছরে হঠাৎ করে নানা ধরনের ভুঁইফোড় সংগঠনের নাম দিয়ে 'আল্লাহর আইন চালু'র নামে আত্মঘাতি বোমাবাজদের মাধ্যমে দেশে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করা এবং সরকারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছিলো ।
ইসলামের নাম শুনলেই যাদের গাত্রদাহ শুরু হয় এবং আলেম দেখলেই যাদের নাকে কয়েকটি ভাজ দেখা যয়, কুকুরের মাথায় টুপি পরিয়ে যারা ইসলামকে ব্যং-বিদ্রুপ করে, মাদরাসাকে যারা মৌলবাদী ও সন্ত্রাসীদের আখড়া বলে চিহ্নিত করে, সংবিধানের শুরু থেকে "বিসমিল্লাহ" মুছে দিতে চায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রাম থেকে যারা কুরআনের আয়াত মুছে দেয়, নাস্তিক-মুরতাদদের যারা পরম হিতৈষী -বন্ধু এবং আলেমদেরকে শত্রু মনে করে, চারদলীয় জোটকে ক্ষমতায় যাবার প্রধান বাধা মনে করে যারা, জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র-এ ব্যর্থ হয়ে প্রকাশ্যে দাবি তোলে, উদ্ভুত সমস্যা সমাধানের লক্ষে জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষে যারা আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানায়, 'আল্লাহর আইন চালু'র নামে আত্মঘাতি বোমাবাজ তাদেরই তত্ত্বাবধানে সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে কিনা, এ প্রশ্ন বর্তমানে সর্বস্তরের নাগরিকদের মনে সৃষ্টি হয়েছে । ***** চলবে *****
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন