বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০১৬

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ইসলামঃ মাওলানা সাঈদী (পর্ব - ৪)

রোযা ও পুজার দেশে সন্ত্রাসী সৃষ্টির কৌশলঃ 

আল্লাহর আইন চালুর নামে যেসব মুসলমান নামধারী কিশোর, তরুন ও যুবকদের ব্যবহার করা হচ্ছে, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে এরা প্রায় সকলেই বাম-রাম ঘরনার ধনী পরিবারের কর্মহীন- বেকার, ভবঘুরে, হতাশাগ্রস্ত অর্থলোভী, বুদ্ধি-বিবেচনাহীন সদস্য । এদের কাছে অর্থই মুখ্য বিষয় । ইসলাম-মুসলমান, দেশ-জাতি ও মানবতার দুশমনরা এসব মোটা মাথার লোকদেরই রিক্রুট করে আল্লাহর আইন চালুর নামে সন্ত্রাস সৃষ্টির প্রশিক্ষন দিয়েছে । এসব যুবকে বন্ধু-বান্ধবের সাথে এখানে-সেখানে আড্ডা এবং নারী ও মাদকে আসক্ত করে । এরপর এসব ছেলেকে পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও পরিবারের অন্য সকল সদস্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে 'আল্লাহর আইন চালুর' নামে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে ।
টিভি-রেডিও, ইন্টারনেট, সোস্যাল মিডিয়া এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে পেশাধারী সম্মোহনকারী আমদানী করে এদেরকে এমনভাবে প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে যে, এদের মধ্যে থেকে মানবীয় সুকুমার বৃত্তিসমুহের মৃত্যু ঘটিয়ে হৃদয়কে করা হয়েছে মায়া-মমতাশুন্য । পিতা-মাতা, ভাই-বোন দূরে থাক- নিজ জীবনের প্রতিও এমন বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করা হয়েছে যে, নিজ জীবনকে  নিজের কাছেই এক দুর্বহ বোঝা -এই অনুভুতি এদের মধ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে । এদেরকে এশিক্ষাও দেয়া হয় যে, জীবন নামক এই দুর্বহ বোঝা থেকে নিজেকে মুক্ত করে বেহেশতে যাবার সবথেকে সহজ পদ্ধতি হলো আল্লাহর আইন চালুর জন্য অন্য মানুষ ও নিজেকে হত্যা করা । কুরান-হাদীসের জ্ঞান বিবর্জিত বুদ্ধি-বিবেচনাহীন জাহিল এসব লোকদেরকে দীর্ঘ প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সমাজ, দেশ-জাতির প্রতি বিদ্রোহী করে গোড়ে তোলা হয়েছে । সুস্থ চিন্তার পরিবর্তে  এদের মাথায় প্রবেশ করানো হয়েছে অসুস্থ চিন্তা । অর্থাৎ এরা জীবন সম্পর্কে হতাশা ও অবসাদগ্রস্থ হয়ে জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া লোক । এসব লোকদের প্রতি আমাদের করুনা হয় ।
গোয়েন্দাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এসব যুবকেরা দীর্ঘ দিন যাবৎ পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে, কেউ কেউ বছরে মাত্র দু-একবার পিতামাতা বা পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে কিছু টাকা দিয়েই আবার নিরুদ্দেশ হয়ে যায় । প্রশিক্ষনের মাধ্যমে এদেরকে নিজ পরিবার-পরিজন, সমাজ ও দেশের আনুগত্য না করে একমাত্র নেতার আনুগত্যের মধ্যেই মুক্তি, এই ধারনা সৃষ্টি করা হয়েছে । সম্মোহনের মাধ্যমে মন-মস্তিস্ক, সমাজ সংসারের চেতনাশুন্য করে আল্লাহর আইন চালুর মায়াজালে বন্ধি করা হয়েছে । ফলে এসব লোকের পরিবারের অন্য সদস্যগনও এসব লোকদের প্রতি মায়া-মমতাশুন্য  হয়ে পড়েছে । এর প্রমান হিসেবে গোয়েন্দা সুত্রে সংবাদ মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আত্মঘাতি এসব লোকের মরদেহ তাদের পরিবারের কেউ-ই গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ ও এদের সম্পর্কে কিছু শুনতেও অনিচ্ছা প্রকাশ করছে ।
এভাবে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সংসার, সমাজ ও দেশের প্রতি বিরাগ ভাজন করে এসব যুবকদের মাধ্যমে নিকটতম ও দুরতম ঐসব প্রতিবেশী দেশই শান্তির দেশ- বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ অস্থির করে তুলে দুনিয়ার সম্মুখে 'অকার্যকর ও জঙ্গিরাষ্ট্র' হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করে আগ্রাসনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে । ক্ষমতায় টিকে থাকতে জঙ্গি ইস্যু তৈরি করে বহির্বিশ্বের নাক গলানোর সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে । প্রকৃত অপরাধীদের না ধরে একে অপরের দোষারপ করা হচ্ছে । বাংলাদেশ  সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল ভুমি, এখানে মুসলমানদের সাথে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীগন শান্তির সাথে বসবাস ও নির্বিঘ্নে আনন্দ চিত্তে শঙ্কামুক্ত মনে ধর্ম পালন করছে । মুসলমনাদের কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র মাস রমজান মাসেও অত্যান্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশে পুজা-পার্বণ অনুষ্ঠিত হয় । এদেশে মসজিদ-মন্দির পাশাপাশি অবস্থান করছে এবং উভয়স্থানে একই সময়ে যার যার ধর্ম সে সে পালন করছে । একই অফিসে পাশাপাশি টেবিলে বসে চাকরী করছে, পরস্পরের বাড়িতে দাওয়াত খাচ্ছে, একে অপরের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, এমনকি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হবার পরও মরণাপন্ন রুগীকে নিজের দেহের রক্ত দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করছে ।

বাংলাদেশের উন্নতি, অগ্রগতি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, উদার গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট, শান্তিপূর্ণ  পরিবেশ যাদের কাছে অসহ্য, ঢাকা ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা ও বঙ্গভঙ্গের ব্যাপারে যারা বিরোধিতা করেছে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষেই অস্ত্র ও এদেশের কলকারখানার যন্ত্রপাতি লুট করেছে, যারা ১৯৪৭ সালের ভূগোলিক সীমারেখা মানতে নারাজ এবং বাংলাদেশী নয়-বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, মঙ্গল প্রদীপ বা অগ্নি প্রজ্জলন ও রাখিবন্ধন সংস্কৃতির অনুসারী, বাংলাদেশের প্রতি যারা বন্ধুত্বের প্রশ্নে উত্তীর্ণ নয় এবং সাম্প্রদায়িক দুষ্টক্ষতে আক্রান্ত হবার কারনে দুনিয়াব্যাপী বদনাম অর্জন করেছে, তারাই তাদের গোয়েন্দা সংস্থা ও এদেশীয় তল্পীবাহকদের মাধ্যমে বাংলাদেশে 'আল্লাহর আইন' চালুর নামে আত্মঘাতি লোকদের দ্বারা সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে বিশ্বের কাছে এ দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থরাষ্ট্র এবং তাদেরকে দালালদেরকে আজীবন ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার অপচেস্টা করছে কিনা, এপ্রশ্ন সচেতন মহলের মনে সৃষ্টি হয়েছে । ***** চলবে *****

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন