সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫

মাওলানা আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের আনা অভিযোগ ডাহা মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

# ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন
# ১৯৭৬ সালে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার গোয়ালগ্রাম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান
# ১৯৮১ সালে তিনি জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত হন
# তিনি একাধারে ইউনিয়ন পরিষদ,  উপজেলা পরিষদ সর্বশেষ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন

সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর,  সাবেক সংসদ সদস্য,  বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেককে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। জেলার শীর্ষ পর্যায়ের একজন আলেমকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনায় জেলাব্যাপি গত দ’ুদিন ধরে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ছাত্রজীবনে তিনি একজন মেধাবি ছাত্র ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়সহ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি জ্ঞান অর্জন করেন। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। ১৯৭৬ সালে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার গোয়ালগ্রাম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ পান। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন না।
 ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে কয়েকটি হত্যাসহ হিন্দু পরিবারের জমি ও বাড়ি দখল করার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত এ নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকরা করা হয়েছে। তার স্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার যে প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেছে তারই ধারাবাহিকতায় তার স্বামীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার স্বামী এ ধরনের অপরাধে জড়িত থাকলে সাতক্ষীরার জনগণ তাকে বিপুল ভোটে এমপি হিসেবে নির্বাচিত করতো না। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে সরকার মাওলানা আব্দুল খালেককে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে। ইতঃপূর্বে সরকারি দলের ইঙ্গিতে তার বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়।
তিনি বলেন,  সরকার আইনের শাসন ও গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী জনগণের ভালবাসা ছাড়া জোর করে ক্ষমতায় থাকা যায় না। মিথ্যা,  বানোয়াট মামলা দিয়ে তার স্বামীকে যতই হয়রানি করার অপচেষ্টা করা হোক না কেন জনগণের নিকট তা গ্রহণযোগ্য হবে না। জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করে অবিলম্বে তার স্বামী মাওলানা আব্দুল খালেককে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান তিনি।
সূত্রে জানা যায়,  ছাত্রজীনে তিনি মেধাতালিকায় দুই-পাকিস্তানের স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। বেশির ভাগ সময়ে তিনি জ্ঞান সাধনায় ব্রত থাকতেন। কুরআন হাদিসের জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়াই ছিল তার কাজ। হাজার হাজার আলেম তাকে উস্তাদ হিসেবে সম্মান করে। তিনি একাধারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সাংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময়ে তিনি সাতক্ষীরা সদর আসন থেকে বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ক্ষমতায় থাকাকালে তার বিরুদ্ধে কেউ অনিয়য়ম দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পাপলন করার পরও সারাজীন তিনি সাধারণ জীপনযাপন করতেন। বিলাশবহুল বাড়ি গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ তিনি পেলেও তা করেননি। সকল লোভ লালশার উর্ধ্বে উঠে তিনি মানুষের সেবা করতেন। সংসদ সদস্য থাকাকালে তিনি এক কাঠা জমিও ক্রয় করতে পারেননি। এমনকি যেদিন তার সংসদ সদস্য পদ শেষ হয়ে যায় সেদিন ও তার ঘরে ভাল খাদ্য খাবার ছিল না। এমন মানুষের সন্ধান খঁজে পাওয়া বিরল বলে অনেকে তাকে মহৎ মানুষের জীবনের সাথে তুলনা করেন। তাকে পীরের মর্যাদা দিতেও সাতক্ষীরার মানুষ পিছে থাকেনি । এমন একজন বড় মাপের মানুষ অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক।
গ্রামের মক্তবে তার লেখা পড়া জীবন শুরু। ১৯৫৭ সালে আগরদাড়ী মাদ্রাসা হতে প্রথম বিভাগে দাখিল পাশ করেন। ১৯৬১ সালে আলিম পরীক্ষায় তিনি বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) First Class Second । ১৯৬৩ সালে ফাযিল পরীক্ষায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে) First Class 3rd হন তিনি। ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষায় দুই পাকিস্তানে First Class 1st হন। কৃতিত্বে পুরস্কার স্বরূপ পান Gold Meda। এরপর তিনি HSC ভর্তি হন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে। ১৯৬৭ সালে তিনি সমগ্র পাকিস্তানে First Class 3rd হন। ১৯৬৯ সালে Degree পরীক্ষায় First Class 6th  হন। তারপর তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি হতে Masters প্রথম পর্ব পরীক্ষায় ১৯৭০ সালে প্রথম বিভাগে 11th এবং ১৯৭৫ সালে MA দ্বিতীয় পর্ব চূড়ান্ত পরীক্ষায় First Class Second হন তিনি। এ মানুষটি ২০১৩ সালে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্ত করেন। তাই তিনি একজন কুরআনের হাফেজ। তার এ দীর্ঘ শিক্ষা জীবনে কোথাও কখনো নিয়ম ভঙ্গ করার অভিযোগ কেউ করতে পারেনি। আর আজ শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য তাকে জঘন্য মিথ্যা মামলায় ফাসানো হলো।
 মাওলানা আব্দুল খালেক ১৯৭৩ সালে সাতক্ষীরা আলিয়া মাদ্রাসায় হেড মাওলানা পদে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিন বছর পর ১৯৭৬ সালে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার গোয়ালগ্রাম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৭ সালে নড়াইল শাহাবাগ কামিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হন। একই বছর তিনি আগরদাড়ী আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসায় প্রধান মাওলানা পদে যোগদান করেন। ১৯৮১ সালে আগরদাড়ি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হন। ১৯৮১ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর অত্যান্ত যোগ্যতার সাথে তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৮৭ সালে স্থানীয় ইউনিয় পরিষদ নির্বাচনে বৈকারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য হলে বিপুল ভোটে তিনি চেয়ারম্যান হতে পারতেন না। ১৯৮৯ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সারা বাংলাদেশব্যাপী। সেই নির্বচনে তিনি প্রায় ৪০, ০০০ (চল্লিশ হাজার) ভোটের ব্যবধানে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তারপর ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর আসনের সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এক লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যাবধানে। যেই শিমুল বাড়ীয়ায় তাকে ৭১ এর নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে তা যদি সত্য হতো তাহলে ১৯৮৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সেই এলাকা থেকে তিনি কি ভোট পেতেন? শুধু ভোট পাওয়া নয় সেই কেন্দ্রেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন।
 ১৯৮০ সালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি রাজনৈতিক কর্মকান্ড নয় শিক্ষামূলক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৮১ সালে আগরদাড়ী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রুকন হন এবং ইউনিয়ন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। এরপর থানা সভাপতি, জেলা নায়েবে আমীর এবং ২০১২ সালে সাতক্ষীরা জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হন। ২০১২ থেকে ২০১৫ চলতি সাল পর্যন্ত তিনি সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর আছেন। সুত্রঃ দৈনিক সংগ্রাম 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন