বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আল্লামা সাঈদী বনাম যুদ্ধাপরাধ, সরকারী রায় বনাম জনতার রায় !


১৯৭১; বাংলার ইতিহাসে একটি গৌরবময় অধ্যায় কিন্তু সেই ৭১ কে রাজনৈতিক তরবারী হিসেবে ব্যবহার করে যেভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থের জন্য বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে জাতির অন্তত একটি বিশাল অংশের হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করা হচ্ছে তাতে গৌরবময় ৭১ আজ অনেকাংশেই ভীতিকর এবং আতংকজনক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে !

তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গত বছর হত্যা করা হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লাকে, আজ প্রায় দুই বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও যার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল সেই মোমেনা বেগম যে আসল মোমেনা বেগম ছিলেন না এবং মোমেনা বেগমকে মিডিয়ার সামনে উপস্থিত করার যে চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছিল তা কেউ গ্রহন করেনি !

আজ (১৭/০৯/১৫)  এক বছর পার হলো, বিশ্বের অগনন মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন, বাংলার মানুষের হৃদয়ের মনি, জনপ্রিয়তো বটেই অনেকের মতে বাংলার ইতিহাসের সবচাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে (১৭/০৯/১৪) আমৃত্যু রায়ের মাধ্যমে মুছে ফেলার চক্রান্ত হয়েছে, তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় নামক নাটক মঞ্ছস্থের জন্য !

অভিযোগসমূহঃ

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যাল যে দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছে তার মাঝে একটি হলো বিশাবালী হত্যা !রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হিসেবে এনেছিল ৭১সালে নিহত বিশাবালীর আপন ভাই সুখরঞ্জন বালীকে যেই সুখরঞ্জন বালী একাধিকবার বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশ্যে বলেছে যে তার ভাই হত্যার সাথে আল্লামা সাঈদী কোনভাবেই জড়িত নয় এবং সে ব্যাপারে তিনি সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আদালতেও গিয়েছিলেন গত ৫’ই নভেম্বর,২০১২ সালে ! কিন্তু সত্য প্রকাশিত হয়ে যাবার ভয়ে সরকার আদালত চত্তর থেকে সুখরঞ্জন বালীকে গুম করে ভারতের কারাগারে বন্দী করে রাখার ইতিহাস দেশবাসীর সকলেরই জানা !

২য় আরেকটি অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল ক্যাঙ্গারু ট্রাইবুন্যাল ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার অভিযোগে ! অথচ আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্য এই ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার জন্য তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৭-৭-১৯৭২ সালে একটি মামলা করেছিলেন ১৪ জনকে আসামী করে যার মাঝে আল্লামা সাঈদীর নাম নিশানাও নেই  !সেই মামলার নথি আজো সরকারের Magistrate’s General Register নামক বইতে রয়েছে যার ক্রমিক নাম্বার ৩৭৮ !

এমনকি সেই হত্যা মামলার চার্জশীট দেয়া হয়েছিল সেখানেও আল্লামা সাঈদীর নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল না অথচ আজকে রায় হয়ে যাওয়া একটি মামলায় ৪২ বছর পরে আবার রায় দেয়া হচ্ছে আগের সকল অভিযুক্তের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে নাম যুক্ত করে !

তার সাথে ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার কাল,সময় ও স্থান সম্পর্কে নাটুকে সাক্ষীদের একেকজনের একেক রকম সাক্ষ্যতো রয়েছেই ! ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমের ৭২ সালে দায়ের করা মামলায় হত্যার স্থান নলবুনিয়া এবং হত্যার সময়কাল ১লা অক্টোবর,১৯৭১ উল্লেখ থাকলে আজ ৪২ বছর পরে ট্রাইবুনালের বানোয়াট সাক্ষীদের একজন বলছেন হত্যার স্থান ছিল পাড়েরহাট আর আরেকজন বলছেন নলবুনিয়া আর সময়কাল বলছে ৮’ই মে ! অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে দুজন সাক্ষী দুরবর্তী দুটো স্থানের কথা বললেও তারা আবার ঐ একই ব্যক্তিকে হত্যা করতে নিজ চোখে দেখেছে !

আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে আরেকটি নাটুকে অভিযোগ করা হয়েছে মানুষের আবেগকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাতে তা হল প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের পিতা ফয়জুর রহমানকে হত্যার অভিযোগ ! ফয়জুর রহমানের স্ত্রী, হুমায়ুন আহমদ এবং জাফর ইকবালের মাতা আয়েশা ফয়েজ একটি বই লিখেছেন “জীবণ যে রকম” যেখানে তিনি ফয়জুর রহমানকে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন অথচ পুরো বইয়ে একটিবারের জন্যেও আল্লামা সাঈদীর নাম নেই ! আয়েশা ফয়েজ পুত্র জাফর ইকবালকে সাথে নিয়ে একটি মামলাও করেছিলেন ৭২ সালেই যেখানেও আল্লামা সাইদীর নাম ছিলো না  !

সাক্ষীদের অবস্থাঃ

এছাড়া অন্যান্য মামলারও একই অবস্থা ! আদালতে তেমন কোন সাক্ষী উপস্থিত করতে না পেরে অনুপস্থিত সাক্ষীদের নামেই জবানবন্দী সাজিয়ে নিয়েছে ট্রাইবুন্যাল যেই সাক্ষীদের অধিকাংশই মিডিয়াতে বলেছে তাদের বলা হয়েছিল সাক্ষ্য দিতে কিন্তু তারা মিথ্যা বলতে রাজি না হওয়ায় তাদের আর সাক্ষ্য দিতে নেয়া হয়নি যদিও ট্রাইবুনাল তাদের অনেকের অনুপস্থিতির জন্য কারণ দর্শিয়েছে তারা অসুস্থ কিংবা মৃত!অথচ সরকার পক্ষেরই বহু সাক্ষী মিডিয়াতে বলেছে আল্লামা সাঈদী কোনরুপ অপরাধের সাথে জড়িত নয় আবার অনেকে বলেছে আল্লামা সাঈদীকে তারা চিনতোই না ৯০এর ইলেকশনের আগে ! অথচ তাদের নামেই মিথ্যা সাক্ষ্য নিজেরাই বানিয়ে ফেলেছে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল !

কে সেই দেলু শিকদার ?

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে শুরু থেকেই যে চেষ্টাটি করে আসছে আওয়ামীরা তা হলো শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে যেভাবে কসাই কাদের বানানো হয়েছিল ঠিক তেমনি আল্লামা সাঈদীকে দেলু শিকদার বানিয়ে হত্যা করতে ! অথচ রাষ্ট্রপক্ষ একটি দলিলও হাজির করতে পারেনি যেখানে তারা প্রমাণ করতে পেরেছে যে অতীতে একদিনের জন্য হলেও আল্লামা সাঈদীর নাম দেলু শিকদার ছিল ! কিন্তু অন্যদিকে আল্লামা সাঈদীর আলিমের সার্টিফিকেট,১৯৫৭ সালের দাখিলের সার্টিফিকেট,পাসপোর্ট, ১৯৬২ সাল থেকে শেখ মুজিবর রহমান জীবিত থাকা অবস্থাতেই ওয়াজ-মাহফিলের পোষ্টার ইত্যাদি সকল জায়গায় নাম রয়েছে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, পিতাঃমাওলানা ইউসুফ সাঈদী, মাতাঃমৃত গুল নাহার বেগম, দাদাঃ মৃত গোলাম রহমান সাঈদী, চাচাঃ সুফী মাওঃ সাইদুর রহমান সাঈদী, ভাইঃ মোস্তফা আহসান সাঈদী, স্থায়ী ঠিকানাঃ সাঈদখালী,জিয়ানগর উপজেলা,পিরোজপু্‌র, বর্তমান ঠিকানাঃ আরাফাত মঞ্জিল,শহীদবাগ,ঢাকা ।

আর ট্রাইবুনাল যেই দেলু শিকদারের নাম বলছে এবং তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীন নিজেই তার সাক্ষ্বর করা যেই ডকুমেন্ট আদালতে দিয়েছেন “প্রসিকিউশন ডকুমেন্ট ভলিউম-৩,পৃষ্ঠা-২১৩” সেখানে অভিযুক্তের নাম রয়েছে দেলু শিকদার, পিতাঃরসুল শিকদার, মাতাঃমৃত সোণাবরুণ, দাদাঃ ওহাব আলী শিকদার,দাদীঃ ধরু বিবি, ভাইঃ এনায়েত শিকদার, লালু শিকদার, চাঁন শিকদার (পিরোজপুর সরকারী কলেজ শাখা ১৯৮৬-১৯৮৭ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রলীগ মনোনীত ভিপি),স্থায়ী ঠিকানাঃশিকদার বাড়ি,ঝাটোকাঠি,পিরোজপুর ।

সর্বোপরি সেই দেলু শিকদারের ভাই লালু শিকদার নিজেই বলেছে যে তার ভাই দেলু শিকদার আর আল্লামা সাঈদী এক ব্যক্তি নয় এবং তার ভাই দেলু শিকদারকে ৭১ এর অপকর্মের জন্য যুদ্ধ শেষেই মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করে ফেলেছে !

বীর মুক্তিযোদ্ধারা এবং পিরোজপুরের লোকজন কি বলে ?

মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার আওয়ামী নেতা মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দীন আহমদ
তার রচিত “মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবনের সেই উন্মাতাল দিনগুলো” বইতে ১৭১ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ১২-১৬ তারিখের দিনগুলোতে পিরোজপুর থেকে লঞ্চ বোঝাই করে করে আমরা পিরোজপুরের প্রায় সকল স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার,যুদ্ধাপরাধীদের সরাসরি সুন্দরবনের ফায়ারিং স্কোয়াডে পাঠিয়েছি । তখন কেউ আমাদেরকে সাঈদীর নাম অপরাধী হিসেবে বলেনি,আমরা তাঁর নাম স্বাধীনতা বিরোধী কিংবা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কোনদিন শুনিনি ।

পিরোজপুরের আরেক বীর সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যরিষ্টার শাহাজান ওমর বীর বিক্রম প্রকাশ্যে মিডিয়াতে বারংবার বলেছেন আল্লামা সাঈদী কোন অপরাধের সাথে জড়িত নয় ।

বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রকাশিত কবি হাসান হাফিজুর রহমান কর্তৃক সম্পাদিত ১৫ খন্ডের প্রামাণ্য দলিল “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল পত্র” নামক বইয়ের পিরোজপুর অধ্যায়ে স্বাধীনতা বিরোধী,যুদ্ধাপরাধী,রাজাকার হিসেবে অসংখ্য মানুষের নাম থাকলেও একটি বারের জন্যেও আল্লামা সাঈদীর নাম উচ্চারিত হয়নি বরঞ্চ পিরোজপুরের বীর সন্তানদের তালিকায় আল্লামা সাঈদীর নাম রয়েছে !

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধারা আল্লামা সাঈদীকে সম্পুর্ণ নির্দোষ আখ্যা দিয়ে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে । এবং সম্প্রতি সেই পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলাবাসী আমার ছোট ভাই মাসুদ সাঈদীকে বিপুল ভোট দিয়ে নিরংকুশভাবে বিজয়ী করেছে ! আল্লামা সাঈদী যদি সত্যিকারার্থেই পিরোজপুরের জনতার উপর ৭১ সালে নির্যাতন করে থাকতেন তবে এই আওয়ামী নৈরাজ্যের সময়ও নিশ্চয়ই "সাঈদী পরিবারের" সদস্য বিজয়ী হতে পারতেন না !
বিচারের নামে অবিচারই সবচাইতে বড় মানবতাবিরোধী অপরাধ !

বিচারের নামে যখন অবিচার চলে তখন সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতেই হয় ! ৭১ এ কেউ অন্যায় করে থাকলে তার বিচার হবে সেটা এক জিনিষ আর মিথ্যা-বানোয়াট গল্প সাজিয়ে কাউকে বিচার করতে চাইলে তা অবিচারই হবে !যাকে হত্যার অভিযোগে ফাঁসি দিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের স্বজনেরা বলছে সে হত্যার সাথে আল্লামা সাঈদী জড়িত নয়,
৭২ সালেই করা মামলায় আল্লামা সাঈদীর নাম নেই, এমনকি বিগত ৪২ বছরে যেই আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতে একটি জিডিও পর্যন্ত করা হয়নি, ৭২ সালে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে যুদ্ধাপরাধতো দূরের কথা দালালদের তালিকাতেও যেই সাঈদীর নাম নেই তাকে আজ ৪২ বছর পরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ঘায়েল করতে চাইলে এদেশবাসী, ইসলামপ্রিয় জনতা মেনে নিবে না ! এ জনতা সকল অন্যায় রুখে দিবেই, আজ কিংবা কাল !




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন