বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ঈদুল আযহা ও কঙ্কর নিক্ষেপঃ

হজ্জের ধারাবাহিক কাজ
১০ই জিলহজ্জ অর্থাৎ ৯ই জিলহজ্জ রাতে ও ফজর বাদ যা করনীয়ঃ
মুযদালিফায় এসে এশার ওয়াক্তে মাগরিব ও এশা একত্রে (এশার নামাজ কসর) আদায় করে এখানেই খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে হয় । মুযদালিফায় রাত্রী যাপন করা ওয়াজিব । সমগ্র রাত তাসবীহ, তাহলীল, তেলাওয়াত ও দোয়ার মাধ্যমে অতিবাহিত করা উচিত । এখান থেকেই ৩দিনের জন্য সত্তুরটি পাথর সংগ্রহ করতে হয় । মুলত; পাথর ৪৯টি কঙ্কর প্রয়োজন । যদি ১২ তারিখ মিনা ত্যাগ করা না হয়, তবেই অতিরিক্ত ২১টি কংকর রাখতে হয় ১৩ই জিলহজ্জের জন্য । ফযরের নামাজ মুযদালিফায় আদায় করে মিনায় শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হউন । এইদিনে জামারাতুল আকাবা অর্থাৎ বড় শয়তানকে ৭টি পাথর নিক্ষেপ শেষ করে ক্বেরান বা তামাত্তু হজ্জ পালনকারীদের জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব । ভীড়ের কারনে এইদিন করতে না পারলে ১২ জিলহজ্জ সূর্যাস্ত যাবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কুরবানী করা যাবে । কুরবানী হলে চুল কাটাতে হবে এবং এহরাম খুলে সাধারন পোশাক পরিধান করতে পারবেন । এরপর তাওয়াফে ইফাদার জন্য মক্কায় গিয়ে তাওয়াফে যিয়ারত শেষ করে পুনরায় মিনায় প্রত্যাবর্তন করতে হবে ।
 কুরবানী বা দম
কুরবানী করা ওয়াজিব । এটি শুধু হজ্জ আদায়কারীর জন্যই নয়, প্রত্যেক সাম্রথবান মুসলমানদের প্রতিই কুরবানী করা ওয়াজিব । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই তা মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে কবুল হয়ে যায় । হযরত আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেনঃ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বলেনঃ হে ফাতিমা ! তোমার কুরবানীর পশুর কাছে দাঁড়িয়ে থাকো কারন, কুরবানীর পশুর যে রক্ত মাটিতে পড়বে তার পরিবর্তে আল্লাহ তায়ালা পূর্বের গুনাহ গুলো ক্ষমা করে দেবেন । একথা শুনে হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা জানতে চাইলেন,  এ সুসংবাদ কি শুধু নবী পরিবার সদস্যেদের জন্য না সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য ? আখেরী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নবী পরিবারের সদস্য এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য । (জামিউল ফাওয়ায়েদ)
সাহাবায়ে কেরাম নবী মুহাম্মাদূর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জানতে চাইলেন, কুরবানী কোন প্রথা ? মানবতার দূত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এটা তোমাদের জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত । সাহাবায়ে কেরাম বললেনঃ এতে আমাদের জন্য কি সাওয়াব ?্রাহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ পশুর প্রত্যেক পশমের জন্য একটি করে সাওয়াব পাওয়া যাবে । (তিরমিযী) ।

হাজীদের জন্য কুরবানীর অত্যান্ত সুব্যবস্থা করা হয়েছে । হজ্জে গিয়ে কুরবানীর পশু ক্রয় করে কুরবানী দেয়ায় নানা জটিলতা রয়েছে । সৌদি সরকার কুরবানীর অর্থ জমা নিয়ে তাদের নিজেদের উদ্দোগেই কুরবানী করে থাকেন । এব্যবস্থার মাধ্যমে কুরবানী দাতাকে কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় না । অবশ্য কোন হাজী সাহেব যদি চান নিজেই পশু ক্রয় করে কুরবানী দিবেন তাহলে তিনি তাও দিতে পারেন অথবা আপনার এজেন্সীর প্রতিনিধির মাধ্যমে দিতে পারেন ।
১১ই জিলহজ্জ তারিখে করনীয়ঃ
এইদিন সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পর সূর্যাস্তের পূর্বে ৩টি জামারায় ৭টি করে মোট ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয় । ১০ তারিখে তাওয়াফে যিয়ারত করা সম্ভব না হলে এইদিন তাওয়াফে যিয়ারত করতে পারেন । আর তাওয়াফে যিয়ারত করা থাকলে কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে পুনরায় মিনায় যেতে হবে এবং সেখানে রাত যাপন করতে হবে ।
১২ই জিলহজ্জ তারিখে করনীয়ঃ
১১ই জিলহজ্জ তারিখের মতোই তিনটি স্তম্ভে সাতটি করে মোট একুশটি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে । প্রথমে ছোট জামরায়, তারপর মাঝারি জামরায় এরপর জামরাতুল আকাবা অর্থাৎ বড় জামরায় পাথর নিক্ষেপ করে দোয়া করুন । এক্ষেত্রে কোন হাজী যদি বার্ধক্য কিংবা শারিরীক অসুস্থতার জন্য নিজ হাতে কঙ্কর নিক্ষেপে অক্ষম হন তাহলে সে নিজের পক্ষ থেকে কাউকে পাথর নিক্ষেপের দ্বায়িত্ব অর্পণ করতে পারেন । 
আজ মিনা থেকে আপনার আবাসস্থল মক্কায় চলে যেতে পারেন । মনে রাখবেন,  তাওয়াফে ইফাদা ও কুরবানী করা না হয়ে থাকলে এইদিনে অবশ্যই মাগরিবের পূর্বে তাওয়াফ ও কুরবানী সম্পন্ন করতে হবে ।

১৩ই জিলহজ্জ মিনা ত্যাগ না করে থাকলে পুনরায় এখান থেকে পাথর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে যেতে হবে । পূর্বের অনুরূপ ৩টি স্তম্ভে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে । এইদিন যদি কেউ মক্কা ছেড়ে নিজ দেশে অথবা মদীনায় যেতে চাইলে তাকে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে । নারীদের হায়েজ নেফাসের সমস্যা থাকলে তারা বিদায়ী তাওয়াফ না করেই নিজ দেশ বা মদীনায় যেতে পারবেন । 
উল্লেখ্যঃ  তিন স্থানে প্রতীকী শয়তানের প্রতি পাথর বা কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব । কেউ যদি কঙ্কর নিক্ষেপে অক্ষম হয় তাহলে তাকে পৃথকভাবে কুরবানী (দম) দিতে হবে । অর্থাৎ এমনিতেই তো ঈদুল আযহার দিন কুরবানী দিতেই হয়, পাথর নিক্ষেপ করতে না পারলে তাকে আরেকটি কুরবানী বা দম দিতে হবে । পাথর/ কঙ্কর নিক্ষেপের মর্ম হলো, মুসলিমগন একথা প্রমান করে যে, তাদের জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, মুসলিমগনও অনুরূপভাবে বাতিলী বা শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে একতা বদ্ধ হয়ে ইসলামের বিপরিত শক্তির বিরুদ্ধে নিজ নিজ দেশে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন ।  
 ------(চলবে) 
"শারঈ' মানদন্ডে
দোয়া-যিকির,হজ্জ ও উমরা"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন