বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০১৫

বাংলাদেশে ইসলামী পুনজাগরনে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অবদান

বাংলাদেশে ইসলামী পুনজাগরনে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অবদান ।

আরশে আযীমে পৌঁছে গেলো জনকের আবেদন ।
৬ ফেব্রুয়ারী শহীদি কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী । সেদিন প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে র‍্যালি বের হবে রাজধানী ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউটে শিবির এক সেমিনার আয়োজন করেছিলো । আল্লামা সাঈদী সেই অনুষ্ঠানের ছিলেন প্রধান অতিথি । শহীদ বাগের বাসা থেকে বায়তুল মোকাররম রওনা দিবেন এমন সময় পিরোজপুর থেকে ফোনের মাধ্যমে পৌঁছেছিলো সেই ভয়াবহ
বিশ্ব নন্দিত মুফাসসীরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, তার হৃদয়ের সবটুকু মমতা উজার করে আপন পিতা মাতার খেদমত করতেন । তার সম্মানিত পিতা মাওলানা ইউসুফ সাঈদী ছিলেন মহান আল্লাহর একনিষ্ঠ প্রেমিক । ফজরের নামাজ আদায় করে তিনি স্থান ত্যাগ করতেন না । কোরআন তেলাওয়াত অথবা হাদীসে বর্ণিত আল্লাহুর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো দোয়া দুরুদ পড়তেন । সূর্য উদিত হবার পরে তিনি ইশরাকের নামাজ আদায় করতেন । তারপর দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর শাহী দরবারে দুহাত উঠাতেন । কলিজার টুকরা সন্তানের জন্য অশ্রু ধারায় বুক ভাসিয়ে আল্লাহর কাছে নিবেদন করতেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার সন্তান দেলাওয়ারকে তোমার পক্ষ থেকে তোমার দ্বীনকে বুঝার মতো জ্ঞান দান করো । তোমার দ্বীনের দাঈ হিসেবে কবুল করে নাও । আমার দেলাওয়ারকে তুমি "সুলতানু্ল ওয়ায়েজীন" বানিয়ে দাও ।
আরশে আযীমের মালিক মহান আল্লাহ তার প্রেমিকের দোয়া মঞ্জুর করে নিয়েছেন । আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার প্রেমিকের সন্তান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে সুলতানুল ওয়ায়েজীন অর্থাৎ বক্তা সম্রাট বানিয়েছেন । তার পিতা মাওলানা ইউসুফ সাঈদী (রাহঃ) একবার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার সন্তান দেলাওয়ার মেঘের উপর আসীন হয়ে বক্তৃতা করছেন । মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে এই স্বপ্ন দেখানো হয়েছিলো বলেই ধারনা করা যায় । কারন আল্লামা সাঈদী এমন এক সময়, এমন এক পরিবেশে কুরআনের বিপ্লবী দাওয়াত নিয়ে ময়দানে এসেছিলেন যখন চারিদিকে বিরাজ করছিলো বাতিল সৃষ্ট অন্ধকারের ঘনঘটা । এই অন্ধকার বলিষ্ঠ কদমে দলিত মথিত করে এগিয়ে যাচ্ছেন । যে পিতা প্রানভরে আপন সন্তানের জন্য দোয়া করতেন, সেই পিতা আর এই পৃথিবীতে নেই । মহান আল্লাহর ডাকে সেই গর্বিত পিতা পৃথিবী ত্যাগ করেছেন ১৯৮৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী ।  
৬ ফেব্রুয়ারী শহীদি কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী । সেদিন প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে র‍্যালি বের হবে রাজধানী ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউটে  শিবির এক সেমিনার আয়োজন করেছিলো । আল্লামা সাঈদী সেই অনুষ্ঠানের ছিলেন প্রধান অতিথি । শহীদ বাগের বাসা থেকে বায়তুল মোকাররম রওনা দিবেন এমন সময় পিরোজপুর থেকে ফোনের মাধ্যমে পৌঁছেছিলো সেই ভয়াবহ শোকের সংবাদ - তার প্রিয় শ্রদ্ধেয় জনক আর নেই ।
কিন্তু মহান আল্লাহর ফয়সালা ছিলো ভিন্ন । স্নেহদাতা পিতার ইন্তেকালের মুহূর্তে  তিনি তার পাশে থাকতে পারেন নি । তার শ্রদ্ধেয় পিতার ইন্তেকাল পূর্ব অবস্থার কথা তার মমতাময়ী মা এভাবে বর্ণনা করেছেন, 'আমার সন্তানের পিতা প্রবল জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন । শেষ মুহূর্তে তিনি খুবই অস্থিরতা প্রকাশ করছিলেন, এবং কখনো কখনো তিনি জ্ঞানহারা হয়ে যেতেন । জ্ঞান ফিরে আসিতেই আদরের সন্তান দেলাওয়ার এসেছে কিনা জানতে চাইতেন । আমি তার জীবন সাথী হিসেবে আসার পর থেকেই দেখেছি, তিনি মহান আল্লাহ তায়ালাকে অত্যন্ত ভয় করতেন এবং তাহাজ্জুদের নামাজ কাজা করতেন না । ইন্তেকালের পূর্বে মুমিনের মৃত্যুর সকল চিহ্ন তার চেহারায় ফুটে উঠলো । আমি লক্ষ করলাম, দেলাওয়ার বাইরে থেকে বাড়িতে এলে ওকে দেখে তার মুখে যেমন স্নিগ্ধ হাসি ফূটতো, ইন্তেকাল পূর্ব মুহূর্তে  ঠিক সেই হাসিই ফুটে উঠলো এবং তিনি এমনভাবে তাকালেন যে, মনে হচ্ছে যেন তিনি প্রিয় দেলাওয়ারকে দেখছেন । এরপর তিনি শুন্যে হাত বাড়িয়ে দিলেন । মনে হলো যেন তিনি দেলাওয়ারের হাত যেভাবে ধরতেন, ঠিক সেভাবেই কিছু একটা ধরলেন এবং বুকের উপর রাখলেন । আমি তাকিয়ে রয়েছি তার স্নিগ্ধ মুখের দিকে । তিনি হাসছেন । এ অবস্থাতেই তিনি চোখ বন্ধ করলেন । আমি দেখলাম, তার কপাল ঘেমে গেলো । তারপরই অনুভব করলাম, দেলাওয়ারের আব্বা আর নেই ' । আল্লামা সাঈদী বলেন, 'সংবাদ পেয়ে আমি যখন পিরোজপুর বাড়িতে পৌঁছে আব্বাকে দেখলাম, তখন আমার মনে হলো, আমি যেন জীবিত ঘুমন্ত আব্বাকে দেখছি । মুখে ফূটে রয়েছে মধুর হাসি । আব্বার শরীরে হাত দিয়ে দেখলাম, তখনও তার শরীর উষ্ণ এবং কবরে নামানোর সময়েও তার শরীর হালকা হালকা উষ্ণই ছিলো ।
পৃথিবীতে যতদিন এই কামেল পুরুষ অবস্থান করেছিলেন, ততোদিন তিনি হৃদয়-মন উজাড় করে তার খেদমত করেছেন । কর্মব্যাপদেশে বাড়ীতে অবস্থান করা আল্লামা সাঈদীর তেমন সম্ভব হয়নি । যতক্ষন বাড়িতে থেকেছেন ততোক্ষনই তিনি মাতা পিতার সান্নিধ্যে থেকে তাদের সেবা যত্ন করেছেন । বিদেশ থেকে বা দেশেরই অন্যস্থান থেকে বাড়িতে এসেই মাতার কুশলাদি জেনেছেন । তার আব্বা ডাকের সাড়া দেয়া সেই  স্নেহদাতা পিতা আর রইলো না । গোটা পৃথিবীব্যাপী তিনি আব্বা আব্বা বলে আর্তচিৎকার  করলেও তার করুন আর্তনাদে সাড়া দেয়ার মতো আর কেউ রইলো না । মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মাওলানা ইউসুফ সাঈদীকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন । আমীন ইয়া রাব্বুল আলামীন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন