মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৫

চিন্তা কি, মরলে শহীদ, বাচলে গাজী ।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়ার সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল-মুহাম্মাদ কামারুজজামানকে দেখেছিলাম কাশিমপুর কারাগার-২, ফাসির সেল এর ২১ নাম্বার রুমে । আমাকে প্রথম গ্রেফতারের পর কাশিমপুর কারাগারের ফাসির সেল ১১ নম্বার রুমে রাখা হয়েছিলো । সেখানে বসেই ২৮ ফেব্রুয়ারীতে আব্বার বিরুদ্ধে শতাব্দীর নিকৃষ্টতম মিথ্যা অপবাদের, ন্যায়ভ্রষ্ট রায় শুনেছিলাম । সেখানে বসেই  মুহাম্মাদ কামারুজজামান চাচার বিরুদ্ধে দেয়া ন্যায়ভ্রষ্ট রায় শুনেছি । সেদিন ছিলো ৯ মে ২০১৩ । রায়ের দিন সকালে কাশিমপুর ডিভিশন থেকে  কামারুজ্জামান সাহেবকে ট্রাইবুনালে হাজির করে । রায় ঘোষণার পর পরই কাশিমপুর নিয়ে আসে ।
ডিভিশন বাতিল হয়ে যায়, তাকে দেয়া হয় ফাসির সেলে । আমার রুমের ঠিক পেছনের রুমে । সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে ঐ দিন আমাদের দেখা হয়নি ।
পরদিন বিকালে আমার লকআপ খুললো কিন্তু কামারুজজামানের রুম লক । তিনি বের হতে পারবেন না । ২৪ ঘণ্টা লকআপ, ঊপরের নির্দেশ । আমার ঐদিকটায় যাওয়া নিষেধ করে দেয়া  হলো । মন তো মানে না । চাচাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে । কি করি ? ৬টায় লকআপ টাইম, এসময় কারারক্ষীদের বদলি হয় । অদল বদলের এক ফাকে চাচাকে দেখে আসলাম । আলহামদুলিল্লাহ, তিনি তখন একবিন্দুও বিচলিত ছিলেন না । তার কথায় কোন দুশ্চিন্তা ছিলো না । তাকে বরং অনেক দৃঢ় মনে হয়েছে । আমি জিজ্ঞেস করলাম কিছু কি লাগবে ? শুধু বললেনঃ দোয়া করো যেন সুস্থ থাকি, দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে কস্ট হয় চেয়ার হলে ভালো হতো । আমি জানালাম চেয়ার নাই, টুল হলে চলবে ? তিনি বললে্‌ চলবে । ব্যাস, রুমে চলে আসলাম । সেবক কে দিয়ে টুল পাঠিয়ে দিলাম । ৯ দিন পর, আমি ১৮ মে জামিন পেলাম । বিদায় নিতে তার কাছে গিয়েছিলাম । আব্বাকে সালাম পৌঁছানোর দায়িত্ব দিয়েছিলো । তারপর আর দেখা হয়নি । আপিল বিভাগে সেই একই রায় । রিভিউ আপিল খারিজ । যে কোন মুহূর্তে কিছু একটা অঘটন ঘটতে পারে । গতকাল থেকে
ইলেক্ট্রনিক্স এবং প্রিন্টিং মিডিয়া অতিমাত্রায় তৎপর ।
আলহামদুলিল্লাহ...
যার মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে হয়তো কয়েক ঘন্টার মধ্যেই চলে যাবেন মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে । তিনি তখন এবং এখনও বিচলিত নন  । হাসিমুখে বিদায় জানাচ্ছেন পরিবারকে ।  বলে দিয়েছেন আল্লাহই সবচেয়ে বড় অভিবাবক । অথচ তাঁকে দিয়ে প্রানভিক্ষা চাওয়ার কতরকম প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে । আইনমন্ত্রী বলছেন মাত্র দুই ঘন্টা সময় পাবেন । টিভিতে দেখানো হচ্ছে কফিন ঢুকছে ।  কাফনের কাপড় ঢুকে গেছে । ফাঁসির দড়ি পরানোর মই কারাগারে ঢুকছে ।
বাইরে অপেক্ষা করছে শত শত পুলিশ ।  সাংবাদিক সহ হাজারো উৎসুক জনতা । কিন্তু যার জন্য এতকিছু হচ্ছে তিনি একদম স্বাভাবিক । তার পরিবার, সন্তানরা স্বাভাবিক ।
একবার ভাবুনতো আল্লাহর কত খালেস বান্দা হলে এমনটা হয়া যায় ।  সত্যের পথে জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকলে একদল লোক পিছু হটার পথ নেয় আর আরেক দল হয় আরো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ।  আমরা যেনো আরো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে পারি । আল্লাহ তায়ালা নবি রাসুল আর পাঠাবেননা কিন্তু তাঁদের কার্যক্রম কি বন্ধ থাকবে... ? কক্ষনো না । যুগে যুগে যারা জান্নাতি পাখি হয়ে চলে গেছে তাঁদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে । আল্লাহ যেন আমাদেরকে জান্নাতিদের দলে জায়গা করে দেন । আমিন ।। আর জাহান্নামের লাকড়ি হওয়ার জন্য ফেরাউন, নমরুদ,  আবুজেহেলদের দলে আজকের জালিমেরা যুক্ত হতে থাকবে ।
শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা বলেছেনঃ নাবুয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, শাহাদাতের দরজা বন্ধ হয়নি । কামারুজ্জামান বললেনঃ যেদিন থেকে ইসলামী আন্দোলনের নাম লিখেছি, সেদিন থেকে শহীদ হওয়ার বাসনা লালন করছি । ক্ষমা চাইবো আল্লাহর কাছে যিনি আমাকে সৃস্টি করেছেন ।
শুধু বলতে চাই, মালিক তুমি জান্নাতে তোমার পাশে আমার একটি ঘর বানিয়ে দিও । 

1 টি মন্তব্য:

  1. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে গেলে. সহীদি তামান্না থাকাটা সাবাবিক.
    আর বাছলেই গাজী. এতে বিচলিত হবার প্রশ্নেই আসেনা.
    আল্লাহ যেন আমাদের সবাই কে দ্বীনের পথে অবিচল রাখেন

    উত্তরমুছুন