রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫

তিনি যে আমাদের মাঝে নাই একথা ভুলেও কেন যেন ভুলতে পারিনা ।


মাওলানা রাফীক বিন সাঈদী (রাহঃ) আজ ৪৯ তম জন্ম বার্ষিকী ।
না । আমরা জন্ম দিন পালন করছি না । কিন্তু তার অকাল বিদায় হৃদয়ে যে অবর্ণনীয় রক্তক্ষরণ তা আমার ভাষার তুলিতে প্রকাশ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় ।
আপনাদের রাফিক বিন সাঈদী, আব্বা আম্মার আদরের বুলবুল আর আমাদের সবচেয়ে বড়ভাই শ্রদ্ধাভরে ডাকতাম দাদা । সাঈদী পরিবারের বড় সন্তান । 
তিনি জন্মে ছিলেন ১৯৬৬ সালের ১৩ এপ্রিল বুধবার । 
২৯ জুন ২০১০ আব্বাকে কল্পিত অভিযোগে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বাসা থেকে গ্রেফতার করার পর একের পর এক মামলা দিয়ে কারাবন্ধি করলো । ১৪ টি মামলায় টানা ৪১ দিন বিভিন্ন স্থানে রিমান্ড নিলো । এক পর্যায়ে শতাব্দীর নিকৃষ্ট মিথ্যা, তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের সাজানো মামলা দিলো । সেই থেকে দাদার ভেতরের জগতটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও তিনি কখনো পরিবারের কারো সামনে দুর্বল হতেন না । সুস্থ একটা মানুষ ভেতরে ভেতরে যে একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তা ঘুনাক্ষরে তিনি বুঝতে দেন নি, আমি মোটেই বুঝতে পারি নি । মামলার বিভিন্ন দিক নিয়ে আইনজীবী ও স্বাক্ষীদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন । নিজেকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে পরিবারের সবাইকে সাহস যুগিয়েছেন । 
কোর্ট চলাকালীন প্রতিদিন আমরা চার ভাই বিতর্কিত ঐ ট্রাইবুনালে যেতাম । মুলত; সেখানে গেলে আব্বাকে দেখা যেত, অল্প হলেও কিছু কথা বলা যেত । কিন্তু কোর্ট শেষে দাদাকে প্রায়ই চেহার, চোখ লাল দেখতাম । এখন ধারনা করি, আব্বার বিরুদ্ধে শতাব্দীর নিকৃষ্ট জঘন্য সব মিথ্যাচার গুলো দাদা সইতে পারতেন না । সেদিনও যথারীতি ১৩ জুন ২০১২ কোর্টে নিজেই নিজের গাড়ি চালিয়ে গেলেন কিন্তু ফিরলেন এম্ব্যুলেন্সে । চাপা বেদনা আর ক্ষোভ অভিমান নিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে ।
সবই আছে । তার সেই প্রিয় কালো গাড়িটি, পড়ার টেবিল, কম্পিউটার, বই,র‍্যাক, তার আলমিরা, সবি আছে । যেমন ছিলো তেমনই । শুধু যার জন্য এতো কিছু, তিনি কেবল নেই ।


তিনি যে আমাদের মাঝে নাই একথা ভুলেও কেন যেন ভুলতে পারিনা ।
সারাক্ষন সর্বক্ষণ তিনি আছেন । মনে হয় ছায়ার মতো তিনি আছেন ।
এখন আব্বার সাথে সাক্ষাত হয় মাসে দুবার । প্রতি সাক্ষাতেই আব্বা তাকে স্বরন করেন । এমন একবারও হলো না, যে আব্বা, দাদার কথা বলেন না । 
তার অনুপুস্থিতি আমাদের মাঝে বিরাট শুন্যতা তৈরি করেছে । আল্লাহ যেন তার অসম্পূর্ণ কাজ গুলি আমাদের দ্বারা পূর্ণতা দান করেন ।
ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে মানুষের মনে তার জন্য যে ভালোবাসা পয়দা করে দিয়েছো, সেই তাকে মাটির কবরে তোমার কুদরতি ভালোবাসায় সিক্ত করো । যে সম্মান দুনিয়ায় তুমি তাকে দান করেছো, শেষ বিচারের দিনে মেহেরবানী করে তার সম্মান আরো বাড়িয়ে দিও । নশ্বর এ পৃথিবীতে তুমি তাকে দয়াকরে যে সুখ, শান্তি, আরাম দিয়েছো, চীরস্থায়ী জান্নাতে মায়াকরে তাকে তা দান করো । জান্নাতে তোমার পাশে একটি ঘর দিও । ইয়া আল্লাহ ! তোমাকে বলছি, তুমি ছাড়া কাকেইবা বলবো, তার এই জীবন দানের উত্তম প্রতিদান আমাদেরকে ভিক্ষা দাও ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন