রবিবার, ১০ মে, ২০১৫

হাজার বার ফাঁসির মঞ্চে যেতে রাজি আছি-


স্কাইপ কেলেঙ্কারি বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত হওয়ার পূর্বে গত ৬ ডিসেম্বর ২০১২ ছিল আমার আব্বা আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত শতাব্দীর নিকৃষ্টতম মিথ্যাচারে ভরা তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ মামলার শুনানির শেষ দিন । সেদিন স্কাইপ কেলেঙ্কারির দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগকারী বিচারপতি নিজামুল হক মামলাটি শেষ করার জন্য খুব তাড়াহুড়া করছিলেন । সেদিন সকল বিচারকের বিচারক, মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর ভরসা করে নিজেকে বিশ্বাসের চূড়ান্ত এবং শেষ স্তরে সঁপে দিয়ে আল্লামা সাঈদী ট্রাইব্যুনালে পিন পতন নীরবতায় ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের উদ্দেশে ৫-৭ মিনিটের একটি বক্তব্য রেখেছিলেন । আল্লামা সাঈদীর স্বল্প সময়ের ঐ বক্তব্যের মধ্যে ফুটে উঠেছিল তার বিরুদ্ধে করা সরকারের ষড়যন্ত্র ও দায়ের করা মামলার কারণ । সকলের জ্ঞাতার্থে আল্লামা সাঈদীর ঐ বক্তব্য এখানে তুলে ধরছিঃ
‘মাননীয় আদালত, বিচার প্রক্রিয়ার প্রায় শেষ প্রান্তে এসে আজ আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি কিছু বলার জন্য । অত্যন্ত ত্রস্ততার সাথে সম্পন্ন করা এই বিচারের রায়ও হয়তো ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়ে থাকতে পারে । এমতাবস্থায় আসামি হিসেবে আমার বক্তব্য আপনার ন্যায়পরায়ণতা বোধের কাছে আবেদন রাখার জন্য কতটুকু সময় ও সুযোগ অবশিষ্ট আছে, তা অনুধাবনের চেষ্টা থেকে বিরত থেকে আমি আপনাদের সামনে কিছু কথা খোলামেলাভাবে বলার প্রয়াস পাচ্ছি । কথাগুলো যেমন আপনাদের জানা প্রয়োজন, একাধিক কারণে কথাগুলো আমারও বলা প্রয়োজন ।’
‘আমি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার আপামর জনগণের অতি পরিচিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী । আল্লাহ সাক্ষী, তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের রচিত দেলোয়ার শিকদার বর্তমান সাঈদী বা দেলোয়ার শিকদার ওরফে দেলু ওরফে দেইল্যা রাজাকার আমি নই ।’
‘মাননীয় আদালত, গণতন্ত্রের লেবাসধারী বর্তমান আওয়ামী সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত যুদ্ধাপরাধের দায় চাপানোর মিশন নিয়ে হেলাল উদ্দিনকে আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে । মিথ্যাচার প্রতিষ্ঠায় স্বনাম খ্যাত হেলাল উদ্দিন আমার বিরুদ্ধে ২০টি জঘন্য মিথ্যা অভিযোগ এনে সরকারি ও দলীয় আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে গিয়ে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য আমার নাম বিকৃত করেছেন । আমার পারিবারিক পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে লুটেরা, খুনি, ধর্ষক, নারী সরবরাহকারী, অগ্নিসংযোগকারী পাক বাহিনীর দোসর, দুর্ধর্ষ রাজাকার, এক কথায় এই তদন্ত কর্মকর্তা মনের মাধুরী মিশিয়ে ৪ হাজার পৃষ্ঠার নাটক রচনা করেছেন আমার বিরুদ্ধে ।’
‘কোন মুসলমানের কলিজায় সর্ব শক্তিমান আল্লাহর ওপর বিন্দু পরিমাণ বিশ্বাস থাকলে, মৃত্যুর ভয় থাকলে, পরকালে আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার ভয় থাকলে, জাহান্নামের কঠিন শাস্তির ভয় থাকলে অন্য কোন মুসলমানের বিরুদ্ধে শুধু আদর্শিক ও রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে এতো জঘন্য মিথ্যাচার করা আদৌ সম্ভব হতো না ।’
‘দেশবাসী সাক্ষী, রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার কখনো কোনকালেই তেমন কোন ভূমিকা ছিল না । বরাবরই আমার বিচরণ ছিলো কুরআনের ময়দানে । জনগণকে কুরআনের দাওয়াত পৌঁছানোই ছিল আমার কাজ । আমার তাফসির মাহফিলগুলোতে হাজারো লাখো মানুষ অংশগ্রহণ করে । এসব মাহফিল থেকে অসংখ্য অগণিত মানুষ সঠিক পথের দিশা পেয়েছেন, নামাজি হয়েছেন । এটাই কি আমার অপরাধ ? দেশ-বিদেশের লক্ষ কোটি মানুষ আমার ওপর আস্থা রাখেন, আমাকে বিশ্বাস করেন, আমাকে ভালবাসেন । আমি সাঈদী লক্ষ কোটি মানুষের চোখের পানি মিশ্রিত দোয়া ও ভালবাসায় সিক্ত । এই ভালবাসাই কি অপরাধ ? বিগত অর্ধ শতাব্দী ধরে আমি কুরআনের দাওয়াত বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছি, এটাই কি আমার অপরাধ ? আমি কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি, এটাই কি আমার অপরাধ ? মাননীয় আদালত এটা যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে, এ অপরাধে অপরাধী হয়ে হাজারবার ফাঁসির মঞ্চে যেতে আমি রাজি আছি ।’
‘মাননীয় আদালত, আজকের এই বিচারপ্রক্রিয়া নিঃসন্দেহে দু’টি পর্বে শেষ হবে । একটি এই জাগতিক আদালতে আর অপরটি আখেরাতের আদালতে । আজ আমি এই আদালতের অসহায় এক নির্দোষ আসামি আর আপনারা বিচারক ।’
‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পূরণে ক্ষমতার জোরে আমার প্রতি যদি জুলুম করা হয়, তাহলে আজকের দুর্দান্ত প্রতাপশালী ব্যক্তিবর্গ যারা একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে আদর্শিক কারণে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমার প্রতি জুলুমের প্রয়াস পাচ্ছেন তারা দ্বিতীয় পর্বের বিচারের দিন, কিয়ামতের দিন নিঃসন্দেহে আসামি হবেন । সেদিন আমি হবো বাদি । আর সর্ব শক্তিমান, রাজাধিরাজ, সম্রাটের সম্রাট, আকাশ ও জমিনের সার্বভৌমত্বের একচ্ছত্র অধিপতি, সকল বিচারের মহা বিচারপতি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, তিনিই হবেন সেদিনের আমার দায়ের করা মামলার বিচার প্রক্রিয়ার বিচারক । সূরা আত তিনের ৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়াল বলেছেন, “আল্লাহ তায়ালা কি সকল বিচারকের তুলনায় শ্রেষ্ঠ বিচারক নন ?” সূরা দোখানের ১৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “একদিন আমি এদেরকে অবশ্যই কঠোরভাবে পাকড়াও করব এবং নিশ্চয়ই প্রতিশোধ নেবোই ।”
‘মাননীয় আদালত, আপনাদের এই আদালতে বসে যাঁর হাতের মুঠোয় আমাদের সকলের জীবন, সেই মহাশক্তিধর আল্লাহ তায়ালার নামে শপথ করছি । তাঁর পবিত্র কুরআন স্পর্শ করে কসম করে বলছি, আমার নামে আপনাদের এ আদালতে যতগুলো অভিযোগ আনা হয়েছে তার হাজার কোটি মাইলের মধ্যে আমার অবস্থান ছিলো না । উত্থাপিত অভিযোগের একটি বর্ণনাও সত্য নয় । আল্লাহর কসম ! সব ঘটনা বা দুর্ঘটনার সাথে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম যোগ করা হয়েছে । এ সকল অভিযোগের সাথে আমার দূরতম সম্পর্ক নেই ।’
‘সুতরাং আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পূরণে যিনি যতটা ষড়যন্ত্র করে, জঘন্য থেকে জঘন্যতর মিথ্যা মামলা দিয়ে, মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে, মিথ্যা সাক্ষীর প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছেন, দেশ-বিদেশে অসংখ্য অগণিত মানুষের কাছে কুরআনের বাণী পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমাকে বঞ্চিত করেছেন, আমার প্রিয়জনদের কাঁদাচ্ছেন, কলঙ্কের তিলক পরিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন, আমি দোয়া করি আল্লাহ তাদের হেদায়াত করুন । আর হেদায়াত যদি তাদের নসিবে না থাকে তাহলে আমার এবং আমার প্রিয়জন, আমার কলিজার টুকরা সন্তান, বিশ্বব্যাপী আমার ভক্ত অনুরক্তদের যত চোখের পানি ফেলানো হয়েছে তাদের সকলের প্রতিফোঁটা চোখের পানি অভিশাপের বহ্নিশিখা হয়ে আমার থেকে শত গুণ যন্ত্রণা, কষ্ট ভোগের আগে আল্লাহ তায়ালা যেনো তাদের মৃত্যু না দেন । মিথ্যাবাদী ও জালিমদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ অযুত ধারায় বর্ষিত হোক । আর জাহান্নাম যেন হয় এদের চিরস্থায়ী ঠিকানা ।’ 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন