বুধবার, ৬ মে, ২০১৫

রজব মাসে করণীয় ও বর্জনীয়


রজব মাস সম্পর্কে জ্ঞাতব্য...

আল্লাহ তাআলা বলেন,
আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেন । (সূরা কাসাস : ৬৮)
অর্থাৎ স্বীয় সৃষ্ট বস্তু হতে কিছু মনোনীত করেন, শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার ঘোষণা দেন । যেমন তিনি মনোনীত করেছেন কয়েকটি দিন, কয়েকটি মাস ; সম্মান, শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা প্রদান করেছেন, অন্য সব দিন আসমান-জমিনের সৃষ্টি ও সূচনা লগ্ন হতেই আল্লাহর বিধান মতে মাসের নিশ্চিত সংখ্যা বারটি । তার মাঝে চারটি সম্মানিত । এ অমোঘ ও শাশ্বত বিধান ; সুতরাং এর মাঝে তোমরা (অত্যাচার-পাপাচারে লিপ্ত হয়ে) নিজেদের ক্ষতি সাধন করো না । (তওবা-৩৬)
হাদিস শরীফে মাস চারটির নাম উদ্ধৃত হয়েছে -
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কাল-চক্রাকারে ঘুরে আসমান-জমিন সৃষ্টির প্রথম দিনের অবস্থায় ফিরে এসেছে । বারো মাসে বৎসর, তার ভেতর চারটি সম্মানি ত। তিনটি একসাথে-জিলকদ,জিলহজ ও মুহাররম । অপরটি মুযার সম্প্রদায়ের পঞ্জিকা মতে-জুমাদাল উখরা ও শাবানের মধ্যবর্তী রজব। (বোখারি-মুসলিম)
 আল্লাহ তাআলা বলেন - হে মোমিনগণ,আল্লাহর নিদর্শনসমূহ (নিষিদ্ধ বস্তু) হালাল মনে করো না এবং সম্মানিত মাসসমূহকে। (মায়েদা-২)
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার সংরক্ষিত, নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ-যেগুলোকে তিনি সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং অনাধিকার চর্চা হতে বারণ করেছেন, সেগুলোকে তোমরা হালাল মনে কর না। যার ভেতর ভ্রান্ত বিশ্বাস, নিষিদ্ধ-কাজ _উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন -
এতে তোমরা নিজেদের উপর অত্যাচার (ক্ষতিসাধন) করো না। (সূরা তাওবা : ৩৬)
অর্থাৎ সম্মানিত মাস গুলোতে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা এ মাস গুলোকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেছেন, তাই এর সম্মান যথাযথ রক্ষা করা। এবং এর মর্যাদা ও পবিত্রতার লক্ষ্য করত: এতে কোন গুনাহে লিপ্ত না হওয়া। তদুপরি জমানার পবিত্রতার কারণে, অপরাধ হয় জঘন্য ও মারাত্মক। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা উল্লিখিত আয়াতের মাধ্যমে নিজেদের উপর জুলুম না করার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় স্বীয় নফ্‌সের উপর জুলুম করা বা অন্য কোন গুনাহে জড়িত হওয়া, সব মাসেই হারাম ও নিষিদ্ধ।

রজব মাসকে কেন্দ্র করে কতিপয় নতুন আবিষ্কৃত আমল, বেদআত

১. রজব মাসের রোজা :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবাদের থেকে রজব মাসের রোজার ফজিলতের ব্যাপারে প্রামাণ্য কোন দলিল নেই। তবে অন্যান্য মাসের মত এ মাসেও, সপ্তাহের সোমবার, বৃহস্পতিবার, মাসের তেরো, চৌদ্দ, পনেরো তারিখ, একদিন রোজা রাখা, পরের দিন না রাখা- সওয়াবের, বৈধ ও সুন্নত। ওমর রা. রজব মাসের রোজা হতে নিষেধ করতেন। কারণ, এতে ইসলাম-পূর্ব কুসংস্কারাচ্ছন্ন জাহেলি যুগের সাথে সামঞ্জস্য বিদ্যমান ।
২. রজব মাসে ওমরা :

কোন হাদিসে প্রমাণ নেই, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাসে ওমরা করেছেন । এ জন্য নির্দিষ্ট ভাবে রজবে ওমরা করা কিংবা এতে ওমরার বিশেষ ফজিলত আছে-বিশ্বাস করা বেদআত ।
 শায়েখ মুহাম্মাদ ইব্রাহিম রহ. তার ফতওয়াতে বলেন, রজব মাসকে জিয়ারত ইত্যাদির মত আমল দ্বারা নির্দিষ্ট করার পিছনে কোন মৌলিক ভিত্তি নেই । কারণ, ইমাম আবু শামা স্বীয় কিতাবে كتاب البدع والحوادث প্রমাণ করেছেন, শরিয়তকে পাশ কাটিয়ে বিশেষ কোন সময়ের সাথে কোন এবাদত নির্দিষ্ট করা অনুচিত, অবৈধ। কারণ, শরিয়ত কর্তৃক বিশেষ কিংবা সাধারণ আমলের জন্য কোন সময় নির্ধারণ করণ ব্যতীত, সব দিন-ক্ষণ-সময় সমান মর্যাদার। এ জন্যই ওলামায়ে কেরাম রজব মাসে বেশি বেশি ওমরা করতে নিষেধ করেছেন। তবে কেউ যদি স্বাভাবিক নিয়মে (ফজিলতের বিশ্বাস বিহীন) রজব মাসে ওমরা করে, তাতে দোষ নেই। কারণ, এ সময়েই তার জন্য ওমরা করার সুযোগ হয়েছে।
৩. রজব মাসের ২৭ তারিখ রজনী লাইলাতুল মিরাজ মনে করে জমায়েত হওয়া ও মাহফিল করা :
মেরাজের রজনী কিংবা মেরাজের মাস নির্ধারণের ব্যাপারে কোন প্রমাণ দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি । এ নিয়ে অনেক মতভেদ আছে, সত্য অনুদ্ঘাটিত । তাই এ ক্ষেত্রে নিশ্চুপ থাকাই শ্রেয় । মেরাজের রজনি নির্দিষ্ট করণের ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়নি । যা বিদ্যমান আছে, সব জাল, ভিত্তিহীন । (বেদায়া নেহায়া ২:১০৭, মাজমুউল ফতওয়া ২৫:২৯৮) অতএব এ রাতে অতিরিক্ত এবাদত ধার্য করা, যেমন রাত জাগা, দিনে রোজা রাখা, অথবা ঈর্ষা, উল্লাস প্রকাশ করা, নারী-পুরুষ অবাধ মেলা-মেশা, গান-বাদ্যসহ মাহফিলের আয়োজন করা, যা বৈধ, শরিয়ত কর্তৃক স্বীকৃত ঈদেও না-জায়েজ-হারাম, এখানের তো বলার অপেক্ষা রাখে না ।


রজব মাসে করণীয় ও বর্জনীয়

 নিজের কিংবা অন্যের উপর জুলুম করা হতে বিরত থাকা, যার অর্থ - ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা, বেশি বেশি নেক আমল করা, আল্লাহ কর্তৃক সংরক্ষিত ও নিষিদ্ধ বিষয় বস্তু পরিত্যাগ করা। অর্থাৎ নিখাদ তওবা করা, আল্লাহ তাআলার শরণাপন্ন হওয়া, রমজান মাসের ভাগ্যবান ও লাইলাতুল কদরের মুক্তিপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া।
 সুপ্রিয় পাঠক, বর্তমান রজব মাস থেকে তৈরি হন। এবাদত, আনুগত্য, অনুসরণ এবং আল্লাহ বশীভূত হওয়ার জন্য অন্তর ও শরীরের অনুশীলনের ব্রত গ্রহণ করুন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন