রবিবার, ৩১ মে, ২০১৫

কোটি মানুষের হৃদয়ে, আজও জিয়া বেচে আছে ।

২৯ শে মে,১৯৮১
রোজ শুক্রবার,
সময় সকাল ৯টা
বিমান বাহিনির একটা সাধারণ বিমান এসে ল্যাণ্ড করল পতেঙ্গায়, ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন ৪৫ বছর বয়েসের চির সবুজ এক সুপুরুষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম, বিএনপির স্থানীয় নেতাদের অন্তর্কলহ মেটাবার জন্য ঢাকা থেকে এসেছেন তিনি ।
সারাদিন তিনি দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে কাটালেন । সাধারন সুতির ধবধবে সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরে চন্দনপুরা জামে মসজিদে জুমার নামায আদায় করলেন । দুপুরে একটু বিশ্রামও নিলেন । বিকেলে আবার দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে বসে সকল দন্দ কন্দলের সুরাহা করলেন । 

রাত ১১.১৫- রাতের (শেষ) খাবার খেলেন প্রেসিডেন্ট ।
রাত ১১.৪০- ঢাকায় স্ত্রী বেগম খালেদাকে টেলিফোন করেন, স্বামী স্ত্রীর শেষ কথপোকথন হয় প্রায় ১৫ মিনিট । অনেকটা নিশ্চিন্ত মনে ১১.৫৮-সাদা পাজামা আর গেঞ্জি পরে লাইট অফ করে শুয়ে পড়েন ক্লান্ত প্রেসিডেন্ট ।
গভীর রাত, চরম বৈরি আবহাওয়া চট্রগ্রামে, একদল ঘাতক তৈরি হচ্ছিল অশুভ কাজের নিমিত্তে, রাত তখন আড়াইটার মত, ঘাতকের দল এসে মিলিত হল কালুরঘাটের ট্রান্সফর্মারের পাশে, পিচাশদলের নেতৃত্বে ছিল লে. কর্ণেল মতিউর, সাথে ছিল লে.ক. মাহবুব, মেজর খালেদ, ফজলে হাসান, মেজর মোজাফফর প্রমুখ ।
 চট্রগ্রামের আকাশে ঘনকালো মেঘ আর সার্কিট হাউসে তখন কুৎসিত শকুন হায়েনাদের আগমন । রাত প্রায় সাড়ে তিনটা প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি আর প্রতিকুল প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে যমের দল পৌছাল সার্কিট হাউসের গেটে, সম্পূর্ণ বিনা বাধায় ভিতরে প্রবেশ করে তান্ডব শুরু করল, বিশ্বস্ত প্রহরীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরপারে চলে গেল ।
গোলাগুলির শব্দে উশকুখুশকু চুলে ঘুমন্ত প্রেসিডেন্ট দুই হাত উচু করে বেরিয়ে জানতে চাইলেন কি চাও তোমরা ?
লে.কর্ণেল ভয়ে কাঁপছিলেন, মোসলেউদ্দিন কি যেন একটা বলতে চাইলেন, মুখের কথা মুখেই রইল অর্ধেক লে.ক. মতি এসে গুলিতে ঝাঝরা করে ফেলল রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে । মাটিতে লুটিয়ে পরলেন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার । একজন  সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধার রক্তে রঞ্জিত হলো চট্রগ্রাম সার্কিট হাউসের ফ্লোর । ওই রাতে তারা মরদেহটি নিয়ে রওনা হলো রাঙ্গুনিয়া,  রাউজান । 
৩০শে মে, ১৯৮১
মাঠে গরু বাধছেন এক বৃদ্ধ । ফজরের ওয়াক্ত, সূর্য ওঠেনি । হালকা আলোর বিকিরন মাত্র । সাদা চুল দাড়ির বৃদ্ধটির অনেক তাড়া । তাকে গরু বাধতে হবে । ফজরের জামায়াত ধরতে হবে । বাজারে যেতে হবে । গরুটা ইদানিং ঘাস খায় কিন্তু দুধ দেয় কম । ডাক্তারকে বলে ঔষধ নিতে হবে, এদিকে শাঁ শাঁ শব্দে রাস্তা দিয়ে বেশ কয়েকটা আর্মি লরী গেলো ।  একটু দূরে গিয়ে সব গুলো গাড়ি দাঁড়িয়ে গেলো । অনেক আর্মি জাওয়ান নামলেন । বড়ো ভয় পেলো । গুটিসুটি মেরে আইলের ধারে বসে পড়লো । যেন কেউ না দেখতে পায় ।

বুড়ো চোখে ভালো মতো দেখতে পাচ্ছে না । ২ থেকে ৩ জন আর্মি মাটি খুড়লো, তারপর লরী থেকে কি একটা বড় জিনিস নামিয়ে মাটি চাপা দিলো এবং দ্রুত গাড়ি গুলো যেদিক থেকে এসেছিলো সেদিকেই চলে গেলো । এমন বর্ণনা দিলেন বয়স্ক ওই বুড়ো থানায় এসে । আমি ব্যারাকে আছি, তখন ডিউটিতে যাবো, তৎক্ষণাৎ ওয়ার্ডার আসলো বেরিয়ে পরতে । লুঙ্গি পরা ছিলাম, ওই অবস্থায় রওনা দিলাম । বুড়োর বর্ণনা করা স্থানে ।

সেখানে পৌঁছে দেখলাম, নিশ্চিত এখানে কিছু একটা মাটি চাপা দেয়া হয়েছে । কিন্তু কী ? আমরা জানি না । মাটি খুড়তে বলছে অফিসার । কেউ সাহস পাচ্ছে না । আমি একটা শাবল দিয়ে খোড়া শুরু করলাম । অল্প কিছু খোড়ার পরেই বেড়িয়ে এলো জিয়ার রক্তমাখা লাশ । আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো স্যারের দেহখানি তুলবার । 


ততক্ষনে হাবিলদার ইউনুসের চোখ ছলছল করছে । অনেক আগের কথা সব মনে নেই । ভাঙ্গা ভাঙ্গা যা মনে ছিলো বললাম । ------হাবিলদার ইউনুস (সাতক্ষিরা)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন